< যোহন ২১:১৫-১৯ >
“তাঁহারা আহার করিলে পর যীশু শিমোন পিতরকে কহিলেন, হে যোহনের পুত্র শিমোন, ইহাদের অপেক্ষা তুমি কি আমাকে অধিক প্রেম কর? তিনি কহিলেন, হাঁ, প্রভু; আপন জানেন, আমি আপনাকে ভাল বাসি। তিনি তাঁহাকে কহিলেন, আমার মেষশাবকগণকে চরাও। পরে তিনি দ্বিতীয় বার তাঁহাকে কহিলেন, হে যোহনের পুত্র শিমোন, তুমি কি আমাকে প্রেম কর? তিনি কহিলেন, হাঁ, প্রভু; আপনি জানেন, আমি আপনাকে ভাল বাসি। তিনি তাঁহাকে কহিলেন, আমার মেষগণকে পালন কর। তিনি তৃতীয় বার তাঁহাকে কহিলেন, হে যোহনের পুত্র শিমোন, তুমি কি আমাকে ভাল বাস? পিতর দুঃখিত হইলেন যে, তিনি তৃতীয় বার তাঁহাকে বলিলেন, ‘তুমি কি আমাকে ভাল বাস?’ আর তিনি তাঁহাকে কহিলেন, প্রভু আপনি সকলই জানেন; আপনি জ্ঞাত আছেন যে, আমি আপনাকে ভাল বাসি। যীশু তাঁহাকে কহিলেন, আমার মেষগণকে চরাও। সত্য, সত্য, আমি তোমাকে কহিতেছি, যখন তুমি যুবা ছিলে, তখন আপনি আপনার কটি বন্ধন করিতে এবং যেখানে ইচ্ছা, বেড়াইতে; কিন্তু যখন বৃদ্ধ হইবে, তখন তোমার হস্ত বিস্তার করিবে, এবং আর এক জন তোমার কটি বন্ধন করিয়া দিবে, ও যেখানে যাইতে তোমার ইচ্ছা নাই, সেখানে তোমাকে লইয়া যাইবে। এই কথা বলিয়া যীশু নির্দেশ করিলেন যে, পিতর কি প্রকার মৃত্যু দ্বারা ঈশ্বরের গৌরব করিবেন। এই কথা বলিবার পর তিনি তাঁহাকে বলিলেন, আমার পশ্চাৎ আইস।”
স্ব-প্রমাণিত সত্য
কেবলমাত্রই শাস্ত্র থেকে আমরা যোহন লিখিত সুসমাচারের ২১:১৫-১৯ পদ পাঠ করলাম। এই শাস্ত্রাংশটিতে যীশু পিতরকে তিন বার জিজ্ঞেস করেছেন যে, “তুমি কি আমাকে প্রেম কর?” আর পিতর উত্তর দিয়ে বলেছেন, “হাঁ, প্রভু; আপনি জানেন, আমি আপনাকে ভাল বাসি।” পিতর যতবার প্রভুকে উত্তর দিয়েছেন, ততবার প্রভু তাঁকে বলেছেন, “আমার মেষশাবকগণকে চরাও,” “আমার মেষগণকে পালন কর,” এবং “আমার মেষগণকে চরাও।” এরপর প্রভু পিতরকে বললেন, “যখন তুমি যুবা ছিলে, তখন আপনি আপনার কটি বন্ধন করিতে এবং যেখানে ইচ্ছা, বেড়াইতে; কিন্তু যখন বৃদ্ধ হইবে, তখন তোমার হস্ত বিস্তার করিবে, এবং আর এক জন তোমার কটি বন্ধন করিয়া দিবে, ও যেখানে যাইতে তোমার ইচ্ছা নাই, সেখানে তোমাকে লইয়া যাইবে।” এই ঘটনাটি হল প্রভুর ক্রুশারোপন এবং মৃত্যু হতে পুনরুত্থানের পরের ঘটনা।
সে সময়ে, কিছু মানুষ তাদের নিজেদের চোখ দিয়ে পুনরুত্থিত যীশুকে দেখেছিল, আর অন্যরা এটির বিষয়ে শুধু শুনেছিল। যেভাবেই হোক, পিতর, যাকোব, এবং আরো কয়েকজন শিষ্য তিবিরিয়া-সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। এই ঘটনাটি দেখে মনে হয় যে, যীশুর ক্রুশারোপন এবং হত হওয়ার সময় শিষ্যেরা যে ব্যবহার করেছিলেন, তা নিয়ে তাঁরা ভীষণ মর্মাহত ছিলেন। যদিও প্রভু তাঁদের জন্য মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হয়েছিলেন, তবুও তাঁরা তাঁদের অতীত জীবনে ফিরে গেলেন। তাই তাঁরা সারাটি রাত ধরে মাছ ধরার জন্য কঠোর পরিশ্রম করলেন, কিন্তু কিছুই পেলেন না। তীরে দাঁড়িয়ে যীশু তাঁদেরকে জিজ্ঞেস করলেন যে, তাঁরা কোন মাছ পেয়েছিলেন কিনা। যখন তাঁরা উত্তর করলেন যে, তাঁরা কিছুই পাননি, তখন তিনি তাঁদেরকে বললেন, “নৌকার দক্ষিণ পার্শ্বে জাল ফেল, পাইবে।” যখন তাঁরা এই নির্দেশটি মান্য করলেন, তখন জাল মাছে পূর্ণ হয়ে গেল।
যীশুর শিষ্যদের মধ্যে একজন বললেন, “উনি প্রভু!” এই কথাটি শুনে পিতর তাঁর দেহে কাপড় জড়ালেন এবং সমুদ্রে ঝাঁপ দিলেন, আর সমুদ্র সাঁতরে তীরে যেখানে যীশু দাঁড়িয়েছিলেন, সেখানে গিয়ে উঠলেন। শিষ্যেরা যখন তীরে পৌঁছালেন, তখন তাঁরা দেখলেন যে, প্রভু কয়লার আগুন, এবং সে আগুনের উপরে মাছ ও রুটি নিয়ে তাঁদের জন্য প্রতীক্ষা করে আছেন। কিন্তু তাঁদের কেউই জিজ্ঞেস করলেন না যে, “প্রভু, আপনি কি মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হয়েছেন?” যীশু সত্যিই পুনরুত্থিত হয়েছিলেন। পুনরুত্থিত প্রভু তিবিরিয়া-সমুদ্রের তীরে উপস্থিত হয়ে শিষ্যদের বললেন নৌকার দক্ষিণ পার্শ্বে জাল ফেলতে। এখন, যদিও শিষ্যরা তীরে বসেছিলেন, তবুও তাঁরা প্রশ্ন করতে পারছিলেন না যে, “প্রভু, আপনি কি পুনরুত্থিত হয়েছেন?” তাঁরা কেন এটা জিজ্ঞেস করতে পারেন নাই? তার কারণ হল- তাঁদের কাছে এটা খুব পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল যে, যীশু মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হয়েছেন। এর কারণ হল- পুনরুত্থিত প্রভু তাঁদের চোখের সামনেই দাঁড়িয়েছিলেন, তিনি তাঁদের জন্য কয়লার আগুন এবং সে আগুনের উপরে ঝলসানো মাছ ও রুটি নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন, আর তিনি তাঁদেরকে খেতে বললেন। তাঁদের মধ্যে কেউই যীশুকে জিজ্ঞেস করতে পারলেন না যে, তিনি যীশুই ছিলেন কিনা, কারণ তিনি কোন স্বপ্নে বা দর্শনে দেখা দেননি, কিন্তু স্বয়ং স্বশরীরে এসে তাঁদের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। এই ঘটনার আগে, শিষ্যেরা দুই বার যীশুর মৃত্যু থেকে পুনরুত্থানের বিষয়ে শুনেছিলেন। আর তাই, যদিও তাঁরা যীশুকে ক্রুশারোপন এবং কবরপ্রাপ্তির পর আর দেখেন নাই, কিন্তু এখন তাঁরা যীশুকে তাঁদের নিজেদের চোখেই দেখছিলেন; আর এখানে তাঁরা দিনের আলোর মত পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছেন যে, তিনি সত্যি সত্যিই মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হয়েছেন।
আত্মিকভাবে বললে, এটা হল জল ও আত্মার সুসমাচারের প্রশ্নাতীত প্রমাণের সদৃশ। এটা খুবই পরিষ্কার যে, প্রভু জল ও আত্মার বাপ্তিস্ম দ্বারা আমাদের সমস্ত পাপ একেবারে চিরকালের জন্য মোচন করেছেন। আর ‘এই সুসমাচার সঠিক কিনা?’ এই প্রশ্ন করাটা আমাদের পক্ষে অসম্ভবপর বিষয়। আমরা কেউই জল ও আত্মার সুসমাচার নিয়ে কোন প্রশ্ন তুলতে পারি না, কারণ বাস্তবিকই এর দ্বারাই আমাদের সমস্ত পাপ মোচিত হয়েছে। জল ও আত্মার সুসমাচার এই সাক্ষ্য দেয় যে, যোহন বাপ্তাইজক কর্তৃক বাপ্তাইজিত হওয়ার দ্বারা যীশু খ্রীষ্ট আমাদের সমস্ত পাপ একেবারে চিরকালের জন্য নিজে বহন করেছিলেন। যোহন বাপ্তাইজক কর্তৃক বাপ্তাইজিত হওয়ার দ্বারা যীশু এই জগতের সমস্ত পাপ নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন, এই পাপগুলো ক্রুশ পর্যন্ত বহন করলেন, ক্রুশীয় মৃত্যু পর্যন্ত রক্ত সেচন করলেন, মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হলেন, এবং এভাবে আমাদের ত্রাণকর্তা হলেন। যেহেতু আমাদের প্রভু আমাদের সমস্ত পাপ এভাবে একেবারে চিরকালের জন্য মোচন করেছেন, তাহলে আমাদের মধ্যে কি আর কোন পাপ অবশিষ্ট আছে? না, অবশ্যই না! এই প্রশ্নটি তোলার অবকাশই নেই, কারণ এটা অবশ্যস্বীকার্য সত্য যে, প্রভু জল ও আত্মার সুসমাচার দ্বারা আমাদের পাপ মোচন করেছেন। জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাসীদের মধ্যে আর কোন পাপ নেই, এটা অখন্ডনীয় সত্য।
আমাদের ভুল-ত্রুটি সত্ত্বেও
শিষ্যদের সম্মুখে উপস্থিত হয়ে প্রভু পিতরকে জিজ্ঞেস করলেন, “হে যোহনের পুত্র শিমোন, ইহাদের অপেক্ষা তুমি কি আমাকে অধিক প্রেম কর?” পিতর উত্তর দিলেন, “হাঁ, প্রভু; আপনি জানেন, আমি আপনাকে ভাল বাসি।” আসলে শিষ্যেরা প্রভুকে দেখার পর আবেগে পূর্ণ হয়ে গিয়েছিলেন। যীশু তাঁর পুনরুত্থানের পর তাঁদের সাথে দেখা করতে এসেছেন, এই বিষয়টি নিয়ে তাঁরা অভিভূত হয়ে পড়েছিলেন। গেৎশিমানী বাগানে যীশু যখন রোমান সৈনিকদের দ্বারা বন্দী হন, তারপর থেকে পিতর তাঁকে অনুসরণ করতে করতে পিলাতের প্রাঙ্গণ পর্যন্ত যান। কিন্তু সেখানে তিনি যীশুকে তিন বার অস্বীকার করেন। পিতর যীশুকে শুধু সাধারণভাবেই অস্বীকার করেননি, কিন্তু তিনি তিন তিন বার জোর দিয়ে দাবী করেছেন যে, তিনি যীশুকে চিনেন না। পিতর যখন যীশুকে তৃতীয়বার নিষ্ঠুরভাবে অস্বীকার করলেন, তখন মোরগ ডেকে উঠল। সে সময়ে, যীশু জিজ্ঞাসাবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে পিতরের দিকে দৃষ্টিপাত করেন, আর যীশুর সাথে পিতরের চোখাচোখি হওয়াতে পিতরের যীশুর সেই কথা মনে পড়ল, আর তিনি পালিয়ে গেলেন। প্রভু তাঁকে বলেছিলেন যে, মোরগ ডাকবার আগে তিনি তিন বার তাঁকে অস্বীকার করবেন; পিতরের প্রভুর এই কথা মনে পড়ল, আর তিনি বাহিরে গিয়ে অত্যন্ত রোদন করলেন।
যীশু কখনো কোন পাপ করেন নাই, তথাপি পিতরের সামনে তাঁকে বিচারিত হতে হয়েছিল। চল্লিশ বেত্রাঘাত প্রাপ্তির পর তাঁর শরীর ছিঁড়ে যাচ্ছিল, আর তাঁর সারা শরীর রক্তে ভরে উঠল। তারা যীশুর মাথায় কাঁটার মুকুট পরিয়ে দিল, তাঁর গায়ে থুথু দিল, তাঁর মুখে ঘুষি মারল এবং তাঁর ক্রুশের উপরে হিব্রু, গ্রিক ও ল্যাটিন ভাষায় দোষ-সূচক একটা অধিলিপি লিখে টাঙ্গিয়ে দিল যে, “যিহূদীদের রাজা”। পিতরের গুরু, তাঁর ঈশ্বর এবং ত্রাণকর্তা, যাঁকে তিনি বিশ্বাস করেছিলেন এবং অনুসরণ করেছিলেন, তঁর শরীর রক্তে ভরে গিয়েছিল। তথাপি, পিতর তাঁকে তিন তিনবার অস্বীকার করলেন। পিতর শুনেছিলেন যে, ক্রুশের উপরে যীশুর মৃত্যু হয়েছিল। আর তাঁকে কবরস্থ করা হয়েছে। কিন্তু যীশু কবরে ছিলেন না। যীশুর ক্রুশীয় মৃত্যুতে পিতর খুবই মর্মাহত হয়েছিলেন। আর তিনি এতটাই লজ্জিত ছিলেন যে, যীশু মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হওয়ার পরও তিনি তাঁর সামনে উপস্থিত হতে পারেননি। সমগ্র মানবজাতিকে পরিত্রাণ করার জন্য যীশু তাঁর বাপ্তিস্মের দ্বারা জগতের সমস্ত পাপ নিজে বহন করেছিলেন। আর জগতের এই পাপ বহন করার জন্য তাঁকে ক্রুশারোপিত হতে হয়েছিল, এবং সমস্ত ধরণের অপমান, নিষ্ঠুরতা এবং অবশেষে মৃত্যু ভোগ করতে হয়েছিল। তিনি তাঁর হৃদয়ের সমস্ত রক্ত নিংড়ে দিয়েছিলেন এবং হত হয়েছিলেন। আর কবরপ্রাপ্ত হয়ে এবং কবর থেকে পুনরুত্থিত হয়ে তিনি পিতরকে এবং সমস্ত মানবজাতিকে পরিত্রাণ করলেন।
যাইহোক, মানবজাতির পরিত্রাণ সম্পন্ন করার জন্য যীশুকে এইরূপ যন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছিল, আর পিতর ও অন্যান্য শিষ্যেরা পালিয়ে গেলেন, আর তাদের মাধ্যে অধিকাংশই তাঁদের পুরাতন পেশা অর্থাৎ মাছ ধরতে ফিরে গেলেন। তাই, শিষ্যেরা এতটাই লজ্জিত ছিলেন যে, তাঁরা প্রভুর সামনে কিছু্ই বলতে পারলেন না। তথাপি, যীশু তিবিরিয়া-সমুদ্রের তীরে তাঁদের সাথে দেখা করলেন এবং তাঁদেরকে সকালের নাস্তা খেতে বললেন। পোড়ানো মাছ এবং প্রস্তুত করা রুটি নিয়ে তিনি তাঁদের খেতে বললেন।
তুমি কি আমাকে এদের চেয়ে বেশি প্রেম কর?
এখানে যীশু পিতরকে বললেন, “হে যোহনের পুত্র শিমোন, ইহাদের অপেক্ষা তুমি কি আমাকে অধিক প্রেম কর?” পিতর উত্তর দিলেন, “হাঁ, প্রভু; আপনি জানেন, আমি আপনাকে ভাল বাসি।” যীশু পিতরকে এই একই প্রশ্ন তিন বার জিজ্ঞেস করলেন। আর তিন বারই পিতর উত্তর দিলেন, “হাঁ, প্রভু; আপনি জানেন, আমি আপনাকে ভাল বাসি।” আর প্রভু তাঁকে তিন বারে যথাক্রমে বললেন যে, “আমার মেষশাবকগণকে চরাও,” “আমার মেষগণকে পালন কর,” এবং “আমার মেষগণকে চরাও।”
আপনি এবং আমি এখন প্রভুর ধার্মিকতা অনুসরণ করছি। কিন্তু আমাদের নিজেদেরকে এই প্রশ্ন করতে হবে যে, আমরা কি সত্যিকারেই প্রভুকে বিশ্বস্থভাবে অনুসরণ করছি, যাতে তাঁর ইচ্ছা পূর্ণ করতে পারি? পিতরের যেমন মানবীয় অনেক ভুল-ত্রুটি ছিল, তেমনি আপনার এবং আমারও এরকম অনেক ভুল-ত্রুটি আছে। এমনকি আমরা, জল ও আত্মায় বিশ্বাসীরাও যখন আমাদের ভুল-ভ্রান্তিতে পড়ি, তখন আমাদের শক্তি হারিয়ে ফেলতে পারি এবং প্রভুকে অনুসরণ করাটা আমাদের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। এজন্যই, ইব্রীয়দের কাছে লেখা পত্রে বলা হয়েছে, “অতএব এমন বৃহৎ সাক্ষিমেঘে বেষ্টিত হওয়াতে আইস, আমরাও সমস্ত বোঝা ও সহজ বাধাজনক পাপ ফেলিয়া দিয়া ধৈর্যপূর্বক আমাদের সম্মুখস্থ ধাবনক্ষেত্রে দৌড়াই; বিশ্বাসের আদিকর্তা ও সিদ্ধিকর্তা যীশুর প্রতি দৃষ্টি রাখি; তিনিই আপনার সম্মুখস্থ আনন্দের নিমিত্ত ক্রুশ সহ্য করিলেন, অপমান তুচ্ছ করিলেন, এবং ঈশ্বরের সিংহাসনের দক্ষিণে উপবিষ্ট হইয়াছেন।”
জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস দ্বারা হৃদয়ে প্রথম পাপের ক্ষমা লাভের পর ১৫, ২০, অথবা ৩০ বছর অতিবাহিত হওয়ার পর এমন অনেক সময় আসে, যখন আমরা নিজেদের বিষয়ে এতই লজ্জিত হই যে, প্রভুকে অনুসরণ করাটা আমাদের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। ঠিক যেমনটি পিতর এবং তাঁর বিশ্বাসের সহ-ভাইয়েরা করেছিলেন, তাঁরা তিবিরিয়া-সমুদ্রে মাছ ধরতে ফিরে গিয়েছিলেন, আমরাও তেমনি, এমন অনেক সময় আসবে যখন আমরা প্রভুকে অনুসরণ করতে ব্যর্থ হব এবং আমরা তাঁকে অনুসরণ করতে খুবই লজ্জিত বোধ করব। অন্যকথায়, আমরা যদিও প্রভুতে বিশ্বাস করি, তথাপি এমন অনেক সময় আসবে, যখন আমরা আমাদের দূর্বলতার কাছে বশীভূত হব। যদিও সময় অতিক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে আমাদের বিশ্বাস আরো বৃদ্ধি ও দৃঢ় হওয়া উচিৎ, কিন্তু কিছু সময় তেমনটি হয় না।
প্রেরিত পৌল বলেছেন, “এই জন্য আমরা নিরুৎসাহ হই না, কিন্তু আমাদের বাহ্যিক মনুষ্য যদ্যপি ক্ষীণ হইতেছে, তথাপি আন্তরিক মনুষ্য দিন দিন নূতনীকৃত হইতেছে” (২ করিন্থীয় ৪:১৬)। আমাদের বিশ্বাস আরো দৃঢ় হওয়া উচিৎ এবং আমাদের আরো উত্তমরূপে প্রভুর ধার্মিকতা বহন করা উচিৎ, কিন্তু তা না করে, আমরা আমাদের মাংসিক অভিলাষ পূরণের জন্য চেষ্টা করি। প্রথম বার জল ও আত্মার সুসমাচার জানার পর আমরা যেমন প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, সেই অনুসারে আমাদের আরো উত্তমরূপে ও আরো সাহসী হয়ে আমাদের বিশ্বাসের জীবন যাপন করা উচিৎ; কিন্তু আমরা তেমনি করতে ব্যর্থ হই। যদিও প্রভুকে অনুসরণ করার জন্য আমাদের সম্পূর্ণচিত্তে তাঁতে বিশ্বাস করা উচিত, কিন্তু অনেক সময় আসে, যখন আমরা তা করতে পারি না। কিছু সময় আমরা বিশ্বাসে নয় কিন্তু আমাদের মাংসিক বিষয় ভেবে মন্ডলীর নেতাদের অনুসরণ করি। আমরা ভাবি যে, তাঁরা আমাদের বিষয়ে কি ভাববেন; এটা ভেবে আমরা তাঁদের অনুসরণ করি। আর আমাদের নিজস্ব মাংসিক দূর্বলতায় পতিত হয়ে আমরা পিতরের মতো কাজ করে ফেলি। প্রভুকে অনুসরণ করার সময় আমাদের সাথে এমনটি অবশ্যই ঘটবে।
আমরা যদিও প্রভুকে প্রেম করি, কিন্তু কিছু সময় আমরা নিজেদের বিষয়ে এতটাই খারাপ অনুভব করি যে, আমরা ভাবি, আমরা কি সত্যিই প্রভুকে অনুসরণ করতে পারবো? আমরা জানি যে, আমাদেরকে আমাদের প্রভুকে, জল ও আত্মার সুসমাচারকে এবং ধার্মিকতার জীবনকে অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে, কারণ এগুলো সত্য; যাইহোক, যখন আমরা নিজেদের দিকে তাঁকাই, আমরা খুবই লজ্জিত বোধ করি। সময় যাওয়ার সাথে সাথে আমরা আমাদের আত্মিক সত্যি হারিয়ে ফেলি, আর আমরা কপট মানুষে পরিণত হই। কিন্তু বাহ্যিকভাবে আমরা- ঈশ্বরের মন্ডলীতে কিভাবে অন্যদের সাথে ব্যবহার করতে হয়, যাতে অন্যেরা খুশী হয় এবং কোন ধরণের আঘাত না পায়- সে বিষয়ে খুবই পটু। আমরা মন্ডলীর ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে খুঁটিনাটি সব কিছুই জানি, আমরা জানি সঠিক শিষ্টাচারবিধি কি, আমরা জানি অন্যদের সাথে কিভাবে সঠিক ব্যবহার করতে হয়, আর আমরা এটাও জানি যে, কিভাবে মন্ডলীর নেতাদের কাছে থেকে সুবিধা হাসিল করতে হয়। যদিও আমরা প্রভুকে অনুকরণ করার চেষ্টা এখনো করে যাচ্ছি, কিন্তু আমাদের ভুল-ত্রুটির কারণে আমরা আমাদের আত্মিক শক্তি এবং পরিচয় হারিয়ে ফেলি। যখন আমরা একটু থেমে নিজেদের দিকে তাঁকাই, তখন আমরা এটা দেখতে পাই।
প্রভু আমাদের দূর্বলতা এবং ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে সমস্তই জানেন। তিনি আমাদের ক্ষীণতা এবং পাপ সম্পর্কে সমস্তই জানেন। তিনি জানেন যে, পাপের ক্ষমা লাভের পরও, আমাদের দূর্বলতার কারণে আমরা আবার পাপ করি। কিন্তু এই সমস্ত অযোগ্যতা সত্ত্বেও, যীশু পিতর এবং তাঁর অন্যান্য শিষ্যদের কাছে আসলেন; তিনি পিতরকে জিজ্ঞেস করলেন যে, তিনি তাঁকে প্রেম করেন কি না, আর তিনি তাঁকে তাঁর মেষশাবকদেরকে চরাতে, তাঁর মেষদেরকে পালন করতে এবং তাঁর মেষদেরকে চরাতে বললেন; তিনি তাঁকে তাদের যত্ন নিতে বলছিলেন। এর অর্থ হল- প্রভু পিতরকে তাঁর মেষদের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। একইভাবে, প্রভু মন্ডলীর জন্য নেতাদের উঠিয়েছেন, আর তিনি তাঁদেরকে তাঁদের সহ-কর্মীদের সাথে জল ও আত্মার সুসমাচার প্রচারের দায়িত্ব দিয়েছেন। প্রভু এমনটি করেছেন, কারণ তিনি আমাদের সম্বন্ধে সমস্তই জানেন।
যদিও আমরা পিতরের মতো দূর্বল, তথাপি তিনি আমাদেরকে প্রভুকে অনুসরণ করার সামর্থ্য দিয়েছেন
আমাদের দূর্বলতা সত্ত্বেও আমরা প্রভুকে অনুসরণ করতে পারি, কারণ আমরা জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস করি। বাইবেল, জল দ্বারা এই বিষয়টি বোঝায় যে, যীশু যোহন বাপ্তাইজক কর্তৃক বাপ্তাইজিত হওয়ার দ্বারা জগতের সমস্ত পাপ নিজে বহন করেছিলেন। আমরা বিশ্বাস করি যে, যোহন বাপ্তাইজক কর্তৃক বাপ্তাইজিত হওয়ার দ্বারা যীশু জগতের সমস্ত পাপ নিজে বহন করেছিলেন। আর আমরা বিশ্বাস করি যে, বাপ্তিস্মের দ্বারা জগতের সমস্ত পাপ নিজের কাঁধে নিয়ে যীশু ক্রুশে হত হয়েছিলেন, মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হয়েছিলেন এবং এভাবে আমাদের পরিত্রাণ সম্পন্ন করলেন। আমরা প্রভুর পূর্ণীকৃত জল ও আত্মার সুসাচারে বিশ্বাস করি। পবিত্র আত্মা হলেন ঈশ্বর। যীশুও ঈশ্বর। যীশু খ্রীষ্টের পিতাও ঈশ্বর। যীশু যখন মানব দেহ ধারণ করে এই জগতে এলেন, তখন যোহন বাপ্তাইজক কর্তৃক বাপ্তাইজিত হওয়ার দ্বারা জগতের সমস্ত পাপ নিজের উপরে তুলে নিলেন। ফলে, মানবজাতির এই সমস্ত পাপ নিজের কাঁধে তুলে নেওয়ার জন্য যীশুকে ক্রুশারোপিত হতে হয়েছিল। আর মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হওয়ার দ্বারা তিনি আমাদের পরিত্রাণ করলেন।
আমরা এখন জল ও আত্মার সত্য সুসমাচারে বিশ্বাস করি। কিন্তু, শুধুমাত্র জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস করি বলেই কি আমরা সব সময় প্রভুকে বিশ্বস্থভাবে অনুসরণ করতে পারবো? না, নিজেদের চেষ্টায় আমরা সব সময় ভুল-ত্রুটিহীনভাবে প্রভুকে অনুসরণ করতে পারি না। কিন্তু, প্রভু আমাদেরকে নিখুঁতভাবে পরিত্রাণ করেছেন বলে, তাঁর সাক্ষাতে আমাদের অনেক ভুল-ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও আমরা তাঁকে অনুসরণ করতে পারি। যদিও আপনার এবং আমার অনেক ভুল-ত্রুটি আছে, কিন্তু তবুও আমরা প্রভুকে অনুসরণ করতে পারি, কারণ তিনি যোহন বাপ্তাইজক কর্তৃক বাপ্তাইজিত হওয়ার দ্বারা আমাদের সমস্ত পাপ নিজে বহন করেছিলেন, সেগুলো নিয়ে ক্রুশে হত হয়েছিলেন এবং মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হয়েছিলেন। প্রভু এভাবে আমাদের ত্রাণকর্তা হয়েছিলেন বলেই আমরা তাঁকে অনুসরণ করতে পারি।
যেহেতু, প্রভু, যিনি জল ও আত্মার সুসমাচার দ্বারা এসেছিলেন, তিনি আপনাকে এবং আমাকে পাপমুক্ত করেছেন, তাই আমরা এখন তাঁর ধার্মিকতা অনুসরণ করতে পারি। যদি তা না হতো, তাহলে আমরা প্রভুকে অনুসরণ করতে পারতাম না। প্রভু যেহেতু যোহন বাপ্তাইজক কর্তৃক বাপ্তাইজিত হওয়ার দ্বারা আপনার এবং আমার সমস্ত পাপ নিজের উপরে তুলে নিয়েছিলেন, ক্রুশে হত হয়ে আমাদের পাপের শাস্তি ভোগ করলেন এবং মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হয়ে আমাদেরকে নতুন জীবন দান করলেন; তাই আমরা এখন প্রভুকে অনুসরণ করতে পারি। প্রভু যেহেতু আমাদেরকে অনন্ত জীবন দান করেছেন, যেহেতু তিনি আমাদেরকে স্বর্গরাজ্য দান করেছেন, যেহেতু তিনি আমাদের পালক হয়েছেন এবং যেহেতু তাঁর আশীর্বাদ অপরিসীম; তাই আমরা এই সত্যে বিশ্বাস দ্বারা প্রভুকে অনুসরণ করতে পারি। আপনারা কি সকলে আমার সাথে একমত নন? এটা বাস্তবিকই সত্য।
প্রভুর আশীর্বাদ আমাদের অন্তরে আছে বলে আপনি এবং আমি প্রভুকে এবং তাঁর ধার্মিকতাকে অনুসরণ করতে পারি। প্রভু জল ও আত্মার সুসমাচারের মাধ্যমে আমাদের সমস্ত পাপ সম্পূর্ণরূপে মোচন করেছেন বলে; তিনি আমাদেরকে ঈশ্বরের পাপহীন সন্তান তৈরী করেছেন বলে; আমাদেরকে অনন্ত জীবন দান করেছেন বলে; জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাসী যে আমরা, আমাদেরকে ঈশ্বরের অনন্তকালীন রাজ্য দান করেছেন বলে; এবং তিনি আমাদেরকে বারোটি বহুমূল্যবান পাথর দিয়ে নির্মিত বাড়ি দান করেছেন বলেই- আমরা প্রভুকে এবং তাঁর ধার্মিকতাকে অনুসরণ করতে পারি। আমরা এজন্যই প্রভুর আশীর্বাদ লাভ করেছি। আমরা যেহেতু এই সত্য জানি এবং এতে বিশ্বাস করি, এবং যেহেতু প্রভুর অনুগ্রহ অপরিসীম, তাই আমরা আমাদের ভুল-ত্রুটি সত্ত্বেও প্রভুকে অনুসরণ করতে পারি। আমরা একারণেই প্রভুকে অনুসরণ করছি। আমাদের নিজস্ব কোন ধার্মিকতা আছে বলে আমরা প্রভুকে অনুসরণ করছি না। অথবা, আমাদের ভুল-ত্রুটি প্রকাশিত হয়নি বলে আমরা প্রভুকে অনুসরণ করছি, এটা সত্য নয়। বরং, আমাদের ভুল-ত্রুটি সম্পূর্ণরূপে প্রকাশিত হওয়ার পরও আমরা প্রভুকে অনুসরণ করছি।
আমরা এখনো প্রভুকে অনুসরণ করতে পারি, কারণ তাঁর প্রেম এবং অনুগ্রহ আমাদের পাপ ও ভুল-ত্রুটি থেকেও অনেক বেশী। আমরা যেন তাঁকে অনুসরণ করতে পারি, এজন্য প্রভু আমাদের জন্য সমস্ত কিছুই করেছেন। এজন্য আমাদের ভুল-ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও আমরা প্রভুকে অনুসরণ করতে পারি। আপনি এবং আমি নিজেরা যতই অযোগ্য হই না কেন, আমরা এখনো প্রভুকে বিশ্বস্থভাবে চিরকাল অনুসরণ করতে পারি।
আপনি কি কোনক্রমে আপনার ভুল-ত্রুটি এবং দূর্বলতার জন্য আত্মিকভাবে নিরুদ্যম হয়ে যাচ্ছেন?
আমি নিশ্চিত আপনাদের অনেকের জন্যই এটা সত্য। আপনারা যখন নিজেদের ব্যক্তিত্বের দিকে তাকান এবং দেখেন যে, আপনারা কতটা স্বার্থপর, তখন কি আপনারা নিজেদের নিয়ে হতাশ হন না? যখনই মন্ডলী আপনাদেরকে কোন একটা কাজ করতে বলে, তখন আপনারা লাভ-ক্ষতির হিসাব করেন। অনেক বিশ্বাসীই ঈশ্বরে বিশ্বাস না করে শুধুমাত্র নিজেদের মাংসিক চিন্তানুসারেই লাভ-ক্ষতির হিসাব করে, আর যদি দেখে যে, তাদের লাভ হচ্ছে না, তখন তারা সেই কাজ থেকে বের হতে চায়। এটা ঈশ্বরের দৃষ্টিতে পাপ। নিজের স্বার্থের জন্য পাস্টরগিরি করাটাও একটা পাপ। যদি আমরা লোকদেরকে বিশ্বাসের মানুষ না বানিয়ে মাংসিক মানুষ বানাই, তাহলে সেটাও একটা পাপ।
এই জগতে জীবন যাপনের সময় আমরা নিজেদের মধ্যে কতটা ভুল-ত্রুটি দেখতে পাই? কিন্তু, তবুও আপনি এবং আমি প্রভুর ধার্মিকতাকে অবশ্যই অনুসরণ করব। আমরা এভাবে প্রভুকে অনুসরণ করতে পারি, কারণ তিনি আমাদেরকে প্রেম করেন এবং আমাদের ত্রাণকর্তা হয়েছেন। আমি আপনাদের কাছে ঈশ্বরের ধার্মিকতার বিষয়ে বারংবার বলেছি। প্রভু আমাদেরকে তাঁর ধার্মিকতা অনুসরণ করার ক্ষমতা দান করেছেন, কারণ তিনি আমাদেরকে নতুন ও অনন্ত জীবন দান করেছেন। আর তিনি আমাদেরকে স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করার ও সেখানে বাস করার আশীর্বাদ দান করেছেন। প্রভু আমাদেরকে প্রচুর আশীর্বাদ দান করেছেন, আর আমরা তাঁতে বিশ্বাস করি বলেই আমরা প্রভুর ধার্মিকতাকে অনুসরণ করতে পারি। যদি আমরা দাঁড়িপাল্লার এক পাশে আমাদের পাপ ও ভুল-ত্রুটি এবং অন্যপাশে আমাদেরকে প্রদত্ত প্রভুর প্রেম রাখি, তাহলে প্রভুর দানের তুলনায় আমাদের ভুল-ত্রুটি কিছুই না। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, যে কেউ তার ইচ্ছামতো পাপ করবে। প্রভুর ইচ্ছা অনুসারে চলাটা আমাদের জন্য আবশ্যক। যেহেতু, প্রভু আমাদেরকে প্রেম করেছেন এবং অসংখ্য আশীর্বাদ দান করেছেন, তাই আমাদেরকে তাঁর ধার্মিকতা অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে।
তাহলে, আপনার বিষয়টি কেমন? আপনি কি মনে করেন যে, আপনি প্রভুকে অনুসরণ করতে পারবেন, নাকি আপনি নিশ্চিত না? আপনার মধ্যে যতই ভুল-ত্রুটি থাকুক না কেন, আপনি কি তবুও প্রভুর কাছে প্রার্থনা করতে পারেন না? অবশ্যেই, আপনি তা করতে পারেন। আপনি যতই অযোগ্য হন না কেন, যখন আপনি প্রার্থনা করেন, তখন কি প্রভু আপনার প্রার্থনার উত্তর দেন না? অবশ্যই, তিনি আপনার প্রার্থনার উত্তর দিবেন। তাহলে কি আমরা ধার্মিকতার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ হিসেবে জীবন যাপন করতে পারি, নাকি পারি না? আমরা সবাই ধার্মিকতার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ হিসেবে জীবন যাপন করতে পারি। নতুন উদিত হওয়া সূর্যের মতো সর্বদাই আলো দেওয়ার জন্য আমরা সবাই প্রতিদিন আমাদের জীবনকে নূতনীকরণ করতে পারি। ধার্মিক মানুষ হিসেবে জীবন যাপন করতে হলে, আমাদেরকে এই রকম জীবনই যাপন করতে হবে। আর ঈশ্বর আপনাকে এবং আমাকে এই আশীর্বাদের জীবনই দান করেছেন।
যদিও আমাদের অনেক ভুল-ত্রুটি রয়েছে, কিন্তু যেহেতু প্রভুর কোন ভুল-ত্রুটি নেই, তাই আমরা এখনো প্রভুকে অনুসরণ করতে পারি। আমরা প্রভুকে অনুসরণ করতে পারি, কারণ আমরা তাঁকে যতটা প্রেম করি, তিনি আমাদেরকে তার চেয়ে বেশি প্রেম করেন। আপনি প্রভুকে প্রেম করতে পারেন, কারণ আপনি তাঁকে যতটা প্রেম করেন, তিনি আপনাকে তার চেয়ে বেশি প্রেম করেন। তাই আমরা নিজেদের সামর্থ্যের চেয়েও বেশি করে প্রভুর ধার্মিকতাকে অনুসরণ করতে পারি। এটা আমাদের নিজস্ব বিশ্বাসের জন্য হয় নাই, কিন্তু প্রভুই আমাদের জন্য সম্ভবপর করেছেন বলেই আমরা প্রভুর ধার্মিকতাকে অনুসরণ করতে পারি।
প্রভু আমাদেরকে ঈশ্বরের কার্য্যকারী হিসেবে তুলেছেন
যীশু পিতরকে বললেন, “যখন তুমি যুবা ছিলে, তখন আপনি আপনার কটি বন্ধন করিতে এবং যেখানে ইচ্ছা, বেড়াইতে; কিন্তু যখন বৃদ্ধ হইবে, তখন তোমার হস্ত বিস্তার করিবে, এবং আর এক জন তোমার কটি বন্ধন করিয়া দিবে, ও যেখানে যাইতে তোমার ইচ্ছা নাই, সেখানে তোমাকে লইয়া যাইবে” (যোহন ২১:১৮)। এর অর্থ হল- প্রভু পিতরকে আদি মন্ডলী পরিচালনার জন্য মন্ডলীর নেতা হিসেবে নিযুক্ত করলেন। প্রভু পিতরের সহ-কর্মীদেরকে ঈশ্বরের কার্য্যকারী এবং ছোট পালক হিসেবে নিযুক্ত করলেন। আর তিনি তাঁদেরকে সুসমাচার প্রচারের দায়িত্ব দান করলেন। ঈশ্বর আজকে আপনার এবং আমার প্রতিও এই একই কাজ করেছেন। আপনি কি নিজে নিজে চিন্তা করছেন যে, “আমি ঈশ্বরের কাজ করার জন্য একেবারেই অযোগ্য। আমাকে শুধুই একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে তৈরী করা হয়েছে”? কিন্তু বিষয়টি একেবারেই তা নয়।
আমাদের গানের বইয়ে ভ্রাতা মিনউ এর লেখা অনেক গান আছে। আমি তাঁকে একজন সাধারণ মানুষ হিসেবেই গণ্য করি। আমি ভ্রাতা মিনউ এর সঙ্গে খুব বেশি সময় কাটাই নাই, এবং তাঁর সঙ্গে খুব একটা কথাও বলি নাই। আমি তাঁকে শুধু মন্ডলীতে মাত্র কয়েকবার দেখেছি। যাইহোক, যখন আমি তাঁর লেখা গানের কথাগুলো দেখি, তখন দেখতে পাই যে, এই ভাইয়ের মধ্যে অনেক আধ্যাত্মিকতা রয়েছে। তাঁর জন্য আমার হৃদয়ভরা শ্রদ্ধা রয়েছে। আমি শুধুমাত্র লোকদেরকে বাহ্যিক চেহারাই দেখি না। এই গান বইয়ের প্রত্যেকটি গানের লেখককে আমি চিনি। যদিও আমি আমার মনের সব কথা আপনাদের কাছে খুলে বলি না, কিন্তু আমি দেখতে পাই যে, এটা হল ঈশ্বরের কাজ। তাই আমি ভ্রাতা মিনউ এর সঙ্গে সহকর্মী হিসেবে কাজ করতে চাই। আমি শুধু ভ্রাতা মিনউ-এর সঙ্গে নয়, কিন্তু আপনাদের সবার সাথেই কাজ করতে চাই। আমরা সবাই ঈশ্বরের কার্য্যকারী। বিষয়টি এমন নয় যে, আপনারা কয়েকজন হলেন সাধারণ মানুষ, আর আমরা কয়েকজন হলাম কার্য্যকারী। আমাদের প্রত্যেকেই ঈশ্বরের এক একজন কার্য্যকারী। আমরা সবাই কার্য্যকারী। আমরা সবাই পালক। আপনারা কি আমার সাথে এক মত নন? পার্থক্য শুধু এটাই যে, আমাদের প্রত্যেককে ভিন্ন ভিন্ন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে; কিন্তু আমরা সবাই ঈশ্বরের কার্য্যকারী।
আমার সহ-বিশ্বাসীগণ, প্রভু আমাদেরকে এত প্রেম করেন যে, তিনি আমাদের সমস্ত পাপ মোচন করেছেন, আমাদেরকে ঈশ্বরের নিজের সন্তান বানিয়েছেন এবং আমাদেরকে অনন্ত জীবন দান করেছেন। তিনি আমাদেরকে স্বর্গরাজ্য দান করেছেন। আর ঠিক এই মুহূর্তেও, তিনি আমাদের সঙ্গেই কাজ করছেন। এজন্য, আমরা সহ-বিশ্বাসীগণ, ঈশ্বরের কার্য্যকারী হিসেবে কাজ করার সমস্ত যোগ্যতাই আমাদের মধ্যে রয়েছে। আপনি এবং আমি হলাম ধার্মিকতার দাস। প্রভুর কাজের অনুগত হয়ে এবং বিশ্বাসে তাঁর আজ্ঞার বশবর্তী হয়ে আমরা আমাদের সাধ্যের চেয়েও বেশি প্রভুকে সন্তুষ্ট করতে পারি। আমরা এমনই। নিজের দূর্বলতার বশবর্তী হবেন না, নিজেকে শয়তানের ইচ্ছার কাছে সমর্পণ করবেন না।
শয়তান আমাদের মানবীয় দূর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের আক্রমণ করেন। সে আমাদের মানবীয় ব্যর্থতায় আমাদেরকে হোঁচট খাওয়াতে চায়, সে আমাদের বলে, “তুমি কোন কাজের উপযুক্তই না, তুমি কি করতে পারবে?” মৌলিকভাবে, আমরা দিয়াবলের বংশ থেকে আলাদা। এই জগতের মানুষ হল দিয়াবলের, কিন্তু আমরা হলাম ঈশ্বরের। আমরা সবাই বিশ্বাসে প্রভুকে অনুসরণ করতে পারি। আপনার শুধুমাত্র যা করতে হবে, তা হল- প্রভু আপনাকে যা দিয়েছেন, আপনাকে তাঁতে বিশ্বাস করতে হবে এবং তাঁকে অনুসরণ করতে হবে। ধার্মিকতার প্রত্যেক কার্য্যকারী এটাই করে থাকেন। বাইবেল বলে, “কিন্তু আমার ধার্মিক ব্যক্তি বিশ্বাস হেতুই বাঁচিবে” (ইব্রীয় ১০:৩৮)। এজন্য, আমি প্রভুর নিকট খুবই কৃতজ্ঞ।
যদিও আমি প্রভুর মতো ততটা জানি না, কিন্তু আমি এটা খুব ভাল করেই জানি যে, আমাদের পাদ্রীরা, ভাই-বোনেরা এবং বিদেশে কার্যরত আমাদের সমস্ত সহ-কর্মীরা তাদের দূর্বলতা নিয়ে সংগ্রাম করছেন। কিন্তু এই ধরণের দূর্বলতা আমার কাছে কিছুই মনে হয় না। আমি আপনাদেরকে বলব, প্রভু আপনাদেরকে যে সমস্ত আশীর্বাদ দান করেছেন, আপনারা শুধু সেই সমস্ত আশীর্বাদ স্মরণ করবেন এবং ঈশ্বরের ইচ্ছাকে আপনাদের জীবনে গ্রহণ করবেন। তাহলে, আপনারা ঈশ্বরের কার্য্যকারী হবেন। কেউ নিজের যোগ্যতায় ঈশ্বরের কার্য বহন করতে পারে না, কিন্তু আমরা সকলে মিলে একসাথে এই কার্য পূর্ণ করতে পারি। আমরা সকলেই ধার্মিকতার উপকরণ হতে পারি। আমরা সকলেই প্রভুর কাছে আসতে পারি এবং ধার্মিকতার উপকরণ হিসেবে এমন একটি জীবন যাপন করতে পারি যা প্রভুকে সন্তুষ্ট করে। আমি শুধু ভ্রাতা মিনউকেই ধার্মিকতার উপকরণ হিসেবে মনে করি না, কিন্তু আপনাদের সকলকেও মনে করি। আপনারা সকলেই বিশ্বস্থ কার্য্যকারী হতে পারেন- এ বিষয়ে আমার কোন সন্দেহ নেই। আপনার নিজের দূর্বলতায় অন্ধ হয়ে যাবেন না। যদি আপনি এমনটা করেন, তাহলে প্রভু দুঃখার্ত হবেন এবং আপনাকে বলবেন, “আমি কি তোমাকে শুধু এটাই দিয়েছি?”
কল্পনা করে দেখুন যে, কেউ আপনাকে জ্বলজ্বলে হীরায় পরিপূর্ণ একটা বাক্স দিল। আর আপনি সেই পুরনো ছেঁড়া কাপড় পরেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাহলে, যে মানুষটি আপনাকে হীরায় ভর্তি বাক্স দিয়েছে, সে কি ভাববে? সে লজ্জিত হবে, এবং নিজে নিজে ভাববে যে, “আমি কি তাকে শুধু এটাই দিয়েছি?” যদি আমরা উপলব্ধি করতে না পারি যে, প্রভু আমাদেরকে কতটা দিয়েছেন, তাহলে তিনিও এমনটাই ভাববেন। আমাদের লজ্জার কোন বিষয় নেই। আমরা হলাম ধার্মিকতার কার্য্যকারী। আমরা হলাম ধার্মিকতার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। আমাদের এখনো অনেক জাগতিক এবং আত্মিক আশীর্বাদ লাভ করা বাকি আছে, যা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। তাই, আসুন আমরা এই জগতে বিশ্বাসে ধার্মিকতার অস্ত্র হিসেবে জীবন যাপন করি, এবং যতদিন পর্যন্ত প্রভুকে সামনাসামনি না দেখছি, ততদিন তাঁকে অনুসরণ করি।