< প্রকাশিত বাক্য ১২:১-১৭ >
“ আর স্বর্গমধ্যে এক মহৎ চিহ্ন দেখা গেল। একটী স্ত্রীলোক ছিল, সূর্য্য তাহার পরিচ্ছদ, ও চন্দ্র তাহার পদের নীচে, এবং তাহার মস্তকের উপরে দ্বাদশ তারার এক মুকুট। সে গর্ভবতী, আর ব্যথিতা হইয়া চেঁচাইতেছে, সন্তান প্রসবের জন্য ব্যথা খাইতেছে। আর স্বর্গমধ্যে আর এক চিহ্ন দেখা গেল, দেখ, এক প্রকাণ্ড লোহিতবর্ণ নাগ, তাহার সপ্ত মস্তক ও দশ শৃঙ্গ এবং সপ্ত মস্তকে সপ্ত কিরীট, আর তাহার লাঙ্গুল আকাশের তৃতীয়াংশ নক্ষত্র আকর্ষণ করিয়া পৃথিবীতে নিক্ষেপ করিল। যে স্ত্রীলোকটি সন্তান প্রসব করিতে উদ্যত, সেই নাগ তাহার সম্মুখে দাঁড়াইল, যেন সে প্রসব করিবামাত্র তাহার সন্তানকে গ্রাস করিতে পারে। পরে সেই স্ত্রীলোকটী “এক পুত্রসন্তান প্রসব করিল; যিনি লৌহদণ্ড দ্বারা সমস্ত জাতিকে শাসন করিবেন।” আর তাহার সন্তানটী ঈশ্বরের ও তাঁহার সিংহাসনের নিকটে নীত হইলেন। আর সেই স্ত্রীলোকটী প্রান্তরে পলায়ন করিল; তথায় এক সহস্র দুই শত ষাট দিন পর্য্যন্ত প্রতিপালিতা হইবার জন্য ঈশ্বরকর্ত্তৃক প্রস্তুত তাহার একটী স্থান আছে। আর স্বর্গে যুদ্ধ হইল; মীখায়েল ও তাঁহার দূতগণ ঐ নাগের সহিত যুদ্ধ করিতে লাগিলেন। তাহাতে সেই নাগ ও তাহার দূতগণও যুদ্ধ করিল, কিন্তু জয়ী হইল না, এবং স্বর্গে তাহাদের স্থান আর পাওয়া গেল না। আর সেই মহানাগ নিক্ষিপ্ত হইল; এ সেই পুরাতন সর্প, যাহাকে দিয়াবল [অপবাদক] এবং শয়তান [বিপক্ষ] বলা যায়, সে সমস্ত নরলোকের ভ্রান্তি জন্মায়; সে পৃথিবীতে নিক্ষিপ্ত হইল, এবং তাহার দূতগণও তাহার সঙ্গে নিক্ষিপ্ত হইল। তখন আমি স্বর্গে এই উচ্চ রব শুনিলাম, ‘এখন পরিত্রাণ ও পরাক্রম ও রাজত্ব আমাদের ঈশ্বরের, এবং কর্ত্তৃত্ব তাঁহার খ্রীষ্টের অধিকার হইল; কেননা যে আমাদের ভ্রাতৃগণের উপরে দোষারোপকারী, যে দিবারাত্র আমাদের ঈশ্বরের সম্মুখে তাহাদের নামে দোষারোপ করে, সে নিপাতিত হইল। আর মেষশাবকের রক্ত প্রযুক্ত, এবং আপন আপন সাক্ষ্যের বাক্য প্রযুক্ত, তাহারা তাহাকে জয় করিয়াছে; আর তাহারা মৃত্যু পর্য্যন্ত আপন আপন প্রাণও প্রিয় জ্ঞান করে নাই। অতএব, হে স্বর্গ ও তন্নিবাসিগণ, আনন্দ কর; পৃথিবী ও সমুদ্রের সন্তাপ হইবে; কেননা দিয়াবল তোমাদের নিকটে নামিয়া গিয়াছে; সে অতিশয় রাগাপন্ন, সে জানে, তাহার কাল সংক্ষিপ্ত।’ পরে যখন ঐ নাগ দেখিল সে পৃথিবীতে নিক্ষিপ্ত হইয়াছে, তখন, যে স্ত্রীলোকটী পুত্রসন্তানটী প্রসব করিয়াছিল, সে সেই স্ত্রীলোকটীর প্রতি তাড়না করিতে লাগিল। তখন সেই স্ত্রীলোকটীকে বৃহৎ ঈগল পক্ষীর দুই পক্ষ দত্ত হইল, যেন সে প্রান্তরে, নিজ স্থানে উড়িয়া যায়, যেখানে ঐ নাগের দৃষ্টি হইতে দূরে ‘এক কাল ও দুই কাল ও অর্দ্ধ কাল’ পর্য্যন্ত সে প্রতিপালিতা হয়। পরে সেই সর্প আপন মুখ হইতে স্ত্রীলোকটীর পশ্চাৎ নদীবৎ জলধারা উদগীরণ করিল, যেন তাহাকে জলস্রোতে ভাসাইয়া দিতে পারে। আর পৃথিবী সেই স্ত্রীলোকটীকে সাহায্য করিল, পৃথিবী আপন মুখ খুলিয়া নাগের মুখ হইতে উদগীর্ণ নদী কবলিত করিল। আর সেই স্ত্রীলোকটীর প্রতি নাগ ক্রোধান্বিত হইল, আর তাহার বংশের সেই অবশিষ্ট লোকদের সহিত, যাহারা ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন ও যীশুর সাক্ষ্য ধারণ করে, তাহাদের সহিত যুদ্ধ করিতে গেল। ”
পদ ১: “ আর স্বর্গমধ্যে এক মহৎ চিহ্ন দেখা গেল। একটী স্ত্রীলোক ছিল, সূর্য্য তাহার পরিচ্ছদ, ও চন্দ্র তাহার পদের নীচে, এবং তাহার মস্তকের উপরে দ্বাদশ তারার এক মুকুট।”
এটা আমাদেরকে বলে যে, সাক্ষ্যমরের মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে ঈশ্বরের মন্ডলী তাঁকে গৌরাবন্বিত করেছে৷ “একটী স্ত্রীলোক ছিল, সূর্য্য তাহার পরিচ্ছদ,” বলতে এই পৃথিবীর উপরে ঈশ্বরের মন্ডলীকে বোঝায়, এবং চন্দ্র তাহার পদের নীচে,” অর্থ হল মন্ডলী তখনও পৃথিবীর শাসনের অধীনে রয়েছে৷ অন্যকথায়, “তাহার মস্তকের উপরে দ্বাদশ তারার এক মুকুট।” এর অর্থ হল, তার মন্ডলী এর সাক্ষ্যমরের মৃত্যুর দ্বারা শয়তানের আঘাত ও নির্যাতনকে জয় করবে৷ এই বাক্য মহাক্লেশের মধ্যান্তরের ঈশ্বরের মন্ডলীকে নির্দেশ করেছে৷ শেষ সময় তাঁর মন্ডলী শয়তান কর্তৃক মহাক্ষতি ভোগ করবে এবং সাক্ষ্যমরের মৃত্যু ভোগ করবে, কিন্তু তত্সত্ত্বেও, এটা এর বিশ্বাসের দ্বারা শয়তানকে জয় করবে এবং ঈশ্বর কর্তৃক গৌরাবন্বিত হবে৷ এমনকি মহাক্লেশের সময়ে ঈশ্বরের মন্ডলীর সাধুগণ জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাসের দ্বারা সাক্ষ্যমরের মৃত্যুর মাধ্যমে খ্রীষ্টারীকে জয় করবে এবং বিজয়োল্লাস করবে৷
যে সমস্ত ঈশ্বরের সন্তানেরা জল ও আত্মার দ্বারা নুতন জন্ম লাভ করেছেন, তারা নিশ্চিতভাবে শেষ সময়ে সাক্ষ্যমর হবে৷ মহাক্লেশের আবির্ভাবের ইতিপূর্বে যারা ঈশ্বরকে বিশ্বাস এবং সেবা করেছে এবং মহাক্লেশের মধ্যাংশে যারা বহু ব্যাঙের ছাতার ন্যায় জেগে ওঠা সুসমাচার বিশ্বাস করেছে, তাদের উভয়েরই সাক্ষ্যমরের মৃত্যুতে বিশ্বাস রয়েছে, যা তাদেরকে খ্রীষ্টারীর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে এবং জয় করতে সক্ষম করবে৷ যারা তাঁর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করার দ্বারা সাক্ষ্যমরের মৃত্যু হতে বঞ্চিত হয়েছে, তারা স্বর্গ থেকেও বঞ্চিত হবে, এবং সম্পূর্ণভাবে শয়তানের সাথে অনন্ত নরকে পতিত হবে৷ আমাদের উচিত দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে আমাদের সাক্ষ্যমরের মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার দ্বারা প্রস্তুত হওয়া নতুবা আমাদের নিমিত্ত প্রস্তুতকৃত অনন্ত আশীর্বাদ হারাব৷ আর আমাদেরকে জানতে হবে যে, সমস্ত নুতন জন্ম প্রাপ্তেরা শয়তানের আঘাতের সম্মুখীন হবে৷ সাক্ষ্যমরের মৃত্যুর স্থায়ীত্ব ক্ষণকালমাত্র এবং যখন এই সংক্ষিপ্ত সময় পার হয়ে যাবে তখন সহস্রাব্দের রাজ্য এবং স্বর্গ আমাদের হয়ে যাবে৷
এইরূপে আমরা অবশ্যই এটা বুঝে বর্তমান যুগে জীবনযাপন করব যে, যখন শেষ সময় আসবে আমরা পবিত্র আত্মার মধ্যে দিয়ে বিশ্বাসের দ্বারা সাক্ষ্যমরের মৃত্যু বরণ করব৷ সাক্ষ্যমরের মৃত্যুর সময়ে পবিত্র আত্মা আমাদেরকে বাক্য দেবেন যার দ্বারা আমরা কথা বলব, বীরত্বপূর্ণভাবে আমাদেরকে নির্যাতনকে জয় করাতে সক্ষম করবেন এবং বিশ্বাস পরিত্যাগ ব্যতীত আমাদেরকে সাক্ষ্যমরের মৃত্যুর সাথে স্বেচ্ছায় আলিঙ্গন করাবেন৷
এমনকি ভয়াবহ ক্লেশের মধ্যান্তরেও মন্ডলী শয়তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকবে এবং সাক্ষ্যমরের মৃত্যুর দ্বারা তার উপরে জয়লাভ করবে৷ এটা সবচেয়ে স্পষ্ট যে, এমনকি শয়তানের শেষ যুগে প্রভুর বাক্যে বিশ্বাসের দ্বারা এবং সাক্ষ্যমরের মৃত্যুর মাধ্যমে খ্রীষ্টারীর উপরে জয়ী হওয়ার দ্বারা ঈশ্বরের মন্ডলী ঈশ্বর কর্তৃক পুরস্কার লাভ করবে৷
পদ ২: “সে গর্ভবতী, আর ব্যথিতা হইয়া চেঁচাইতেছে, সন্তান প্রসবের জন্য ব্যথা খাইতেছে।”
এই পদ ক্লেশের ভেতরে মন্ডলীর অবস্থার বিষয়ে আমাদেরকে বলেছে৷ এটা আমাদেরকে শয়তান কর্তৃক আনীত শেষ সময়ের ক্লেশ এবং নির্যাতনের সম্পূর্ণ মন্ডলীর দৃঢ় প্রত্যয়ের কথা বলেছে৷ ঈশ্বরের মন্ডলী মহাক্লেশের মধ্য দিয়ে খ্রীষ্টারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে এর সময় অতিক্রম করবে৷ এভাবে সাধুগণ যখন মহাক্লেশের মধ্যে দিয়ে গমন করবে, শুধু তখনই তারা ঈশ্বরকে আহ্বান করবে৷ তারা প্রার্থনা করবে, “ঈশ্বর আমাদেরকে অনুগ্রহ প্রদান কর, যেন আমরা শীঘ্র এই সকল ক্লেশ অতিক্রম করতে পারি৷ এই সমস্ত ক্লেশ প্রশমিত করার দ্বারা আমাদেরকে সাহায্য কর৷ আমাদেরকে আমাদের ক্লেশ জয় করতে অনুমতি দাও৷ শয়তানের বিরুদ্ধে আমাদের বিজয়ী কর৷”
পদ ৩: “আর স্বর্গমধ্যে আর এক চিহ্ন দেখা গেল, দেখ, এক প্রকাণ্ড লোহিতবর্ণ নাগ, তাহার সপ্ত মস্তক ও দশ শৃঙ্গ এবং সপ্ত মস্তকে সপ্ত কিরীট, আর তাহার লাঙ্গুল আকাশের তৃতীয়াংশ নক্ষত্র আকর্ষণ করিয়া পৃথিবীতে নিক্ষেপ করিল।”
ভবিষ্যতে যখন শয়তান এই পৃথিবীতে আবির্ভূত হবে, সে ঈশ্বরের সঙ্গে যেমন করেছিল, তেমন কার্যক্রম শুরু করবে এবং পৃথিবীর সমস্ত জাতিকে একত্রিত করবে এবং তার উদ্দেশ্য পূর্ণ করতে তাদেরকে তার অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করবে৷ এছাড়া সে অবশ্যম্ভাবীভাবে সাধুগণকে হত্যা করবে এবং ঈশ্বর ও রাজার ন্যায় পৃথিবীর উপরে রাজত্ব করবে৷
“দেখ, এক প্রকাণ্ড লোহিতবর্ণ নাগ, তাহার সপ্ত মস্তক ও দশ শৃঙ্গ এবং সপ্ত মস্তকে সপ্ত কিরীট”৷ এই বাক্যাংশটি আমাদেরকে দেখায় যে, শয়তান শান্তিভঙ্গকারী এবং সাতজন রাজা এবং দশটি জাতি তার নিজের আয়ত্বে চালাবে৷ এটা আমাদেরকে বলে যে, শয়তান তার জরুরী প্রয়োজনে মৌলিকভাবে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে৷
পদ ৪: “যে স্ত্রীলোকটি সন্তান প্রসব করিতে উদ্যত, সেই নাগ তাহার সম্মুখে দাঁড়াইল, যেন সে প্রসব করিবামাত্র তাহার সন্তানকে গ্রাস করিতে পারে।”
শয়তান যা করবে এই পদে আমাদেরকে তা বলা হয়েছে৷ স্বর্গে নাগ ঈশ্বরের বিরুদ্ধে উঠেছিল এবং এজন্য সে নিক্ষেপিত হয়েছিল৷ সে স্বর্গের এক-তৃতীয়াংশ দূতকে আকর্ষণ করল এবং তার সাথে তাদেরকেও সম্পূর্ণ ধ্বংসে পরিচালিত করল৷ এভাবে সে ঈশ্বরের সম্মুখ থেকে পতিত হল৷ কিন্তু এই সময়ে এমনকি পৃথিবীতে সে সুসমাচারে বিশ্বাসীদেরকে নির্যাতনের মাধ্যমে ঈশ্বরের সুসমাচারের কাজ বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷
পদ ৫: “পরে সেই স্ত্রীলোকটী এক পুত্রসন্তান প্রসব করিল; যিনি লৌহদণ্ড দ্বারা সমস্ত জাতিকে শাসন করিবেন। আর তাহার সন্তানটী ঈশ্বরের ও তাঁহার সিংহাসনের নিকটে নীত হইলেন।”
এটা আমাদেরকে বলে যে, যেহেতু ঈশ্বরের মন্ডলী যীশু খ্রীষ্টে বিশ্বাসের দ্বারা সাক্ষ্যমর হয়েছে, সে খ্রীষ্টের সাথে পুনরুত্থিত হবে এবং স্বর্গরাজ্যের নিমিত্ত রূপান্তরিত হবে৷
পদ ৬: “আর সেই স্ত্রীলোকটী প্রান্তরে পলায়ন করিল; তথায় এক সহস্র দুই শত ষাট দিন পর্য্যন্ত প্রতিপালিতা হইবার জন্য ঈশ্বরকর্ত্তৃক প্রস্তুত তাহার একটী স্থান আছে।”
এই পদ আমাদেরকে বলে যে, ঈশ্বর এই পৃথিবীতে তাঁর লোকদের সাড়ে তিন বছর প্রতিপালন করবেন৷ ঈশ্বরের মন্ডলী পূর্ণ মাত্রায় ক্লেশ শুরু হওয়ার পূর্বে ১২৬০ দিন পর্যন্ত ঈশ্বর কর্তৃক সুরক্ষিত এবং প্রতিপালিত হবে, এবং যখন সময় আসবে তখন সে খ্রীষ্টারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে এবং সাক্ষ্যমর হবে৷
পদ ৭-৮: “আর স্বর্গে যুদ্ধ হইল; মীখায়েল ও তাঁহার দূতগণ ঐ নাগের সহিত যুদ্ধ করিতে লাগিলেন। তাহাতে সেই নাগ ও তাহার দূতগণও যুদ্ধ করিল, কিন্তু জয়ী হইল না, এবং স্বর্গে তাহাদের স্থান আর পাওয়া গেল না।”
এটা স্বর্গ থেকে শয়তানের সম্পূর্ণরূপে বিতাড়িত হওয়াকে বোঝায়৷ এই পৃথিবীতে আসার পূর্বে শয়তান সম্পূর্ণরূপে স্বর্গ থেকে নিক্ষেপিত হয়েছিল৷ শয়তান আর স্বর্গে থাকতে পারে নি৷ শয়তান, যার বাতাসের উপর কর্তৃত্ব ছিল, সে বাতাস ও পৃথিবী উভয়ের উপর উপবিষ্ট হয়ে বর্তমানে তাদেরকে শাসন করছে৷ সে যেভাবে সম্পূর্ণরূপে স্বর্গ থেকে নিক্ষিপ্ত হয়েছিল, যখন শেষ দিন আসবে তখন ঠিক সেভাবে সে পৃথিবীতে আরো বেশী করে সাধুগণের উপরে নির্যাতন চালাবে৷ কিন্তু শয়তান তখন ঈশ্বর কর্তৃক প্রস্তুতিকৃত অগাধলোকের কূপে সম্পূর্ণভাবে নিক্ষিপ্ত হবে৷
পদ ৯: “আর সেই মহানাগ নিক্ষিপ্ত হইল; এ সেই পুরাতন সর্প, যাহাকে দিয়াবল [অপবাদক] এবং শয়তান [বিপক্ষ] বলা যায়, সে সমস্ত নরলোকের ভ্রান্তি জন্মায়; সে পৃথিবীতে নিক্ষিপ্ত হইল, এবং তাহার দূতগণও তাহার সঙ্গে নিক্ষিপ্ত হইল।”
শেষ সময়ে, শয়তান যেভাবে স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে নিক্ষিপ্ত হয়েছিল সেভাবে সে সাধুগণকে নির্যাতন ও হত্যা করবে৷ অনেক সাধুগণ তার হাতে সাক্ষ্যমর হবে৷
পদ ১০: “তখন আমি স্বর্গে এই উচ্চ রব শুনিলাম, ‘এখন পরিত্রাণ ও পরাক্রম ও রাজত্ব আমাদের ঈশ্বরের, এবং কর্ত্তৃত্ব তাঁহার খ্রীষ্টের অধিকার হইল; কেননা যে আমাদের ভ্রাতৃগণের উপরে দোষারোপকারী, যে দিবারাত্র আমাদের ঈশ্বরের সম্মুখে তাহাদের নামে দোষারোপ করে, সে নিপাতিত হইল।”
শয়তানকে আর স্বর্গরাজ্যে পাওয়া গেল না, যখন শেষ সময় অতিক্রম হয়ে গিয়েছিল সে আর স্বর্গে থাকতে পারল না৷ একারণে প্রকাশিত বাক্য ২১: ২৭ পদে আমাদেরকে বলা হয়েছে যে, ঘৃণাকারী ও মিথ্যাবাদী কাউকেই স্বর্গরাজ্যে পাওয়া যাবে না৷
পদ ১১: “আর মেষশাবকের রক্ত প্রযুক্ত, এবং আপন আপন সাক্ষ্যের বাক্য প্রযুক্ত, তাহারা তাহাকে জয় করিয়াছে; আর তাহারা মৃত্যু পর্য্যন্ত আপন আপন প্রাণও প্রিয় জ্ঞান করে নাই।”
যখন শেষ সময় উপস্থিত হবে, তখন সাধুগণ তাদের বিশ্বাস রক্ষা করতে গিয়ে সাক্ষ্যমর হবে৷ যে সাধু ব্যক্তি সে সময়ে তার সাক্ষ্যমরের মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে বিশ্বাসের বিজয় অর্জন করবে৷ অন্যকথায়, যে সাধুগণেরা প্রভুতে বিশ্বাস করে, তারা শয়তানের বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধে বিজয়ী হবে৷
পদ ১২: “অতএব, হে স্বর্গ ও তন্নিবাসিগণ, আনন্দ কর; পৃথিবী ও সমুদ্রের সন্তাপ হইবে; কেননা দিয়াবল তোমাদের নিকটে নামিয়া গিয়াছে; সে অতিশয় রাগাপন্ন, সে জানে, তাহার কাল সংক্ষিপ্ত”
শয়তান যখন এই পৃথিবীতে নেমে আসবে, যেভাবে সে নিক্ষিপ্ত হয়েছে, অল্পকালের জন্য যে ক্ষমতা তাকে দত্ত হবে তাতে সে সাধুগণের উপর ভয়ঙ্কর পীড়ন এবং নির্যাতন করবে৷ কিন্তু যে সমস্ত সাধুগণ সাক্ষ্যমর ও উর্দ্ধে নীত হবে, তাদের জন্য কেবল আনন্দ প্রতীক্ষা করছে৷ রূপান্তরের পরে ঈশ্বর সমস্ত পৃথিবী এবং সমুদ্রের উপরে সপ্তবাটির মহামারী প্রবাহিত করবেন৷
পদ ১৩: “পরে যখন ঐ নাগ দেখিল সে পৃথিবীতে নিক্ষিপ্ত হইয়াছে, তখন, যে স্ত্রীলোকটী পুত্রসন্তানটী প্রসব করিয়াছিল, সে সেই স্ত্রীলোকটীর প্রতি তাড়না করিতে লাগিল।”
এটা মহাক্লেশের সময়ে আসা সাধুগণের নির্যাতনকে বোঝাচ্ছে৷ এই সময় ঈশ্বরের সাধুগণ এবং দাসগণ সাক্ষ্যমর হিসাবে মৃত্যুবরণ করবেন, কিন্তু বস্তুত তা তাদের বিশ্বাসের বিজয় অর্জন হবে৷ তাদের জন্য মৃত্যু, দুঃখভোগ বা অভিশাপ থাকবে না৷ তাদের জন্য যেটা থাকবে তা হল ঈশ্বরের প্রশংসা করা এবং অনন্তকাল স্বর্গে গৌরাবন্বিত হওয়া৷
পদ ১৪: “তখন সেই স্ত্রীলোকটীকে বৃহৎ ঈগল পক্ষীর দুই পক্ষ দত্ত হইল, যেন সে প্রান্তরে, নিজ স্থানে উড়িয়া যায়, যেখানে ঐ নাগের দৃষ্টি হইতে দূরে ‘এক কাল ও দুই কাল ও অর্দ্ধ কাল’ পর্য্যন্ত সে প্রতিপালিতা হয়।”
বাইবেল আমাদেরকে বলে যে, মহাক্লেশের প্রথম সাড়ে তিন বছর পার হওয়ার পরে রূপান্তর ঘটবে৷ এই বাক্য বলে যে, মহাক্লেশের প্রাকৃতিক মারীর মধ্যান্তরে ঈশ্বর সাধুগণকে তাঁর বিশেষ সুরক্ষা দেবেন ও প্রতিপালন করবেন৷ আমরা যারা আমাদের বিশ্বাস রক্ষা করব ঈশ্বর আমাদেরকে প্রতিপালন করবেন যাতে এই বিশ্বাস দ্বারা আমরা শয়তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে ও বিজয়ী হতে পারি৷
আমরা যে জল ও আত্মার সুসমাচারের পক্ষে জীবনযাপন করছি, এটাই আমাদের প্রতিপালন এবং এ কারণে আমাদের এই সুসমাচার প্রচার করা৷ এখন সপ্ততুরীর মহামারী এই পৃথিবীতে নেমে আসা পর্যন্ত আমরা সুসমাচার প্রচারের দ্বারা আমাদের জীবনযাপন চালিয়ে যাব৷ কেন? কারণ আমরা যদি আমাদের সাক্ষ্যমরত্বের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত এই সুসমাচার না প্রচার করি তাহলে বহু আত্মা নরকে হারিয়ে যাবে৷ আর সময় নেই, তাই এখনই তা করি৷
পদ ১৫-১৭: “পরে সেই সর্প আপন মুখ হইতে স্ত্রীলোকটীর পশ্চাৎ নদীবৎ জলধারা উদগীরণ করিল, যেন তাহাকে জলস্রোতে ভাসাইয়া দিতে পারে। আর পৃথিবী সেই স্ত্রীলোকটীকে সাহায্য করিল, পৃথিবী আপন মুখ খুলিয়া নাগের মুখ হইতে উদগীর্ণ নদী কবলিত করিল। আর সেই স্ত্রীলোকটীর প্রতি নাগ ক্রোধান্বিত হইল, আর তাহার বংশের সেই অবশিষ্ট লোকদের সহিত, যাহারা ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন ও যীশুর সাক্ষ্য ধারণ করে, তাহাদের সহিত যুদ্ধ করিতে গেল। ”
পূর্বে, শয়তান সাধুগণকে সুসমাচারের পথ থেকে সরিয়ে এবং তাদেরকে নির্যাতন করে বধ করেছে৷ কিন্তু বর্তমানে সুসমাচার যেভাবে বিভিন্ন পন্থায় বিস্তৃতভাবে প্রচারিত হচ্ছে তাতে শয়তান চেষ্টা করছে সাধুগণকে পাপ যন্ত্রণা দ্বারা বধ করতে এবং এর স্রোতের বানে ভাসিয়ে নিতে৷ শয়তান এভাবে পাপের নদী প্রবাহের এর জল পান করানোর দ্বারা অনেক সাধুদের মৃত্যু আনয়নের চেষ্টা করেছে, কিন্তু যারা নুতন জন্ম পায়নি তারা সকলে এই নদীর জল পান করেছে৷ এমনকি সাধুগণ যেভাবে কঠোর প্রচেষ্টায় বেঁচে থাকবে এবং মারা পড়বে না, তা ১৩ অধ্যায়ে দেখানো হয়েছে, শয়তান তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে মারতে অন্য পদ্ধতি নিয়ে উপস্থিত হবে৷