< ১ যোহন ১:১-১০ >
“যাহা আদি হইতে ছিল, যাহা আমরা শুনিয়াছি, যাহা স্বচক্ষে দেখিয়াছি, যাহা নিরীক্ষণ করিয়াছি এবং স্বহস্তে স্পর্শ করিয়াছি, জীবনের সেই বাক্যের বিষয় (লিখিতেছি)- আর সেই জীবন প্রকাশিত হইলেন, এবং আমরা দেখিয়াছি, ও সাক্ষ্য দিতেছি; এবং যিনি পিতার কাছে ছিলেন ও আমাদের কাছে প্রকাশিত হইলেন, সেই অনন্ত জীবনস্বরূপের সংবাদ তোমাদিগকে দিতেছি- আমরা যাহা দেখিয়াছি ও শুনিয়াছি, তাহার সংবাদ তোমাদিগকেও দিতেছি, যেন আমাদের সহিত তোমাদেরও সহভাগিতা হয়। আর আমাদের যে সহভাগিতা, তাহা পিতার এবং তাঁহার পুত্র যীশু খ্রীষ্টের সহিত। আমাদের আনন্দ যেন সম্পূর্ণ হয়, এই জন্য এই সকল লিখিতেছি। আমরা যে বার্তা তাঁহার কাছে শুনিয়া তোমাদিগকে জানাইতেছি, তাহা এই, ঈশ্বর জ্যোতি, এবং তাঁহার মধ্যে অন্ধকারের লেশমাত্র নাই। আমরা যদি বলি যে, তাঁহার সহিত আমাদের সহভাগিতা আছে, আর যদি অন্ধকারে চলি, তবে মিথ্যা বলি, সত্য আচরণ করি না। কিন্তু তিনি যেমন জ্যোতিতে আছেন, আমরাও যদি তেমনি জ্যোতিতে চলি, তবে পরস্পর আমাদের সহভাগিতা আছে, এবং তাঁহার পুত্র যীশুর রক্ত আমাদিগকে সমস্ত পাপ হইতে শুচি করে। আমরা যদি বলি যে, আমাদের পাপ নাই, তবে আপনারা আপনাদিগকে ভুলাই, এবং সত্য আমাদের অন্তরে নাই। যদি আমরা আপন আপন পাপ স্বীকার করি, তিনি বিশ্বস্ত ও ধার্মিক, সুতরাং আমাদের পাপ সকল মোচন করিবেন, এবং আমাদিগকে সমস্ত অধার্মিকতা হইতে শুচি করিবেন। যদি আমরা বলি যে, পাপ করি নাই, তবে তাঁহাকে মিথ্যাবাদী করি, এবং তাঁহার বাক্য আমাদের অন্তরে নাই।”
আপনাদের সকলকে জানাই উষ্ণ শুভেচ্ছা। আমরা যখন ঈশ্বরের বাক্য পাঠ করি, তখন আমাদেরকে এই বাক্য অবশ্যই এর মতো করেই ভক্তি করতে হবে এবং এতে এর মতো করেই বিশ্বাস করতে হবে। দুঃখের সাথে বলতে হয়, এখনো এমন অনেক মানুষ আছে, যারা ঈশ্বরের বাক্যকে ইচ্ছাকৃতভাবে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে এবং এটাকে পাপের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে। এজন্য, আমাদেরকে এই ভ্রান্ত ব্যাখ্যা এবং মিথ্যার বিপক্ষে অবশ্যই উঠে দাঁড়াতে হবে। ঈশ্বরের বাক্যকে ঠিক এর মতো করেই বিশ্বাস করা এবং এটাকে এর মতো করেই প্রচার করাটা আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
যারা আজকের শাস্ত্রাংশটির ভুল ব্যাখ্যা করে
১ যোহন ১:৮ পদে লেখা আছে, “আমরা যদি বলি যে, আমাদের পাপ নাই, তবে আপনারা আপনাদিগকে ভুলাই, এবং সত্য আমাদের অন্তরে নাই।” রোমীয় ৩:১০ পদও বলে, “ধার্মিক কেহই নাই, এক জনও নাই।” আজকের এই পদগুলোর ভুল ব্যাখ্যা করে অনেক খ্রীষ্টান ভাবে যে, কেউই নিষ্পাপ হতে পারে না। এই ভ্রান্ত ধারণার উপর ভিত্তি করে তারা বলে যে, জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস করার পরও মানুষ যদি নিজেদেরকে নিষ্পাপ বলে দাবী করে, তবে এটা মিথ্যা। বাস্তবিকপক্ষে, তারা তাদের অজ্ঞানতায় আরো এগিয়ে যায় এবং যারা জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস করে, তাদেরকে প্রকাশ্যে নিন্দাস্পদ করে। “যদি আমরা আপন আপন পাপ স্বীকার করি, তিনি বিশ্বস্ত ও ধার্মিক, সুতরাং আমাদের পাপ সকল মোচন করিবেন, এবং আমাদিগকে সমস্ত অধার্মিকতা হইতে শুচি করিবেন (১ যোহন ১:৯),” এই পদটিকে উদ্ধৃত করে এই অজ্ঞ লোকেরা দাবি করে যে, যদি তারা তাদের পাপের স্বীকার করে বারংবার শুধুমাত্র অনুতাপের প্রার্থনা উৎসর্গ করে, তাহলে তারা তাদের পাপ থেকে ধৌত হতে পারবে। কিন্তু তাদের এই দাবি ভিত্তিহীন, শুধুই মিথ্যা।
১ যোহন ১:৯ পদে ব্যবহৃত “স্বীকার” শব্দটির অর্থ অধিকাংশ খ্রীষ্টান যা বোঝে, তার থেকে সম্পূর্ণরূপে ভিন্ন। “স্বীকার” শব্দটির শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা হল- নিজেদের প্রকৃত রূপকে ঠিক এর মতো করেই ঈশ্বরের সাক্ষাতে তুলে ধরা। যাহোক, যে খ্রীষ্টানরা শুধুমাত্র ধর্মীয় কারণে যীশুতে বিশ্বাস করে, তারা যখন বাইবেলের এই পদটি পাঠ করে যে, “যদি আমরা আপন আপন পাপ স্বীকার করি, তিনি বিশ্বস্ত ও ধার্মিক, সুতরাং আমাদের পাপ সকল মোচন করিবেন, এবং আমাদিগকে সমস্ত অধার্মিকতা হইতে শুচি করিবেন,” তখন তারা এটাকে নিজেদের চিন্তানুসারে ব্যাখ্যা করে। তারা বিশ্বাস করে যে, যদি তারা ঈশ্বেরের কাছে শুধু প্রচুর অনুতাপের প্রার্থনা উৎসর্গ করে, তাহলে প্রভু তাদেরকে তাদের সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত করবেন। তারা খুবই ভ্রান্ত।
জল ও আত্মার বাক্য বাইবেলে যেভাবে লিপিবদ্ধ হয়েছে, এটাকে ঠিক সেভাবেই গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, অধিকাংশ খ্রীষ্টানই ভ্রান্তভাবে চিন্তা করে যে, সুসমাচার শুধুমাত্র খ্রীষ্টের ক্রুশীয় রক্ত দ্বারা গঠিত হয়েছে। তাই, আমি যখনই ১ যোহন- এর উপর উপদেশ দিই, তখন আমি এই ভ্রান্ত ধারণাটির বিষয়ে প্রায়ই উল্লেখ করি, যা আজকের অধিকাংশ খ্রীষ্টানদের যন্ত্রণা দিচ্ছে। যেহেতু, আপনারা এখন সবাই এই বিষয়ে ভালভাবে অবগত হয়েছেন, তাই আমি ১ যোহনে লিখিত ঈশ্বরের বাক্যে আলোকপাত করতে চাই।
প্রেরিত যোহন যে উদ্দেশ্যে এই পত্রটি লিখেছিলেন
এখানে, ১ যোহন ১:১-৪ পদে, বাইবেল যীশু খ্রীষ্টের ধার্মিকতার বিষয়ে বলছে। বাইবেল এখানে বলে যে, ঈশ্বরের এই ধার্মিকতা হল জ্যোতিঃ “যাহা আদি হইতে ছিল, যাহা আমরা শুনিয়াছি, যাহা স্বচক্ষে দেখিয়াছি, যাহা নিরীক্ষণ করিয়াছি এবং স্বহস্তে স্পর্শ করিয়াছি, জীবনের সেই বাক্যের বিষয় (লিখিতেছি)- আর সেই জীবন প্রকাশিত হইলেন, এবং আমরা দেখিয়াছি, ও সাক্ষ্য দিতেছি; এবং যিনি পিতার কাছে ছিলেন ও আমাদের কাছে প্রকাশিত হইলেন, সেই অনন্ত জীবনস্বরূপের সংবাদ তোমাদিগকে দিতেছি” (১ যোহন ১:১-২)। এই অনুচ্ছেদটি কার বিষয়ে বলছে? এটি যীশু খ্রীষ্টের বিষয়ে বলছে। এখানে যোহন সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, যীশু খ্রীষ্টের শিষ্যেরা জীবনের বাক্য, যীশু খ্রীষ্টকে তাঁদের নিজেদের মাংসিক চোখ দিয়ে দেখেছেন এবং নিজেদের হাত দিয়ে স্পর্শ করেছেন। এই বিশ্বব্রহ্মান্ডের সৃষ্টিকর্তা এই জগতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তাই শিষ্যেরা তাঁদের নিজেদের চোখ দিয়ে তাঁকে দেখতে পেরেছিলেন এবং নিজেদের হাত দিয়ে তাঁকে স্পর্শ করতে পেরেছিলেন। আর, এই সৃষ্টিকর্তা আর কেউ নন, কিন্তু স্বয়ং যীশু, ঈশ্বরের এক জাত পুত্র। একারণেই প্রেরিত যোহন বলেছেন, “আমরা যাহা দেখিয়াছি ও শুনিয়াছি, তাহার সংবাদ তোমাদিগকেও দিতেছি, যেন আমাদের সহিত তোমাদেরও সহভাগিতা হয়। আর আমাদের যে সহভাগিতা, তাহা পিতার এবং তাঁহার পুত্র যীশু খ্রীষ্টের সহিত। আমাদের আনন্দ যেন সম্পূর্ণ হয়, এই জন্য এই সকল লিখিতেছি” (১ যোহন ১:৩-৪)।
যীশু খ্রীষ্টের শিষ্যেরা, যাঁর মধ্যে প্রেরিত যোহনও আছেন, তাঁরা যীশু খ্রীষ্টকে নিজেদের চোখ দিয়ে দেখেছেন, নিজেদের হাত দিয়ে স্পর্শ করেছেন এবং নিজেদের কানে যীশুর মুখ থেকে জীবনের বাক্য শুনেছেন। বাপ্তাইজিত হওয়ার দ্বারা, ক্রুশে তাঁর রক্ত সেচনের দ্বারা এবং মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হওয়ার দ্বারা যীশু জল ও আত্মার সুসমাচার পূর্ণ করেছেন, অতঃপর তিনি আবার স্বর্গে চলে গেছেন। আর এখন, যাদের এই সুসমাচার শোনার দরকার, তাদের কাছে প্রেরিত যোহন তাঁর তিনটি পত্রের মাধ্যমে তা প্রচার করছেন। অন্যকথায়, তিনি আজকের খ্রীষ্টানদের কাছে, যারা যীশুকে তাঁদের ত্রাণকর্তা হিসেবে বিশ্বাস করে বলে দাবি করে, তাদের কাছে যীশুর ধার্মিকতার বিষয়ে সাক্ষ্য দিচ্ছেন।
শিষ্যেরা যে সাক্ষ্য দিতে চাচ্ছিলেন, সেই সাক্ষ্যের মূল বার্তা কি? তাঁরা তাঁদের পত্রগুলোকে এমনভাবে লিখেছেন যেন, সত্যিকারভাবেই যীশুর সাথে আমাদের আত্মিক সহভাগিতা হয়। এজন্যই প্রেরিত যোহন বলেছেন, “আর আমাদের যে সহভাগিতা, তাহা পিতার এবং তাঁহার পুত্র যীশু খ্রীষ্টের সহিত।” আর খ্রীষ্টানদেরকে পরস্পরের সাথে বিশ্বাসের প্রকৃত সহভাগিতা প্রদর্শন করতে হলে, তাদেরকে অবশ্যই জল ও আত্মার সুসমাচার পরস্পরের কাছে বলতে হবে; যার দ্বারা ঈশ্বর মানবজাতিকে তাদের সমস্ত পাপ থেকে পরিত্রাণ করেছেন। অন্যকথায়, আমাদেরকে অবশ্যই জল ও আত্মার সুসমাচারের মাধ্যমে পরস্পরের সাথে সহভাগিতা করতে হবে, পরস্পরের থেকে শিখতে হবে, পরস্পরের থেকে এই সুসমাচার আরো গভীরভাবে জানতে হবে এবং এতে ১০০% বিশ্বাস করতে হবে।
শুধুমাত্র তখনই আমরা একে অপরের সাথে প্রকৃত সহভাগিতা করতে পারব। এখানে প্রেরিত যোহন আমাদেরকে এই শিক্ষাটিই দিচ্ছেন। এই পত্রের প্রকৃত উদ্দেশ্য অন্তর্নিহিত রয়েছে ১ যোহন ১:৪ পদেঃ “আমাদের আনন্দ যেন সম্পূর্ণ হয়, এই জন্য এই সকল লিখিতেছি।” অন্যভাবে বললে, সহভাগিতা করতে হলে আমাদের এই বিষয়টা উপলব্ধি করা অপরিহার্য যে- সুসমাচারে প্রকৃত বিশ্বাস থাকা বলতে কি বোঝায়, আমরা কোন ধরণের সুসমাচারে বিশ্বাস করি, আর আমাদের বিশ্বাস সত্যিকারে জল ও আত্মার সুসমাচারে অবস্থিত কিনা। তাই যোহন এখানে বলছেন যে, তিনি এই পত্রটি লিখছিলেন যেন, আমরা ঈশ্বরের সন্তান হওয়ার আনন্দ লাভ করতে পারি।
এরপর যোহন ৫-৭ পদে এই বিষয়টির বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। আমাদের এটা উপলব্ধি করা জরুরি যে, খ্রীষ্টানদের মধ্যেও এমন অনেকে রয়েছে যারা এখনো পাপের ক্ষমা লাভ করে নাই, আর তাদের হৃদয় এখনো কলুষিত এবং পাপপূর্ণ; যদিও তারা দাবি করে যে, তারা যীশুতে বিশ্বাস করে। তাই প্রেরিত যোহন এই রকম লোকদের কাছে তাঁর পত্রটি লিখছেন। ৫ পদে লেখা আছে, “আমরা যে বার্তা তাঁহার কাছে শুনিয়া তোমাদিগকে জানাইতেছি, তাহা এই, ঈশ্বর জ্যোতি, এবং তাঁহার মধ্যে অন্ধকারের লেশমাত্র নাই।”
ঈশ্বর জ্যোতি। তাঁর মধ্যে অন্ধকারের লেশমাত্র নাই। যেমনটি বাইবেল এখানে বলছে যে, ঈশ্বর হলেন জ্যোতি, সত্য, সম্পূর্ণরূপে নিষ্পাপ এবং পবিত্র। যেহেতু ঈশ্বর জ্যোতি এবং তাঁর মধ্যে অন্ধকারের লেশমাত্রও নাই, তাই যারা ঈশ্বরের ধার্মিকতাকে প্রকৃতরূপে জানে এবং এতে বিশ্বাস করে, তাদের মধ্যে কোন পাপ নেই। তাই, অতীতের প্রেরিতগণ এবং বর্তমানের বিশ্বাসী যে আমরা, আমাদের মধ্যে কোন পাপ নেই। অন্যকথায়, আমরা যারা সঠিকভাবে বিশ্বাস করি, আমরা সম্পূর্ণরূপে পাপমুক্ত, কারণ ঈশ্বর জ্যোতি। যেমনটি বললাম, যারা যীশুকে তাদের ত্রাণকর্তা হিসেবে বিশ্বাস করে, তাদের মধ্যেও এমন অনেকে আছে, যাদের হৃদয় পাপপূর্ণই থেকে যায়। যাইহোক, ঈশ্বর সাধিত পরিত্রাণ অসম্পূর্ণ পরিত্রাণ নয়, কিন্তু এটা সম্পূর্ণরূপে ত্রুটিমুক্ত পরিত্রাণ।
যেহেতু ঈশ্বর জ্যোতি, তাই আমরা যদি যীশুর ধার্মিকতাকে সঠিকভাবে উপলব্ধি করে তাঁকে আমাদের ত্রাণকর্তা হিসেবে গ্রহণ করি, তাহলে আমাদের হৃদয়ে অন্ধকারের লেশমাত্রও থাকা সম্ভব নয়। আমরা যারা জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস করি, সাধারণভাবেই আমাদের হৃদয়ে কোন পাপ থাকার কথা নয়, এটা অসম্ভব। কারণ ঈশ্বর জ্যোতি, এবং তাঁর মধ্যে অন্ধকারের লেশমাত্র নাই। পিতা ঈশ্বর যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে আমাদের সমস্ত পাপ মোচন করেছেন। আর যদি আমরা জল ও আত্মার এই সত্য সুসমাচার জানি এবং এতে বিশ্বাস করি, তাহলে আমাদের হৃদয়ে আর কোন পাপ থাকতে পারে না। প্রেরিত যোহন এখানে প্রকৃত সহভাগিতার বিষয়ে বলছেন।
ঈশ্বরের সাক্ষাতে মিথ্যাবাদী কে?
১ যোহন ১:৬ পদে লেখা আছে, “আমরা যদি বলি যে, তাঁহার সহিত আমাদের সহভাগিতা আছে, আর যদি অন্ধকারে চলি, তবে মিথ্যা বলি, সত্য আচরণ করি না।” এর অর্থ হল, যদি আমরা দাবি করি যে, ঈশ্বরের সাথে আমাদের সহভাগিতা আছে, কিন্তু যীশুকে আমাদের ত্রাণকর্তা হিসেবে বিশ্বাস করার পরও আমাদের হৃদয় পাপপূর্ণই থেকে যায়, আর এ অবস্থায় তাঁকে অনুসরণ করার চেষ্টা করি, তাহলে আমরা মিথ্যা বলছি। এভাবে বিশ্বাস করাটা প্রভুর সাক্ষাতে যথাযথ বিশ্বাস নয়। এরকম লোকেরা যতই বলুক যে, তারা যীশুতে বিশ্বাস করে, কিন্তু তারা মিথ্যা বলছে। আর তারা সত্য আচরণ করে না। যখন লোকেরা বলে যে, যীশুতে বিশ্বাস করার পরও তাদের হৃদয়ে পাপ আছে, তাহলে তারা মূলত বলছে যে, তাদের হৃদয়ে অন্ধকার এবং পাপ থাকলেও ঈশ্বরের সাথে তাদের সহভাগিতা আছে; এটা চরম মিথ্যা কথা। অন্যকথায়, হৃদয়ে পাপ থাকা সত্ত্বেও যখন তারা বলে যে, ঈশ্বর তাদের পিতা এবং ত্রাণকর্তা, তখন তারা মিথ্যা বলে।
আর হৃদয়ে পাপ থাকা সত্ত্বেও কেউ যদি দাবি করে যে, সে সুসমাচার প্রচার করছে এবং সুসমাচারের কাজ করছে, তাহলে মিথ্যা বলছে। এই লোকেরা প্রভুর সেবা করছে না, কিন্তু নিজেদের সেবা করছে। আর, তারা সত্য আচরণ করছে না, কিন্তু নিজেদের চিন্তা-ধারাকে অনুসরণ করছে। আজকের অনেক খ্রীষ্টান তাদের নিজেদের মানবীয় মাংসিক চিন্তারই অনুসরণ করে। প্রেরিত যোহন এখানে এই বিষয়টি নিয়েই কথা বলছেন। তিনি বলছেন যে, ঈশ্বর যেমন জ্যোতি এবং পাপহীন, তাই যারা পাপহীন, শুধুমাত্র তাদেরই ঈশ্বরের সাথে প্রকৃত সহভাগিতা থাকতে পারে।
জ্যোতিতে চলার অর্থটা কি?
১ যোহন ১:৭ পদে লেখা আছে, “কিন্তু তিনি যেমন জ্যোতিতে আছেন, আমরাও যদি তেমনি জ্যোতিতে চলি, তবে পরস্পর আমাদের সহভাগিতা আছে, এবং তাঁহার পুত্র যীশুর রক্ত আমাদিগকে সমস্ত পাপ হইতে শুচি করে।” এর অর্থ হল, যেহেতু ঈশ্বর জ্যোতি, এবং তাঁর মধ্যে অন্ধকারের লেশমাত্র নাই- অর্থাৎ, ঈশ্বর যেমন সম্পূর্ণরূপে নিষ্পাপ, সেভাবে প্রভুও জল ও আত্মার সুসমাচার দ্বারা আমাদের সমস্ত পাপ মোচন করেছেন। আমরা জ্যোতিতে চলছি, এর অর্থ হল- আমরা জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস দ্বারা পাপের ক্ষমা লাভ করেছি, এবং এখন বিশ্বাসে ঈশ্বরকে অনুসরণ করছি। ঈশ্বরের সুসমাচার, অর্থাৎ জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস দ্বারা এখন আমাদের হৃদয় পাপমুক্ত, আর এজন্য আমরা সুসমাচারের কাজ করছি এবং সারা পৃথিবীতে এই সত্য সুসমাচার ছড়িয়ে দিচ্ছি। ‘জ্যোতিতে চলা’ বলতে এটাই বোঝানো হয়েছে।
এর দ্বারা আমরা ঈশ্বরের সাথে এবং ধার্মিকগণের সাথে প্রকৃত সহভাগিতা করছি। আর, আমরা ঈশ্বরকে আমাদের পিতা হিসেবে ডাকতে সমর্থ হয়েছি, এবং ঈশ্বর আমাদেরকে তাঁর সন্তান বলে ডাকেন। তাহলে আমরা সম্পূর্ণরূপে উপলব্ধি করতে পারছি যে, এই জগতে জীবন ধারণের সময় আমরা আমাদের দূর্বলতায় যে সমস্ত পাপ করি, জল ও আত্মার সুসমাচার দ্বারা ঈশ্বর আমাদের সেই সমস্ত পাপই মোচন করেছেন। পিতা ঈশ্বর আমাদেরকে বলছেন যে, তাঁর পুত্র যীশু খ্রীষ্ট যে রক্ত সেচন করেছেন, সেই রক্ত আমাদেরকে আমাদের সমস্ত পাপ হতে শুচি করেছে। এখানে ‘সেচিত রক্ত’ বলতে বোঝায় যে, পিতা ঈশ্বর জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাসী যে আমরা, আমাদেরকে তাঁর পুত্র যীশু খ্রীষ্টের জীবন দ্বারা পরিত্রাণ করেছেন। অন্যকথায়, এটা আমাদেরকে শিক্ষা দেয় যে, যীশু খ্রীষ্ট তাঁর নিজের জীবন উৎসর্গের দ্বারা আমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পরিত্রাণ করেছেন। কিন্তু এই পদ এটা বোঝায় না যে, ঈশ্বর আমাদেরকে শুধুমাত্র যীশুর সেচিত রক্ত দ্বারা পরিত্রাণ করেছেন। আমাদেরকে এটা অবশ্যই যথাযথভাবে বুঝতে হবে। কারণ, যখন শাস্ত্র বলে যে, যীশু খ্রীষ্ট আমাদেরকে তাঁর রক্ত দ্বারা পরিত্রাণ করেছেন, তখন এটা পরিত্রাণ কার্যের চূড়ান্ত ফল সম্পর্কে বলে; যে পরিত্রাণ কার্য যীশু যোহন বাপ্তাইজক কর্তৃক বাপ্তাইজিত হওয়ার দ্বারা, ক্রুশে রক্ত সেচন করে হত হওয়ার দ্বারা এবং মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হওয়ার দ্বারা সম্পূর্ণ করেছেন।
কে জগৎকে জয় করে?
এই বিষয়টি সম্পর্কে আমাদেরকে আরো পরিষ্কারভাবে বোঝানোর জন্য ১ যোহন ৫:৪ পদে বলা হয়েছে, “যে জয় জগৎকে জয় করিয়াছে, তাহা এই, আমাদের বিশ্বাস।” তাহলে, আমাদের এই বিশ্বাস কোন বিশ্বাস? এটি হলো সেই বিশ্বাস, যা এই সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত যে,- প্রভু এই জগতে আসলেন, যোহন বাপ্তাইজক কর্তৃক বাপ্তাইজিত হলেন, ক্রুশে হত হলেন এবং মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হলেন, এবং এভাবে আমাদেরকে আমাদের সমস্ত পাপ হতে পরিত্রাণ করেছেন। যীশু খ্রীষ্ট তাঁর বাপ্তিস্ম ও রক্ত দ্বারা আমাদের সমস্ত পাপ একেবারে চিরকালের জন্য মোচন করেছেন; আমাদের জন্য সাধিত তাঁর এই ধার্মিকতার কার্যে এবং তাঁর প্রেমে বিশ্বাসই হল জগৎকে জয়কারী বিশ্বাস। ‘এই বিশ্বাস’ আমাদেরকে আমাদের সমস্ত পাপ এবং অযোগ্যতার উপরে জয় লাভ করতে সক্ষম করে। এভাবে, আমরা বিশ্বাস দ্বারাই সম্পূর্ণরূপে পরিত্রাণ প্রাপ্ত, এবং বিশ্বাস দ্বারাই বিজয়ী।
আসুন, আমরা ১ যোহন ৫:৫-৭ পদ দেখি, “কে জগৎকে জয় করে? কেবল সেই, যে বিশ্বাস করে, যীশু ঈশ্বরের পুত্র। তিনি সেই, যিনি জল ও রক্তের মধ্য দিয়া আসিয়াছিলেন, যীশু খ্রীষ্ট; কেবল জলে নয়, কিন্তু জলে ও রক্তে। আর আত্মাই সাক্ষ্য দিতেছেন, কারণ আত্মা সেই সত্য। বস্তুতঃ তিনের সাক্ষ্য দেওয়া হইতেছে, আত্মা ও জল ও রক্ত, এবং সেই তিনের সাক্ষ্য একই।” ঈশ্বরের দৃষ্টিতে আমাদের বিশ্বাসের প্রমাণ কি? এটা হল আমাদের সেই বিশ্বাস, যা জল ও রক্ত ও আত্মায় স্থিত। জল ও রক্ত আত্মা এক। ঈশ্বরের পুত্র যীশু খ্রীষ্ট, যিনি জল ও রক্ত দ্বারা এসেছিলেন, তাঁর ধার্মিকতায় বিশ্বাস করাই হল সেই বিশ্বাস, যে বিশ্বাস আমাদেরকে আমাদের পাপের ক্ষমা লাভ করতে সক্ষম করে।
এই কারণেই প্রেরিত যোহন ১ যোহন ১:৭ পদে বলেছেন, “কিন্তু তিনি যেমন জ্যোতিতে আছেন, আমরাও যদি তেমনি জ্যোতিতে চলি, তবে পরস্পর আমাদের সহভাগিতা আছে।” আমাদের ঈশ্বরের সাথে এই রকম সহভাগিতা আছে। যীশু এবং জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাসীদের মধ্যে এই রকম সহভাগিতা আছে। অন্যদিকে, যারা জল ও আত্মার সুসমাচার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত পরিত্রাণের সত্য জানে না, এবং একারণে পাপের ক্ষমা লাভ করে নাই, তারা যীশুর সাথে এই রকম সহভাগিতা করতে পারে না, তাতে তারা যতই দাবি করুক যে, তারা যীশুর ধার্মিকতায় বিশ্বাস করে। তারা এখনো যীশু থেকে বিচ্ছিন্ন। ঈশ্বরের সাথে প্রকৃত সহভাগিতা শুধুমাত্র তারাই করতে পারে, যারা বিশ্বাস করে যে, যীশু হলেন ঈশ্বরের এক জাত পুত্র, আর তিনি আমাদের পাপ মোচনের জন্য এই জগতে এসেছিলেন, তিনি যোহন বাপ্তাইজক কর্তৃক বাপ্তাইজিত হওয়ার দ্বারা আমাদের সমস্ত পাপ নিজের উপরে তুলে নিয়েছিলেন, আমাদের এই সমস্ত পাপের জন্য ক্রুশে দন্ড ভোগ করেছিলেন,এবং মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হয়েছিলেন, আর এই সমস্ত ধার্মিকতার কার্য দ্বারা তিনি আমাদের সমস্ত পাপ মোচন করেছেন এবং আমাদের প্রকৃত ত্রাণকর্তা হয়েছেন। আর প্রেরিত যোহন ও অন্যান্য প্রেরিতগণ, যাঁরা পাপের ক্ষমা লাভ করেছিলেন, তাঁরা এই প্রকৃত সহভাগিতা প্রচার করেছিলেন।
এই বিষয়টির সারমর্ম এই, প্রেরিত যোহন বলেন যে, ঈশ্বরের পুত্র যীশু খ্রীষ্টের রক্ত আমাদেরকে আমাদের সমস্ত পাপ থেকে শুচি করে। তিনি এটা বলেছেন, কারণ যীশু নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে আমাদেরকে পরিত্রাণ করেছেন। যদিও শাস্ত্র পরিত্রাণের সারমর্ম এইভাবে করেছে, কিন্তু যখন আমরা আরো গভীরভাবে দেখি, তখন আমরা দেখতে পাই যে, প্রেরিত যোহন জল ও রক্ত ও আত্মায় বিশ্বাস করেছিলেন। এখানে আত্মা দ্বারা ঈশ্বরকে বোঝানো হয়েছে, আর এই ঈশ্বর মরিয়মের গর্ভে এসেছিলেন। তিনি মানব দেহ ধারণ করে আমাদের ত্রাণকর্তা হিসেবে এই জগতে আসলেন। আর, যোহন বাপ্তাইজক কর্তৃক বাপ্তাইজিত হওয়ার দ্বারা আমাদের সমস্ত পাপ একেবারে চিরকালের জন্য নিজের উপরে তুলে নিলেন। তারপর তিনি আমাদের পাপের শাস্তি ভোগের জন্য আমাদের স্থলে নিজে ক্রুশারোপিত হলেন। এরপর তিনি মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হলেন, এবং এভাবে আমাদের ত্রাণকর্তা হলেন। প্রভু আমাদেরকে জল ও আত্মার মাধ্যমে আমাদের সমস্ত পাপ থেকে পরিত্রাণ করেছেন। প্রভু বাপ্তাইজিত হওয়ার দ্বারা আমাদের সমস্ত পাপ নিজের উপরে তুলে নিয়েছিলেন; আর জগতের সমস্ত পাপ নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন বলে, সেই পাপের দন্ড ভোগের জন্য ক্রুশারোপিত হলেন। আর এভাবে আমাদের ত্রাণকর্তা হলেন।
প্রত্যেককে অবশ্যই বিশ্বাস করতে হবে যে, ঈশ্বর জ্যোতি। কারণ, এটাই হল ঈশ্বরের সাথে প্রকৃত সহভাগিতা করার পূর্বশর্ত। ঈশ্বর জ্যোতি। জ্যোতি মানে হল সেখানে অন্ধকারের লেশমাত্রও থাকবে না- অর্থাৎ, জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাসীদের হৃদয়ে বাস্তবিকই কোন পাপ নেই। যারা পাপের ক্ষমা লাভ করেছে, তাদের সাথে সহভাগিতা করতে হলে আপনাকেও অবশ্যই জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস করতে হবে। আপনাকেও অবশ্যই জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস দ্বারা পাপমুক্ত হতে হবে। শুধুমাত্র তখনই আপনি আপনার সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হতে পারবেন। আপনি কি একটা পরিষ্কার বিবেক নিয়ে, প্রকৃত নিশ্চয়তা নিয়ে সত্যিকারভাবে সাক্ষ্য দিতে পারবেন যে, আপনার হৃদয়ে কোন পাপই পাওয়া যাবে না? যদি বাস্তবিকই আপনি সম্পূর্ণরূপে নিষ্পাপ হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি ঈশ্বরের একজন প্রকৃত সন্তান হয়েছেন।
যারা যীশুতে বিশ্বাস করা সত্ত্বেও এখনো পাপের ক্ষমা লাভ করেনি
৮-১০ পদে এই রকম লোকদের বিষয়ে বলা হয়েছে। ৮ পদটি পরিষ্কারভাবে বলে যে, “আমরা যদি বলি যে, আমাদের পাপ নাই, তবে আপনারা আপনাদিগকে ভুলাই, এবং সত্য আমাদের অন্তরে নাই।” ঈশ্বর জ্যোতি। আর আমাদের পাপ মোচনের জন্য তিনি তাঁর পুত্রকে প্রেরণ করেছেন, আর পুত্র জল ও রক্ত দ্বারা বাস্তবিকই আমাদের সমস্ত পাপ মোচন করেছেন। তিনি এভাবে আমাদেরকে নিষ্পাপ করেছেন। তিনি আমাদেরকে ধার্মিকও করেছেন। এটাই হল ঈশ্বরের ইচ্ছা। যেহেতু ঈশ্বর জ্যোতি, তাই আমরা, বিশ্বাসীরাও জ্যোতি। এই কারণেই ঈশ্বর আমাদেরকে বলেছেন যে, আমরা জগতের দীপ্তি। যেহেতু আমাদের হৃদয়ে পাপ নেই, তাই আমরা এখন সাহসিকতার সাথে অন্যদের কাছে সুসমাচার প্রচার করতে পারি।
যাইহোক, যীশুতে বিশ্বাস করে, এই দাবি করার পরও যারা এখনো তাদের পাপের ক্ষমা লাভ করেনি, যারা এখনো অন্ধকারে চলে, এবং যাদের হৃদয়ে এখনো পাপ রয়েছে, তারা যদি দাবি করে যে, তারা পাপের ক্ষমা লাভ করেছে, তাহলে তারা শুধু নিজেদেরকে ভুলাচ্ছে। যীশুতে বিশ্বাস করার পরও যাদের হৃদয়ে এখনো পাপ রয়েছে, তাদেরকে অবশ্যই তাদের পাপীরূপ স্বীকার করতে হবে এবং বলতে হবে, “যীশুকে আমার ত্রাণকর্তা হিসেবে বিশ্বাস করার পরও আমার হৃদয়ে পাপ রয়েছে। আমি এখনো পাপী।” শুধুমাত্র এমনটা করার পরই যদি তাদের কাছে জল ও আত্মার সুসমাচার প্রচার করা হয়, তখন তারা এতে বিশ্বাস করতে আরম্ভ করবে। প্রভু কিভাবে আপনার সমস্ত পাপ মোচন করেছেন, এটা নিজেকে মনে করানোর জন্য আপনাকে অবশ্যই জল ও আত্মার সুসমাচার রোমন্থন করতে পারতে হবে। আপনি যখন বাইবেলে ঈশ্বরের বাক্য পড়েন, তখন তাঁর প্রেম উপলব্ধি করাটা আপনার জন্য আবশ্যক। যখন আপনি উপলব্ধি করতে পারবেন যে, যীশু খ্রীষ্ট জল ও আত্মার সুসমাচার দ্বারা আপনার সমস্ত পাপ মোচন করেছেন, তখন আপনি পাপের প্রকৃত ক্ষমা লাভ করতে পারবেন।
ঈশ্বর-কথিত জল ও আত্মার সুসমাচারের বাক্য আমাদের হৃদয়ে বাস করে এবং এটা আমাদেরকে উপলব্ধি করতে সক্ষম করে যে, আমরা পাপের ক্ষমা লাভ করেছি। আমরা যে আমাদের হৃদয়ে পাপের ক্ষমা লাভ করেছি, এই প্রমাণ আমরা শুধুমাত্র তখনই লাভ করতে পারব, যখন আমাদের হৃদয়ে ঈশ্বরের জল ও আত্মার সুসমাচারের বাক্য থাকবে। পরিত্রাণের বাক্য আমাদের হৃদয়ে আছে বলেই আমরা এই বাক্য দ্বারা আমাদের প্রভুর সাথে সহভাগিতা করতে পারি। পরিত্রাণের বাক্য আমাদের হৃদয়ে আছে বলেই আমরা নিষ্পাপ হয়েছি। আর পরিত্রাণের বাক্য আমাদের হৃদয়ে আছে বলেই পবিত্র আত্মা আমাদের হৃদয়ে বাস করতে আসেন। যদি পরিত্রাণের এই বাক্য আপনার হৃদয়ে খুঁজে না পাওয়া যায়, তাহলে যীশুতে বিশ্বাস করার আগে আপনি যেমন পাপী ছিলেন, এখনো তেমনই আছেন। কারণ, ঈশ্বরের বাক্যই আপনার সমস্ত পাপ মোচন করে। বস্তুত, শুধু আবেগের সাথে যীশুতে বিশ্বাস করলেই আপনার সমস্ত পাপ অন্তর্হিত হয়ে যাবে না।
জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস ছাড়া যীশুর ধার্মিকতা বুঝতে পারা এবং পাপের ক্ষমা লাভ করাটা খুবই দুষ্কর ব্যাপার। এটা এতটাই দুষ্কর, যা অসম্ভবের সামিল। আপনার হৃদয়ে কি জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস রয়েছে? যদি আপনি এই বাক্যে সম্পূর্ণ অন্তঃকরণে বিশ্বাস করেন, তাহলে আপনার হৃদয়ে পাপের ক্ষমা লাভ করেছেন; কারণ আপনার হৃদয়ে পরিত্রাণের বাক্য রয়েছে। অন্যদিকে, যদি আপনার হৃদয়ে পরিত্রাণের বাক্য না থাকে, তাহলে আপনি পাপের ক্ষমা লাভ করেন নাই। এমনটি কেন হচ্ছে? কারণ আপনার হৃদয়ে বাক্যের সাক্ষ্য নাই, যা এই সাক্ষ্য দেয় যে, প্রভু বাস্তবিকই আপনার সমস্ত পাপ মোচন করেছেন।
যারা পাপের ক্ষমা লাভ করেনি, তাদের মধ্যে পরিত্রাণের বাক্যের সাক্ষ্য নেই; আর তাই, শয়তান সহজেই তাদের অন্তঃকরণ অধিকার করতে পারে। বিশ্বাসে ঈশ্বরের বাক্যে অবস্থিতি করাটা আমাদের জন্য খুবই অপরিহার্য। যদি আপনি প্রকৃতরূপেই পরিত্রাণ লাভ করতে চান, তাহলে আপনাকে নিজের আবেগী চিন্তা এবং অনুভূতির উপর নির্ভর না করে অবশ্যই পরিত্রাণের বাক্যের উপর নির্ভর করতে হবে। আপনাকে প্রভুর বাক্য উপলব্ধি এবং বিশ্বাস করতে হবে, এবং নিশ্চিত হতে হবে যে, “এটা প্রভু বলেছেন। প্রভু জল ও আত্মার সুসমাচার দ্বারা আমার সমস্ত পাপ মোচন করেছেন। প্রভু যখন যোহন বাপ্তাইজক কর্তৃক বাপ্তাইজিত হন, তখন তিনি বলেছিলেন, ‘এখন সম্মত হও, কেননা এইরূপে সমস্ত ধার্মিকতা সাধন করা আমাদের পক্ষে উপযুক্ত।’ প্রধান যাজক যেমন জীবিত পাপার্থক প্রাণীর উপরে হস্তার্পণ করলে তার উপরে সমস্ত পাপ অর্পিত হতো, তেমনি যোহন বাপ্তাইজক যখন যীশুকে বাপ্তাইজিত করলেন, তখন মানব জাতির সমস্ত পাপ যীশুর উপরে অর্পিত হয়েছিল। সে সময়ে আমার সমস্ত পাপও যীশুতে অর্পিত হয়েছিল।”
যদি আপনার হৃদয়ে ঈশ্বরের পরিত্রাণের বাক্য না থাকে, তাহলে আপনি পাপের ক্ষমা লাভ করেন নাই। আর, আপনি আপনার ব্যক্তিগত পাপ থেকেও পরিত্রাণ লাভ করেন নাই। আপনার সমস্ত ব্যক্তিগত পাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যও আপনাকে জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস করতে হবে। এইজন্য, আপনি এবং আমি যদি শুধুমাত্র ঈশ্বরের পরিত্রাণের বাক্যে বিশ্বাস করি, তাহলে এই বাক্য আমাদের হৃদয় ও আত্মা, উভয়ই রক্ষা করে। আপনার এবং আমার মধ্যে যদিও অনেক ভুল-ভ্রান্তি রয়েছে, কিন্তু পরিত্রাণের বাক্য আমাদের আত্মায় প্রভুত্ব করে। কারণ, যীশু আমাদের বলছেন, “তোমরা যদিও অযোগ্য, তবুও আমি তোমাদের সমস্ত পাপ ক্ষমা করেছি। যখন আমি যোহন বাপ্তাইজক কর্তৃক বাপ্তাইজিত হয়েছিলাম, তখন তোমাদের সমস্ত পাপ নিজে গ্রহণ করেছিলাম এবং সেগুলো মোচন করেছিলাম। জগতের সমস্ত পাপ নিজের উপরে তুলে নেওয়ার জন্যই আমি যোহন বাপ্তাইজক কর্তৃক বাপ্তাইজিত হয়েছিলামি। যেহেতু আমি এভাবে জগতের সমস্ত পাপ নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলাম, তাই আমাকে তোমাদের এই সমস্ত পাপের দন্ডরূপে ক্রুশারোপিত হতে হয়েছিল এবং হত হতে হয়েছিল। আর মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হয়ে, আমি তোমাদেরকে একটা নতুন জীবন দান করেছি।” পরিত্রাণের বাক্য এইভাবে আমাদের পক্ষে সাক্ষ্য দেয়। আপনার এবং আমার মধ্যে পরিত্রাণের এই বাক্য রয়েছে বলেই আমরা আমাদের সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হয়েছি। জল ও আত্মার সুসমাচার আমাদেরকে জ্যোতিতে আনে, কারণ ঈশ্বর জ্যোতি। আর এই বাক্যে আসার দ্বারা আমরা আমাদের সমস্ত পাপের ক্ষমা লাভ করতে পারি। এইজন্য, আপনি এবং আমি অবশ্যই এই বাক্যে সব সময় নির্ভর করব।
আমাদেরকে যে বিষয়টি অবশ্যই জানতে হবে
১ যোহন ১:৯ পদে লেখা আছে, “যদি আমরা আপন আপন পাপ স্বীকার করি, তিনি বিশ্বস্ত ও ধার্মিক, সুতরাং আমাদের পাপ সকল মোচন করিবেন, এবং আমাদিগকে সমস্ত অধার্মিকতা হইতে শুচি করিবেন।” এই বাক্যকেও এর মতো করেই গ্রহণ করতে হবে। যদি আমাদের মধ্যে কোন পাপ থাকে, তাহলে আমাদের তা স্বীকার করতে হবে। প্রভু বিশ্বস্ত ও ধার্মিক, তিনি ইতোমধ্যেই আমাদেরকে শুচি করেছেন। পুরাতন নিয়মে প্রভু প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, তিনি আমাদের সমস্ত পাপ মোচন করবেন। আর নূতন নিয়মে প্রভু বাস্তবিকই এই জগতে আসলেন এবং যোহন বাপ্তাইজককেও পাঠালেন। আর যোহন বাপ্তাইজক যীশুকে বাপ্তাইজিত করার দ্বারা তাঁর উপরে মানবজাতির সমস্ত পাপ অর্পণ করলেন। এভাবে জগতের সমস্ত পাপ নিজের উপরে তুলে নেওয়ার জন্য যীশুকে ক্রুশারোপিত হতে হয়েছিল। আর মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হয়ে তিনি আমাদের পরিত্রাণ করলেন।
এইজন্য, যদি কেউ তার অন্তঃকরণের সমস্ত পাপ ঈশ্বরের সাক্ষাতে সৎভাবে স্বীকার করে, এবং বলে যে, “আমি বাস্তবিকই একজন পাপী,” তাহলে এই মানুষটি তার সমগ্র জীবনের সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হবে। এজন্য, আমি ঈশ্বর-প্রদত্ত জল ও আত্মার সুসমাচারের কাছে কৃতজ্ঞ। কিন্তু, কারো হৃদয়ে যদি পাপ থাকে, আর সে ঈশ্বরের সাক্ষাতে তা স্বীকার না করে, তাহলে তার কি হবে? এই মানুষটি তার পাপের ক্ষমা লাভ করতে পারবে না। যদি কেউ আপনাকে খুবই সুস্বাদু খাবার দেয়, আর আপনি তা না খেয়ে শুধু্ এর দিকে তাকিয়ে থাকেন, তাহলে আপনার উদর তৃপ্ত হবে না। আদমের বংশধর হিসেবে প্রত্যেকেই পাপ নিয়ে জন্মগ্রহন করেছে। কারণ বাইবেল বলে যে, প্রত্যেকেই পাপ করেছে এবং ঈশ্বরের গৌরববিহীন হয়েছে। এইজন্য, মানুষ তাদের জীবনে ঈশ্বরের ইচ্ছাকে অস্বীকার করে, আর তাদের মাংসের অভিলাষ, চোখের অভিলাষ এবং জীবিকার দর্পের পিছনে দৌঁড়ে বেড়ায়।
এভাবে, আমাদের সহজাত প্রকৃতির কারণে আমরা প্রত্যেকটি সম্ভবপর উপায়ে পাপ করি; আমাদের অন্তঃকরণ, চিন্তা অথবা কার্য, সব উপায়েই পাপ করি। তথাপি, আমাদের প্রভু জল ও আত্মার সুসমাচার দ্বারা আমাদের সমস্ত পাপ মোচন করেছেন। তাহলে, আমরা শুধুমাত্র একটি কাজই করতে পারি, আর তা হল- আমাদের উচিৎ হবে প্রভুকে ধন্যবাদ দিয়ে এই পরিত্রাণ গ্রহণ করা, আর প্রভুকে বলা যে, “প্রভু, তুমিই সঠিক। তুমি জল ও আত্মার সুসমাচার দ্বারা বাস্তবিকই আমার সমস্ত পাপ মোচন করেছো। আমি যতক্ষণ জল ও আত্মার সুসমাচার জানতাম না, ততক্ষণ তোমার সাক্ষাতে একজন পাপী ছিলাম। আমার হৃদয়ে পাপ ছিল। আর সে কারণে আমাকে নরকে নিক্ষিপ্ত হতে হতো। আমাকে তোমার সাক্ষাতে এভাবে দাঁড়াতে হতো এবং নরকে নিক্ষিপ্ত হতে হতো। কিন্তু তুমি জগতের সমস্ত পাপ মোচন করেছো। তুমি যোহন বাপ্তাইজককে বলেছিলে, ‘এইরূপে সমস্ত ধার্মিকতা সাধন করা আমাদের পক্ষে উপযুক্ত,’ আর এভাবে তাঁর কাছে বাপ্তাইজিত হওয়ার দ্বারা তুমি আমার সমস্ত পাপ নিজে বহন করেছিলে। তুমি বাস্তবিকই ঈশ্বরের মেষশাবক, যিনি জগতের সমস্ত পাপ তুলে নিয়েছিলেন। আর তুমি বাস্তবিকই পরিত্রাণের সমস্ত কার্য সম্পন্ন করেছো। প্রভু, আমি তোমাকে বিশ্বাস করি। আমি তোমার বাক্যে বিশ্বাস করি, যা বলে, ‘যে স্থলে এই সকলের মোচন হয়, সেই স্থলে পাপার্থক নৈবেদ্য আর হয় না।’ আমি পরিত্রাণের প্রত্যেকটি বাক্যে বিশ্বাস করি। প্রভু, তোমাকে ধন্যবাদ।”
এভাবে, যখন আমরা এই সত্য উপলব্ধি, বিশ্বাস ও গ্রহণ করি যে, প্রভু জল ও আত্মার সুসমাচার দ্বারা আমাদের সমস্ত পাপ মোচন করেছেন, তখন আমাদের হৃদয়ে পাপ থাকলেও, আমরা শুচিকৃত হয়ে যাই। যেহেতু প্রভুই আমাদেরকে প্রথমে জল ও আত্মার সুসমাচার দ্বারা প্রেম করেছিলেন, তাই তিনি নিজেই, ইতোমধ্যেই আমাদের সমস্ত পাপ মোচন করেছেন। সুতরাং, আপনি শুধুমাত্র যদি জল ও আত্মার সুসমাচার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত পরিত্রাণের সত্যে বিশ্বাস করেন, তাহলে আপনার সমস্ত পাপ থেকে অবশ্যই পরিত্রাণ লাভ করবেন।
আমরা শুধু ঈশ্বরের বাক্য দ্বারাই আমাদের প্রকৃত পরিত্রাণে পৌঁছাই। কেউ যদি ঈশ্বরের সাথে প্রকৃত সহভাগিতা করতে চায় এবং ঈশ্বরের ধার্মিকতায় অংশগ্রহণ করতে চায়, তাহলে তাকে প্রথমে অবশ্যই তার পাপ স্বীকার করতে হবে। প্রথমে তার নিজেকে পাপী বলে স্বীকার করতে হবে। বাইবেল বলে যে, মানুষ একবারই জন্মগ্রহণ করে, আর এর পরে তারা বিচারের সম্মুখীন হয়। এক বার জন্মগ্রহণ করলে, প্রত্যেককে অবশ্যই মরতে হবে। আর মৃত্যুর পর অপেক্ষা করে বিচার। সমস্ত মানুষই পাপে জন্মগ্রহণ করেছে, তারা সবাই পাপে জীবন যাপন করে, তারা সবাই পাপে পতিত হয়েছে; আর তাই, তাদের সবারই গন্তব্য হল নরক। ঠিক এই কারণেই, আমাদের একজন ত্রাণকর্তার প্রয়োজন ছিল। এই ত্রাণকর্তা হলেন যীশু খ্রীষ্ট, আর তাঁর পরিত্রাণের কার্য আমাদের জন্য অপরিহার্য। বিশেষভাবে বললে, যোহন বাপ্তাইজকের নিকট নেওয়া যীশুর বাপ্তিস্ম এবং তাঁর ক্রুশীয় রক্তে বিশ্বাস করাটা আমাদের জন্য অপরিহার্য। যোহন বাপ্তাইজকের নিকট নেওয়া প্রভুর বাপ্তিস্ম এবং তাঁর ক্রুশীয় রক্ত হল পরিত্রাণের কার্য, আর এটা আমাদের জন্য অপরিহার্য। আপনি কি প্রভুর জল ও আত্মার সুসমাচারের কার্যকে আপনার পরিত্রাণ হিসেবে গ্রহণ করছেন? যদি আপনি সত্যিকারভাবেই তা করেন, তবে আপনি আপনার সমস্ত পাপ থেকে পরিত্রাণ লাভ করবেন। যদি পাপীরা এভাবে তাদের পাপ স্বীকার করে, তাহলে তারা জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস দ্বারা পরিত্রাণ লাভ করবে। জল ও আত্মার এই সুসমাচার প্রভুর পরিত্রাণের কার্য গঠন করে।
আমাদের যে সঠিক বিশ্বাসটি থাকতে হবে
আপনার হৃদয়ে পাপ থাকা সত্ত্বেও যদি আপনি তা স্বীকার না করেন, তাহলে সেটা ভুল। যদি কেউ বলে, “যীশুতে বিশ্বাস করার পরও আমার হৃদয়ে পাপ আছে। কিন্তু, যেহেতু আমি যীশুতে বিশ্বাস করি, সেহেতু স্বর্গে যাব,” তাহলে এই মানুষটি নিশ্চিতভাবেই নরকে যাবে। এটা না বলে বরং মানুষকে এভাবে স্বীকারোক্তি করতে হবে যে, “যদিও আমি যীশুতে বিশ্বাস করি, তবুও আমার হৃদয়ে এখনো পাপ রয়েছে। নিশ্চয়ই আমি চলার পথে কিছু একটা ভুল বুঝেছি এবং ভ্রান্ত বিশ্বাস করেছি। যীশুতে বিশ্বাস করার আগে ও পরে, উভয় সময়ই আমি একজন পাপী ছিলাম; আর আমি এখনো পাপী। এর একটাই অর্থ- আমি আমার পাপ থেকে এখনো পরিত্রাণ লাভ করি নাই। প্রভু, আমি এখনো পাপের ক্ষমা লাভ করি নাই। আমি এখনো পাপী আছি। তুমি বলেছো যে, তুমি আমাকে জল ও আত্মার সুসমাচার দ্বারা পরিত্রাণ করেছো। তাই আমি এই বিষয়টি বাইবেলে দেখছি এবং তা মনে আন্দোলন করছি। আর আমি এখন উপলব্ধি করছি যে, তোমার বাক্য সত্য। প্রভু, তুমি সৎ। এখন আমি জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস করছি। তুমি ইতোমধ্যেই আমার সমস্ত পাপ মোচন করেছো। অবশেষে আমি এই সত্য উপলব্ধি করতে পেরেছি, আর এই সত্যকে আমি সজ্ঞানে আমার হৃদয়ে গ্রহণ করছি। প্রভু, আমি তোমাতে বিশ্বাস করি।” শুধুমাত্র তখনই একজন মানুষ পাপের প্রকৃত ক্ষমা লাভ করতে পারে।
বাইবেল বলে, “যদি আমরা বলি যে, পাপ করি নাই, তবে তাঁহাকে মিথ্যাবাদী করি, এবং তাঁহার বাক্য আমাদের অন্তরে নাই” (১ যোহন ১:১০)। এমন কে আছে, যে ঈশ্বরের সাক্ষাতে পাপ করেনি? এমনকি যারা জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস করে, তাদের মধ্যেও কেউ কি আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলতে পারবে যে, পাপের ক্ষমা লাভের পর থেকে এ পর্যন্ত সে কোন কোন পাপ করেনি? যারা জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস করে না, তাদের বিষয়টি কেমন? তাদের মধ্যেও কেউ কি বলতে পারবে যে, “আমি একদিনও ভোরের প্রার্থনা সভা বাদ দিইনি। আমি সব ধরণের ভাল কাজ করেছি। আমি সর্বোচ্চ মাত্র কয়েকটা হাতে-গোনা পাপ করেছি, আর এই সমস্ত পাপ ক্রুশীয় রক্ত দ্বারা মোচিত হয়েছে। আমি যখন প্রার্থনা করছিলাম, তখন প্রভু আমার সামনে এসে আমাকে বললেন যে, তিনি আমার সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দিয়েছেন। সুতরাং আমি পাপের ক্ষমা লাভ করেছি।” আপনার স্বীকারোক্তি কি এই প্রকার?
আমার সহ-বিশ্বাসীগণ, পাপী অথবা ধার্মিক (যারা পাপের ক্ষমা লাভ করেছে) এমন কেউই নেই যে কখনো পাপ করেনি। সবাই পাপ করেছে। যদি আমরা বলি যে, আমরা ঈশ্বরের সাক্ষাতে পাপ করিনি, তাহলে আমরা তাঁকে মিথ্যাবাদী করি। আমরা পাপ করিনি বলে আমাদের কোন পাপ নেই, এটা সত্যি নয়; বরং শুধুমাত্র, প্রভুই আমাদের সমস্ত পাপ তুলে নিয়েছেন বলে আমাদের মধ্যে কোন পাপ নেই। শাস্ত্র বলে যে, যীশু হলেন ঈশ্বরের মেষশাবক, যিনি জগতের সমস্ত পাপভার নিয়ে যান। আর ঠিক এই কারণেই আমাদের মধ্যে কোন পাপ নেই। তাহলে আমরা ঈশ্বরকে কিভাবে বলতে পারি যে, আমরা কোন পাপ করি নাই? যদিও আমরা এখনো এই জগতে আমাদের সম্পূর্ণ জীবন যাপন করি নাই, তবুও ঈশ্বর জল ও আত্মার সুসমাচার দ্বারা ইতোমধ্যেই জগতের সমস্ত পাপ একেবারে চিরকালের জন্য মোচন করেছেন। তাহলে কি আমরা ঈশ্বরকে বলতে পারি যে, আমরা পাপ করিনি? যদিও এই জগতে আমাদের জীবন এখন সম্পূর্ণ হয়নি, তবুও কি ঈশ্বর বলেননি যে, তিনি জগতের সমস্ত পাপ তুলে নিয়েছেন? আমরা পাপ করিনি- এটা বললে মিথ্যা বলা হবে। সর্বোপরি, পাপের ক্ষমা লাভের পরও আমরা কি এখনো পাপ করি না? অবশ্যই করি।
যে দাবি করে যে, সে ঈশ্বরের সাক্ষাতে পাপ করেনি, তার হৃদয়ে ঈশ্বরের বাক্য, অর্থাৎ জল ও আত্মার সুসমাচারের বাক্য নেই। যদি ঈশ্বর আমাদেরকে বলেন যে, আমরা পাপী, তাহলে আমাদেরকে তা স্বীকার করতে হবে; আর তিনি আমাদের যেভাবে বলেন, সেভাবে পরিবর্তিত হতে হবে। আমি ঠিক বলে বোঝাতে পারব না যে, এটা স্বীকার করা আমাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ যে, আমরা পাপী; আমাদের বিবেক পাপে পূর্ণ; আমরা যতই চেষ্টা করি না কেন, আমরা মন্দ ছাড়া ভাল করতে পারি না; আর আমরা নরকে যাওয়ার যোগ্য। শুধুমাত্র তখনই আমরা ঈশ্বরের সাথে প্রকৃত সহভাগিতা করতে পারব। আর শুধুমাত্র তখনই আমরা ধার্মিকদের সাথে ও ঈশ্বরের লোকদের সাথেও প্রকৃত সহভাগিতা করতে পারব।
প্রকৃত সহভাগিতা কোথা থেকে আসে?
আমরা জানি, ঈশ্বর জ্যোতি; তাই আমাদেরকেও ঈশ্বর-কথিত বাক্য, অর্থাৎ জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস দ্বারা আমাদের পাপ থেকে অবশ্যই ধৌত হতে হবে। যখন আমরা উপলব্ধি ও স্বীকার করি যে, আমরা পাপী, এবং যখন আমরা প্রকৃত জ্যোতির বাক্যে, অর্থাৎ জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস করি, তখন আমরা ঈশ্বরের সাথে প্রকৃত সহভাগিতা করতে পারি। ঈশ্বর আমাদের বলছেন, “তোমরা পাপী। তোমরা এই জগতে পাপ নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছো, আর তোমরা তোমাদের সমগ্র জীবন জুড়েই পাপ করবে।” এভাবে ঈশ্বর আমাদেরকে নিকৃষ্ট পাপী বলছেন। আপনি কি এটা স্বীকার করেন? বাইবেল বলে যে, যদি ঈশ্বরের ব্যবস্থা আমাদের উপরে দৃঢ়ভাবে প্রয়োগ করা হতো, তাহলে আমরা সবাই নরকে নিক্ষিপ্ত হতাম। আমরা ঈশ্বরের এই বাক্য আমাদের হৃদয়ে অবশ্যই গ্রহণ করব। আর আমরা বিশ্বাস করব যে, ঈশ্বর জল ও আত্মার সুসমাচার দ্বারা আমাদের মতো নিকৃষ্ট পাপীদের সমস্ত পাপ মোচন করেছেন। এটা করাই হল পরিত্রাণে পৌঁছানো। সুতরাং, বিশ্বাস দ্বারাই আমরা আমাদের পাপের ক্ষমা লাভ করি। ঈশ্বর-কথিত জল ও আত্মার সুসমাচারের বাক্যে বিশ্বাস দ্বারাই আমরা জগতের জ্যোতি হই। ঈশ্বরের ধার্মিকতায় বিশ্বাস দ্বারাই আমরা তাঁর সন্তান হই।
প্রভু কি জল ও আত্মা দ্বারা আপনার এবং আমার সমস্ত পাপ মোচন করেছেন? তিনি বাস্তবিকই সে সমস্ত একেবারে চিরকালের জন্য মোচন করেছেন। আমরা যারা জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস করি, আমাদেরকে কি ঈশ্বর জ্যোতিতে রূপান্তর করেছেন? তিনি বাস্তবিকই আমাদেরকে জগতের জ্যোতিতে রূপান্তর করেছেন। আরো, ঈশ্বরের রাজ্যে আমরা জ্যোতির সন্তান। আমাদের প্রভু বলেছেন যে, যারা অনেক মানুষকে সঠিক পথে নিয়ে আসবে, তারা তাঁর রাজ্যে চিরকাল ধরে তারার মতো জ্বলবে। আমরা জগতের দীপ্তি। প্রভুই নিজেই আমাদেরকে জগতের দীপ্তি ও লবণ বলেছেন। এর অর্থ এই, এই জগতে আমরা অপরিহার্য। আমরা আমরা তাই।
কিন্তু আপনি এবং আমি যদি অন্ধকার হতাম, তাহলে এই জগতে আমরা শুধু অন্ধকারই ছড়াতাম; আর আমরা সম্পূর্ণরূপে নিষ্প্রোয়জনীয় হতাম। এই জগতের ৭০০ কোটি মানুষের মধ্যে যদি ৬০০ কোটি মানুষও যীশুতে বিশ্বাস করে, কিন্তু জল ও আত্মার সুসমাচার না জানে, আর এর ফলে তাদের হৃদয়ে পাপ থাকে, তাহলে তারা এই জগতের জ্যোতি না, কিন্তু শুধুই অন্ধকার। এই কারণেই আজকের অনেক খ্রীষ্টান জগতের জ্যোতি হতে পারে না। যদিও অগণিত খ্রীষ্টান ধার্মিকভাবে জীবন যাপনের চেষ্টা করছে, কিন্তু তারা জ্যোতি হতে পারে না। তারা জ্যোতি থেকে বিচ্ছিন্ন। তাই তারা প্রত্যেকের সাথে মিথ্যা বলে এবং পরস্পরকে প্রতারণা করে; আর এরপরও তারা ভাবে যে, তারা পাপ করেনি।
যাইহোক, প্রভু আমাদের সমস্ত পাপ মোচন করেছেন এবং আমাদেরকে জগতের জ্যোতি করেছেন। আমরা যারা জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস করি, আমাদেরকে ঈশ্বর সারা পৃথিবীতে সুসমাচার প্রচার করতে দিয়েছেন। ফলে, যারা আমাদের সাথে সহভাগিতা করছে- অর্থাৎ, যারা আমাদের প্রচার করা ঈশ্বরের এই বাক্য শুনছে- তারা অবর্ণনীয় আনন্দ লাভ করছে। এটা অত্যন্ত বিস্ময়কর ও চমৎকার ব্যাপার, আর এটা আমাকে সব সময়ই মোহিত করে।
আমার সহ-বিশ্বাসীগণ, আমাদের নিজেদেরকে অবশ্যই প্রশ্ন ও উপলব্ধি করতে হবে যে, ঈশ্বরের দৃষ্টিতে আমরা সত্যিই জ্যোতি নাকি অন্ধকার। পাপের ক্ষমা লাভের পরও আমাদের চিন্তা এবং কার্য বিপথে যায়, এবং এরপরও আমাদের অনেক ভুল-ভ্রান্তি থাকে। এই রকম সময়ে, আমরা ঈশ্বরের সাক্ষাতে অবশ্যই সরাসরি স্বীকার করব এবং জল ও আত্মার সুসমাচার পুনর্বার রোমন্থন করব। আমরা অবশ্যই সত্যে দিকে তাকাবো, এবং চিন্তা করব যে, প্রভু কিভাবে আমাদের সমস্ত পাপ মোচন করেছেন। আর এর দ্বারা আমরা অবশ্যই বিশ্বাস করব যে, প্রভু আমাদেরকে ইতোমধ্যেই জগতের জ্যোতিতে রূপান্তর করেছেন এবং নিষ্পাপ করেছেন। প্রভু আমাদেরকে সেই বিশ্বাস দান করেছেন, যার দ্বারা আমরা এই জগৎকে জয় করতে পারি। তিনি আমাদের নিজেদেরকে জয় করার বিশ্বাসও দান করেছেন। তিনি আপনার এবং আমার কৃত প্রত্যেকটি পাপ মোচন করেছেন। প্রথম দিন থেকে শুরু করে এই পর্যন্ত আমরা যে সমস্ত পাপ করেছি এবং ভবিষ্যতেও যে সমস্ত পাপ করব, প্রভু সে সমস্ত পাপই যখন বাপ্তাইজিত হয়েছিলেন, তখন নিজের উপরে তুলে নিয়েছিলেন এবং মোচন করেছিলেন। এর দ্বারা তিনি আমাদেরকে এমন মানুষ তৈরী করেছেন, যারা প্রভুকে অনুসরণ করতে পারে।
৮ম পদটির ভুল ব্যাখ্যা
যারা জল ও আত্মার সুসমাচার সম্পর্কে অজ্ঞ, তারা অবিরতভাবে ৮ম পদটির ভুল ব্যাখ্যা করে। তারা দাবি করে যে, অনুতাপের দ্বারা পাপের ক্ষমা লাভ করা যায়। এই লোকেরা যীশুতে বিশ্বাস করলেও, পরিত্রাণের জন্য তারা শুধুমাত্র ক্রুশীয় রক্তই জানে এবং তাঁতেই নির্ভর করে। আর তাই, যখন পাপ করে, তখন তারা নিজেদেরকে পুনর্বার পাপী বলে সাব্যস্ত করে এবং চোখের জলে প্রভুর কাছে তাদের পাপের ক্ষমা ভিক্ষা করে। এর দ্বারা কেউ প্রভুকে যথাযথভাবে অনুসরণ করতে পারে না। আপনি যদি আপনার ব্যক্তিগত পাপে আটকে পড়েন, তবে আপনি প্রভুকে অনুসরণ করতে পারবেন না। আমাদের পাপ সম্পর্কে প্রভু যিশাইয় ১:১৮ পদে বলেছেনঃ
“সদাপ্রভু কহিতেছেন, আইস, আমরা উত্তর প্রত্যুত্তর করি; তোমাদের পাপ সকল সিন্দুরবর্ণ হইলেও হিমের ন্যায় শুক্লবর্ণ হইবে; লাক্ষার ন্যায় রাঙ্গা হইলেও মেষলোমের ন্যায় হইবে।”
এখানে বাইবেল বলে যে, আমাদের পাপ হল সিন্দুরবর্ণ, লাক্ষার মতো লাল, কুয়াশার মত গাঢ়। এটা বোঝাচ্ছে, আমরা ঠিক কত পাপ করেছি। এটা বোঝায় যে, যেহেতু আমাদের পাপ খুবই বেশি, সেহেতু আমরা যদি শুধুমাত্র অনুতাপের প্রার্থনা উৎসর্গের দ্বারা আমাদের এই সমস্ত পাপ থেকে মুক্তি পেতে চাই, তাহলে আমরা আমাদের পাপেই আটকে পড়ব, আর প্রভুকে অনুসরণ করতে পারব না। তাহলে, প্রভুকে অনুসরণ করার জন্য আমরা কি করব? আমাদের ব্যক্তিগত পাপ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য আমরা কি করব? যেহেতু আমরা জানি যে, প্রভু জ্যোতি, তাই আমরা অবশ্যই উপলব্ধি ও বিশ্বাস করব যে, প্রভু আমাদেরকেও জ্যোতিতে রূপান্তর করেছেন। আমরা অবশ্যই জানব যে, প্রভু জল ও আত্মার সুসমাচার দ্বারা আমাদের সমস্ত পাপ মোচন করেছেন; আর এভাবে আমরা প্রভুকে অবশ্যই অনুসরণ করব। কিন্তু কোনক্রমে যদি আমরা আবারো পাপ করে ফেলি, তাহলে আমরা তৎক্ষণাৎ আমাদের সেই পাপ স্বীকার করব, এবং জানব ও বিশ্বাস করব যে, প্রভু এই পাপও মোচন করেছেন।
প্রভু আমাদের সমস্ত পাপ মোচন করেছেন, এটা বিশ্বাসের দ্বারা আমরা পাপে আবদ্ধ হওয়াকে এড়িয়ে চলতে পারি। এই বিশ্বাস দ্বারা আমরা প্রভুর ধার্মিকতার কার্য করতে পারি এবং তাঁকে অনুসরণ করতে পারি। যারা যীশুতে বিশ্বাস করে, তারা স্বাভাবিকভাবেই ধার্মিকতার কার্য করতে চায়। যা ঠিক, তা করাটা বিশ্বাসীদের অবশ্যই উচিত। যাইহোক, যার মধ্যে পাপ থাকে, সে কোন ধার্মিক কার্য করতে পারে না। সর্বোপরি, এই লোকেরা তাদের পাপের জন্য নরকে যাবে, তাহলে তারা কিভাবে কোন ধার্মিক কার্য করতে পারে; এটা কি অসম্ভব নয়?
আমার সহ-বিশ্বাসীগণ, যদি আমরা নিজেদেরকে আমাদের পাপের দ্বারা আবদ্ধ হতে দেই, তাহলে আমরা প্রকৃত খ্রীষ্টান হিসেবে জীবন যাপন করতে পারব না। যীশু জ্যোতি। আর যেহেতু তিনি জ্যোতি, তাই আমাদেরকে তাঁর অনুসরণ করতে বলেছেন। আর যীশুকে অনুসরণ করতে হলে, আমাদেরকে প্রথমে জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস দ্বারা আমাদের পাপ থেকে অবশ্যই মুক্ত হতে হবে। প্রভু তাঁর বাপ্তিস্মের দ্বারা আমাদের সমস্ত পাপ নিজের উপর তুলে নিলেন, সেই পাপ নিয়ে ক্রুশারোপিত হয়ে মৃত্যুবরণ করলেন এবং মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হলেন- এই সত্যে বিশ্বাসের দ্বারা আমরা প্রভুকে অবশ্যই অনুসরণ করব। আমরা নিজেদের অযোগ্যতা ও চিন্তানুসারে চলব না। আর আমরা জগতের অন্ধ বিশ্বাসেও পতিত হব না। বিদেশে কার্যরত আমাদের সহ-কর্মীরা বলেন যে, সারা পৃথিবী জুড়েই অনেক খ্রীষ্টান আছে, যারা শুধুমাত্র জনপ্রিয় ধর্মতত্ত্বগুলোতে বিশ্বাস করে। এটা একটা খোলা বিষয়। বিশ্বাস কোন জনপ্রিয়তার বিষয় নয়। যত মানুষই বলুক না কেন যে- যীশুতে বিশ্বাস করা সত্ত্বেও খ্রীষ্টানরা পাপী থাকতে পারে, এর মধ্যে ভুল কিছু নেই- তবুও, যদি শাস্ত্র এটাকে ভুল বলে, তাহলে এটা ভুল।
সংকীর্ণভাবে শুধু এটাই বিশ্বাস করতে হবে যে, প্রভু জল ও আত্মার সুসমাচার দ্বারা আমাদের সমস্ত পাপ মোচন করেছেন; এটাই বিশ্বাসের সঠিক উপায়। ঈশ্বর যা বলেন, সেটাই আমাদের বিশ্বাসের ভিত্তি হওয়া উচিৎ; প্রত্যেকে যা বলে, সেটা নয়। ঈশ্বর পবিত্র। পাপীরা পবিত্র ঈশ্বরকে তাদের পিতা বলে ডাকে, এটা একটা মস্ত ভুল। এতে গুরুতর পাপ হয়। আমরা যখন পাপী ছিলাম, তখন যীশু এই জগতে আসলেন। পিতা ঈশ্বরের ইচ্ছার বাধ্য হয়ে তিনি বাপ্তাইজিত হওয়ার দ্বারা আমাদের সমস্ত পাপ নিজে বহন করলেন। তারপর ক্রুশে মৃত্যুবরণ করলেন, মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হলেন, এবং এভাবে আমাদেরকে আমাদের পাপের দন্ড থেকে সম্পূর্ণরূপে পরিত্রাণ করলেন। এইজন্য, আমরা আমাদের দূর্বলতায়, মাংসিক চিন্তায় অথবা জনপ্রিয় খ্রীষ্টান ধর্মতত্ত্বে আমাদের বিশ্বাস স্থাপন করব না। বরং, আমরা ঈশ্বরের বাক্য খুলব, এবং নিশ্চিত হব যে, আমাদের বিশ্বাস বাইবেলের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
আমরা বিদেশ থেকে এমন অনেক ই-মেইল পেয়েছি, যেগুলোতে পরিত্রাণের সাক্ষ্য দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে এক বোন বলেন যে, যখন তিনি আমাদের প্রথম বইটি পড়ে, তখন তিনি এটি শাস্ত্রের সঙ্গে মিলিয়ে দেখেন যে, শাস্ত্রানুসারে এটা নিখুঁত কিনা। তিনি বিরয়াবাসীদের মতো খোলা মনের অধিকারী ছিলেন। বাইবেল বিরয়াবাসীদের বিষয়ে বলে, “থিষলনীকীর যিহূদীদের অপেক্ষা ইহারা ভদ্র ছিল; কেননা ইহারা সম্পূর্ণ আগ্রহপূর্বক বাক্য গ্রহণ করিল, আর এই সকল বাস্তবিকই এইরূপ কি না, তাহা জানিবার জন্য প্রতিদিন শাস্ত্র পরীক্ষা করিতে লাগিল” (প্রেরিত ১৭:১১)। আমি ঠিক বলে বোঝাতে পারব না যে, বাইবেলের সাথে আমাদের বিশ্বাস মিলিয়ে দেখাটা আমাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
যাইহোক, অনেক খ্রীষ্টান ঈশ্বরের সাথে সহভাগিতা করতে চায় ঠিকই, কিন্তু তারা পরিত্রাণের জন্যে শুধুমাত্র ক্রুশীয় রক্তেই বিশ্বাস করে। এই লোকেরা পাপে পতিত হলে, এই পাপ থেকে আর নিস্তার পেতে পারে না। তারা যীশুতে বিশ্বাস করার আগে পাপী ছিল, যীশুতে বিশ্বাস করার পরও পাপী আছে, এবং তারা পাপী হয়েই মরবে। “প্রভু, আমি পাপী,” অনেক খ্রীষ্টান ঈশ্বরের কাছে এই কথাটা এমনভাবে বলে, যেন এটা একটা গর্বের বিষয়। কিন্তু এই লোকেরা পরিশেষে পাপী হিসেবেই বিনষ্ট হবে। যতক্ষণ জীবিত আছি, এর মধ্যেই প্রভুর ধার্মিকতা বোঝা এবং তাঁতে বিশ্বাস করাটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রভুর ধার্মিকতাকে অবশ্যই বিশ্বাসে আমাদের করে নিতে হবে।
ঈশ্বর যখন আমাদের বলছেন যে, তিনি আমাদের পাপ মোচন করেছেন, এবং আমরা তাঁর সন্তান, তখন আমরা তাঁকে বলতে পারি না যে, “প্রভু, এখনো আমার মধ্যে অনেক পাপ আছে। আমি একজন পাপী। আমি কৃতজ্ঞ যে, তুমি আমাকে তোমার সন্তান বলছো, কিন্তু আমার হৃদয়ে এখনো পাপ আছে, আর তাই আমি বলতে পারি না যে, আমি তোমার সন্তান। এমনকি আমি নিজেই নিজেকে সহ্য করতে পারি না।” আপনি কি নিজেকে এভাবে নত করতে চান? বিনয়ী হওয়াটা অনেক সময়ই ঠিক, কিন্তু এটা সেই রকম নম্রতা নয়। ঈশ্বর যখন আমাদেরকে অনুগ্রহ দিচ্ছেন, তখন আমরা কি কারণে এটা অগ্রাহ্য করব? আমাদের এটা করার এখতিয়ার নেই। যদি ঈশ্বর আমাদের বলেন যে, তিনি জল ও আত্মার সুসমাচার দ্বারা আমাদের পাপ মোচন করেছেন, তখন আমাদের উচিৎ হবে ধন্যবাদ সহকারে তা গ্রহণ করা। এটা করাই হবে সঠিক কাজ। এই অনুগ্রহ অগ্রাহ্য করার আমরা কে? আমরা তো নিকৃষ্ট পাপী, তাহলে আমরা কেন ঈশ্বরের অনুগ্রহ অগ্রাহ্য করব? যখন আমাদের নিজস্ব কোন ধার্মিকতা বা উত্তমতা নেই, তখন আমরা কিসের ভিত্তিতে এই অনুগ্রহ অগ্রাহ্য করব?
একজন নিঃস্ব ভিক্ষুক, যারা তাকে দান দেয়, তাদের সেই অনুগ্রহ কৃতজ্ঞতা সহকারে গ্রহণ করে। এটা অগ্রাহ্য করাই হল ঔদ্ধত্য। শাস্ত্র বলে, বিনাশের পূর্বে থাকে অহংকার (হিতোপদেশ ১৬:১৮)। ঈশ্বরের অনুগ্রহ অগ্রাহ্য করাটা হল চূড়ান্ত ঔদ্ধত্য। ঈশ্বর তাঁর পুত্রকে এই জগতে প্রেরণ করেছেন এবং আমাদের পাপ গ্রহণ করিয়ে তাঁকে ক্রুশারোপণের দ্বারা আমাদের পরিত্রাণ করেছেন। আমাদেরকে এটা অবশ্যই বিশ্বাস করতে হবে। আমরা এই পরিত্রাণ অবশ্যই অগ্রাহ্য করব না। আমাদের উচিত হবে ধন্যবাদ সহকারে বিশ্বাস করা। আমাদের উচিত হবে ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞ হওয়া। আর আমাদের উচিত হবে আমাদের জীবন দ্বারা ঈশ্বরকে মহিমান্বিত করা। যদিও আমরা ভুল-ভ্রান্তিতে পূর্ণ, তবুও প্রভু আমাদের মতো তুচ্ছ মানুষদেরকে পরিত্রাণ করলেন।
তিনি সমগ্র মানব জাতির পরিত্রাণ করেছেন। এইজন্য, আপনি এবং আমি আমাদের পরিত্রাণ পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছি। আমরা প্রত্যেকের কাছে এই সত্য সুসমাচার অবশ্যই প্রচার করব। প্রভু আমাদের সমস্ত পাপ মোচন করেছেন, এই আশীর্বাদের এবং আনন্দের খবর আমরা অবশ্যই ছড়িয়ে দিব। এই সুসমাচার, যা পাপীকে তার পাপ থেকে মুক্ত করে এবং অন্ধের চোখ খুলে দেয়, তা আমরা অবশ্যই প্রচার করব।
এমনকি এখনো, খ্রীষ্টানরা তাদের ব্যক্তিগত পাপের কারণে প্রভুকে অনুসরণ করতে পারে না। তারা তাদের ব্যক্তিগত পাপ থেকে মুক্ত হতেই পারে না। তাদের এই ব্যক্তিগত পাপ থেকে মুক্তি লাভের জন্য তাদেরকে অবশ্যই উপলব্ধি ও বিশ্বাস করতে হবে যে, প্রভু হলেন জ্যোতি। প্রভু জল ও আত্মার সুসমাচার দ্বারা তাদের সমস্ত পাপ মোচন করেছেন, আর তাদেরকে জ্যোতিতে নিয়ে এসেছেন- এই জ্ঞান ও বিশ্বাস দ্বারা তাদের প্রভুকে অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে। এটা অপরিহার্য। আমাদের একটা বইয়ের শিরোনাম ছিল, আপনি কি এখনো আপনার ব্যক্তিগত পাপের কারণে যন্ত্রণা ভোগ করছেন? আজকের অধিকাংশ খ্রীষ্টানরা যে যন্ত্রণা সহ্য করছে, তার কারণটা কি? তাদের এই কষ্ট ও যন্ত্রণার কারণ হল- যীশুতে বিশ্বাস করার পরও তারা তাদের পাপে আবদ্ধ আছে। আর তারা এই পাপ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য প্রাণপণ করে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে অনেকে বলে যে, যদি তারা পাপের প্রকৃত ক্ষমা লাভ করতে পারতো, তাহলে তাদের আর কিছুই চাওয়ার থাকতো না, এমনকি যদি তাদের ঠিক এই মুহূর্তে মৃত্যুবরণ করতে হয়, তবুও তারা রাজি। কিছু মানুষ তাদের পাপের কারণে এমনকি আত্মহত্যা পর্যন্ত করে।
আমার সহ-বিশ্বাসীগণ, আপনারা ঈশ্বরের প্রেম অবশ্যই অগ্রাহ্য করবেন না। পিতা ঈশ্বর তাঁর পুত্রের মাধ্যমে জল ও আত্মার সুসমাচার দ্বারা মানব জাতির সমস্ত পাপ মোচন করেছেন। তাহলে, আপনি কি করবেন? আপনি কি এই প্রেম অগ্রাহ্য করবেন নাকি এতে বিশ্বাস করবেন? আপনি অবশ্যই সম্পূর্ণ অন্তঃকরণে এতে বিশ্বাস করবেন। আপনি অবশ্যই ঈশ্বরের সাক্ষাতে তাঁর ধার্মিকতায় বিশ্বাস করবেন। আপনি কখনোই নিজের মাংসের ধার্মিকতায় বড়াই করবেন না। কখনোই নিজের পার্থিব জিনিসের ধার্মিকতায় দম্ভ করবেন না- অর্থাৎ, আপনি মন্ডলীতে যে দান করেছেন, যে যন্ত্রপাতি দিয়েছেন, বিদেশের মন্ডলীতে কাজের জন্য যে দান দিয়েছেন, স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে যে শ্রম দিয়েছেন অথবা প্রত্যেক আরাধনা সভায় অংশগ্রহণের জন্য যে কঠোর চেষ্টা করেছেন, তা নিয়ে দম্ভ করবেন না।
যদি আপনি এই সমস্ত কাজ সত্যিই করে থাকেন, তাহলে এটা ঈশ্বরের সাহায্যেই করেছেন। যদি ঈশ্বর আপনার অবস্থা ভাল না করতেন, তাহলে আপনি এগুলো করতে পারতেন না। আমাদেরকে নিজের ইচ্ছা অবশ্যই ভাঙতে হবে, আর ঈশ্বরের ধার্মিকতায় বিশ্বাস করতে হবে। আমাদেরকে ঈশ্বরের ধার্মিকতার উচ্চঃপ্রশংসা অবশ্যই করতে হবে। শুধুমাত্র তখনই প্রভু সন্তুষ্ট হবেন। প্রভু তখন আমাদেরকে তাঁর ইচ্ছানুসারে এবং তাঁর বিশ্বস্ত কার্য্যকারী হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাসীরা শুধুমাত্র প্রভুর ধার্মিকতায় গর্ব করে, আর তারা শুধুমাত্র এই ধার্মিকতার কার্যই করে ও তা ছড়িয়ে দেয়। অন্যদিকে, যারা যীশুতে বিশ্বাসের পরও পাপীই থেকে যায় এবং তাঁর সাক্ষাতে নিজেদের ধার্মিকতার বড়াই করে; যখন তাদের বড়াই করার মতো আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না, তখন তারা হতাশ ও বিষন্ন হয়ে যায়।
ঈশ্বর কিসে সন্তুষ্ট হন? যখন আমরা বিশ্বাস করি যে, ঈশ্বর জল ও আত্মার সুসমাচার দ্বারা আপনার এবং আমার সমস্ত পাপ মোচন করেছেন, আর এই পরিত্রাণের সত্যকে উচ্চঃপ্রশংসিত করি, একে প্রচার করি এবং এর কার্য করি- ঈশ্বর তখন সন্তুষ্ট হন। আপনি যদি আপনার নিজস্ব ধার্মিকতার বড়াই করতেই থাকেন, তাহলে কি ঈশ্বর সন্তুষ্ট হবেন? না, অবশ্যই না। আমাদের উচিত ঈশ্বরের প্রশংসা করা। আমাদের অবশ্যই সেই বিশ্বাস থাকতে হবে, যে বিশ্বাস ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করে। আমাদের নিজের ধার্মিকতাকে ছুড়ে ফেলে দিতে হবে। যিশাইয় পুস্তক বলে, আমাদের ধার্মিকতা হল ময়লা কাপড়ের মতো (যিশাইয় ৬৪:৬)।
যিরমিয় ২:২২ পদে বলা আছে, “যদ্যপি সোডা দিয়া তুমি আপনাকে ধৌত কর, ও অনেক সাবান লাগাও, তথাপি তোমার অপরাধ আমার সম্মুখে চিহ্নিত রহিয়াছে।” প্রভু যদি জল ও আত্মার সুসমাচার দ্বারা আপনার এবং আমার অপরাধ ধৌত না করতেন, তাহলে আমাদের পাপ আমাদের সাথে লেগেই থাকতো। প্রভু যদি আপনার এবং আমার অপরাধ ইতোমধ্যেই মোচন না করতেন, তাহলে আমাদের পাপ এখনো আমাদের সাথেই থাকতো। যাইহোক, প্রভুকে ধন্যবাদ, কারণ তিনি প্রায় ২,০০০ বছর আগেই আপনার এবং আমার সমস্ত পাপ মোচন করেছেন। তিনি যখন মানব দেহ ধারণ করে এই জগতে আসলেন, তখন যোহন বাপ্তাইজক কর্তৃক যর্দন নদীতে বাপ্তাইজিত হওয়ার দ্বারা আমাদের সমস্ত পাপ নিজে বহন করলেন। এরপর তিনি ক্রুশে হত হলেন, মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হলেন, এবং এভাবে আমাদের সমস্ত পাপ মোচন করলেন ও সমস্ত ধার্মিকতা সাধন করলেন। এখন প্রভু আমাদেরকে বলছেন যে, এখন আর কোন পাপার্থক নৈবেদ্য প্রয়োজন নেই, কারণ তিনি আমাদের সমস্ত পাপ মোচন করেছেন। তিনি বলেছেন, “যে স্থলে এই সকলের মোচন হয়ে, সেই স্থলে পাপার্থক নৈবেদ্য আর হয় না” (ইব্রীয় ১০:১৮)।
এইজন্য, প্রভু আমাদের সমস্ত পাপ মোচন করেছেন- এটা উপলব্ধি করে আপনার এবং আমার উচিত হবে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দেওয়া ও তাঁর প্রশংসা করা। আমরা কখনোই আমাদের ব্যক্তিগত পাপ নিয়ে পড়ে থাকব না ও সেগুলোর জন্য অনবরত অনুতাপ করব না। ১ যোহন ১:৮-১০ পদ আমাদেরকে যেমন সতর্ক করে দেয়, আমাদেরও উচিত হবে সেভাবে না বলা যে, “যখন আমি যীশুতে বিশ্বাস করেছিলাম, তখন পাপমুক্ত হয়েছিলাম। কিন্তু যদি আবারো পাপ করি, তাহলে পুনরায় পাপী হয়ে যাব। কিন্তু, এরপরও, আমি যেহেতু যীশুতে বিশ্বাস করি, তাই স্বর্গে যাব। নিশ্চয়ই, আমি যেহেতু পাপ করি, তাই আমি পাপী। কিন্তু প্রভু পাপীদেরকে পরিত্রাণ করেন। তাই পাপীরাও স্বর্গে যেতে পারে।” না, কখনোই না! একজন পাপীও স্বর্গে প্রবেশ করতে পারবে না। যদিও পাপীদেরকে পরিত্রাণ করার জন্যই ঈশ্বর এই জগতে এসেছিলেন, কিন্তু তাদের মধ্যে যারা তাঁর দ্বারা পরিত্রাণ লাভ করেছে, তাদের মধ্যে আর কোন পাপ নেই। তারা সবাই পাপমুক্ত হয়েছে। তাদের কারোর মধ্যেই আর কোন পাপ নেই।
নিজেকে ধোঁকা দিবেন না। আপনি যখন ঈশ্বরের সামনে আসেন, তখন তাঁকে ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। যেহেতু আমরা পাপ না করে থাকতে পারি না, আর ঈশ্বরের সামনে অনবরত পাপ করেই যাই, তাই প্রভু ২,০০০ বছর আগেই জল ও আত্মার সত্য সুসমাচার দ্বারা আমাদের সমস্ত পাপ একেবারে চিরকালের জন্য মোচন করেছিলেন। এই জ্ঞান নিয়েই আমরা প্রভুর কাছে আমাদের সমস্ত ভুল-ভ্রান্তি ও পাপ স্বীকার করি; কারণ আমরা উপলব্ধি ও বিশ্বাস করি যে, প্রভু ইতোমধ্যেই জল ও আত্মা দ্বারা আমাদের এই সমস্ত পাপ মোচন করেছেন। সুতরাং, আসুন আমরা বিশ্বাসে জ্যোতিতে বাস করি এবং আমাদের জীবন দ্বারা ঈশ্বরকে মহিমান্বিত করি। আপনারা জানবেন ও বিশ্বাস করবেন যে, শুধুমাত্র তখনই ঈশ্বর আনন্দিত হবেন।