< প্রকাশিত বাক্য ২: ৮-১১ >
“আর স্মূর্ণাস্থ মণ্ডলীর দূতকে লিখ;— যিনি প্রথম ও শেষ, যিনি মরিয়াছিলেন, আর জীবিত হইলেন, তিনি এই কথা কহেন। আমি জানি তোমার ক্লেশ ও দীনতা, তথাপি, তুমি ধনবান্; এবং আপনাদিগকে যিহূদী বলিলেও যাহারা যিহূদী নয়, কিন্তু শয়তানের সমাজ, তাহাদের ধর্ম্ম-নিন্দাও আমি জানি। তোমাকে যে সকল দুঃখ ভোগ করিতে হইবে, তাহাতে ভয় করিও না। দেখ, তোমাদের পরীক্ষার জন্য দিয়াবল তোমাদের কাহাকেও কাহাকেও কারাগারে নিক্ষেপ করিতে উদ্যত আছে, তাহাতে দশ দিন পর্য্যন্ত তোমাদের ক্লেশ হইবে। তুমি মরণ পর্য্যন্ত বিশ্বস্ত থাক, তাহাতে আমি তোমাকে জীবন-মুকুট দিব। যাহার কর্ণ আছে, সে শুনুক, আত্মা মণ্ডলীগণকে কি কহিতেছেন। যে জয় করে, সে দ্বিতীয় মৃত্যু দ্বারা হিংসিত হইবে না”
টীকা
পদ ৮: “আর স্মূর্ণাস্থ মণ্ডলীর দূতকে লিখ;— যিনি প্রথম ও শেষ, যিনি মরিয়াছিলেন, আর জীবিত হইলেন, তিনি এই কথা কহেন।”
পৌল যখন ইফিষস্থ মন্ডলীতে প্রচার করছিলেন, তখন স্মূর্ণাস্থ মণ্ডলী প্রতিষ্ঠিত হয়েছে৷ উপরের শাস্ত্রাংশ অনুসারে এই মন্ডলীর সদস্যরা অপেক্ষাকৃত গরীব ছিল, এবং তাদের বিশ্বাসের কারণে যিহুদীদের বিরোধিতার সম্মুখীন হতে হয়েছিল৷ এই মন্ডলী যিহুদীদের দ্বারা কতটা তাড়িত হয়েছিল তার প্রমান হল চার্চ ফাদারের যুগে একজন কর্মকর্তা পলিকার্পের সাক্ষ্যমরের মৃত্যু৷ আদি মন্ডলীর যুগে যে সব যিহুদীরা যীশুকে মসীহ হিসাবে গ্রহণ করে নি, তাদের দ্বারা মন্ডলীর বিশ্বাসীগণ নিরবিচ্ছিন্নভাবে তাড়িত হয়েছিল৷
প্রেরিত পৌলের দ্বারা স্মূর্ণাস্থ মণ্ডলীস্মূর্ণাস্থ মণ্ডলী প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল৷ “যিনি প্রথম ও শেষ, যিনি মরিয়াছিলেন, আর জীবিত হইলেন,” এখানে যোহন ঈশ্বরকে প্রকাশ করেছেন, যিনি বিশ্বব্রহ্মান্ড সৃষ্টি করেছেন৷ আমাদের প্রভু, কুমারী মরিয়মের গর্ভজাত; যোহনের দ্বারা বাপ্তিস্ম গ্রহণের মাধ্যমে পৃথিবীর সমস্ত পাপ তুলে নিলেন এবং এই পাপের নিমিত্ত বিচারিত হয়ে ক্রুশে রক্ত সেচন করলেন৷ পরে তৃতীয় দিবসে মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হলেন এবং ঈশ্বরের দক্ষিন পার্শ্বে বসে আছেন৷ যীশু দূতদের দ্বারা ঈশ্বরের মন্ডলীতে বলেছেন যে, তিনি শুধু আমাদের মুক্তিদাতাই নন, আমাদের সর্বশক্তিমান ঈশ্বরও৷
পদ ৯: “আমি জানি তোমার ক্লেশ ও দীনতা, তথাপি, তুমি ধনবান্; এবং আপনাদিগকে যিহূদী বলিলেও যাহারা যিহূদী নয়, কিন্তু শয়তানের সমাজ, তাহাদের ধর্ম্ম-নিন্দাও আমি জানি৷”
স্মূর্ণাস্থ মণ্ডলী যে সব দীনতা এবং ক্লেশ ভোগ করেছে ঈশ্বর তা জানেন৷ জাগতিকভাবে যদিও তারা খুব দরিদ্র মন্ডলী ছিল, কিন্তু আত্মিকতায় স্মূর্ণাস্থ মণ্ডলী ধনবান ছিল৷ স্মূর্ণাস্থ বসবাসরত অনেক যিহুদী, যাদেরকে ঈশ্বর এভাবে বর্ণনা করেছেন, “আপনাদিগকে যিহূদী বলিলেও যাহারা যিহূদী নয়, কিন্তু শয়তানের সমাজ,” এইসব যিহুদীরা নিজেদেরকে শয়তানের অস্ত্রস্বরূপ তার (শয়তানের) উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয় এবং জল ও আত্মার সুসমাচার প্রচারে বাঁধা হয়ে ঈশ্বরের মন্ডলীর বিরোধিতা করে৷ তারা বিশ্বাস করত যে তারাই একমাত্র গোঁড়া যিহুদী, এবং এ কারণে তারাই কেবলমাত্র অব্রাহমের সন্তান৷ কিন্তু অব্রাহমের বিশ্বাস অনুসরণ করেকেবল তারাই পতিত হয় নি, বরং তাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বরকে অবজ্ঞা করায় তারা শেষে পরিত্যক্ত হয়েছিল৷ এই সমস্ত যিহুদীদের দ্বারা কঠোর নির্যাতনের স্বীকার হয়েছিল, স্মূর্ণা মণ্ডলী দরিদ্র হওয়া স্বত্তেও স্থির থাকার জন্য এই মন্ডলী আত্মিকভাবে ধনবান ছিল৷
পদ ১০: “তোমাকে যে সকল দুঃখ ভোগ করিতে হইবে, তাহাতে ভয় করিও না। দেখ, তোমাদের পরীক্ষার জন্য দিয়াবল তোমাদের কাহাকেও কাহাকেও কারাগারে নিক্ষেপ করিতে উদ্যত আছে, তাহাতে দশ দিন পর্য্যন্ত তোমাদের ক্লেশ হইবে। তুমি মরণ পর্য্যন্ত বিশ্বস্ত থাক, তাহাতে আমি তোমাকে জীবন-মুকুট দিব।”
ঈশ্বর স্মূর্ণাস্থ মণ্ডলীকে বলেছেন যে, “তোমাকে যে সকল দুঃখ ভোগ করিতে হইবে, তাহাতে ভয় করিও না।” তিনি তাদেরকে আরও বলেছেন, “মরণ পর্য্যন্ত বিশ্বস্ত থাক৷” এবং তিনি প্রতিজ্ঞা করেছেন যে, তিনি তাদেরকে “জীবন মুকুট” দান করবেন৷ ঈশ্বর পূর্ব থেকে অবগত আছেন যে, স্মূর্ণাস্থ মণ্ডলীর সাধুদের বিশ্বাস নষ্ট করার জন্য শয়তান ভীতি প্রদর্শন করার চেষ্টা করবে। এ কারণে তিনি প্রতিজ্ঞা করেছেন, যারা মরণ পর্য্যন্ত বিশ্বস্ত থাকবে তিনি তাদেরকে “জীবন মুকুট” দান করবেন৷
এই অনুচ্ছেদের মধ্যে দিয়ে ঈশ্বর আমাদেরকে বলেছেন যে, ঈশ্বরের দাস ও তাঁর সাধুগণ যারা শেষ দিন পর্যন্ত জীবিত থাকবে, তারা শয়তান ও তার অনুসারীদের দ্বারা নির্যাতিত হবে৷ কিন্তু মরণ পর্যন্ত ঈশ্বরের উপর বিশ্বস্ত থাকার শক্তি আমাদের থাকবে, এই শক্তি জল ও আত্মার সুসমাচারের দ্বারা আমাদের মধ্যে এসেছে এবং নূতন আকাশ ও নূতন পৃথিবীর জন্য আমাদের যে প্রত্যাশা, তা ঈশ্বর আমাদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছেন৷
পদ ১১: “যাহার কর্ণ আছে, সে শুনুক, আত্মা মণ্ডলীগণকে কি কহিতেছেন। যে জয় করে, সে দ্বিতীয় মৃত্যু দ্বারা হিংসিত হইবে না”
শেষ কালের বিশ্বাসীরা, খ্রীষ্টারী এবং যারা ঈশ্বরের বিরোধিতা করে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য একত্রিত হবে৷ ঈশ্বর আমাদেরকে বলেন, যাদের সত্য সুসমাচার এবং স্বর্গের প্রত্যাশা আছে, তারা তাদের বিশ্বাসে জয় উত্সব করবে৷ তাঁর বাক্য সত্য এবং বিশ্বাসের দ্বারা ঈশ্বর, তাঁর শত্রুদের জয় করার জন্য প্রত্যেক বিশ্বাসীদের সামর্থ্য দিয়েছেন৷ প্রশ্ন এটাই যে, আমরা ঈশ্বরের দাসগণের পক্ষে থাকব কি থাকব না৷
রোমীয় ৮: ১৮ পদে আমাদেরকে বলা হয়েছে যে, “ আমাদের মীমাংসা এই আমাদের প্রতি যে প্রতাপ প্রকাশিত হইবে, তাহার সঙ্গে এই বর্তমান কালের দুঃখভোগ তুলনার যোগ্য নয়”৷ খ্রীষ্টারী এবং তাদের অনুসারীদের দ্বারা আমাদের সম্ভবত দশদিন যাতনা ভোগ করতে হবে৷ ঈশ্বরের পক্ষে বিশ্বস্তভাবে আপনি এই অল্পকালের ক্লেশভোগ করতে পারেন, খ্রীষ্টারীকে জয় করতে পারেন এবং গৌরাবন্বিত করতে পারেন ও পুরস্কারস্বরূপ আপনি তাঁর অনন্ত রাজ্যে প্রবেশ করতে পারেন৷ খ্রীষ্টারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয়ের নিমিত্ত ঈশ্বর সাধুদেরকে ক্ষমতা দিয়েছেন৷
জল ও আত্মার সুসমাচারে আমাদের বিশ্বাসের দ্বারা খ্রীষ্টারীর উপর বিজয় উত্সব ঘোষণা করি এবং সকলে পুনরায় সহস্রাব্দের রাজত্বে মিলিত হই এবং নূতন আকাশ ও নূতন পৃথিবীতে অনন্তকালের নিমিত্ত একত্রে বসবাস করি৷ প্রথম মৃত্যু আমাদের দৈহিক মৃত্যুকে প্রকাশ করে, এমনকি অনন্ত নরকে শাস্তি ভোগের দ্বারা আমাদের আত্মিক মৃত্যুকে দ্বিতীয় মৃত্যুর সাথে তুলনা করা হয়৷ এ কারণে সাধুগণের সাক্ষ্যমরের মৃত্যু তাদের দৈহিক মৃত্য, কিন্তু তাদের আত্মার মৃত্যু হয় না৷
আমাদের সাক্ষ্যমরের মৃত্যুর জন্য ঈশ্বরকে কৃতজ্ঞতার সাথে গৌরব এবং সমাদর দিই, তিনি আদি মন্ডলীতে শেষ সময়ের বিশ্বাসীদেরকে সাক্ষ্যমরত্ব দান করেছেন৷