< ১ যোহন ৩:১-১০ >
“দেখ, পিতা আমাদিগকে এমন প্রেম প্রদান করিয়াছেন যে, আমরা ঈশ্বরের সন্তান বলিয়া আখ্যাত হই; আর আমরা তাহাই বটে। এই জন্য জগৎ আমাদিগকে জানে না, কারণ সে তাঁহাকে জানে নাই। প্রিয়তমেরা, এখন আমরা ঈশ্বরের সন্তান; এবং কি হইব, তাহা এই পর্যন্ত প্রকাশিত হয় নাই। আমরা জানি, তিনি যখন প্রকাশিত হইবেন, তখন আমরা তাঁহার সমরূপ হইব; কারণ তিনি যেমন আছেন, তাঁহাকে তেমনি দেখিতে পাইব। আর তাঁহার উপরে এই প্রত্যাশা যে কাহারও আছে, সে আপনাকে বিশুদ্ধ করে, যেমন তিনি বিশুদ্ধ। যে কেহ পাপাচরণ করে, সে ব্যবস্থালঙ্ঘনও করে, আর ব্যবস্থালঙ্ঘনই পাপ। আর তোমরা জান, পাপভার লইয়া যাইবার জন্য তিনি প্রকাশিত হইলেন, এবং তাঁহাতে পাপ নাই। যে কেহ তাঁহাতে থাকে, সে পাপ করে না; যে কেহ পাপ করে, সে তাঁহাকে দেখে নাই এবং জানেও নাই। বৎসেরা কেহ যেন তোমাদিগকে ভ্রান্ত না করে; যে ধর্মাচরণ করে সে ধার্মিক, যেমন তিনি ধার্মিক। যে পাপাচরণ করে, সে দিয়াবলের; কেননা দিয়াবল আদি হইতে পাপ করিতেছে, ঈশ্বরের পুত্র এই জন্যই প্রকাশিত হইলেন, যেন দিয়াবলের কার্য সকল লোপ করেন। যে কেহ ঈশ্বর হইতে জাত, সে পাপচরণ করে না, কারণ তাঁহার বীর্য তাহার অন্তরে থাকে; এবং সে পাপ করিতে পারে না, কারণ সে ঈশ্বর হইতে জাত। ইহাতে ঈশ্বরের সন্তানগণ এবং দিয়াবলের সন্তানগণ প্রকাশ হইয়া পড়ে; যে কেহ ধর্মাচরণ না করে, এবং যে ব্যক্তি আপন ভ্রাতাকে প্রেম না করে, সে ঈশ্বরের লোক নয়।”
প্রেরিত যোহন এখানে ১ যোহন ৩:১ পদে বলেছেন, “দেখ, পিতা আমাদিগকে এমন প্রেম প্রদান করিয়াছেন যে, আমরা ঈশ্বরের সন্তান বলিয়া আখ্যাত হই; আর আমরা তাহাই বটে।” আপনি কি জানেন যে, পিতা ঈশ্বর আমাদেরকে কেমন প্রেম প্রদান করেছেন, যাতে আমরা তাঁর নিজের সন্তান বলে আখ্যাত হই? এটা জানা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, তাঁর নিজের সন্তান বানানোর জন্য ঈশ্বর আমাদেরকে কেন প্রেম প্রদান করেছেন। যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে পাপমুক্ত করার দ্বারা ঈশ্বর আমাদেরকে তাঁর নিজের সন্তান বানিয়েছেন। আমাদের জন্য নিজের পুত্রকে দান করে পিতা ঈশ্বর তাঁর উপরে আমাদের সমস্ত পাপ অর্পন করলেন, আর আমাদের জায়গায় তাঁকে আমাদের পাপের দন্ড ভোগ করালেন। আর তাঁর পুত্রকে জীবনে পুনরুত্থিত করার দ্বারা পিতা ঈশ্বর আমাদেরকে তাঁর নিজের সন্তান বানিয়েছেন। ঈশ্বর আমাদেরকে এই রকম প্রেম প্রদান করেছেন। ঈশ্বর আমাদের জন্য তাঁর নিজের পুত্রকে দান করলেন, যাতে আমরা তাঁর নিজের সন্তান বলে আখ্যাত হই। এইজন্যই, প্রেরিত যোহন এখানে ঈশ্বরের প্রেমকে তুলে ধরেছেন। শুধুমাত্র ঈশ্বরের প্রেম শুনলেই আমরা যথাযথভাবে উপলব্ধি করতে পারব না যে, ঈশ্বর আমাদেরকে ঠিক কতটা প্রেম করেন; কিন্তু যখন আমরা এই বিষয়টি চিন্তা করি যে, ঈশ্বর তাঁর এক জাত পুত্রকে দান এবং উৎসর্গের দ্বারা আমাদেরকে তাঁর নিজের সন্তান বানিয়েছেন, তখন আমরা সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারি যে, ঈশ্বরের প্রেম ঠিক কতটা অপরিসীম।
ঈশ্বর আমাদের জন্য যা করেছেন, তা কি অন্য কেউ করতে পারবে?
ঈশ্বর আমাদেরকে যতটা প্রেম করেছেন, একটা মানুষ অপর মানুষকে ততটা প্রেম করে না। আর কোন মানুষ এই ধরণের প্রেম করতেও পারে না। প্রায় ৬০ বছর আগে, যখন কোরিয়ান যুদ্ধ সংঘটিত হয়, তখন রেভা. সন নামে এক পাস্টর ছিলেন। তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিম প্রদেশে মিনিষ্ট্রি চালাতেন। সেই যুদ্ধের সময় তিনি তাঁর দুই পুত্রকে কমিউনিস্ট গেরিলাদের দ্বারা নিষ্ঠুরভাবে খুন হতে দেখেন। তাঁর দুই পুত্রকে হত্যা করা হয়েছিল, কারণ তারা খ্রীষ্টান ছিল। তবুও, প্রতিশোধ নেওয়ার বদলে পাস্টর সন তাঁর ছেলের খুনিদের মধ্যে একজনকে তাঁর পুত্র হিসেবে দত্তক নেন এবং তাঁর বাড়িতে নিয়ে যান। বলার অপেক্ষা রাখে না, এটা অদ্ভূত একটা প্রেমের প্রদর্শনী। আপনাদের মধ্যে কেউ কি এমনটা করতে পারবেন? আপনারা কি আপনাদের পুত্রের খুনিকে নিজের সন্তান হিসেবে দত্তক নিয়ে নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে তার দেখাশোনা করতে পারবেন? কয়েকজন যদিও বা পারেন, তবে তাদের সংখ্যাটা খুবই নগণ্য। তাই, আমাদের মানবীয় দৃষ্টিকোণ থেকে, রেভা. সন এই দৃষ্টান্তমূলক প্রেম দেখানোর জন্য একটা বিশাল শ্রদ্ধা পাওয়ার অধিকারী।
যদি তিনি এটা ঈশ্বরের প্রেম থেকে করে থাকেন, তাহলে আরো বেশি করে ঈশ্বরের প্রশংসা করা উচিত; যাইহোক, যদি তিনি এটা নিজের ধার্মিকতা প্রতিষ্ঠার জন্য করে থাকেন, তাহলে এর চেয়ে ভন্ডামিপূর্ণ কাজ আর হতে পারে না। সর্বোপরি, আপনি কিভাবে আপনার দুই পুত্রের খুনির সাথে এক টেবিলে বসে খাবার খেতে পারেন, যেন কিছুই হয়নি? আপনি কি তাকে টেবিলে খেতে দেখতে পারবেন? আপনি কি তাকে সেই জায়গাতেই গলায় টিপে ধরে শ্বাসরোধ করে মারতে চাইবেন না? যে লোকটি আপনার নিজের পুত্রদের হত্যা করেছে, বিশেষ করে, আর কোন কারণ নয়, কিন্তু আপনার পুত্রেরা খ্রীষ্টান, এই কারণেই যদি সে এটা করে থাকে, তাহলে আপনি কি করে তার সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ মনোভাব দেখাতে পারেন।
আপনাদের বিষয়টা জানি না, কিন্তু আমি নিশ্চিতভাবেই এমনটা করতে পারতাম না; যদি আমার মধ্যে তখন ঈশ্বরের প্রেম থাকত, তাহলে বিষয়টা ভিন্ন। আমি ঠিক নিশ্চিত না যে, রেভা. সন এটা ঈশ্বরের প্রেম থেকে করেছিলেন কিনা। কিন্তু মানবীয় দৃষ্টিকোণ থেকে, তাঁকে আমার চেয়ে ভাল মানুষই মনে হয়। আমাদেরকে তাঁর নিজের সন্তান বানানোর জন্য পিতা ঈশ্বর আমাদেরকে কেমন প্রেম প্রদান করেছেন? তিনি তাঁর এক জাত পুত্র যীশুকে আমার জন্য দান করলেন। পিতা ঈশ্বর তাঁর পুত্রের উপরে শুধু আমাদের পাপই বর্তালেন না, কিন্তু তাঁকে মৃত্যুর হস্তে সমর্পণের দ্বারা আমাদের জায়গায় তাঁকে আমাদের পাপের দন্ড ভোগ করালেন। আর তাঁর পুত্রকে জীবনে পুনরুত্থিত করার দ্বারা ঈশ্বর আমাদেরকেও নতুন জীবন দান করলেন। আমরা সহ-বিশ্বাসীগণ, পিতা ঈশ্বরের এই প্রেম কতটা মহৎ। এই অদ্ভূত প্রেমের কারণেই আমরা এখন ঈশ্বরের সন্তান বলে আখ্যাত হই।
আমরা বিশ্বাস করি যে, আমরা ঈশ্বরের নিজের সন্তান হয়েছি। এইজন্য, সমস্ত ধন্যবাদ প্রাপ্য প্রভু ঈশ্বরের। পিতা ঈশ্বর আমাদেরকে তাঁর প্রেম প্রদান করেছেন এবং এই জগতের জন্য পরিত্রাণের কার্য সাধন করেছেন- অর্থাৎ, প্রভু আমাদেরকে জল ও আত্মার সুসমাচার দ্বারা পরিত্রাণ করেছেন। এইজন্য, প্রেরিত যোহন বলেন, “এই জন্য জগৎ আমাদিগকে জানে না, কারণ সে তাঁহাকে জানে নাই” (১ যোহন ৩:১)। এই জগতের লোকেরা যখন ঈশ্বরকেই জানে না, তখন তারা আমাদের কিভাবে জানবে? পিতা ঈশ্বর তাঁর এক জাত পুত্র যীশু খ্রীষ্টকে এই জগতে প্রেরণ করলেন, এবং যোহন বাপ্তাইজক কর্তৃক বাপ্তিস্ম দানের দ্বারা তাঁকে আমাদের সমস্ত পাপ বহন করালেন। এরপর পিতা ঈশ্বর তাঁর পুত্রকে ক্রুশে মৃত্যুবরণ করালেন, মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত করলেন, এবং এভাবে আমাদেরকে অনন্ত জীবন দান করলেন। এইজন্য, যদি লোকেরা না জানে যে, পিতা ঈশ্বর তাঁর পুত্র যীশু খ্রীষ্টের দ্বারা তাদের জন্য কি করেছেন, তাহলে জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাসী যে আমরা, আমাদেরকেও জানতে পারবে না।
আপনি এবং আমি, আমরা যারা ঈশ্বরের ধার্মিকতায় বিশ্বাস দ্বারা আমাদের পাপের ক্ষমা লাভ করেছি, এই জগতের লোকেরা আমাদেরকে কিভাবে জানতে পারবে? শাস্ত্র বলে তারা পারবে না। বাস্তবিকই, এই জগতের লোকেরা জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাসী লোকদেরকে জানে না। এমনি কেন? এর কারণ হল- তারা আমাদেরকে শুধু মাংসিকভাবেই জানে। তারা উপলব্ধি করতে পারে না যে, আমরা ঈশ্বরের নিজের সন্তান হয়েছি; কারণ তারা জানে না যে, পিতা ঈশ্বর তাঁর পুত্র যীশুর দ্বারা আমাদের সমস্ত পাপ মোচন করেছেন, এই পাপগুলোকে একেবারে মোচন করেছেন, দন্ড দিয়েছেন, এবং এভাবে, আমাদেরকে আমাদের মৃত্যু ও বিচার থেকে মুক্ত করেছেন।
ঈশ্বরের সন্তান কারা?
১ যোহন ৩:২ পদে লেখা আছে, “প্রিয়তমেরা, এখন আমরা ঈশ্বরের সন্তান।” তাহলে, আপনারা কি জানেন, ঈশ্বরের সন্তান কারা? তারা হল- জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস করা সমস্ত বিশ্বাসী। আমরা পিতা ঈশ্বরের প্রেম পরিধান করেছি। যীশু খ্রীষ্টের ধার্মিকতায় বিশ্বাস দ্বারা আমরা ঈশ্বরের নিজের পুত্র ও কন্যা হয়েছি। অধিকন্তু, ঈশ্বর তাঁর সন্তানদের জন্য স্বর্গদূত নিযুক্ত করেছেন। ভবিষ্যতে, আমি আমার অন্য একটি উপদেশে এই বিষয়টি আরো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব। কিন্তু এখন আমি মথি ১৮:১০-১১ পদে আপনাদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাই, “দেখিও, এই ক্ষুদ্রগণের মধ্যে একটিকেও তুচ্ছ করিও না; কেননা আমি তোমাদিগকে কহিতেছি, তাহাদের দূতগণ স্বর্গে সতত আমার স্বর্গস্থ পিতার মুখ দর্শন করেন।” এখানে “ক্ষুদ্রগণ” বলতে- যারা ঈশ্বরকে জানে ও বিশ্বাস করে, অর্থাৎ যারা পাপের ক্ষমা লাভ করেছে- তাদেরকে বোঝানো হয়েছে। আর এখানে যীশু সাবধান করে দিয়েছেন, যাতে তাদের মধ্যে একজনকেও তুচ্ছ না করা হয়। অন্যকথায়, কেউ ঈশ্বরের সন্তানদের তুচ্ছ করবে না যে, তারা কিছুই না। কারণ যীশু নিজেই এখানে পরিষ্কার করে বলেছেন, “তাহাদের দূতগণ স্বর্গে সতত আমার স্বর্গস্থ পিতার মুখ দর্শন করেন।”
শাস্ত্র বলে যে, যখন আমরা স্বর্গরাজ্যে যাব, তখন স্বর্গদূতগণ আমাদেরকে ঈশ্বরের সন্তান হিসেবে সমাদর করবেন। এমনকি এখনো আমাদের জন্য অর্থাৎ মুক্তি প্রাপ্তদের জন্য, এই জগতে আমরা যতদিন বেঁচে আছি, আমাদের প্রত্যেকের জন্য একজন করে স্বর্গদূত নিয়োগ করা আছে। এমনকি এখনো এই স্বর্গদূতগণ পিতা ঈশ্বরের সাক্ষাতে আমাদের জন্য কাজ করছেন। আমাদের জীবনে কি ঘটছে এবং কারা আমাদেরকে যন্ত্রণা দিচ্ছে, পিতা ঈশ্বরের সাক্ষাতে তাঁরা এই সমস্ত খবর দেন। যখন জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাসীরা তুচ্ছিকৃত হয়, তখন তাদের স্বর্গদূতগণ এই সমস্ত খবর পিতা ঈশ্বরের কাছে পৌঁছে দেন। তাঁরা বলেন, “প্রভু, এই লোকেরা আমাদের প্রভুদেরকে অর্থাৎ তোমার সন্তানদেরকে যন্ত্রণা দিচ্ছে।”
আমরা ঈশ্বরের সন্তান, কারণ আমরা জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস করি। ঠিক এই মুহূর্তে, যখন আমরা শুনছি যে, আমরা ঈশ্বরের সন্তান, তখন হয়তো আমরা এটা সম্পূর্ণরূপে উপলব্ধি করতে পারছি না। যাইহোক, যখন সময় আসবে, তখন আমরা সবাই ঈশ্বরের সন্তান হিসেবে সম্মানীত হব। আজকে আমি টিভিতে একটা সিনেমা দেখলাম, যার নাম- কালকের পরের দিন (The Day After Tomorrow)। যখন আমি আমার পান্ডুলিপির কাজ থেকে একটু বিরতি নিয়েছিলাম, তখন হঠাৎ এই সিনেমাটি আমার সামনে চলে আসে। আমি এই সিনেমাটি প্রথম থেকে দেখি নাই, আর সম্পূর্ণ সিনেমাটি দেখেও শেষ করি নাই। আমি শুধুমাত্র মাঝের কয়েকটি দৃশ্য দেখেছি। যাইহোক, সিনেমাটির ভিত্তি ছিল জলবায়ূর চরম পরিবর্তন, যা বৈwòক উòতার সাথে সম্পৃক্ত। মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাওয়ার কারণে অনেক ধরণের প্রাকৃতিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। ঘন ঘন সুনামি থেকে শুরু করে ভয়ানক টর্নেডো, ভয়ঙ্কর ও প্রবল তুষারঝড় পুরো শহরকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এখানে আরো দেখানো হয়েছে যে, একটা নতুন বরফের যুগ এসেছে।
খুব বেশি দিন পরে নয়, কিন্তু অদূর ভবিষ্যতেই এই সমস্ত বিপর্যয় এই পৃথিবীতে বাস্তবে ঘটবে। আপনারা এগুলো শুধু সাইন্স-ফিকশন সিনেমাতেই দেখছেন না, কিন্তু এগুলো এই পৃথিবীতে বাস্তবেই ঘটবে। যাইহোক, যখন এরকম বিপর্যয় ঘটবে, তখন জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাসীদের জন্য একটা রাস্তা খোলাই থাকবে, কারণ তারা ঈশ্বরের সন্তান হয়েছে। যখন পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে, তখন ধার্মিকদের যাওয়ার জন্য একটা স্থান থাকবে, আর তারা সেখানে ঈশ্বরের সাথে চিরকাল বাস করবে। শুধুমাত্র তাদের জন্য, পৃথিবী নামক এই গ্রহটির বাইরে প্রস্তুতকৃত একটা ভিন্ন স্থান রয়েছে।
এইজন্যই, জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাসীদেরকে ঈশ্বরের নিজের সন্তান বলে প্রেরিত যোহন আরো বলেছেন যে, “প্রিয়তমেরা, এখন আমরা ঈশ্বরের সন্তান; এবং কি হইব, তাহা এই পর্যন্ত প্রকাশিত হয় নাই। আমরা জানি, তিনি যখন প্রকাশিত হইবেন, তখন আমরা তাঁহার সমরূপ হইব; কারণ তিনি যেমন আছেন, তাঁহাকে তেমনি দেখিতে পাইব। আর তাঁহার উপরে এই প্রত্যাশা যে কাহারও আছে, সে আপনাকে বিশুদ্ধ করে, যেমন তিনি বিশুদ্ধ”- ১ যোহন ৩:২-৩। এখানে, নিজেকে বিশুদ্ধ করা বলতে বোঝানো হয়েছে, জল ও আত্মার সুসমাচার রোমন্থনের দ্বারা বিশ্বাসে নিজের হৃদয় বিশুদ্ধ করা। এখানে এটাও লেখা আছে যে, আমরা কি হব, তা যদিও এখনো পর্যন্ত প্রকাশিত হয় নাই, কিন্তু আমরা জানি যে, যখন প্রভু প্রকাশিত হবেন, তখন আমরা তাঁর সমরূপ হব। কেন? কারণ, আমরা প্রভুকে ঠিক তাঁর মতো করেই দেখব। সুতরাং, আমরা একটি নতুন সৃষ্টি হয়েছি, আর এটা খুবই চমৎকার একটা আশীর্বাদ।
বলা হয়ে থাকে যে, একটা ঘুগরা পোকাকে পূর্ণবয়স্ক ঘুগরা পোকায় পরিণত হওয়ার আগে শুয়াপোকা হিসেবে পাঁচ থেকে সাত বছর মাটির নিচে থাকতে হয়। আর যখন সময় আসে, তখন শুয়াপোকা মাটির নিচ থেকে উঠে আসে, শেষবারের মতো তার আবরণ খোসে যায়, আর তার একটা পূর্ণবয়স্ক ঘুগরা পোকা হিসেবে সূচনা হয়। একইভাবে, আমরা যারা জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস দ্বারা আমাদের পাপের ক্ষমা লাভ করেছি, একদিন আমরাও রূপান্তরিত হয়ে যাব। যদিও আমরা এই পৃথিবীতে আমাদের পিতা-মাতার মাধ্যমে মাংসিক শরীর নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছি, কিন্তু যখন সময় আসবে, আমরা সবাই রূপান্তরিত হয়ে যাব এবং স্বর্গরাজ্যে চলে যাব, আর সেখানে চিরকাল বাস করব।
আমার সহ-বিশ্বাসীগণ, এটা কোন রূপকথার গল্প নয়। ঈশ্বরের আশীর্বাদ হল বাস্তব। কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হয়, অনেক খ্রীষ্টানদের সমস্যা হল তারা ঈশ্বরের বাক্যকে স্রেফ একটা ধর্মীয় বিশ্বাস হিসেবে গ্রহণ করে। তারা স্বর্গরাজ্যকে ভাসাভাসাভাবে বিশ্বাস করে; তাদের বিশ্বাসের নিশ্চয়তা আছে বলে নয়, কিন্তু তাদেরকে এটা একটা ঐতিহ্য হিসেবে বিশ্বাস করতে শেখানো হয়েছে। ফলে, আজকের অনেক খ্রীষ্টানদের স্বর্গ সম্পর্কে খুব ভাসাভাসা ধারণা রয়েছে। অন্যদিকে, আমরা যারা জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস দ্বারা ঈশ্বরের সন্তান হয়েছি, আমরা নিশ্চিত যে, আমরা সত্যি সত্যিই ঈশ্বরের রাজ্যে যাব। আর আমরা একইভাবে এটাও নিশ্চিত যে, এই পৃথিবীতে থাকাকালীন আমরা একে অপরকে যেভাবে সামনাসামনি দেখছি, ঈশ্বরকে তেমনি সামনাসামনি দেখব। অধিকন্তু, আমরা এটাও জানি যে, যখন আমরা ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করব, তখন স্বর্গদূতগণ আমাদের পরিচর্যা করবেন। এটা কোন বানানো বিশ্বাস নয়, কিন্তু এটা হল ঈশ্বরের বাক্যের কথা, আর আমাদের প্রতি এটাই ঘটবে।
কে ব্যবস্থালঙ্ঘন করে?
১ যোহন ৩:৪-৫ পদে লেখা আছে, “যে কেহ পাপাচরণ করে, সে ব্যবস্থালঙ্ঘনও করে, আর ব্যবস্থালঙ্ঘনই পাপ। আর তোমরা জান, পাপভার লইয়া যাইবার জন্য তিনি প্রকাশিত হইলেন, এবং তাঁহাতে পাপ নাই।” এই বাক্যাংশটি আমাদের বলে যে, যারা ঈশ্বরের সন্তান হয়েছে, তারা ব্যবস্থালঙ্ঘন করে না। অন্যকথায়, এর অর্থ হল, জল ও আত্মার সুসমাচারে আমাদের যে বিশ্বাস, অর্থাৎ তিনি যে আমাদের সম্পূর্ণরূপে পরিত্রাণ করেছেন, আমাদের এই বিশ্বাস আমরা কখনোই নষ্ট করব না। আপনাদের মধ্যে কয়েকজন হয়তো ভাবছেন, “এখানে বাইবেল বলছে, ‘যে কেহ পাপাচরণ করে, সে ব্যবস্থালঙ্ঘনও করে, আর ব্যবস্থালঙ্ঘনই পাপ। ’ তাহলে এর অর্থ কি এটা যে, জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাসীরা তাদের মাংস দ্বারা কোন পাপ করে না?” এর উত্তর হল, না! আমরা যদিও জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস করি, তথাপি আমাদের এখনো অনেক মাংসিক ভুল-ভ্রান্তি রয়েছে, আর এইজন্য, আমরাও জীবনে পাপ করে থাকি। যাইহোক, আমরা যদিও মাংসিক পাপ করে থাকি, কিন্তু ঈশ্বর-সাধিত পরিত্রাণের সুসমাচার অগ্রাহ্য করার পাপ করি না। এইজন্যই বাইবেল বলে যে, ঈশ্বরের সন্তানরা, যারা জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস করে, তারা ব্যবস্থালঙ্ঘন করে না। ভিন্নভাবে বললে, যারা জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস করে, তারা ঈশ্বরের পরিত্রাণ ব্যবস্থা অগ্রাহ্য করার পাপ করে না।
তাঁর পুত্র কর্তৃক সাধিত পরিত্রাণের কার্য দ্বারা পিতা ঈশ্বর, আমরা যারা এই কার্যে বিশ্বাস করি, আমাদের সকলকে আমাদের সমস্ত পাপ থেকে পরিত্রাণ করেছেন। আমাদেরকে জগতের সমস্ত পাপ থেকে পরিত্রাণ করতে তিনি আমাদের জন্য একটা পরিত্রাণ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছেন। ঈশ্বর পরিকল্পিত এই পরিত্রাণ ব্যবস্থা এভাবে নকশা করা হয়েছিল যে- তাঁর পুত্র যীশু খ্রীষ্টকে যোহন বাপ্তাইজক কর্তৃক বাপ্তাইজিত হতে হবে, তারপর তাঁকে ক্রুশে মৃত্যবরণ করতে হবে, এবং মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হতে হবে, আর এভাবে তিনি আমাদেরকে আমাদের সমস্ত পাপ থেকে একেবারে চিরকালের জন্য পরিত্রাণ করবেন। পিতা ঈশ্বর পরিত্রাণের এই পদ্ধতি ও ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
ঈশ্বর প্রতিষ্ঠিত এই পরিত্রাণ ব্যবস্থা অনুসারে যীশুতে বিশ্বাস দ্বারা আমরা আমাদের পরিত্রাণে পৌঁছাতে পারি। এইজন্য, আমরা যারা ঈশ্বরের নিজের সন্তান হয়েছি, আমরা ঈশ্বরের ধার্মিকতায় অবিশ্বাস করার পাপ করি না। বরং, আমরা বিশ্বাস করি যে, পিতা ঈশ্বর জল ও আত্মার সুসমাচার দ্বারা আমাদেরকে আমাদের সমস্ত পাপ থেকে পরিত্রাণ করেছেন। যদি ঈশ্বর বলেন যে, তিনি এইভাবেই আমাদের পরিত্রাণের পরিকল্পনা করেছিলেন, তাহলে আমরা তাঁর পরিকল্পনা অনুসারেই এতে বিশ্বাস করব। অন্যদিকে, যারা ব্যবস্থালঙ্ঘন করে তারা তাদের পাপ মোচনের জন্য ঈশ্বরের পরিত্রাণের পরিকল্পনায় বিশ্বাস করে না। তারা ঈশ্বরের প্রেম কর্তৃক সাধিত পরিত্রাণে বিশ্বাস করে না।
অন্যকথায়, যারা ব্যবস্থালঙ্ঘন করে, তারা ঈশ্বরের সাক্ষাতে সবচেয়ে গুরুতর যে পাপটি করে তা হল- তারা ঈশ্বরের পরিত্রাণের পরিকল্পনাকে ঠিক এর মতো করে বিশ্বাস করে না। মানুষ নিজের চিন্তানুসারে পরিত্রাণের উপায় চিন্তা করে ও তাতে বিশ্বাস করে, এটা হল সবচেয়ে গুরুতর পাপ। ঈশ্বরের দৃষ্টিতে এটা হল স্বেচ্ছাচারী বিশ্বাসের পাপ। যে এই ধরণের বিশ্বাস করে, সে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে পাপ করে। এই লোকেরা এমন পাপ করছে, যা তাদেরকে তাদের সমস্ত পাপ থেকে পরিত্রাণ লাভ করতে অক্ষম করে দেয়।
আমাদের সমস্ত পাপ মোচনের জন্য প্রভু নিজেকে আমাদের কাছে প্রকাশ করলেন। ১ যোহন ৩:৫ পদে যেমন লেখা আছে, “আর তোমরা জান, পাপভার লইয়া যাইবার জন্য তিনি প্রকাশিত হইলেন, এবং তাঁহাতে পাপ নাই।” প্রেরিত যোহন এখানে আমাদেরকে বলেছেন যে, আমরা জানি, যীশু খ্রীষ্ট আমাদের পাপ নিয়ে যাবার জন্য প্রকাশিত হলেন। কিন্তু, আপনারা এটা ঠিক কিভাবে জানেন? আপনি এবং আমি কিভাবে জানি যে, যীশু খ্রীষ্ট আমাদেরকে জগতের সমস্ত পাপ থেকে পরিত্রাণ করেছেন? আমরা কিভাবে জানি যে, আমাদের প্রভু আপনার এবং আমার সমস্ত পাপ মোচন করেছেন? আমরা এটা জানি জল ও আত্মার সুসমাচার থেকে। জল ও আত্মার সুসমাচার থেকে আমরা জানি যে- প্রভু ঈশ্বর মানব দেহ ধারণ করে এই জগতে আসলেন, যোহন বাপ্তাইজক কর্তৃক বাপ্তাইজিত হওয়ার দ্বারা আমাদের সমস্ত পাপ সমস্ত পাপ নিজে বহন করলেন, এ সমস্ত পাপের দন্ডরূপে ক্রুশে মৃত্যুবরণ করলেন, আর মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হলেন, আর এভাবে তিনি আমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পরিত্রাণ করেছেন। আমরা জানি, প্রভু আমাদের পরিত্রাণ এইভাবেই করেছিলেন। আমাদের কাছে নিজেকে এভাবে প্রকাশ করে আমাদের প্রভু নিজেকে উৎসর্গ করলেন যেন আমাদের পাপ মোচন করেন। অন্যকথায়, যোহন বাপ্তাইজক কর্তৃক বাপ্তাইজিত হওয়ার দ্বারা আমাদের সমস্ত পাপ নিজের উপরে তুলে নিয়ে, সেই পাপের জন্য ক্রুশে মৃত্যুবরণ করে এবং মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হয়ে যীশু আমাদের প্রতি তাঁর অনন্তকালীন প্রেম প্রদর্শন করলেন। মূল বিষয়টি হল- প্রভু আমাদের ত্রাণকর্তা হয়েছে, আর এটা ঈশ্বরের প্রেমকে প্রদর্শন করে।
আমরা প্রভুর প্রেমকে এভাবেই জানি। এইজন্যই আমরা যীশু খ্রীষ্টতে ঠিক তাঁর সাধিত পরিত্রাণের কার্যানুসারেই বিশ্বাস করি, যা তিনি আমাদের জন্য করেছেন। আর আমরা এইভাবেই বিশ্বাস দ্বারা আমাদের পরিত্রাণে পৌঁছেছি। দুঃখের বিষয় হল, অনেক মানুষই জল ও আত্মার সুসমাচার জানার পরও এতে বিশ্বাস কর না। প্রভুর বাক্য যেভাবে বলে, আমাদেরকে সকলকে ঠিক সেভাবেই বিশ্বাস করতে হবে। প্রভুর বাক্য বলে, আপনার এবং আমার পাপ মোচনের জন্যই যীশু এই জগতে যোহন বাপ্তাইজক কর্তৃক বাপ্তাইজিত হলেন এবং আমাদের সমস্ত পাপ একেবারে চিরকালের জন্য নিজের উপরে তুলে নিলেন। যারা শাস্ত্রানুসারে পরিত্রাণের এই সত্যে বিশ্বাস করে না, তারা সবাই ঈশ্বরের বিরুদ্ধে পাপ করছে এবং তাঁর সাক্ষাতে ব্যবস্থালঙ্ঘন করছে।
মথি ৭:২৩ পদে প্রভু বলেন যে, তিনি এইরকম কঠিন লোকদেরকে বলবেন, “আমি কখনও তোমাদিগকে জানি নাই; হে অধর্মাচারীরা, আমার নিকট হইতে দূর হও।” এইজন্য, ঈশ্বরের দৃষ্টিতে ব্যবস্থালঙ্ঘন হল পবিত্র আত্মাকে নিন্দার পাপ। প্রভু আমাদেরকে যে পরিত্রাণ ব্যবস্থা দ্বারা পরিত্রাণ করেছেন, সেই ব্যবস্থা লঙ্ঘন হল সবচেয়ে গুরুতর পাপ; আর এই পাপ যে করে, সে নরকে যাবেই। অন্য সব পাপের ক্ষমা হবে, কিন্তু ব্যবস্থালঙ্ঘনের যে পাপ, তার ক্ষমা হবে না। যদি কেউ তার অজ্ঞতার বশবর্তী হয়ে ঈশ্বর-প্রতিষ্ঠিত এই পরিত্রাণ ব্যবস্থা অগ্রাহ্য করে, তাহলে এই মানুষটির রক্ষা পাওয়ার একটা সুযোগ থাকলেও থাকতে পারে; কিন্তু, কেউ যদি জানার পরও ইচ্ছাকৃতভাবে পরিত্রাণের এই ব্যবস্থা অগ্রাহ্য করে, তাহলে এই মানুষটি ব্যবস্থালঙ্ঘন করছে। কোন সন্দেহ নেই যে, প্রভু আমাদেরকে পরিত্রাণের জন্যই এই পৃথিবীতে এসেছিলেন। এই বিষয়ে কোন তর্ক নেই যে, প্রভু বাপ্তাইজিত হওয়ার দ্বারা আমাদের সমস্ত পাপ নিজে বহন করলেন, এবং এটা মানবজাতির কাছে প্রকাশ করলেন। আর প্রভু আমাদের কাছে এটা সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করেছেন যে, তিনি জগতের পাপ বহন করেছিলেন, সেগুলোর দন্ডভোগস্বরূপ ক্রুশে হত হয়েছিলেন এবং মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হয়েছিলেন। যদি লোকেরা এই সমস্ত সত্য জানার পরও পরিত্রাণের ব্যবস্থায় বিশ্বাস না করে, তাহলে তাদের সকলের শাস্তি অবশ্যই হবে। এইজন্য, আমরা কখনোই ঈশ্বরের পরিত্রাণের ব্যবস্থাকে অগ্রাহ্য করব না।
আমার সহ-বিশ্বাসীগণ, ঈশ্বরে কোন পাপ নেই। কারণ বাইবেল বলে, “তাঁহাতে পাপ নাই” (১ যোহন ৩:৫)। পিতা ঈশ্বর, পুত্র এবং পবিত্র আত্মায় বাস্তবিকই কোন পাপ নেই। ঈশ্বর মিথ্যা বলেন না, অথবা অন্য কোন পাপও করেন না। তিনি সম্পূর্ণরূপে পাপহীন, এবং তিনি সব দিক দিয়ে নিখুঁত। তথাপি, কিছু মানুষ তাদের মানবীয় চিন্তা দ্বারা যীশুর বিষয়ে হাস্যকর সব জল্পনা-কল্পনা করে। তারা বলে যে, মগ্দলীনি মরিয়মের সাথে যীশুর শারীরিক সম্পর্ক ছিল, আর তাদের বিবাহ বহির্ভূত একটা অবৈধ সন্তান ছিল। এটা হল উদ্ভট মিথ্যা, ঈশ্বরকে বদনাম করা এবং সর্বোচ্চ মাত্রার মিথ্যা। মানুষ এইসব উদ্ভট চিন্তাভাবনা করে, কারণ তাদের কোন ধারণাই নেই যে, যীশু কে। তারা মানুষকে স্রেফ একটা মরণশীল মানুষ হিসেবে দেখে। যীশু হলেন ঈশ্বর। তিনি সৃষ্টিকর্তা। তিনি আমাদের সৃষ্টিকর্তা, তিনিই আমাদেরকে জীবন দান করেছেন; এই পৃথিবীর সমস্ত কিছু তিনিই সৃষ্টি করেছেন। তিনিই বিশ্বব্রহ্মান্ডের সমস্ত তারা তৈরী করেছেন। তথাপি, মানুষ তাঁকে আমাদের মতো স্রেফ একজন পতিতপ্রবণ মানুষ হিসেবে দেখে, আর তাঁকে নিয়ে তামাশা করে। এই লোকেরা ঈশ্বরকে নিন্দার গুরুতর পাপ করছে।
আমাদের দেশের প্রেসিডেন্ট সম্পর্কে আপনি যাই ভাবুন না কেন, তিনি আমাদের দেশের প্রেসিডেন্টই। আপনি তাঁকে পছন্দ করেন না, এর মানে এই নয় যে, তিনি প্রেসিডেন্ট নন। তিনি এখনো আমাদের দেশের প্রেসিডেন্ট, আর আপনি তাঁকে পছন্দ না করলেও, আপনার তাঁকে যথাযথ সম্মানই দিতে হবে। একইভাবে, আপনি ঈশ্বরকে নিয়ে ভিন্নভাবে চিন্তা করলেও তাঁর ঈশ্বরত্ব একটুও কম হয়ে যাবে না। তাঁর ঈশ্বরত্বকে অগ্রাহ্য না করে আপনার বরং উচিত হবে তাঁকে ঈশ্বর হিসেবেই গ্রাহ্য করা। শাস্ত্র বলে, ঈশ্বরে পাপ নেই। তিনি সম্পূর্ণরূপে নিষ্পাপ। আর ঠিক এই কারণেই, আমরা এই নিখুঁত ঈশ্বর থেকে আমাদের পাপের ক্ষমা লাভ করতে পারি; আর এর দ্বারা আমরা তাঁর সন্তান হই।
যখন আমরা পাপমুক্ত হই, শুধুমাত্র তখনই আমরা ঈশ্বরের সন্তান হতে পারি। যার মধ্যে পাপ আছে, সে কখনো ঈশ্বরের সন্তান হতে পারে না। এইজন্য, সব কিছুর আগে, পাপমুক্ত হওয়াটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঈশ্বর-প্রতিষ্ঠিত পরিত্রাণের ব্যবস্থানুসারে জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস দ্বারা প্রথমে আমাদেরকে অবশ্যই পাপের ক্ষমা লাভ করতে হবে। শুধুমাত্র তখনই আমরা ঈশ্বরের নিজের সন্তান হই। এইজন্যই প্রেরিত যোহন ৬ পদে বলেছেন, “যে কেহ তাঁহাতে থাকে, সে পাপ করে না।” এর অর্থ হল- জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাসীরা নিষ্পাপ।
আমাদের মানবীয় চিন্তানুসারে বললে, একটা মানুষ কি করে পাপ না করে থাকতে পারে? সর্বোপরি, পতিতপ্রবণ মানুষ হিসেবে প্রত্যেকেই পাপ করে। যাইহোক, যারা বিশ্বাসে যীশুর মধ্যে এসেছে, তারা পাপ করে না। তাহলে আপনারা প্রশ্ন করতে পারেন যে, তারা কোন ধরণের পাপ করে না? তারা প্রভুর পরিত্রাণের কার্যকে অগ্রাহ্য করার পাপ করে না, তারা বলে না, “প্রভু আমাদের সমস্ত মোচন করেননি। তাঁর বাপ্তিস্ম ও ক্রুশীয় রক্ত দ্বারা আমাদের সমস্ত পাপ একেবারে চিরকালের জন্য মোচন করতে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি শুধু আমাদের মৌলিক পাপ মোচন করেছেন, কিন্তু আমাদের ব্যক্তিগত পাপের ক্ষমা আমরা শুধুমাত্র স্বীকারোক্তি ও অনুতাপের প্রার্থনা দ্বারা লাভ করি।”
যেমনটি শাস্ত্র বলে, যে কেহ প্রভুতে থাকে সে পাপ করে না। কারণ তারা জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস দ্বারা প্রভুতে থাকে। আমরা যারা বিশ্বাসে যীশুতে থাকি, আমরা বিশ্বাস করি যে, প্রভু জল ও আত্মার সুসমাচার দ্বারা আমাদের সমস্ত পাপ মোচন করেছেন; আমরা বিশ্বাস করি, তিনি ঈশ্বরের প্রেম ও ধার্মিকতার দ্বারা আমাদের প্রত্যেকটি পাপ মোচন করেছেন। সংক্ষেপে বললে, আমাদেরকে পাপ থেকে উদ্ধার করার জন্য প্রভু যা করেছেন, আমরা তা অগ্রাহ্য করি না। এইকারণেই প্রেরিত যোহন বলেছেন, “যে কেহ পাপ করে, সে তাঁহাকে দেখে নাই এবং জানেও না” (১ যোহন ৩:৬)। অনেক মানুষ যখন এটাই জানে না যে, প্রভু জল ও আত্মার সুসমাচার দ্বারা তাদের সমস্ত পাপ মোচন করেছেন, তখন তারা এই জগতে পাপ না করে কি করে থাকতে পারে?
যারা যীশুতে থাকে, তারা তাদের মাংসে পাপ করতে পারে, কিন্তু তারা আত্মায় পাপ করে না। প্রভু তাদের ত্রাণকর্তা নন, এই রকম কোন কথার সাথে তারা কখনোই এক হতে পারে না। অন্যদিকে, যারা যীশুতে থাকে না, তারা তীক্ষ্নবুদ্ধি দিয়ে এভাবে বলে যে, “এই জগতে এসে ক্রুশে হত হওয়ার দ্বারা প্রভু আমাদের পরিত্রাণ করেছেন। তাই, যদি আমরা যীশুতে বিশ্বাস করি, তাহলে আমরা আমাদের অতীতের সমস্ত পাপের ক্ষমা লাভ করব। কিন্তু অতীতের সেই পাপ ক্ষমা লাভের পর থেকে আমরা প্রতিদিন যে সমস্ত পাপ করে থাকি, সেই সমস্ত পাপের ক্ষমা আমরা প্রতিদিন অনুতাপের প্রার্থনা উৎসর্গের দ্বারা লাভ করব।” আমরা কখনোই এই সমস্ত উদ্ভট দাবির সাথে একমত হতে পারি না। এটা একটা উদ্ভট দাবি। আমরা শুধুমাত্র পরিত্রাণের এই সত্যের সাথে একমত হই যে- প্রভু যোহন বাপ্তাইজক কর্তৃক বাপ্তাইজিত হওয়ার দ্বারা আমাদের সমস্ত পাপ নিজে বহন করেছিলেন, ক্রুশে হত হয়েছিলেন, মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হয়েছিলেন, এবং এভাবে আমাদের ত্রাণকর্তা হয়েছেন। এভাবে, আমরা শুধুমাত্র ঈশ্বরীয় বাক্যের সাথে একমত হই; আর বাইবেল অনুসারে যে সমস্ত কথার ভিত্তি নেই, সে সমস্ত কথার সাথে দ্বিমত হই। কারণ এই সমস্ত ভ্রান্ত দাবি শুধু সেই সমস্ত পাপীরাই করতে পারে, যারা প্রভুকে দেখে নাই এবং জানেও না; যেমনটি বাইবেল বলে, “যে কেহ পাপ করে, সে তাঁহাকে দেখে নাই এবং জানেও না” (১ যোহন ৩:৬)।
কেন আজকের অনেক মানুষ তাদের পাপের ক্ষমা লাভ করতে পারে না
এর কারণ হল- তারা জানে না যে, যীশু খ্রীষ্ট যোহন বাপ্তাইজকের নিকট নেওয়া বাপ্তিস্মের দ্বারা নিজের উপরে তাদের সমস্ত পাপ তুলে নিয়েছিলেন, তাদের পাপের জন্য ক্রুশে হত হয়েছিলেন এবং মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হয়েছিলেন, আর এভাবে তাদের পরিত্রাণ করেছেন। শাস্ত্র বলে, “বিশ্বাস শ্রবণ হইতে এবং শ্রবণ খ্রীষ্টের বাক্য দ্বারা হয়” (রোমীয় ১০:১৭)। এইজন্য, আমরা ঈশ্বরের বাক্য যথাযথভাবে বুঝতে পারি, যদি আমরা তা যথাযথভাবে শুনি; আর আমরা ঈশ্বরের বাক্যে যথাযথভাবে বিশ্বাস করতে পারি, যদি আমরা তা যথাযথভাবে জানি। আমরা এভাবে প্রকৃত বিশ্বাস লাভ করতে পারি। বিশ্বাস বলতে অন্ধভাবে বিশ্বাসকে বোঝায় না, কিন্ত বিশ্বাস হল এই বিষয়টির জ্ঞান যে, বাপ্তাইজিত হওয়ার দ্বারা প্রভু আমাদের সমস্ত পাপ নিজের উপরে তুলে নিয়েছেন; যেমনটি যীশু বলেছেন, “আর তোমরা সেই সত্য জানিবে, এবং সেই সত্য তোমাদিগকে স্বাধীন করিবে” (যোহন ৮:৩২)। প্রভু এই জগতের সমস্ত পাপ ক্রুশ পর্যন্ত বহন করেছিলেন, এবং ক্রুশে হত হওয়ার দ্বারা সেই সমস্ত পাপের দন্ড ভোগ করেছিলেন- এটা বিশ্বাসের দ্বারা আমরা আমাদের সমস্ত পাপ থেকে পরিত্রাণ লাভ করেছি।
পরিত্রাণের সত্য আমাদের কাছে এই বিষয়টি প্রকাশ করে যে, প্রভু আমাদের ত্রাণকর্তা হয়েছেন। আর সত্যের এই সুষ্পষ্ট জ্ঞান দ্বারা আমরা যীশুতে বিশ্বাস করি। এই সত্য আমাদেরকে স্বাধীন করেছেন- এটি জানার দ্বারা ও বিশ্বাসের দ্বারা আমরা আমাদের পরিত্রাণে পৌঁছাই। তাই, সত্যের বিষয়ে সুস্পষ্ট জ্ঞান লাভ না করা পর্যন্ত আমরা কখনোই বিশ্বাস করব না। যদি আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে আপনাকে সেগুলো সমাধান করতে হবে, অথবা সমাধান লাভ করা পর্যন্ত প্রশ্ন করেই যেতে হবে। আপনাকে প্রশ্ন করতে হবে, প্রভু যা করেছেন, তা তাকে কেন করতে হতো। যারা এখনো পাপের ক্ষমা লাভ করেনি, তারা হল সেই সমস্ত মানুষ যারা জল ও আত্মার সুসমাচার জানে না। এই লোকেরা ঈশ্বরকে জানে না। তারা জানে না ঈশ্বর তাদেরকে ঠিক কতটা প্রেম করেন। তারা উপলব্ধি করতে পারে না যে, ঈশ্বর তাদেরকে এমন প্রেম করেছিলেন যে, তিনি তাঁর এক জাত পুত্রকে এই জগতে পাঠিয়েছিলেন। আর তারা এটাও জানে না যে, ঈশ্বরের এক জাত পুত্র যোহন বাপ্তাইজক কর্তৃক বাপ্তাইজিত হওয়ার দ্বারা তাদের সমস্ত পাপ নিজে বহন করেছিলেন, আর ক্রুশে হত হওয়ার দ্বারা তাদের পাপের দন্ড ভোগ করেছিলেন।
এইকারণে, এই লোকেরা এখনো পরিত্রাণ লাভ করেনি। যে ব্যক্তি পরিত্রাণের সত্য জানে, শুধুমাত্র সেই বিশ্বাসে পরিত্রাণ লাভ করতে পারে। এর অর্থ হল- শুধুমাত্র যীশুতে বিশ্বাস করলেই কেউ পরিত্রাণ লাভ করতে পারে না, কিন্তু একজন মানুষ শুধুমাত্র তখনই পরিত্রাণ লাভ করতে পারে, যখন সে যীশুর বিষয়ে সঠিক জ্ঞান লাভ করবে, পরিত্রাণের সত্য সুসমাচার জানবে এবং সমস্ত অন্তঃকরণ দিয়ে সেই সুসমাচারে বিশ্বাস করবে।
যখন আমরা মথি ২০ অধ্যায় পাঠ করি, তখন আমরা দেখতে পাই, যীশু এখানে দ্রাক্ষাক্ষেত্রের মজুরদের একটা দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন। এই দৃষ্টান্তে যীশু বলেন যে, একজন গৃহকর্তা তার দ্রাক্ষাক্ষেত্রে কাজের জন্য দিনের বিভিন্ন সময়ে কিছু মজুর নিয়োগ করলেন, কয়েকজনকে সকালে, কয়েকজনকে তিন ঘটিকার সময়, কয়েকজনকে ছয় ঘটিকার সময়, কয়েকজনকে নয় ঘটিকার সময়, এবং কয়েকজনকে এগার ঘটিকার সময় নিয়োগ করলেন। দিন শেষে সেই দ্রাক্ষাক্ষেত্রের কর্তা তাদের প্রত্যেক জনকে সমান এক সিকি করে দিলেন। তাই, যে মজুররা আগে কাজে লেগেছিল, তারা দ্রাক্ষাক্ষেত্রের কর্তার বচসা করে বলল, “শেষের ইহারা ত এক ঘন্টা মাত্র খাটিয়াছে, আমরা সমস্ত দিন খাটিয়াছি ও রৌদ্রে পুড়িয়াছি, আপনি ইহাদিগকে আমাদের সমান করিলেন” (মথি ২০:১২)। তখন দ্রাক্ষাক্ষেত্রের কর্তা তাদের মধ্যে এক জনকে বললেন, “হে বন্ধু! আমি তোমার প্রতি কোন অন্যায় করি নাই; তুমি কি আমার নিকটে এক সিকিতে স্বীকার কর নাই? তোমার যাহা পাওনা, তাহা লইয়া চলিয়া যাও; আমার ইচ্ছা, তোমাকে যাহা, ঐ শেষের জনকেও তাহাই দিব। আমার নিজের যাহা, তাহা আপনার ইচ্ছামত ব্যবহার করিবার অধিকার কি আমার নাই? না আমি দয়ালু বলিয়া তোমার চক্ষু টাটাইতেছে?” (মথি ২০:১৩-১৫)।
ঈশ্বরের মন্ডলীতে এমন কিছু মানুষ আছে, যারা জল ও আত্মার সুসমাচার শোনার সাথে সাথেই এতে বিশ্বাস করেছে, এবং তখনই তাদের পরিত্রাণ লাভ করেছে। আবার এমন কিছু মানুষও আছে, যাদের জল ও আত্মার সুসমাচার বুঝতে এবং এতে বিশ্বাস করতে একটু বেশি সময় লেগেছে। অন্যকথায়, অনেক মানুষ আছে যারা কয়েকবার শুনেই জল ও আত্মার সুসমাচারকে বুঝতে পারে না, তাই পরিত্রাণ লাভের আগে তাদেরকে এই সুসমাচার বারংবার শুনতে হয়। অনেক মানুষ আছে, যারা সাথে সাথে বুঝতে পারে না, কিন্তু পরে বুঝতে পারে যে, পিতা ঈশ্বর তাদেরকে ঠিক কিভাবে উদ্ধার করেছেন ও পাপমুক্ত করেছেন। অর্থাৎ, পিতা ঈশ্বর তাঁর এক জাত পুত্রকে এই জগতে পাঠিয়েছিলেন, যোহন বাপ্তাইজক কর্তৃক বাপ্তিস্ম দানের মাধ্যমে তাঁর উপরে তাদের সমস্ত পাপ অর্পন করেছিলেন, তাঁকে ক্রুশে মৃত্যুবরণ করিয়েছিলেন এবং মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত করেছিলেন, আর এভাবে তাদেরকে তাদের সমস্ত পাপ থেকে উদ্ধার করেছেন ও নিষ্পাপ করেছেন- এটা বুঝতে তাদের খুব লম্বা সময় লাগতে পারে। এভাবে অনেক মানুষই পাপের ক্ষমা লাভ করতে পারে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা পরিত্রাণের সত্য উপলব্ধি করে।
যাইহোক, তাদের এই উপলব্ধি যে সময়ই আসুক না কেন, যারা পিতা ঈশ্বরকে এবং তাঁর পুত্র যীশু খ্রীষ্টকে জানে, তারা অবশ্যই এটাও জানে যে, প্রভু তাদের জন্য কি করেছেন, অর্থাৎ, তিনি কিভাবে তাদেরকে পরিত্রাণ করেছেন। যারা এই পরিত্রাণ সম্পর্কে অজ্ঞই থেকে যায়, তারা পাপের ক্ষমা লাভ করতে পারে না। এই কারণেই, যারা এখনো পরিত্রাণ লাভ করেনি, তাদের কাছে সুসমাচার প্রচারের জন্য আমাদের এই লিখিত মিনিষ্ট্রি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরিত্রাণের সত্য সুসমাচার প্রকাশ করার জন্য আমাদের সুসমাচারের বইগুলোর প্রকাশনী চালিয়ে যাওয়াটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যাতে যে কেউ আমাদের এই বই পড়ে, সে পরিশেষে পরিত্রাণের সত্য বুঝতে পারে।
প্রকৃত জ্ঞান অর্জনের জন্য দরকার পুনরাবৃত্তিমূলক নির্দেশনা
যতক্ষণ পর্যন্ত প্রত্যেকে জল ও আত্মার সুসমাচার বুঝতে ও এতে বিশ্বাস না করতে পারে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের এর প্রচার অনবরত করে যেতেই হবে। খ্রীষ্টিয় শিক্ষা বলতে এটাই বোঝায়। শুধুমাত্র একটা উপদেশ দিয়েই ঈশ্বরের বাক্য প্রচার করার কাজ শেষ হয়ে যায় না, কিন্তু আমাদেরকে এটা অনবরত চালিয়ে যেতে হবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না শ্রোতারা এই বাক্য সত্যিকারে বুঝতে পারে। আপনার বিষয়টি কেমন? আপনি কি প্রভুর ধার্মিকতা জানেন? আপনি কি পিতা ঈশ্বরের প্রেম জানেন? আপনি কি এই প্রেমে বিশ্বাস করেন? অন্যরা যারা বলে, ‘হ্যাঁ, আমি এতে বিশ্বাস করি,’ আপনিও কি তাদের মতো বিশ্বাস করেন যে, আমাদের প্রভু ঈশ্বর আমাদেরকে জল ও আত্মার সুসমাচার দ্বারা পরিত্রাণ করেছেন?
প্রেরিত যোহন ৭ পদে বলেছেন, “বৎসেরা, কেহ যেন তোমাদিগকে ভ্রান্ত না করে।” ভ্রান্ত হওয়া মানে হল গোলমেলে হয়ে যাওয়া। ভ্রান্ত হওয়া মানে হল অনিশ্চয়তা ও অস্বচ্ছতার মেঘে ঢেকে যাওয়া। তাই, যখন বাইবেল আমাদের বলে যে, কেউ যেন আমাদেরকে ভ্রান্ত না করে, এর অর্থ হল- এটা আমাদেরকে সতর্ক করে দিচ্ছে যেন, পরিত্রাণের সত্য সম্পর্কে আমাদের একটা পরিষ্কার, অভ্রান্ত জ্ঞান থাকে। পরিত্রাণ শুধুমাত্র জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস দ্বারা লাভ করা যায়, কিন্তু কিছু মানুষ বলে যে, শুধুমাত্র ক্রুশীয় রক্তে বিশ্বাস দ্বারাও পরিত্রাণ লাভ করা যায়। আমরা সহ-বিশ্বাসীগণ, এটা বাস্তবিকই একটা মিথ্যা। প্রভু আমাদেরকে শুধুমাত্র জল ও আত্মার সুসমাচার দ্বারা পরিত্রাণ করেছেন।
এইজন্য, যে জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস না করে, সে ঈশ্বর অনুমোদিত বিশ্বাসের প্রকৃত জীবন যাপন না করে বিশ্বাসের একটা ভ্রান্ত জীবন যাপন করছে। সমস্যাটি হল, অবশ্যই, এই জগতে অনেক ভাক্ত-ভাববাদী আছে, যারা ঈশ্বরের বাক্যের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে অগণিত লোকদেরকে ভ্রান্ত করেছে। এই পৃথিবী এমন খ্রীষ্টানে পরিপূর্ণ যারা স্বীকার করে যে, তারা যীশুতে বিশ্বাস করে, কিন্তু তাদের মধ্যে অনেকেই হচ্ছে মিষ্টভাষী মিথ্যাবাদী। তারা বিশ্বাসের প্রকৃত জীবন যাপন না করে স্রেফ একটা ধর্মীয় জীবন যাপন করছে। তারা যীশুতে নিজেদের চিন্তানুসারে বিশ্বাস করে। আর তারা দাবি করে যে, তারা নিজেদের যোগ্যতায় পরিত্রাণ লাভ করেছে। এই লোকেরা ঈশ্বরকে প্রকৃতরূপে জানে না। তাদের যীশু সম্পর্কেও কোন ধারণা নেই। তারা জানে না যীশু তাদের জন্য কি করেছেন। তারা এইজন্যই এতটা ভ্রান্ত হয়েছে।
আজকের দিনে, অনেক খ্রীষ্টান ভ্রান্ত বিশ্বাস নিয়ে প্রচুর স্বেচ্ছাসেবী কাজ করছে, তারা দূর্গম জায়গার লোকদের কাছে গিয়ে বাক্য প্রচার করছে। এই কাজটা প্রশংসার দাবিদার মনে হলেও এটা প্রকৃতপক্ষে চরম ভ্রান্ত কাজ। এর কারণ হল, এই ভ্রান্ত বিশ্বাসীরা নিজেরাই যীশুকে ঠিকভাবে জানে না, অথচ তারা অন্যদের কাছে তাঁর বিষয়ে প্রচার করছে। খোলাখুলিভাবে বললে, তারা আত্মিক প্রবঞ্চনা করছে। তারা অন্যদের কাছে এমন বিষয়ে প্রচার করছে, যার বিষয়ে তারা নিজেরাই সম্পূর্ণভাবে জানে না। তারা অনেক মানুষকে বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। এটা সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিকর, কারণ তারা শুধু নিজেদেরকেই ভ্রান্ত করছে না, কিন্তু অন্যদেরকেও ভ্র্রান্ত করছে।
দিয়াবলের দাস হয়ে তারা হেক্টরের পর হেক্টর জমিতে শ্যামাঘাস বপন করছে। ভাল হবে যদি তারা এই অবিশ্বাসীদেরকে ছেড়ে দেয়। তাহলে, এই অবিশ্বাসীদের অন্ততঃ প্রকৃত সুসমাচার শোনার, তাতে বিশ্বাস করার এবং পরিত্রাণ পাবার একটা সুযোগ থাকবে। প্রথমদিকে শ্যামাঘাস গমের সাথে একই সাথে বেড়ে উঠবে, কিন্তু যখন তাদের বেড়ে ওঠা সম্পন্ন হয়ে যাবে, তখন দেখা যাবে, শ্যামাঘাসগুলোর মধ্যে কোন শস্যকণা অথবা ফল নেই। এগুলো কোন ফল দিবে না, কিন্তু এগুলো শুধুমাত্র গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হবে। এগুলো খাবার যোগ্য কোন দানা উৎপন্ন করতে পারবে না। খাবার যোগ্য দানা যেমন- চাল, যব, গম ইত্যাদি শুধুমাত্র ভাল সজীব বীজ থেকেই উৎপন্ন হতে পারে। শস্যকণা হল খাওয়ার যোগ্য, শ্যামাঘাস নয়। এইজন্যই, প্রেরিত যোহন বলেছেন, “বৎসেরা, কেহ যেন তোমাদিগকে ভ্রান্ত না করে।” কিছু প্রতারক আছে, যারা আমাদের মতোই দাবি করে যে, তারা জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস করে, কিন্তু যখন উপযুক্ত সময় আসে, তারা প্রকাশিত হয়ে পড়ে; তখন তারা ধার্মিকদেরকে নিদারুণ যন্ত্রণা দিতে ও ঘৃণা করতে শুরু করে।
তাহলে, আমরা কিভাবে এই শ্যামাঘাস চিনতে পারবো? ৭ পদে লেখা আছে, “যে ধর্মাচরণ করে সে ধার্মিক, যেমন তিনি ধার্মিক।” অন্যভাবে বললে, যারা পাপের ক্ষমা লাভ করেছে, তারা ঈশ্বরের ধার্মিকতার কার্য বহন করে। তারা সেটাই করে, যেটা উত্তম; তারা ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করে এবং অন্যদের উপকার করে। অন্যকথায়, তারা সুসমাচার প্রচার করে। অন্যদিকে, শ্যামাঘাস অর্থাৎ ভ্রান্ত খ্রীষ্টানরা ঈশ্বরের ধার্মিকতার কার্য করতে পারে না, যদিও তারা দাবী করে যে, তারা জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস করে। আর এই লোকেরা ঈশ্বরের সন্তান নয়।
প্রভু বলেছেন, ফল দ্বারাই গাছ চেনা যায়। এর অর্থ হল- একজন মানুষ কিভাবে চলছে, কোন ধরণের ফল উৎপন্ন করছে, এবং কিসের অন্বেষণ করছে; এটা দেখার দ্বারাই আমরা বুঝতে পারবো যে, সে ঈশ্বরের প্রকৃত সন্তান কিনা। প্রভু যেহেতু পরিত্রাণের ধার্মিক কার্য সাধন করার দ্বারা জল ও আত্মার সুসমাচারের মাধ্যমে আমাদের পরিত্রাণ করেছেন, সেহেতু আমরা, ধার্মিকগণও সুসমাচার প্রচার করি। আমরা সুসমাচার প্রচারের জন্য নিজেদেরক উৎসর্গ করি; ঈশ্বরের মন্ডলীতে আমরা আত্মিক বিন্যাস অনুসারে সংযুক্ত থাকি, আর ঘৃণা না করে আমরা পরস্পরকে বুঝি ও পরস্পরের গভীর যত্ন নিই। আমরা সব সময় আমাদের শক্তি একত্রিত করি, এবং প্রভুর কার্য করার জন্য সব রকমের প্রচেষ্টা করি।
প্রেরিত যোহন বলেছেন, “যে পাপাচরণ করে, সে দিয়াবলের।” যারা জগৎকে প্রেম করে, তারা জাগতিক জিনিসের পিছনেই ছোটে। আর তারা, যারা ঈশ্বরের ধার্মিকতার সুসমাচার প্রচার করে, তাদেরকে তীব্র ঘৃণা করে; তারা ঈশ্বরের মন্ডলীর একতাকে অগ্রাহ্য করে এবং এর কার্যের নিন্দা করে। তারা বাস্তবিকই দিয়াবলের সন্তান। শাস্ত্র বলে, “দিয়াবল আদি হইতে পাপ করিতেছে।” বাস্তবিকই শয়তান একজন পাপী। বাস্তবিকই দিয়াবল আদি থেকেই ঈশ্বরের বিপক্ষতা করে পাপ করে আসছে, আর যারা দিয়াবলের, তারাও ঈশ্বরের প্রতিপক্ষ। যা ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করে, আমরা সেই সমস্ত কার্য করি, কিন্তু তারা আমাদেরকে সেই সমস্ত কার্য থেকে বিপথে পরিচালনার চেষ্টা করছে। এই সমস্ত বিষয় দেখে আমরা বুঝতে পারি তারা ঈশ্বরের সন্তান কিনা।
যখন কেউ দাবি করে যে, সে জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস করে, তখন আমরা কিভাবে নিশ্চিত হতে পারি যে, সে সত্যি সত্যিই জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস করে কিনা? সর্বোপরি, আমাদের কাছে শুধু তার সাক্ষ্যই আছে। আর আমরা জানি যে, সে সর্বান্তঃকরণে বিশ্বাস না করলেও বলতে পারে যে, সে সত্যি সত্যিই জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস করে। প্রভু আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন যে, আমরা এই লোকদেরকে তাদের ফল দ্বারা চিনতে পারি। অন্যকথায়, একটা মানুষ কিভাবে চলছে, সেটা দেখার দ্বারাই আমরা তাকে চিনতে পারব যে, সে ঈশ্বরের সন্তান কিনা। এই মানুষটি কি মন্ডলীতে সংযুক্ত আছে? এই মানুষটি কি মন্ডলীর সাথে তার হৃদয়কে এক করেছে? সে কি প্রভুর কার্য করাটাকেই নিজের জীবনের লক্ষ্য বানিয়েছে? সে কি এই লক্ষ্য অনুসারে চলছে? যখন প্রভুর কার্য বিস্তার লাভ করে, তখন সে কি আনন্দিত হয়? আর যখন প্রভুর কার্য বন্ধ হয়ে যায়, তখন সে কি দুঃখিত হয়? এই সমস্ত প্রশ্ন দ্বারা আমরা স্পষ্টভাবে চিনতে পারি, কারা ঈশ্বরের সন্তান, আরা কারা না। প্রেরিত যোহনের সময়েও মন্ডলীতে অনেক ভ্রান্ত ভাববাদী বসে থাকতো। ১ যোহনে আমরা দেখতে পাই যে, সে সময়ে অনেক মিথ্যাবাদী ও প্রতারক ছিল।
সেইজন্য, ১ যোহন ২ অধ্যায়ে লেখা আছে, এই মিথ্যাবাদীরা আমাদের থেকে বাহির হয়েছে, কারণ তারা আমাদের ছিল না। শাস্ত্র বলে, প্রভু অর্থাৎ ঈশ্বরের পুত্র প্রকাশিত হলেন যেন তিনি দিয়াবলের কার্য বিনষ্ট করেন। এর অর্থ হল- যীশু খ্রীষ্ট এই জগতে নেমে আসলেন আমাদেরকে আমাদের সমস্ত পাপ থেকে পরিত্রাণের জন্য; এই সমস্ত পাপ আমাদের আত্মাকে বিনষ্ট করে, আমাদের জীবনকে ধ্বংস করে, আমাদের মাংসকে অভিশপ্ত করে, আমাদের যন্ত্রণা দেয়, আর পরিশেষে, আমাদেরকে নরকে নিক্ষেপ করে। আমাদের এই সমস্ত পাপের জন্য আমাদেরকে নরকে নিক্ষিপ্ত হতে হতো, বিনষ্ট হতে হতো এবং নিদারুণ যন্ত্রণা ভোগ করতে হতো। কিন্তু প্রভু আমাদের ত্রাণকর্তা হিসেবে আমাদের জায়গায় নিজে তাঁর দেহে আমাদের সমস্ত পাপ বহন করলেন। বাপ্তিস্মের দ্বারা তিনি আমাদের সমস্ত পাপ নিজের কাঁধে বহন করলেন, আর এই সমস্ত পাপের দন্ডস্বরূপ ক্রুশারোপিত হলেন। প্রভু আমাদেরকে এইভাবে পরিত্রাণ করেছেন।
দিয়াবলের কার্য এইভাবে বিনষ্ট করার জন্যই প্রভু এই জগতে নেমে আসলেন। আর প্রভু বাস্তবিকই জল ও আত্মার সুসমাচার দ্বারা দিয়াবলের কার্য বিনষ্ট করেছেন। এইজন্যই প্রভু ক্রুশের উপরে বললেন, “সমাপ্ত হইল!” যেহেতু আমাদের প্রভু দিয়াবলের কার্য সম্পূর্ণরূপে বিনষ্ট করেছেন, তাই আমরা যতক্ষণ পরিত্রাণের এই সত্যে বিশ্বাস করছি, ততক্ষণ শয়তান আমাদের কিছুই করতে পারবে না। কিন্তু, আপনি এবং আমি যদি প্রভুর সাধিত এই সত্যে বিশ্বাস না করি, তাহলে শয়তান আমাদের নিদারুণ যন্ত্রণা দিতে থাকবে।
আপনারা কি মনে করেন যে, যারা দিয়াবলের অধীনে আছে এবং বাধ্য হয়ে তার কথা শোনে, দিয়াবল কি সত্যি সত্যি তাদের যত্ন নেয়? না, অবশ্যই না! শয়তান এই মানুষদেরকে শুধুমাত্র তার স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে, আর যখন তারা শয়তানের আর কোন কাজে আসে না, তখন সে তাদেরকে নিশ্চিতভাবে ফেলে দিবে, তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দিবে। দিয়াবল এসেছে, কেবল যেন তাদেরকে চুরি, বধ ও বিনাশ করতে পারে। তাই, এটা বোঝাটা আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, যদি কেউ দিয়াবলের অধীনস্থ হয়, তবে সে যতই উন্নতি করতে থাকুক না কেন, সে সমৃদ্ধশালী হতে পারবে না। পরিশেষে, এই সমস্ত লোকেরা সবাই বিনষ্ট হবে; আর এই কারণেই তাদেরকে এই ভ্রান্ত পথ থেকে অবশ্যই ফিরে আসতে হবে, এই পথ তাদেরকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়।
এখানে ১ যোহন ৩:৯ পদে লেখা আছে, “যে কেহ ঈশ্বর হইতে জাত, সে পাপাচরণ করে না, কারণ তাঁহার বীর্য তাহার অন্তরে থাকে।” শাস্ত্র এখানে যেমনটি বলছে, যে ঈশ্বর থেকে জন্ম গ্রহণ করেছে, সে পাপ করে না। প্রেরিত যোহন এই বিষয়টি বার বার করে তুলে ধরেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে, যারা ঈশ্বর থেকে জাত, তারা পাপ করে না। তাহলে, ঈশ্বর থেকে জাত ব্যক্তিরা কারা? এরা হল তারা, যারা জল ও আত্মার সুসমাচারে সত্যিকারভাবে বিশ্বাস করে। তাহলে, এই বিশ্বাসীরা কি পাপ করে না? তারা তাদের মাংসে পাপ করতে পারে, কিন্তু তাদের আত্মায় পাপ করে না। অন্যকথায়, প্রভু তাদের সমস্ত পাপ মোচন করেছেন-পরিত্রাণের এই সত্যকে তারা অস্বীকার করে না। জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাসী কোন মানুষ কি এই সত্য অস্বীকার করতে পারে? না, অবশ্যই না! আমরা যদিও অনেকভাবেই বিপথে যেতে পারি, কিন্তু যখন পরিত্রাণের সত্যের বিষয় আসে, তখন আমরা কেউ অস্বীকার করতে পারি না যে, প্রভু আমাদের সমস্ত পাপ মোচন করেছেন।
সর্বোপরি, প্রভু কি আমাদেরকে জল ও আত্মার সুসমাচার দ্বারা পরিত্রাণ করেন নাই? যদি এটা সত্য হয়ে থাকে, তাহলে আমরা কিভাবে বলতে পারি যে, প্রভু আমাদের সমস্ত পাপ মোচন করতে ব্যর্থ হয়েছেন? তথাপি, জীবনে চলতে চলতে এমন অনেক সময় আসবে যখন আপনি আপনার ভুল-ভ্রান্তি ও দূর্বলতায় এতটাই হতাশ হয়ে পড়বেন যে, আপনি চিন্তা করতে শুরু করবেন যে, আপনি সত্যিই পরিত্রাণ প্রাপ্ত কিনা। যখনই এরকম সন্দেহের উদয় হবে, তখন আপনি আপনার বিশ্বাসকে অবশ্যই পুনর্বার দৃঢ় করে নিবেন যে, প্রভু যখন যোহন বাপ্তাইজক কর্তৃক বাপ্তাইজিত হয়েছিলেন, তখন তিনি আপনার সমস্ত পাপ বহন করেছিলেন। আপনি নিজেকে এই বলে দৃঢ় করবেন যে, “বাস্তবিকই প্রভু তাঁর বাপ্তিস্মের দ্বারা আমার এবং জগতের সমস্ত পাপ নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। তিনি যখন বাপ্তাইজিত হয়েছিলেন, তখন আমার প্রত্যেকটি পাপ নিজে বহন করেছিলেন। সেইজন্য, যদিও আমার মধ্যে অনেক ভুল-ভ্রান্তি আছে, কিন্তু কোন পাপ নেই, কারণ আমি পরিত্রাণের এই সত্যে বিশ্বাস করি।” আপনি যখন আপনার বিশ্বাসকে এইভাবে নবায়ন করবেন, তখন আপনার মাংসের পাপ থেকে মুক্ত হবেন।
আমার সহ-বিশ্বাসীগণ, প্রভু আমাদেরকে জগতের দীপ্তি বানিয়েছেন। নিজেদের যোগ্যতায় নয় কিন্তু প্রভুর কারণেই আমরা দীপ্তি হয়েছি; কারণ নিজেদের যোগ্যতায় দীপ্তি হওয়াটা আমাদের পক্ষে অসম্ভব। এইজন্য, ঈশ্বরের দৃষ্টিতে আমরা পাপ করতে পারি না, কারণ তাঁর বীর্য আমাদের অন্তরে রয়েছে। যেহেতু আমাদের অন্তরে ঈশ্বরের বাক্য বাস করে- অর্থাৎ, যেহেতু আমাদের অন্তরে ঈশ্বরের ধার্মিকতার সুসমাচার, অর্থাৎ জল ও আত্মার সুসমাচারের বাক্য বপন করা হয়েছে- সেহেতু আমরা পাপ করতে পারি না। আমরা পাপ করতে পারি না, কারণ আমরা ঈশ্বর থেকে জাত। ঈশ্বর থেকে জাত প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য।
পরিশেষে, আমার উপদেশ শেষ করার আগে আমি ১০ম পদটি নিয়ে আলোচনা করতে চাই। ১ যোহন ৩:১০ পদে লেখা আছে, “ইহাতে শয়তানের সন্তানগণ এবং দিয়াবলের সন্তানগণ প্রকাশ হইয়া পড়ে।” ঈশ্বরের সন্তানগণ এবং দিয়াবলের সন্তানগণ কিভাবে প্রকাশ হয়ে পড়ে? যারা জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস করে, যারা ঈশ্বরের এই সুসমাচার নিয়ে বেঁচে থাকে, এবং যারা এই সুসমাচার মান্য করে, তারা ঈশ্বর থেকে জাত, আর তারা ঈশ্বরের নিজের সন্তান বলে প্রকাশিত হয়। অন্যদিকে, যারা দাবি করে যে, তারা জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস করে; কিন্তু তারা জগৎকে এতটাই প্রেম করে যে, সব সময় জগৎকে নিয়েই ব্যস্ত থাকে, তারা দিয়াবলের সন্তান বলে প্রকাশিত হয়।
আমরা সবাই বিভিন্ন সময় প্রলোভন ও দূর্বলতার বশবর্তী হয়ে বিপথে চলে যাই। যদি আমরা ঈশ্বরের ধার্মিকতার কার্য বহন না করি, তাহলে পরিশেষে আমরা আমাদের জীবন ধরে রাখতে পারব না। ধার্মিকরা ঈশ্বরের বাক্য না শুনে বেঁচে থাকতে পারে। এটা একেবারেই অসম্ভব। প্রেরিত যোহন এখানে ১ যোহন ৩:১০ পদে বলেছেন, “যে কেহ ধর্মাচরণ না করে, এবং যে ব্যক্তি আপন ভ্রাতাকে প্রেম না করে, সে ঈশ্বরের লোক নয়।” যেমনটি শাস্ত্র বলে, কেউ যদি দাবি করে যে, সে পাপের ক্ষমা লাভ করেছে, কিন্তু ধর্মাচরণ না করে, এবং আপন ভাইদেরকে ও বোনদেরকে প্রেম না করে, কিন্তু তাদেরকে ঈর্ষা ও ঘৃণা করে, তাহলে সে ঈশ্বরের লোক নয়। ঈশ্বরের লোকেরা ঈশ্বরের মন্ডলীর সমস্ত সদস্যদেরকে নিজেদের আত্মিক ভাই ও বোন বলে প্রেম করে, আর তারা সুসমাচার ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য কঠোর পরিশ্রম করে যায়। আমি যেহেতেু ঈশ্বরের বাক্য প্রচার করছি, তাই যখনই সুযোগ পাব, এই বিষয়টি আপনাদের সামনে অবশ্যই তুলে ধরব। কারণ এটাই হল ধর্মাচরণ। এইজন্যই আমরা যথাসম্ভব সব উপায়ে, আমাদের সাক্ষ্য দ্বারা এবং আমাদের উপদেশ বইগুলোর দ্বারা- ঈশ্বরের ধার্মিকতাকে ছড়িয়ে দিচ্ছি। আর আমরা সকলে মিলে এক হয়ে ধার্মিকতার এই কার্য বহন করছি।
১ যোহন পাঠ করে এখন আমরা চিহ্নিত করতে পারি যে, এই জগতের অগণিত লোকদের মধ্যে কারা দিয়াবলের। অবশ্যই, যারা ঈশ্বরের বিপক্ষতা করে, তারাই দিয়াবলের। এই লোকেরা কিছু না বললেও আমরা তাদের চিনতে পারি, কারণ আমরা তাদেরকে তাদের ফল দ্বারাই চিনতে পারি। যে শুধুমাত্র নিজের বিষয়ে ভাবে, যে নিজের জন্য একটা বিশাল প্রাচুর্য্যশালী মন্ডলী চায়, যে ধার্মিকদেরকে নিজের দাস মনে করে, নিজেকে সমস্ত উপায়ে সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করে, এবং মন্ডলীর সদস্যদের উপরে প্রভুত্ব করতে চায়- সে ঈশ্বরের লোক নয়। এমনকি ঈশ্বরের মন্ডলীতে আমরা এরকম লোকদের দেখতে পাই, যারা পূণর্জন্ম প্রাপ্ত ধার্মিকদের উপরে প্রভুত্ব করতে চায়, তাদের সুবিধা লাভ করতে চায় এবং নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য তাদেরকে ব্যবহার করতে চায়।
অবাক করার বিষয় হল, এরকম লোকদের সংখ্যা অনেক। উদাহরণস্বরূপ, জিনহি লি-এর কথায় ধরা যাক। লি মন্ডলীর কার্য্যকারী এবং সদস্যদের উপরে প্রভুত্ব করতে চেয়েছিল এবং তাদেরকে নিজের স্বার্থসিদ্ধির অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। সে লোকদেরকে দান বাক্যে উপহার দিতে দিত না, কিন্তু নিজের কাছে দিতে বলত। একজন যাজক হওয়া সত্ত্বেও সে কোন দশমাংশই দিত না। অথচ, অনেক ধার্মিক ব্যক্তি ব্যক্তিগতভাবে দশমাংশ দিয়ে থাকেন, আর প্রত্যেক শাখা মন্ডলীই নিউ লাইফ মিশনে দশমাংশ দিয়ে থাকে যাতে সুসমাচার প্রচারের কাজ সহজ হয়। কিন্তু, লি যেখানেই গেছে না কেন, কখনো দশমাংশ দেয় নাই।
নিউ লাইফ মিশন এর আর্থিক বিষয়াদি সব সম্পূর্ণরূপে স্বচ্ছ রাখে, কিন্তু লি কখনোই স্বচ্ছতা বজায় রাখে। প্রথম দিকে, আমরা এটা বুঝতে পারিনি, আমরা ভেবেছিলাম হয়তো সে ভুলে গেছে অথবা ব্যস্ত সময় সূচীর কারণে কোনভাবে সম্ভবপর হয়ে হওয়া ওঠেনি; কিন্তু পরে দেখলাম, এটা তার অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। অন্য সব যাজকগণ, তাদের মন্ডলীর আর্থিক বিষয় স্বচ্ছ রাখলেও লি কখনোই কোন আর্থিক তথ্য প্রকাশ করত না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তাকে এই বিষয়ে বলা হতো; আর তখন প্রকাশ করলেও কয়েকদিন পর আবার যাচ্ছেতাই হয়ে যেত। বিষয়টি কি পরিমাণ অর্থ ছিল, তা নিয়ে ছিল না। কিন্তু, এটা ছিল নীতির বিষয়। আমরা অনেক সময়ই তাকে বুঝিয়েছি এবং ধৈর্য্যধরে অপেক্ষা করেছি যে, সে তার এই অভ্যাস পরিবর্তন করবে; কিন্তু সে কোন কথাই শুনত না।
লির প্রতি আমার ব্যক্তিগত কোন আক্রোশ আছে বলে বলছি না। বরং, আমি এটা উদাহরণরূপে তুলে ধরছি আপনাদেরকে দেখানোর জন্য যে, মন্ডলীতে কিছু লোক আছে, যারা দাবি করে যে, তারা জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস করে, কিন্তু তারা ধার্মিকগণের উপরে প্রভুত্ব করতে চায়। এরা হল তারা, যারা ধর্মাচরণ করে না, এবং সুসমাচারও প্রচার করে না। সুতরাং, আমরা লোকদের জীবন যাপন দেখে সহজেই চিনেতে পারি যে, কারা ঈশ্বরের সন্তান, আর কারা দিয়াবলের। একজন লোকের কথাই ধরুন, যে তার ভাই-বোনদের প্রেম করে না, বরং ঈশ্বরের লোকদের ঘৃণা করে; এই লোকটি কি ঈশ্বরের নাকি দিয়াবলের? এই লোকটি নিশ্চিতভাবেই দিয়াবলের। এই লোকটি কি তার পাপ থেকে পরিত্রাণ লাভ করেছে, নাকি এখনো করে নাই? সে এখনো পরিত্রাণ লাভ করে নাই। এই লোকটি কি দীপ্তি নাকি অন্ধকার? সে এখনো দীপ্তি হয় নাই, কারন তার মধ্যে পবিত্র আত্মা নেই; এইজন্য, সে এখনো অন্ধকার।
প্রেরিত যোহন যখন তাঁর পত্রগুলো লিখছিলেন, তখন তিনি ঈশ্বরের মন্ডলীর যাজকত্ব করছিলেন। বলা হয়ে থাকে যে, প্রেরিত যোহন তাঁর জীবনের শেষ দিনগুলোতে এতই দূর্বল হয়ে পড়েছিলেন যে, তিনি দাঁড়িয়ে প্রচার করতে পারতেন না। তাই, মন্ডলীর লোকেরা তাকে একটা স্ট্রেচারে করে পুলপিটে নিয়ে যেত, আর তিনি স্ট্রেচারে শুয়েই প্রচার করতেন। তিনি খুব বেশি কথা বলতেন না, কিন্তু লোকদেরকে শুধু পরস্পরকে প্রেম করতে বলতেন। এটাই হল তাঁর পত্রের মূল বিষয়। তিনি তাঁর উপদেশে লোকদেরকে শুধু বলতেন- যেন তারা পরস্পরকে প্রেম করে, পরস্পরকে উৎসাহ দেয়, তারা যেন ঈশ্বরের ধার্মিকতায় জীবন যাপন করে এবং সুসমাচার প্রচার করে। মন্ডলীর সদস্যরা সকলে প্রেরিত যোহনের শিক্ষা বুঝতে পেরেছিল, আর তারা সেই শিক্ষানুসারেই তাদের বিশ্বাসের জীবন যাপন করত।
শুধুমাত্র এই যোহনের মৃত্যুর পরই শয়তানের অধিকারের ভাক্ত ভাববাদীরা মন্ডলীতে ঢুকে পড়ে এবং পার্থিব বিষয় দ্বারা ঈশ্বরের বাক্যকে বিকৃত করতে শুরু করে। আর তারা সব সময় দাবি ও ভান করত যে, তারা জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস করে।
এর ফলে, প্রকৃত বিশ্বাসীদের চেয়ে ভ্রান্ত বিশ্বাসীদের সংখ্যা বেশি হয়ে গেল, আর এই ভ্রান্ত বিশ্বাসীরা মন্ডলীকে জবরদখল করে ফেলল। যদিও তারা দাবি করত যে, তারা ঈশ্বরের বাক্য প্রচার করছে, কিন্তু তারা জল ও আত্মার প্রকৃত সুসমাচার প্রচার না করে বাস্তবে এর বিকৃত রূপটা প্রচার করছিল। অবশেষে, এই ভ্রান্ত ভাববাদীরা জল ও আত্মার সুসমাচারকে মুছেই ফেলল, আর তখন এটা একটা আবছা স্মৃতির মতো হয়ে গেল; আর তারা এর আবশ্যকতাকে মুছেই ফেলল। প্রকৃত সুসমাচারের জায়গায়, তারা শুধুমাত্র মানুষের ধার্মিকতাকে প্রচার করতে শুরু করল। এই কারণেই আজকে খ্রীষ্টধর্মের এত অধঃপতন হয়েছে, এবং আজকের এই জীর্ণ দশা হয়েছে।
আমার সহ-বিশ্বাসীগণ, আপনি এবং আমি জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস করি, এবং আজকে আমরা সারা পৃথিবীর সমস্ত জাতির কাছে এই সুসমাচার প্রচার করছি- এটাকে আমি ঈশ্বরের বিশেষ কাজ বলে মনে করি। আপনারও কি তেমনটাই মনে করেন? এটা বাস্তবিকই একটা অলৌকিক কাজ। আদি মন্ডলীতে যে সুসমাচার প্রচার করা হতো, আমরা ঠিক সেই সুসমাচারেই বিশ্বাস করি; আর এখন আমরা এই সুসমাচার সারা পৃথিবীতে প্রচার করছি। আমাদের মন্ডলী হলো পৃথিবীর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ মন্ডলী। এর সদস্য সংখ্যা কম হতে পারে, কিন্তু এর গুণ অতুলনীয়। আপনারা কি সারা পৃথিবীর একটা মন্ডলীর নাম মনে করতে পারেন, যার আমাদের মতো এতো বেশি সংখ্যক লোক আছে যারা সমস্ত অন্তঃকরণে সুসমাচার শোনার দ্বারা এবং বিশ্বাসের দ্বারা ঈশ্বরের নিজের সন্তান হয়েছে? এমন কোন মন্ডলী আছে, যেটা আমাদের মতো এতো পরিত্রাণপ্রাপ্ত ধার্মিকগণে ভরা? না, অবশ্যই না! বস্তুত, আমরা জানি যে, আমাদের মন্ডলী হল ঈশ্বরের প্রকৃত বিস্ময়কর কাজ এবং এটা একটা অলৌকিক বিষয়।
আজকে, শাস্ত্রাংশ থেকে আমরা শিখেছি যে, কিভাবে দিয়াবলের সন্তানদের থেকে ঈশ্বরের সন্তানদের পৃথক করা যায়। যদি আমরা ঈশ্বরের বাক্য শুনি ও গ্রহণ করি, তাহলে আমরা সকলেই এই পৃথকীকরণ করতে পারব। একবার সত্য জানলে, আমরা ধার্মিক জীবন যাপনের জন্য স্বাধীন হয়ে যাই এবং ঈশ্বরের আশীর্বাদ লাভ করি। প্রভু আমাদের সকলকে পরিত্রাণ করেছেন। এইজন্য, আমি সমস্ত ধন্যবাদ আমাদের প্রভুকে দিই!