Search

Sermones

বিষয় ৯: রোমীয় পুস্তক (রোমীয় পুস্তকের ভাষ্য)

[6-3] আপনার অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলোকে ধাৰ্ম্মিকতার অস্ত্র হিসেবে উৎসর্গ করুন (রোমীয় ৬:১২-১৯)

<রোমীয় ৬:১২-১৯>
 “অতএব পাপ তোমাদের মর্ত্ত্য দেহে রাজত্ব না করুক—করিলে তোমরা তাহার অভিলাষ-সমূহের আজ্ঞাবহ হইয়া পড়িবে; আর আপন আপন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অধার্ম্মিকতার অস্ত্ররূপে পাপের কাছে সমর্পণ করিও না, কিন্তু আপনাদিগকে মৃতদের মধ্য হইতে জীবিত জানিয়া ঈশ্বরের কাছে সমর্পণ কর, এবং আপন আপন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ধার্ম্মিকতার অস্ত্ররূপে ঈশ্বরের কাছে সমর্পণ কর। কেননা পাপ তোমাদের উপরে কর্ত্তৃত্ব করিবে না; কারণ তোমরা ব্যবস্থার অধীন নহ, কিন্তু অনুগ্রহের অধীন। তবে দাঁড়াইল কি? আমরা ব্যবস্থার অধীন নই, অনুগ্রহের অধীন, এই জন্য কি পাপ করিব? তাহা দূরে থাকুক। তোমরা কি জান না যে, আজ্ঞা পালনার্থে যাহার নিকটে দাসরূপে আপনাদিগকে সমর্পণ কর, যাহার আজ্ঞা মান, তোমরা তাহারই দাস; হয় মৃত্যুজনক পাপের দাস, নয় ধার্ম্মিকতাজনক আজ্ঞাপালনের দাস? কিন্তু ঈশ্বরের ধন্যবাদ হউক যে, তোমরা পাপের দাস ছিলেবটে, পরন্তু শিক্ষার যে আদর্শে সমর্পিত হইয়াছ, অন্তঃকরণের সহিত সেই আদর্শের আজ্ঞাবহ হইয়াছ; এবং পাপ হইতে স্বাধীনীকৃত হইয়া তোমরা ধার্ম্মিকতার দাস হইয়াছ। তোমাদের মাংসের দুর্ব্বলতা প্রযুক্ত আমি মানুষের মত কহিতেছি। কারণ, তোমরা যেমন পূর্ব্বে অধর্ম্মের নিমিত্তে আপন আপন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অশুচিতার ও অধর্ম্মের কাছে দাসরূপে সমর্পণ করিয়াছিলে, তেমনি এখন পবিত্রতার নিমিত্তে আপন আপন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ধার্ম্মিকতার কাছে দাসরূপে সমর্পণ কর।”
 
 

আরো অধিক অনুগ্রহ পাওয়ার আশায় আমরা পাপের জীবন যাপন করতে পারি না

 
 পাপ থেকে উদ্ধার পাওয়ার পরে ধার্ম্মিকের কিভাবে জীবন যাপন করা উচিত, রোমীয় ৬ অধ্যায়ে প্রেরিত পৌঁল সেই বিষয়ে আলোচনা করেছেন। যীশুর বাপ্তিস্ম “বিশ্বাস” সম্পর্কে পুনর্বার আলোচনা করেছেন। যীশুর বাপ্তিস্ম, ক্রুশ এবং পুনরুত্থানে বিশ্বাসের মাধ্যমে আমরা একবারে পাপের ক্ষমা লাভ করি। 
 যীশুর বাপ্তিস্ম ছাড়া আমরা পূর্ণরূপে ঈশ্বরের ধার্ম্মিকতা এবং পরিত্রাণ লাভ করতে পারি না। বাপ্তিস্মের মাধ্যমে যীশু যদি আমাদের পাপ তুলে না নিতেন, তাহলে পাপের ক্ষমা লাভ করে আমরা ধার্ম্মিক হতে পারতাম না।
 এখন আমরা দৃঢ় ভাবে নিজেদেরকে ধার্ম্মিক বলতে পারি। কারণ, যীশুর উপরে আমাদের সমস্ত পাপ অর্পিত হয়েছিল এবং সেই পাপের মূল্য হিসাবে তাঁকে ক্রুশীয় মৃত্যু বরণ করতে হয়েছিল। বিশ্বাসে পরিবাণ লাভ এবং বাস্তবে ধার্ম্মিক জীবন যাপন করা, - এই উভয় বিষয়ে রোমীয় ৬ অধ্যায়ে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “তবে কি বলিব? অনুগ্রহের বাহুল্য যেন হয় এই নিমিত্ত কি পাপে থাকিব? তাহা দুরে থাকুক”(রোমীয় ৬:১)। পূর্বের অংশে তিনি বলেছেন, “আর ব্যবস্থা তৎপরে পার্শ্বে উপস্থিত হইল, যেন অপরাধের বাহুল্য হয়; কিন্তু যেখানে পাপের বাহুল্য হইবে, সেখানে অনুগ্রহ আরও উপচিয়া পড়িল; যেন পাপ যেমন মৃত্যুতে রাজত্ব করিয়াছিল, তেমনি আবার অনুগ্রহ ধার্ম্মিকতা দ্বারা, অনন্ত জীবনের নিমিও,আমদের প্রভু যীশু খ্রীষ্ট দ্বারা রাজত্ব করে” (রোমীয় ৫:২০-২১) পাপ যত মারাত্মকই হোক না কেন, ঈশ্বরের প্রেম এবং ধার্ম্মিকতার চেয়ে তা কখনই বড় নয়। সত্য বাক্যের মাধ্যমে ঈশ্বরের প্রেম এবং ধার্ম্মিকতায় বিশ্বাস দ্বারা আমরা পাপের ক্ষমা পেয়েছি।
 বাইবেল বলে যে, আমরা যারা মাংসময় দেহে বাস করছি, আমরা পাপের ক্ষমা পাবার পরেও, ঈশ্বরের অনুগ্রহ যেন অধিক হয়। সেই কারণে আর পাপে জীবন যাপন করতে পারি না। “আমরা ত পাপের সম্বন্ধে মরিয়াছি, আমরা কি প্রকারে আবার পাপে জীবন যাপন করিব? অথবা তোমরা কি জান না যে, আমরা যত লোক খ্রীষ্ট যীশুর উদ্দেশে বাপ্তাইজিত হইয়াছি, সকলে তাঁহার মৃত্যুর উদ্দেশে বাপ্তাইজিত হইয়াছি? অতএব আমরা তাঁহার মৃত্যুর উদ্দেশে বাপ্তিস্ম দ্বারা তাঁহার সহিত সমাধিপ্রাপ্ত হইয়াছি; যেন, খ্রীষ্ট যেমন পিতার মহিমা দ্বারা মৃতগণের মধ্য হইতে উত্থাপিত হইলেন, তেমনি আমরাও জীবনের নূতনতায় চলি। কেননা যখন আমরা তাঁহার মৃত্যুর সাদৃশ্যে তাঁহার সহিত একীভূত হইয়াছি, তখন অবশ্য পুনরুত্থানের সাদৃশ্যেও হইব। (রোমীয় ৬:২-৫)।
 
 

বাপ্তিস্মের মাধ্যমে যীশুর সাথে আমরা মৃত্যুর উদ্দেশে সমাহিত হয়েছি

 
 আমাদের পুরাতন মনুষ্য যীশুর সাথে ক্রুশারোপিত হয়েছে। অর্থাৎ আমরা পাপ সম্বন্ধে মৃত। আমাদের সমস্ত পাপ যীশুর উপর। অর্পণ করা হয়েছে এবং আমাদের পক্ষে তিনি মৃত্যু বরণ করেছেন। তাই যীশুর মৃত্যু মানে পাপ সম্বন্ধে আমাদেরও মৃত্যু। “আমরা তাঁহার মৃত্যুর উদ্দেশে বাপ্তিস্ম দ্বারা তাঁহার সহিত সমাধিপ্রাপ্ত হইয়াছি।” আমাদের মাংসিক পুরাতন মনুষ্য বাপ্তিস্ম দ্বারা তাঁর সাথে মৃত্যুর উদ্দেশে সমাধিপ্রাপ্ত হইয়াছে।
 তবু তাঁর বাপ্তিস্মের মাধ্যমে আমাদের সমস্ত পাপ নিজের উপরে তুলে নিয়েছিলেন এবং আমাদের পরিবর্তে তিনি ক্রুশে মৃত্যু বরণ করেছিলেন। প্রকৃতিগতভাবে তিনি নিষ্পাপ ছিলেন। যা হোক, পাপীদের সমস্ত পাপ তিনি নিজের উপর তুলে নিয়েছিলেন এবং তাদের স্থলে তিনি বিচারিত হয়েছিলেন। আপনি কি এটা বিশ্বাস করেন? তাঁর নিজের তো বিচারিত হবার প্রয়োজন ছিল না, কিন্তু তার মাধ্যমে আমরা পাপীরাও বিচারিত হয়েছি, কারণ আমরা যীশু খ্রীষ্টে বাপ্তাইজিত হয়েছি।
 যীশুর বাপ্তিস্মের উপরে প্রেরিত পৌঁল খুব গুরুত্ব দিয়েছেন। আমরাও যীশুর বাপ্তিস্ম প্রচার করে থাকি। বিশ্বস্ততার দৃষ্টিভঙ্গিতে তাঁর। বাপ্তিস্ম প্রচার করায় কোন দোষ নেই। বাপ্তিস্মের মাধ্যমে যীশু সমস্ত পাপীদের পাপ তুলে নিয়েছেন এবং তাদের পক্ষে মৃত্যু বরণ করেছন, যেমন পুরাতন নিয়মে পাপার্থক বলির উপরে হস্তার্পণের মাধ্যমে পাপ অর্পণ করা হত এবং তারপর থেকে বলি দেয়া হত, ঠিক সেই ভাবে।
 ঈশ্বরের মেষশাবক যীশুকে যোহন বাপ্তাইজক বাপ্তিস্ম দিয়েছিলেন। তিনি বাপ্তিস্মের সময় পাপার্থক বলির মতো যীশুর। উপরে জগতের সমস্ত পাপ অর্পণ করেছিলেন। তাই তাঁর মৃত্যু আমাদের, অর্থাৎ সকল বিশ্বাসীর মৃত্যু। যীশু খ্রীষ্টে যারা বাপ্তাইজিত হয়েছে, যীশু খ্রীষ্টের সাথে তারা সমাধিস্থ হয়েছে। যীশুতে যারা বাপ্তাইজিত হয়নি, তারা পাপ থেকে মুক্ত হতেও পারে না, বিশ্বাস করতেও পারে না, নিজেদেরকে তারা অস্বীকার করে জগতকে জয় করতেও তারা পারে না।
 কেবল মাত্র যে ব্যক্তি যীশু খ্রীষ্টের বাপ্তিস্মে বিশ্বাস করে, সে জানে যে যীশুর সাথে ক্রুশে মৃত্যু বরণ করেছে। এই প্রকার ব্যক্তি নিজেকে অস্বীকার করার মাধ্যমে জগতকে জয় করতে পারে এবং জগতের উপরে রাজত্ব করতে পারে। ঈশ্বরের বাক্যে যে নির্ভর করতে পারে এবং বিশ্বাস করতে পারে; শুধু মাত্র যারা বিশ্বাস করতে পারে যে, একমাত্র যীশুই বাপ্তিস্মের মাধ্যমে তাদের এবং জগতের সকল পাপ তুলে নিয়েছেন, তারাই প্রকৃত পাপের ক্ষমা, অর্থাৎ প্রকৃত পরিত্রাণ পেতে পারে। 
 যীশুর বাপ্তিস্ম ও ক্রুশীয় পাপের ক্ষমা লাভের, অর্থাৎ পরিত্রাণের। মূল কথা। যীশু যদি বাপ্তিস্মের মাধ্যমে পাপীদের পাপ তুলে না নিতেন, তাহলে তাঁর মৃত্যুর মাধ্যমে পাপীদের ক্ষমা সম্ভব হত না। পরিত্রাণের মূল রহস্য হল যীশুর বাপ্তিস্ম। যোহন বাপ্তাইজক যীশুকে বাপ্তিস্ম দেওয়ার সময় যীশুর উপরে জগতের সমস্ত পাপ অর্পণ করা হয়েছিল।
 
 
ঈশ্বরের সাথে আমরা জীবনযাপন করি এবং নূতনতায়চলি 
 
 প্রেরিত পৌঁল বলেন, “অতএব আমরা তাঁহার মৃত্যুর উদ্দেশে বাপ্তিস্ম দ্বারা তাঁহার সহিত সমাধিপ্রাপ্ত হইয়াছি; যেন, খ্রীষ্ট যেমন পিতার মহিমা দ্বারা মৃতগণের মধ্য হইতে উত্থাপিত হইলেন, তেমনি। আমরাও নৃতনতায় চলি” ( রোমীয় ৬:৪ )। যীশু খ্রীষ্টে যারা বাপ্তাইজিত হয়েছে, তারা পাপের ক্ষমা পেয়েছে। তারা তাঁর মধ্য সমাধিস্থ হয়েছে এবং তাঁর মধ্যে নূতন জীবন পেয়েছে। এই বিশ্বাস একটি মহৎ বিশ্বাস। যীশুর বাপ্তিস্মের বিশ্বাস শক্ত বিশ্বাসের ভূমিতে প্রতিষ্ঠিত।
 “অতএব আমরা তাঁহার মৃত্যুর উদ্দেশে বাপ্তিস্ম দ্বারা তাঁহার সহিত সমাধিপ্রাপ্ত হইয়াছি; যেন, খ্রীষ্ট যেমন পিতার মহিমা দ্বারা মৃতগণের মধ্য হইতে উত্থাপিত হইলেন, তেমনি আমরাও জীবনের নূতনতায় চলি। কেননা যখন আমরা তাঁহার মৃত্যুর সাদৃশ্যে তাঁহার সহিত একীভূত হইয়াছি, তখন অবশ্য পুনরুত্থানের সাদৃশ্যেও হইব” (রোমীয় ৬:৪-৫)। যীশুর বাপ্তিস্মে বিশ্বাসের মাধ্যমে আমরা এক হতে পারি।
 এখন, যারা যীশু খ্রীষ্টে বিশ্বাস করে, তারা জীবনের নূতনতায় চলতে পারে। নূতন জন্ম লাভ করার আগে আমাদের যে পুরাতন মনুষ্য ছিল, তা মরে গেছে এবং আমরা নবীনীকৃত হয়েছি, নূতন কাজ করতে পারি, নূতন পথে চলতে পারি এবং নূতন বিশ্বাসে বাঁচতে পারি। নূতন জন্ম প্রাপ্ত ব্যক্তি অতীতের মত জীবনযাপন করতে পারে না, বা চিন্তা করতে পারে না কেন আমরা অতীতের ধ্যান - ধারণা পরিত্যাগ করব, তাঁর কারণ হল আমাদের পুরাতন মনুষ্য যীশু খ্রীষ্টের সাথে ক্রুশে মরেছে। 
 ২করিন্থীয় ৫:১৭ পদে আছে, “পুরাতন বিষয় সকল অতীত হইয়াছে , দেখ, সেগুলি নূতন হইয়া উঠিয়াছে।” আমদের পাপ যেন তুলে নিতে পারেন, সেই জন্য প্রভু যর্দ্দন নদীতে বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন, ক্রুশ বিদ্ধ হয়েছিলেন এবং পুনরুত্থিত হয়েছিলেন। এই ভাবে জীবনের নূতনতায় চলার উদ্দেশে সমস্ত পাপীদেরকে তিনি উদ্ধার করেছেন। আমাদের পুরাতন “বিষয়গুলি” হল দুঃখ, দুর্দশা, তিক্ততা, কষ্ট এবং হতাশাগ্রস্ত, এগুলো সব চলে গেছে। এখন আমাদের নূতন জীবন শুরু হয়েছে। পরিত্রাণ হল নূতন জীবনে চলার প্রথম ধাপ।
 ইস্রায়েল জাতি যখন মিসর থেকে বের হয়ে কনানে প্রবেশ করল, ঈশ্বর তাদেরকে নিস্তার পর্ব পালন করতে বললেন। মিসর থেকে বেরিয়ে আসার যাত্রা, আত্মিক ভাবে পাপের রাজ্য থেকে বেরিয়ে আসা। ঈশ্বর ইস্রায়েলদের বলেন, “আর মিসর দেশে সদাপ্রভু মোশি ও হারোণকে কহিলেন, এই মাস তোমাদের আদি মাস হইবে; বৎসরের সকল মাসের মধ্যে প্রথম হইবে। সমস্ত ইস্রায়েল-মণ্ডলীকে এই কথা বল, তোমরা এই মাসের দশম দিনে তোমাদের পিতৃকুলানুসারে প্রত্যেক গৃহস্থ এক এক বাটীর জন্য এক একটী মেষশাবক লইবে। আর মেষশাবক ভোজন করিতে যদি কাহারও পরিজন অল্প হয়, তবে সে ও তাহার গৃহের নিকটবর্ত্তী প্রতিবাসী প্রাণিগণের সংখ্যানুসারে একটী মেষশাবক লইবে। তোমরা এক এক জনের ভোজনশক্তি অনুসারে মেষশাবকের জন্য গণনা করিবে। তোমাদের সেই শাবকটী নির্দ্দোষ ও প্রথম বৎসরের পুংশাবক হইবে; তোমরা মেষপালের কিম্বা ছাগপালের মধ্য হইতে তাহা লইবে; আর এই মাসের চতুর্দ্দশ দিন পর্য্যন্ত রাখিবে; পরে ইস্রায়েল-মণ্ডলীর সমস্ত সমাজ সন্ধ্যাকালে সেই শাবকটী হনন করিবে। আর তাহারা তাহার কিঞ্চিৎ রক্ত লইবে, এবং যে যে গৃহমধ্যে মেষশাবক ভোজন করিবে, সেই সেই গৃহের দ্বারের দুই বাজুতে ও কপালীতে তাহা লেপিয়া দিবে। পরে সেই রাত্রিতে তাহার মাংস ভোজন করিবে; অগ্নিতে দগ্ধ করিয়া তাড়ীশূন্য রুটী ও তিক্ত শাকের সহিত তাহা ভোজন করিবে। তোমরা তাহার মাংস কাঁচা কিম্বা জলে সিদ্ধ করিয়া খাইও না, কিন্তু অগ্নিতে দগ্ধ করিও; তাহার মুণ্ড, জঙ্ঘা ও অন্তরস্থ ভাগ। আর প্রাতঃকাল পর্য্যন্ত তাহার কিছুই রাখিও না; কিন্তু প্রাতঃকাল পর্য্যন্ত যাহা অবশিষ্ট থাকে, তাহা অগ্নিতে পোড়াইয়া ফেলিও। আর তোমরা এইরূপে তাহা ভোজন করিবে; কটিবন্ধন করিবে, চরণে পাদুকা দিবে, হস্তে যষ্টি লইবে ও ত্বরান্বিত হইয়া তাহা ভোজন করিবে; ইহা সদাপ্রভুর নিস্তারপর্ব্ব।” (যাত্রাপুস্তক ১২:১১) আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, নিস্তার পর্ব্বের সময় ঈশ্বর তাদেরকে মেষশাবকের মাংস, তাড়ীশূন্য রুটি ও তিক্ত শাকের সাথে খেতে বলেছিলেন।
 পাপ থেকে মুক্ত হবার পরে অনেক তিক্ত বিষয় আমাদের জীবনে আসতে পারে। তিক্ত শাক অর্থ নিজেকে অস্বীকার করা। জীবনে দুঃখ কষ্ট নিশ্চয়ই আছে, কিন্তু মনে রাখতে হবে যে, খ্রীষ্টের সাথে আমরা সমাধিস্থ হয়েছি।“ফলতঃ তাঁহার যে মৃত্যু হইয়াছে, তদ্বারা তিনি পাপের সম্বন্ধে একবারই মরিলেন; এবং তাঁহার যে জীবন আছে, তদ্দ্বারা তিনি ঈশ্বরের সম্বন্ধে জীবিত আছেন। তদ্রূপ তোমরাও আপনাদিগকে পাপের সম্বন্ধে মৃত, কিন্তু খ্রীষ্ট যীশুতে ঈশ্বরের সম্বন্ধে জীবিত বলিয়া গণনা কর”
(রোমীয় ৬:১০-১১)।
 যীশুর সাথে এক হবার এটাই হল মূল কথা, যীশুর সম্পন্ন করা বাপ্তিস্ম, ক্রুশীয় মৃত্যু এবং পুনরুত্থানে বিশ্বাস দ্বারা আমরা যীশুর সাথে এক হতে পারি। তাঁর জন্ম, যোহন বাপ্তাইজকের কাছে বাপ্তিস্মগ্রহণ, ক্রুশারোপণ, পুনরুত্থান, স্বর্গারোহণ এবং মৃতদের বিচার করার জন্য তাঁর পুনরাগমন - এ সব কিছুতে বিশ্বাস করাই হল সত্য বিশ্বাস, অর্থাৎ পরিত্রাণ, শেষ বিচার এবং ঈশ্বরের ধার্ম্মিকতায় বিশ্বাস।
 রোমীয় ৬:১০ পদে বলা হয়েছে “ফলতঃ তাঁহার যে মৃত্যু হইয়াছে, তদ্দ্বারা তিনি পাপের সম্বন্ধে একবারই মরিলেন।” যীশু দুইবার পৃথক পৃথকভাবে আমাদের পাপ ধুয়ে দেন নি, কিন্তু এক বারেই জগতের সমস্ত পাপ দূর করেছেন। রোমীয় ৬:১০-১১ পদে বলা হয়েছে “এবং তাঁহার যে জীবন আছে, তদ্দ্বারা তিনি ঈশ্বরের সম্বন্ধে জীবিত আছেন। তদ্রুপ তোমরাও আপনাদিগকে পাপের সম্বন্ধে মৃত, কিন্তু খ্রীষ্ট যীশুতে ঈশ্বরের সম্বন্ধে জীবিত বলিয়া গণনা কর।” আমরা বাস্তবিকই পাপের সম্বন্ধে মৃত কিন্তু ঈশ্বরের উদ্দেশে জীবিত। এখন, আমরা ঈশ্বরে জীবিত আছি। আমাদের জীবন এখন নূতন এবং আমরা নূতন সৃষ্টি হয়েছি।
 “অতএব পাপ তোমাদের মর্ত্ত্য দেহে রাজত্ব না করুক—করিলে তোমরা তাহার অভিলাষ-সমূহের আজ্ঞাবহ হইয়া পড়িবে; আর আপন আপন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অধার্ম্মিকতার অস্ত্ররূপে পাপের কাছে সমর্পণ করিও না, কিন্তু আপনাদিগকে মৃতদের মধ্য হইতে জীবিত জানিয়া ঈশ্বরের কাছে সমর্পণ কর, এবং আপন আপন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ধার্ম্মিকতার অস্ত্ররূপে ঈশ্বরের কাছে সমর্পণ কর। কেননা পাপ তোমাদের উপরে কর্ত্তৃত্ব করিবে না; কারণ তোমরা ব্যবস্থার অধীন নহ, কিন্তু অনুগ্রহের অধীন” (রোমীয় ৬:১২-১৪)
 “কেননা পাপ তোমাদের উপরে কর্তৃত্ব করিবে না; কারণ তোমরা ব্যবঙ্গার অধীন নহ। কিন্তু অনুগ্রহের অধীন।” যত রকমের দূর্বলতা জীবনে আসুক না কেন, পরিত্রাণ পাবার পরে আমাদের আর পাপ থাকে না। যতদিন মাংসময় জীবনে বেঁচে আছি, ততদিন দূর্বলতা আসতে পারে। কিন্তু পাপ আমাদের উপরে কর্তৃত্ব করে না। আমরা যতই দূর্বল হই না কেন, যীশুর বাপ্তিস্মের মাধ্যমে বিচার দন্ডের রক্তের মাধ্যমে পরিত্রাণ পেয়েছি বিধায় আমাদের প্রতি আর কোন দন্ডাজ্ঞা নেই। আমাদের অধর্মগুলোও পাপ। 
 এ কথা সত্য যে, পাপ আমাদের উপরে কর্তৃত্ব করতে পারে না। ধার্ম্মিকদেরকে ঈশ্বর পাপের কর্তৃত্বের অধীনে রাখেননি। আমরা যত দূর্বলই হইনা কেন, প্রভু তাঁর বাপ্তিস্মের মাধ্যমে আমাদেরকে পাপ থেকে ধৌত করেছেন এবং পাপের অধীনতা থেকে মুক্ত করেছেন। ক্রুশে তিনি পাপের মূল্য পরিশোধ করেছেন। বিশ্বাসীরা পাপ থেকে মুক্ত, কারণ প্রভু তাদের পাপের মূল্য পরিশোধ করেছেন। 
 ধার্ম্মিকের জীবনে বিভিন্ন রকমের দূর্বলতা এবং অধার্ম্মিকতা আসতে পারে, কিন্তু পাপ তাদের উপরে কর্তৃত্ব করতে পারে না। প্রভুর উপরে বিশ্বাসে সম্পূর্ণ নির্ভর করলে, তাদের প্রতি আর দন্ডাজ্ঞা থাকে না। তাই, আমরা সব সময়ে জীবনে নূতনতায় চলতে পারি।
 
 
আপনার অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলোকে ধার্ম্মিকতার অস্ত্র হিসাবে
উৎসর্গ করুন
 
 ধাৰ্ম্মিকদেরকে প্রতিদিন জীবনের নূতনতায় চলার জন্য প্রভু আশীর্বাদ করেছেন। তাহলে তারা কি পাপে চলতে পারে? অবশ্যই না। রোমীয় ৬:১৩ পদে বলা হয়েছে “আর আপন আপন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অধার্ম্মিকতার অস্ত্ররূপে পাপের কাছে সমর্পণ করিও না, কিন্তু আপনাদিগকে মৃতদের মধ্য হইতে জীবিত জানিয়া ঈশ্বরের কাছে সমর্পণ কর, এবং আপন আপন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ধার্ম্মিকতার অস্ত্ররূপে ঈশ্বরের কাছে সমর্পণ কর”।
 “কিন্তু ঈশ্বরের ধন্যবাদ হোক যে, তোমরা পাপের দাস ছিলে বটে,” আমরা প্রকৃতিগত ভাবে পাপের দাস ছিলাম এবং পাপ করার ক্ষেত্রে খুব দক্ষ ছিলাম। কিন্তু বাইবেল বলে “পরন্তু শিক্ষার যে আদর্শে সমর্পিত হইয়াছ, অন্তঃকরণের সহিত সেই আদর্শের আজ্ঞাবহ হইয়াছ; এবং পাপ হইতে স্বাধীনীকৃত হইয়া তোমরা ধার্ম্মিকতার দাস হইয়াছ।” (রোমীয় ৬:১৭-১৮)।
 আমরা যারা পাপ থেকে মুক্ত হয়ে ধার্ম্মিক হয়েছি, আমরা এখন ঈশ্বরের ধাৰ্ম্মিকতার দাস, আমরা অনুগ্রহে ধার্ম্মিক হয়েছি। আমরা পাপ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত এবং ধার্ম্মিক হবার সামর্থ অর্জন করেছি। ধার্ম্মিক হয়েছি বিধায় আমরা তাঁর ধার্ম্মিকতার জন্য কাজ করতে পারি। 
 কিন্তু পরিত্রাণ পাবার পরে মাংস সম্বন্ধে আমরা কি করতে পারি? পরিত্রাণ পাবার পরে মাংসে কিরূপ আচরণ করতে পারি? বাইবেল বলে “এখন পবিত্রতার নিমিত্তে আপন আপন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ধার্ম্মিকতার কাছে দাসরুপে সমপর্ণ কর” ( রোমীয় ৬:১৯ )। যদিও আমরা পাপ থেকে মুক্ত হয়েছি, তাহলে মাংসে কি কাজ রয়েছে? হৃদয় পাপ মুক্ত থাকলেও, মাংসের স্বভাব পাপে পতিত হওয়া। তার মানে এই যে, যেহেতু আমরা ধার্ম্মিক হয়েছি, সেই হেতু আমাদের মাংসকে আমরা ধৰ্ম্মময় কাজে নিয়োজিত করব।
 
 
আমাদের নিজেদেরকে ঐশ্বরিক আচরণ অভ্যাস করতে হবে 
 
 আমরা পরিত্রাণ পাবার পরে, আমাদের মাংস দূর্বল হলেও, আমরা কি পাপ মুক্ত? এটা নিশ্চিত যে, যারা প্রভুর বাপ্তিস্ম, ক্রুশ, পুনরুত্থান, পুনরাগমন এবং শেষ বিচারে বিশ্বাস করে, তাদের কোন পাপ নেই, তারা পাপ মুক্ত। আমাদের যা করতে হবে তা হল আমাদের মাংসকে ধাৰ্ম্মিকতার কাজে ব্যবহার করতে হবে এবং আমাদের হৃদয়ও চায় ধাৰ্ম্মিকতার কাজ করতে। কিন্তু মাংস তাঁর ধাম্মিকতার কাজ করতে পারে না। তাই ১তীমথিয় ৪:৭পদে আছে ‘‘ভক্তিতে দক্ষ হইতে অভ্যাস কর”। আমাদেরকে ভক্তি অভ্যাস করতে হবে।
 সংক্ষিপ্ত সময়ে এটা করা সম্ভব নয়। যখন আমরা সুসমাচারের পুস্তিকা বিতরণ করতে যাই, তখন যদি পরিচিত লোকের সাথে আবার দেখা হয়ে যায়, আমরা লজ্জা পাই।তাদেরকে এড়িয়ে আমরা প্রথমে ঘরে ফিরে আসি, কারণ তখন আমাদের লজ্জা লাগে। কিন্তু এই কথা ভেবে আমরা যদি কয়েকবার এটা করার চেষ্টা করি, “আমার পুরাতন মনুষ্য মরে গেছে” এবং তার পর যদি সাহস নিয়ে বলি “আপনি পরিত্রাণ পেয়ে না থাকলে নরকে যাবেন, তাই এই পুস্তকটি পড়ুন এবং পরিত্রাণ লাভ করুন;” যখন আপনি এরকম আচরণ করবেন, তার মানে হল আপনি আপনার মাংসকে ধার্ম্মিকতার কাজে সমর্পণ করেছেন। 
 আমরা যেন পবিত্র হইতে পারি, সেই উদ্দেশে আমাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলোকে ধাৰ্ম্মিকতার কাছে সমর্পণ করার জন্য রোমীয় ৬ অধ্যায়ে বলা হয়েছে। অবশ্যই আমরা অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলোকে ধাৰ্ম্মির্কতার দাস হিসাবে সমর্পণ করব। আমরা সব সময় এই বিষয়গুলো অভ্যাস করব। সংক্ষিপ্ত সময়ে এটা করা সম্ভব নয়। তাই বার বার অভ্যাস করব। আমরা যদি মন্ডলীতে যোগ দেবার চেষ্টা করি, তাহলে আমরা বুঝতে পারব, গীর্জায় যাওয়া খুবই আনন্দের। আমাদের অবশ্য এ কথা চিন্তা করা উচিত না, “আমি বিশ্বাস করি, কিন্তু আমি ঘরে বসেই সব কিছু বিশ্বাস করব। পুরোহিত কি প্রচার। করবে তা আমি ভাল করেই জানি”। মাংস এবং আত্মা উভয়কেই মন্ডলীতে উপস্থিত থাকতে হবে। যখন আমরা অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলোকে ধাৰ্ম্মিকতার দাস হিসাবে সমর্পণ করি, কেবলমাত্র তখনই হৃদয়ে বিশ্বাস বৃদ্ধি পায়। 
 আমরা অবশ্যই আমাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলোকে ধাৰ্ম্মিকতার কাছে সমর্পণ করব। আমি যা বলছি, আপনি কি তা বুঝতে পারছেন? এক সঙ্গে মিলিত হওয়া এবং নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাত করা থেকে আমরা বিরত হব না। আপনি যখন বাজারে যাচ্ছেন, তখন যদি পথে মন্ডলী পড়ে, কিছু সময়ের জন্য মন্ডলীতে যান, বলুন “বাজারে যাবার পথে আমি জানতে এসেছি এখানে কি হচ্ছে?” ঘন ঘন গীর্জায় যাওয়া আসা করার অর্থ হল নিজেকে আপনি ধাৰ্ম্মিকতার দাস হিসাবে সমর্পণ করছেন। 
 তখন হয়তো নেতা আপনাকে বলবেন,“বোন, আপনি এটা
 একটু পরিষ্কার করে দিতে পারেন?”
“ঠিক আছে”।
“এবং দয়া করে বিকালে আবার আসবেন”।
“কিসের জন্য ?”
“আজকে বিকালে এখানে যুবকদের অনুষ্ঠান আছে”।
“ঠিক আছে, আমি রাতে আসব”।
 এই পৃথিবীতে আমরা ব্যস্ত থাক, কিন্তু মানুষ যদি তাদের সভায় যোগ দিতে নিমন্ত্রন করে, তাহলে আমরা প্রথমে কোথায় আমাদের দেহকে সমর্পণ করব?
 অবশ্যই মন্ডলীতে নিজেদেরকে সমর্পণ করব। আমাদের কর্মস্থলের সহকর্মীদের দ্বারা নিমন্ত্রিত হলেও, মন্ডলীতে আমাদের উপস্থিত হওয়া উচিত। হৃদয়ে আমাদের মন্ডলীতে থাকব, কিন্তু দেহ নিয়ে আমরা রেষ্টুরেন্টে খেতে যাব, তা হতে পারে না। আমরা যদি জাগতিক বিষয় থেকে নিজেদের দূরে রাখতে পারি, সেই সময়টা মন্ডলীতে দিলে আমাদের মাংস ও আত্মা উভয়ই বিশ্রাম পাবে। 
 আপনি কি মনে করেন? যদি আপনি মাংসিক ধ্যান - ধারনা থেকে জাগতিক বিষয়ে বেশী যোগ দেন, তাহলে মন্ডলীর সাথে এক হতে চাইলে ও আপনি ঈশ্বরের এবং নিজের ইচ্ছার শত্রু হয়ে পড়বেন।
 
 
মাংসের বিষয়গুলোকে আমরা আত্মার মাধ্যমে অভ্যাস করব
 
 আমাদের মাংসময় দেহকে অবশ্যই ধার্ম্মিকতার দাস হিসাবে সমর্পণ করব, তার মানে এই নয় যে, আমাদের মাংস শুদ্ধ হয়ে গেল। বারংবার আমাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলোকে ধাৰ্ম্মিকতার কাজে নিয়োজিত করব, যদিও আমাদের মাংস তার ইচ্ছা মত করতে চাইবে। আমরা সাধারণতঃ অভ্যস্ত কাজগুলো করতে চাই। আমরা আমাদের দেহকে কিসের দাস হিসাবে সমর্পণ করতে চাই, এটা তারই উপরে নির্ভর করে। 
 প্রেরিত পৌঁল বলেন, “পবিত্রতার উদ্দেশে তোমাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলোকে ধাৰ্ম্মিকতার দাস হিসাবে সমর্পণ কর। তোমাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলোকে ঈশ্বরের ধাৰ্ম্মিকতার দাস হিসাবে সমর্পণ কর।” মাংসিক দেহকে আপনি কতটা বশে রাখতে সমর্থ, বিষয়টি তারই উপরে নির্ভর করছে। যদি আপনি দেহকে মদ্য পানের জন্য চালিত করেন, দেহ আপনা থেকেই মদ্যপান করতে উদ্যত হবে। ফলে দেখা যাবে, মন্ডলীতে থাকা অবস্থায়ও আপনি বারে চলে গেছেন। বারে বসে আপনার আত্মা কষ্ট পাবে, কিন্তু মন্ডলীতে বসেন, দেহ কষ্ট পেলেও আত্মা শান্তি পাবে।
 দেহেরও নিজস্ব স্বকীয়তা রয়েছে। আত্মার সাহায্যে কিভাবে দেহকে বশে রাখা হচ্ছে, এটা তারই উপর নির্ভর করছে। মদ্যপানরত অবস্থায় দেহ বলে, “আমি আরো মদ চাই” কিন্তু মদ্যপান না করা অবস্থায় দেহ বলে,“আমি মদ্যপান ঘৃনা করি”। কেন ? কারণ দেহ বশ করা হয়নি। হৃদয়ে পবিত্রতা থাকলেও, মাংসকে আমরা কতটা বশ করতে পারছি, বিষয়টা তারই উপরে নির্ভরশীল। পবিত্র আত্মা আমাদের হৃদয়ের যত্ন নেন। যখন আমরা মন্ডলীর বাইরে থাকি, তখনও পবিত্র আত্মা আমাদের নিয়ন্ত্রন করেন। যাহোক, পবিত্রতার উদ্দেশে আমাদের মাংসকে ধাৰ্ম্মিকতার কাছে অবশ্যই সমর্পণ করতে হবে। তাই, মন্ডলীতে নিয়মিত যোগ দিতে হবে ।
 পরিত্রাণ প্রাপ্তদের সব সময় ভক্তি ভাবে জীবন - যাপন করার অভ্যাস করতে হবে। বাইবেল বলে, আমরা যেন ঈশ্বরের বাক্য মেনে চলি এবং বাক্য দ্বারা নিয়লিত হই। কেন আমরা ঈশ্বরের বাক্য দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হব, তার করণ হল, নিজের দেহ বিধায় আমরা সব সময় দেহের ইচ্ছানুযায়ী কাজ করতে চাই। আমরা ইচ্ছামত কেনাকাটা করি, নাচ-গান করি, পানাহার করি, কিন্তু মন্ডলীতে বসে মনোনিবেশ সহকারে উপাসনা করা আমাদের পক্ষে যেন কঠিন বিষয়। সুতরাং নেতার উচিত আমাদের নেতৃত্ব দেওয়া।
 “এখানে আপনার আসন রয়েছে। বসুন এবং ঈশ্বরের বাক্য শ্রবণ করুন।” 
“ঠিক আছে।” 
 বক্তৃতা এক ঘেয়েমী মনে হলেও, এটা চিন্তা করে আমাদের ধৈৰ্য্য সহকারে শুনতে হবে,-“ধৈর্য্যের সাথে আমাকে বসে থাকতে হবে। কেন আমি এতটা অধৈর্য হচ্ছি? অথচ আমি বারে একটানা তিন ঘন্টা বসে থাকতে পারি। কেন আমি এখানে একটানা বসে থাকতে পারব না? এখানে মাত্র একঘন্টা কাটল; বারে আমি দীর্ঘ পাঁচ ঘন্টা মদ পান করছি এবং কোন রকম বিরতি ছাড়া এক টানা বিশ ঘন্টা তাস খেলেছি।”
 বিষয়টি মাংসকে বশ করার উপরে নির্ভর করে। মন্ডলীতে থাকা অবস্থায় দেহ সাধারণতঃ বারে যাওয়া অপছন্দ করে। কিন্তু যে লোকে মদ্যপানে অভ্যস্ত হয়ে গেছে, গীর্জায় বসা তার জন্য নরকতুল্য। আমি চাই কয়েকটা দিন ধৈর্য করুন, দেখবেন আপনার সহ্য-ধৈৰ্য বেড়ে গেছে। যতক্ষণ পর্যন্ত মাংসকে বশ করতে না পারবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত বিষয়টি খুব কঠিন মনে হবে। দেহ যখন অন্য কাজে সময় অতিবাহিত করতে চায়, তখন আমাদের অবশ্যই গীর্জাতে সময় দেওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
 দেহকে বশে রাখার জন্য আমরা গীর্জাতে পুরোহিত ও অন্যান্য ভাই বোনের সাথ সময় কাটাই। গীর্জাতে আমি খুবই আয়াস বোধ করি, আমাকে বিপথগামী করার মত কিছুই সেখানে নেই। রাস্তায় চলার সময় অনেক কিছুই আমাকে প্রলুব্ধ করে। শা-রুমে ঝোলানো আকর্ষণীয় পোষাকের মতো প্রলুব্ধ করার আরো অনেক কিছুই সেখানে থাকে। যখন এই সব লোভনীয় জিনিসের প্রতি মন দেই, ঘরে ফিরতে তখন আমার দুই ঘন্টা সময় লেগে যায় এবং এই ভাবে এক সময় নষ্ট হয়ে যেতে পারি।
 অদ্ভুত কোন বিষয়ের সন্ধান পেলে আমি তা দেখতে যাই। পরে আমি উপলব্ধি করি, “আমি কখন বাড়ী পৌঁছাব? বাড়ী পৌঁছে দেওয়ার জন্য আমার একজন লোকে দরকার।” তাই, বাড়ী ফেরার পথে যেখানে সেখানে ঘোরাঘুরি করবেন না। উপাসনা সেরে আমাদের সরাসরি বাড়ী ফেরা উচিত। গীর্জার বাসে চড়ে সোজা গন্তব্যে যাওয়া উচিত। যদি ভাবেন, “গীর্জায় যাওয়ার জন্য আমাকে গাড়ীতে যাওয়ার দরকার নেই। আমি একাই গীর্জায় যাব। আমার দুটো সবল পা থাকতে বাসে চড়ে গীর্জায় যাওয়ার আমার কোন দরকার নেই।” প্রলুব্ধ হয়ে আপনি নষ্ট হয়ে যেতে পারেন। আপনার কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত যে, বাসে চড়ে আপনি গীর্জায় যেতে পারছেন এবং উপাসনা শেষে সরাসরি বাড়ী ফিরতে পারছেন, অনর্থক বিষয়ের প্রতি মনোযোগ দিতে গিয়ে আপনার সময় নষ্ট হচ্ছে না। যত তাড়াতাড়ী বাড়ি পৌঁছাবেন, আপনি ভাল ভাবে বাইবেল পড়তে পারছেন, প্রার্থনা করে তাড়াতাড়ি বিছানায় যেতে পারছেন। 
 এ রকম জীবন যাপন করা আপনার জন্য আরো মঙ্গলজনক
হবে। কেউ হয়তো ভাবতে পারে,“আমার বিশ্বাস দৃঢ।আমার কোন পাপ নেই। আমি নিজে প্রমান করতে চাই। বারে গেলেও আমি মদ পান করব না। পাপের বাহুল্য হলে, অনুগ্রহের বাহুল্য আরো অধিক হয়। আমি অনুগ্রহে পূর্ণ” এই চিন্তা করে যখন সে বারে যাবে, তার বন্ধু বলবে, “এই, এস পান করি।” 
 “না, তুমি কি কখনো আমাকে মদ পান করতে দেখেছ ? আমি মদ ছেড়ে দিয়েছি।”
“একটু নাও।”
 “না,”
 “মাত্র এক কাপ কেন পান করবে না ?”
 গ্লাসে মদ ঢেলে বন্ধু তার দিকে এগিয়ে দেয়। সে তখন বন্ধুকে বলে, “আমি সফট ড্রিংক চাই, মদ নয়।” তখন তার মদ্য পানের অতীত অভিজ্ঞতা মনে পড়ে যায়, ভাবে, “কী সুস্বাদু। আরও একটু দাও না! একটু খানি পান করব।” তাড়াতাড়ি সে সফট ড্রিংক শেষ করে।
 বন্ধু যখন বুঝতে পারে যে, সে মদ চাচ্ছে, তখন সে তার শূণ্য গ্লাসে মদ ঢেলে দেয়।
 “এটা তেমন কড়া নয়, ককটেল হিসাবে পান করতে পার।”
 “না, তা আমার উচিত নয়। তুমি কি জান না, আমি যীশুকে বিশ্বাস করি?” শেষ পর্যন্ত সে এক গ্লাস মদ খেয়ে ফেলে, তার বন্ধুও জানে যে , সে ভালই পান করতে পারে।
 “শুধু আজকে পান কর।” 
 “ঠিক আছে, শুধু আজ পান করছি। তোমাকে কিন্তু যীশুতে বিশ্বাস করতে হবে , ঠিক আছে? মদ পান করলেও আমার কোন পাপ নেই। তোমাকে পাপ থেকে উদ্ধার পেতে হবে।”
 
 
 গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, আমরা কোথায় মাংসকে সমর্পণ করি
 
 মানুষ এমনই! কোন আশ্চর্য কিছু নয়। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল আমরা মাংসকে কোথায় সমর্পণ করছি। পবিত্রতার উদ্দেশে অঙ্গপ্রতঙ্গ গুলোকে ধার্মিকতার দাসরূপে সমর্পণ করুন। মাংসকে পবিত্রতার উদ্দেশে সমর্পণ করুন। কারণ মাংস পবিত্র নয়। মদ্যপানকে আমি উদাহরণ হিসাবে দেখিয়েছি। কিন্তু অন্য অন্য ব্যাপারেও এমনই হয়। আসলে, মাংসকে আমরা কতটা বশ করতে পারছি। তার উপরেই বিষয়গুলো নির্ভর করছে। 
 বিশ্বাসে আমরা এক মুহূর্তে অনন্তকালীয় পরিত্রাণ পাই, কিন্তু আমাদের দেহের ও হৃদয়ের আত্মিকতা নির্ভর করে,-আমরা আমাদের মাংসময় দেহকে কোথায় সমৰ্পণ করি, তার উপরে। আমাদের হৃদয় পরিষ্কৃত থাকলেও, যদি নোংরামীর কাছে মাংসকে সমর্পণ করি, তবে আমাদের মাংস অবশ্যই নোংরা হবে। তাহলে, আমরা বিশ্বাস হারিয়ে ফেলব, মন্ডলীর বিরোধী হয়ে পড়ব, অনর্থক ঈশ্বরের নাম নেওয়া হবে, ঈশ্বরের সাক্ষাত থেকে সরে যাব এবং শয়তান দ্বারা প্রতারিত হব। শেষ পর্যন্ত ধ্বংস হয়ে যাব।
 সুতরাং নিজের প্রতি সর্তক হোন , পাছে ধ্বংস হয়ে যান। অবশ্যই সর্তক হতে হবে। পরিত্রাণ পাবার পর আমরা কিভাবে প্রতিদিনের পাপের সমস্যার সমাধান করতে পারি? “যেখানে অপরাধের বাহুল্য, অনুগ্রহ যেখানে আরও অধিক উপচিয়া পড়িল।” প্রভু আমাদের। প্রতিদিনের পাপও সম্পূর্ণরূপে মুছে দিয়েছেন, যেন বহুবার পাপ করলেও আমরা আর পাপী না হই। 
 কিন্তু যদি আমাদের দেহ বারবার পাপের প্রতি ঝোঁকে, তাহলে আমাদের সমস্যা রয়ে গেছে। মাংসময় দেহকে আমরা কোথায় সমর্পণ। করব? মাংস তার নির্ধারিত পথেই চলবে। আমি এখনো পর্যন্ত। আপনাকে বিষয়টি অনুধাবন করতে বলছি।
 ধার্ম্মিকতার কাছে মাংসকে সমর্পণ করলে, আত্মার মত দেহও পবিত্র হয়ে যায়। পরিত্রাণ পাবার পর কিভাবে চলতে হবে, তা যদি আমরা বুঝতে না পারি, তাহলে আমাদের জীবনকে মন্ডলীকেন্দ্রিক করতে হবে। বাইবেল অনুসারে মন্ডলী পান্থশালার মত। পান্থশালায় আমরা যেমন পানাহার করি, মন্ডলীর সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ থাকলেও অন্যান্য সদস্যদের সাথে সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা তেমনি আত্মিক খাদ্য খেতে পারি এবং জল পান করতে পারি। 
 মন্ডলী পান্থশালার মত। মন্ডলীতে আমরা পারস্পরিক সহভাগিতা ও আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে পরস্পর গেঁথে উঠি, তাই সাধারণতঃ আমরা মন্ডলীতে উপস্থিত হই। যে ব্যক্তি নিয়মিত মন্ডলীতে যোগাযোগ রাখে, সে আত্মিক ভাবে বৃদ্ধি পায়, কিন্তু যে লোকে মন্ডলীর সাথে যোগাযোগ রাখে না, যতবড় বিশ্বাস থাকুক না কেন, সে আত্মায় চলতে পারে না। মন্ডলীতে নিয়মিত আসা-যাওয়া করলে, স্বাভাবিকভাবেই আত্মিক উন্নতি হয়, যত দূর্বলতাই থাকুক না কেন। পরিত্রাণ পাবার পরে আত্মিক সহভাগিতার উপরই বিষয়টি নির্ভর করে। মন্ডলী ছাড়া বেঁচে থাকার আমাদের আর কোন স্থান নেই। আমি চাই, যখনই সুযোগ পান, তখনই মন্ডলীতে আসুন এবং প্রভুর সন্তানদের সাথে আত্মিক সহভাগিতা রক্ষা করুন। মন্ডলীতে যোগ দিন, প্রতিটি উপাসনায় উপস্থিত হোন, ঈশ্বরের বাক্য শ্রবণ করুন এবং আপনার পরিকল্পনাগুলো সম্পর্কে নেতাদের সাথে আলোচনা করুন। 
 আমাদের জীবনকে অবশ্যই ঈশ্বরের বাক্য - কেন্দ্রিক করতে হবে এবং একত্রে সভাস্থ হতে হবে। তাহলে অব্যর্থ ভাবে আমরা বিশ্বাসের জীবনে সফলতা অর্জন করব। প্রভুর দ্বারা আমরা। যথাযথভাবে এবং আশীর্বাদযুক্তভাবে ব্যবহৃত হতে পারব। আমি প্রত্যাশা করি, আপনি আপনার মাংসিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলোকে এবং আত্মাকে ঈশ্বরের উদ্দেশে ধার্ম্মিকতার অঙ্গ হিসাবে সমর্পণ করুন।