Search

Kazania

বিষয় ৯: রোমীয় পুস্তক (রোমীয় পুস্তকের ভাষ্য)

[8-13] খ্রীষ্টের প্রেম থেকে কে ধার্মিককে বিচ্ছিন্ন করতে পারে? (রোমীয় ৮:৩৫-৩৯)

< রোমীয় ৮:৩৫-৩৯ >
 “খ্রীষ্টের প্রেম হইতে কে আমাদিগকে পৃথক করিবে; কি ক্লেশ ? কি সঙ্কট? কি তাড়না? কি দূভিক্ষ? কি উলঙ্গতা? কি প্রাণ সংশয়? কি খড়গ? যেমন লেখা আছে, “তোমার জন্য আমরা সমস্ত দিন নিহত হইতেছি; আমরা বধ্য মেষের ন্যায় গণিত হইলাম।” কিন্তু যিনি আমদিগকে প্রেম করিয়াছেন, তাঁহারই দ্বারা আমরা এই সকল বিষয়ে বিজীয় অপেক্ষাও অধিক বিজয়ী হই। কেননা আমি নিশ্চয়ই জানি কি মৃত্যু, কি জীবন, কি দূতগণ, কি আধিপত্য সকল, কি উপস্থিত বিষয় সকল, কি ভাবী বিষয় সকল, কি পরাক্রম সকল, কি উর্দ্ধ স্থান, কি গভীর স্থান, কি অন্য কোন সুষ্ট বস্তু, কিছুই আমাদের প্রভু খ্রীষ্ট যীশুতে অবস্থিত ঈশ্বরের প্রেম হইতে আমাদিগকে পৃথক করিতে পারিবে না।”
 
৩৫ পদে বলা হয়েছে, “খ্রীষ্টের প্রেম হইতে কে আমাদিগকে পৃথক করিবে? কি ক্লেশ? কি সঙ্কট? কি তাড়না? কি দূভিক্ষ? কি উলঙ্গতা? কি প্রাণ সংশয়? কি খড়গ?” ঈশ্বরের ধার্মিকতা নিহিত জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাসীদেরকে কে খ্রীষ্টের প্রেম থেকে আলাদা করতে পারে? ৭ বছরের সেই মহাক্লেশ কি প্রেম থেকে আলাদা করতে পারে? অবশ্যই না।
প্রভুর যে প্রেম, পাপ থেকে উদ্ধার করেছেন, জগতের কোন ক্লেশ বা দূর্দশা সেই প্রেম থেকে আমাদের আলাদা করতে পারে না। এমন কি যখন আমরা পরিশ্রান্ত হয়ে পড়ি, যখন নিজেকে পরিত্যাগক্ত মনে হয়, যখন কেউ প্রশ্ন করে যে, যীশু আমাদের পাপ থেকে পাপ থেকে উদ্ধার করেছেন কিনা? সেই সমস্ত মুহুর্তেও আমরা স্বীকার করি যে, যীশু সত্যি আমাদের পাপ থেকে মুক্ত করেছেন, এবং আমরা পাপহীন হয়েছি। আমাদের হৃদয়ে যত দুঃখার্ত বা উদ্বিগ্ন হোক না কেন, তথাপি তিনি আমাদের উদ্ধার করেছেন এবং তিনি আমাদের অনন্ত কালীয় ত্রাণকর্তা। আমার যতই পরিশ্রান্ত হই বা অসুস্থ্যতায় দেহ আমাদের যতই ভেঙ্গে পড়ুক না কেন তখনও আমরা ঈশ্বরের ধার্মিকতার জন্য আমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করি। ঈশ্বরের যে ধার্মিকতা আমাদের সমস্ত পাপ থেকে উদ্ধার করেছেন কোন দূর্ভিক্ষই তা থেকে আমাদের বিচ্ছিন্ন করতে পারে না। 
অত্যাচার নির্যাতন, কি দূর্ভিক্ষ, কি উলঙ্গতা, কি প্রাণ-সংশয়, বা খড়গ- কিনা কিছুই ঈশ্বরের ধার্মিকতা থেকে পৃথক করতে পারে না। ধর্মময় লোকেরা ঘৃণিত ও দোষীকৃত হয়ে মাঝে মাঝে আমরা তাড়িত হই, বন্ধু-বান্ধব, প্রতিবেশি, আত্মিয় স্বজন এমন কি পরিবারের সদস্যরাও আমাদের তাড়না করে, ভন্ড হিসাবে আমাদের অভিযুক্ত করে। এই ধরণের কোন নির্যাতনই কি যীশু খ্রীষ্টের পরিত্রাণ থেকে আমাদেরকে বিচ্ছিন্ন করতে পারে? কখনই পারে না।
 যত নিখ্রীষ্টভাবে আমরা তাড়িত হই না কেন, ঈশ্বরের ধার্মিকতা থেকে কোন কিছুই আমাদের বিচ্ছিন্ন করতে পারে না। কারন ঈশ্বরের ধার্মিকতা আমাদের পাপহীন করেছেন, কারণ এটা অপরিবর্তনীয় সত্য, কেউ বা কোন কিছুই ঈশ্বরের প্রেম থেকে আমাদের পৃথক করতে পারে না।
 আত্মিক বাহ্যিক দূর্ভিক্ষ আমাদের পৃথক করতে পারে না। কারণ আমরা জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস করি, আমাদের হৃদয়ে সব সময় ঈশ্বরের ধার্মিকতা রয়েছে অর্থাৎ প্রভুতে আমাদের এই বিশ্বাস রয়েছে যে, জল ও আত্মার সুসমাচার দ্বারা তিনি আমাদের পাপ মুক্ত করেছেন। এই বিশ্বাস হল ঈশ্বরের ধার্মিকতায় নিহীত অনুগ্রহে বিশ্বাস। “কারণ প্রভু আমার থেকে আমার পাপ দূর করেছেন, আমার কোন পাপ নেই! ঈশ্বর আমাকে ধার্মিক এবং পাপ মুক্ত করেছেন, তাঁর নিজের ধার্মিকতায় আমাকে সম্পূর্ণরূপে সজ্জিত করেছেন।”যত মারাত্বক দূর্দশাই আসুক না কেন, ঈশ্বরের ধার্মিকতায় আমাদের যে বিশ্বাস তা থেকে কেউ আমাদের পৃথক করতে পারে না।
 
 

জল ও আত্মার সুসমাচার দ্বারা ঈশ্বরের ধার্মিকতা

 
যতক্ষণ পর্যন্ত কেউ জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস না করে, ততক্ষণ পর্যন্ত তার হৃদয়ে পাপ থাকে। কিন্তু ঈশ্বরের ধার্মিকতায় যে বিশ্বাস করে তার কোন পাপ থাকে না। এইজন্য আমাদের প্রভু বলেছেন যে, ফল দ্বারাই গাছ চেনা যায়। যারা ঈশ্বরের ধার্মিকতায় বিশ্বাস করে না, সামান্যতম অসুবিধা, দূর্ভিক্ষ, তাড়না, অথবা দূর্ভোগ আসলেই তারা যীশুতে বিশ্বাস পরিত্যাগ করে।
এধরণের লোকেরা ভাবে, “যদিও যীশু আমার পাপের কারণে আমার পক্ষে ক্রুশে বিচারিত হয়েছেন, তাঁর দ্বারা আমার শুধু আদি পাপ দূর হয়, কিন্তু প্রতিদিন যে পাপ আমি করছি এর জন্য প্রতিদিন আমাকে ক্ষমা চাইকে হবে।” যাদের বিশ্বাস এই ধরণের, যীশু তাদের সমস্ত পাপ তুলে নিয়েছেন, এই সত্য বিশ্বাস না করে তারা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে পাপ করছে, নিজেদেরকে দোষী ও কোলষীত করছে। এধরণের লোকেরা যীশুকে অস্বীকার করে এবং ঈশ্বরের ধার্মিকতায় তাদের বিশ্বাস নেই।
কিন্তু যারা জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস করে, তারা ঈশ্বরের ধার্মিকতায় বিশ্বাস করে, যে কোন পরিস্থিতির সম্মুখিন হোক না কেন, দৃঢ়ভাবে তারা বিশ্বাস আকড়ে ধরে, বলে, “ঈশ্বর জগতের সমস্ত পাপ থেকে আমাকে নিশ্চিতভাবে উদ্ধার করেছেন। আমি পাপহীন।” এমনকি শেষ সময়ে আত্মিক দূর্ভিক্ষের কারণে আমাদের যদি মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়, তখনও আমরা অস্বীকার করব না যে, ঈশ্বর আমাদের পাপ থেকে মুক্ত করে তাঁর সন্তান করেছেন। ঈশ্বরের যে ধার্মিকতা আমাদের সমস্ত পাপ তুলে নিয়েছেন, বিশ্বাসের মত তাও এখনও আমাদের হৃদয়ে থাকবে। জল ও আত্মার সুসমাচার এতটাই পরাক্রমী ও মহৎ। জীবনে আমরা যত রকম দূর্ভোগই পোহাই না কেন, খ্রীষ্টে ঈশ্বরের ধার্মিকতা রয়েছে, খ্রীষ্টের প্রেম থেকে আমরা কখনই বিচ্ছিন্ন হব না।
“উলঙ্গতা ” বলতে কি বুঝান হয়েছে? উলঙ্গতা বলতে আমাদের সব কিছু হারিয়ে যাওয়া বুঝান হয়েছে। মধ্যযুগ পর্যন্ত ইউরোপের অনেক দেশে অনেক এলাকায় অনেক সমস্যা ছিল, মানুষ রাষ্ট্রদ্রোহী কাজে লিপ্ত হত, সমস্যার সৃষ্টির জন্য স্কেপগোটস হিসাবে মানুষকে ব্যবহার করা হত এবং তাদের কাছ থেকে সব কিছু ছিনিয়ে নেওয়া হত, ভন্ড হিসাবে মানুষকে অবিহিত করা হত। এই কারণে পৌল এখানে “উলঙ্গতা” শব্দটি ব্যবহার করেছেন।
সেই সব যুগে, কাউকে ভন্ড হিসাবে সহজেই অভিযুক্ত করা যেত, মাত্র দুই একজনের সাক্ষী করা হত। অভিযুক্তকে খড়ের পালায় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা হত, তার সমস্ত সম্পত্তি ও বাজেয়াপ্ত করা হত এবং তাদের সমস্ত সুনাম মুছে ফেলা হত। 
আমাদের উলঙ্গতা যদি এমন পর্যায় ও যদি পৌঁছায়, নিজেস্ব সবকিছু যদি আমরা হারাই এবং আমাদেরকে যদি মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হয়, ঈশ্বরীয় প্রেমনিহীত ঈশ্বরের যে ধার্মিকতা আমাদের দেওয়া হয়েছে, যার দ্বারা আমাদের সমস্ত পাপ তুলে নেওয়া হয়েছে, সেই প্রেম থেকে কোন কিছু আমাদের পৃথক করতে পারবে না; জল ও আত্মার সুসমাচার এতটাই পরিপূর্ণ। 
 ক্লেশ অথবা খড়গ কোন কিছুই খ্রীষ্টের প্রেম থেকে আমাদের পৃথক করতে পারবে না। যদি তরবারি নিয়ে আমাদের মাথা পেতে দিতে কিম্বা সেইভাবে আমাদের খুন হতে হয়, তবুও আমরা যারা বিশ্বাস করি আমাদের কোন পাপ নেই। প্রাথমিক মন্ডলীতে অনেক খ্রীষ্টিয়ানের প্রতি এই মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছিল যে, তারা রোমে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে, এবং তাদেরকে জন সম্মুখে সিংহের খাঁচায় পুরে হত্যা করা হয়েছে। ঐভাবে মৃত্যুর সময় ও তারা ত্রাণকর্তা প্রভুর প্রশংসা করতে পারছিল। ঈশ্বর তাদে প্রেম করেছেন এবং তাদের সমস্ত পাপ তুলে নিয়েছেন, - পরিত্রাণের এই সত্য যারা বিশ্বাস করে, সিংহের দ্বারা নিশংসভাবে খুন হওয়ার সময়ও তারা প্রভুর প্রশংসা করতে পারে।
 ঈশ্বরের যে ধার্মিকতা আমাদের সমস্ত পাপ তুলে নিয়েছেন, এই বিশ্বাস এবং তাঁর প্রেম থেকে এই মক্তি পাওয়া যায়। কারণ ঈশ্বর মাঝে অবস্থান করেন, আমাদের অন্তরে কথা বলেন, আমাদের রক্ষা করেন এবং বিশ্রাম দেন, -এ কারণেই আমরা এত শক্তি পাই। দুঃখ- দূর্দশা, অথবা খড়গ অথবা হুমকি অথবা সাক্ষ্যবরের মৃত্যু কোন কিছুই আমাদের ঈশ্বরের প্রেম থেকে আলাদা করতে পারবে না। 
যারা জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস করে তারা ঈশ্বরের ধার্মিকতায় বিশ্বাস করে, তারা খ্রীষ্টের সন্তান। যারা ঈশ্বরের ধার্মিকতায় বিশ্বাস করে, খ্রীষ্টের প্রেম তাদের মাজে রয়েছে। কিছু লোক খ্রীষ্টের এই স্বর্গীয় প্রেমকে সাধারণ আবেগমূলক ভালবাসা হিসাবে মনে করেন। তারা শুধু তাঁর ক্রুশীয় মৃত্যুকে স্মরণ করে দুঃখিত হয়, এবং তাঁর ক্রুশীয় কষ্টে স্মরণ করে কান্ন-কাটি করে। কিন্তু মানবিয় আবেগ আবেগ অনুভুতি রাতারাতি পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে।
 সকালে বা রাতে আমাদের আবেগ অনুভুতি পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে, কিন্তু যে প্রেম দ্বারা প্রভু আমাদের পরিত্রাণ করেছেন, তা কখনই কোনভাবে পরিবর্তন হতে পারে না, তাঁর প্রেম চিরকার অপবির্তনীয়। জল ও আত্মার সুসমাচার এমনই পরাক্রমী এবং ঈশ্বরের ধার্মিকতা এমনই মহৎ যিনি তাঁর প্রকৃত প্রেম দিয়ে আমাদেরকে সম্পূর্ণ এবং সজ্জিত করেছেন। সেই প্রভু থেকে কেউই আমাদের পৃথক করতে পারবে না। এটা জল ও আত্মার সুসমাচারের ক্ষমতা, এবং এটা ঈশ্বরের ধার্মিকতায় বিশ্বাসের পরাক্রম।
“সুসমাচার” শব্দের গ্রীক প্রতি শব্দ, অর্থাৎ যার অর্থ শক্তি প্রাপ্ত হওয়া, ক্ষমতা সামর্থ, এর থেকেই ঈশ্বরের “ডিনামাইট” শব্দটি পাই (রোমীয় ১:১৬)। একটি ঘরকে ভিতরশুদ্ধ উড়িয়ে দেওয়ার মত ক্ষমতা একটি একমুঠো পরিমাণ ডিনামাইটের মধ্যে রয়েছে। যুদ্ধ জাহাজ থেকে নিক্ষিপ্ত টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র একটি বড় পাকা দালানকে মুহুর্তের মধ্যে বিলিন করে দিতে পারে। সেই বিল্ডিং যত মজবুত করেই তৈরী করা হোক না কেন, ক্ষেপণাস্ত্রের কাছে তার কোন তুলনাই হবে না।
 নিউ ইয়র্কের ওর্য়াল্ড ট্রেড সেন্টারে টুইন টাওয়ারে দুইটি যাত্রীবাহী বিমান আঘাত করেছিল। সেই আঘাতের বলে ভবন দুইটির কি অবস্থা হল? প্লেন দুইটির বিস্ফোরণে প্রজ্জলিত হয়ে এবং সেই সাথে প্লেনের জ্বালানীতে আগুন ধরে গিয়ে ভবন দুইটির মূল পর্যন্ত গলে গেল। ভবন দুইটি স্টীলের তৈরী মেঝে এবং স্তম্ভগুলো গলে শেষ হয়ে গেল, যার কারণে ভবন গুলির ভার তারা বহন করতে পারল না এবং মুহূর্তের মধ্যে সেগুলো মাটির সাথে মিশে গেল; অবশেষে সম্পূর্ণরূপে টুকরো টুকরো হয়ে গেল। মেঝে গুলো যদি ধীরে ধীরে ধংস হত তাহলে ভবন দুটো সম্পূর্ণরূপে ধংস হত না। কিন্তু, যেহেতু মেঝে গুলো হঠাৎ করে খুব তাড়াতাড়ি ভেঙ্গে পড়ল, তাতে স্তম্ভগুলা এবং কাঠামো ধংস হয়ে গেল, এবং সকলই যেমন দেখতে পেয়েছে- মুহূর্তের মধ্যে বিল্ডিং দুটি বিলীন হয়ে গেল।
 জল ও আত্মার সুসমাচার হচ্ছে ঈশ্বরের সুসমাচারের শক্তি। এটা সেই শক্তি যা মধ্যে ঈশ্বরের ধার্মিকতা নিহীত। সম্ভবত ঈশ্বরের ধার্মিকতার ব্যাখ্যা করতে এই করুন ঘটনা উপযুক্ত নয়, কিন্তু ঈশ্বরের ধার্মিকতা প্রদত্ত জল ও আত্মার সুসমাচার প্রচারের শক্তি ডিনামাইটের মত, যা সম্পূর্ণভাবে পাপ মুছে দিতে পারে। ইহা ঈশ্বরের ধার্মিকতা যা হল, আমাদের প্রভু, আমাদের সমস্ত পাপ তুলে নিতে এই পৃথিবীতে এসেছিলেন, বাপ্তাইজিত হয়েছিলেন, ক্রুশে প্রান দিয়েছিলেন এবং মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হয়েছিলেন।
জল ও আত্মার সুসমাচার হচ্ছে ঈশ্বরের ধার্মিকতা যার দ্বারা যীশু এই পৃথিবীর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মানুষের সমস্ত পাপ তুলে নিয়েছেন। এর কারণ হল যারা ঈশ্বরের ধার্মিকতার সুসমাচারে বিশ্বাসের দ্বারা পাপ মোচনের মাধ্যমে তাঁর প্রেম গ্রহণ করে, কোন কিছুই তাদেরকে ঈশ্বরের প্রেম থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারে না। পৌলেরও ঈশ্বরের ধার্মিকতায় একই বিশ্বাস ছিল।
তাহলে আমরা কি ক্রুশীয় রক্তের ধার্মিকতা লাভ করতে পারি? আমরা পারি না। শুধুমাত্র ক্রুশীয় রক্তের সুসমাচারে বিশ্বাস করলেই আমাদেরকে ঈশ্বরের ধার্মিকতা প্রদান করা হবে না। এটা ছাড়া যারা অন্য বিষয় চিন্তা করে, সামান্য প্ররোচনায়ই তারা যীশুর উপর থেকে বিশ্বাস পরিত্যাগ করবে।
উদাহরনস্বরূপ, ধর্ম সম্বন্ধে তাদের স্পষ্ট জ্ঞান থাকার কারণে যখন তাদের জাগতিক সম্পত্তি হরণ করা হয়, কিংবা যখন তারা কার্যক্ষেত্রে কঠোরতার সম্মুখীন হয়, তারা সহজেই তাদের বিশ্বাসের দাবী পরিত্যাগ করবে। এই পরিনতি অবশ্যম্ভাবী এবং অনেক খ্রীষ্টিয়ানের পক্ষে প্রযোজ্য। যারা জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস না করে, তাদের হৃদয়ে পবিত্র আত্মা নাই, তারা তাদের পাপ থেকে মুক্ত হবে না এবং সামান্য তাড়নার মুখে তারা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য।
আজকের পৃথিবীতে খ্রীষ্টিয়ানদের এত দূর্বলতার কারণ হচ্ছে শুধুমাত্র ক্রুশীয় রক্তে তাদের বিশ্বাসের সীমাবদ্ধতা। এই প্রকার বিশ্বাসই একমাত্র জল ও আত্মার সুসমাচারের মাধ্যমে ঈশ্বরের ধার্মিকতা লাভ করতে পারে না।
একজন ধার্মিক বিশ্বাসী, ঈশ্বরের ধার্মিকতা লাভ করার দ্বারা যার (পুং/স্ত্রী) সমস্ত পাপ মোচন হয়েছে, সে অনেক আত্মার জন্য কাজ করতে পারে। কারণ সে জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস করে এবং তার বাক্য অনুসারে ঈশ্বর এবং পবিত্র আত্মা তার (পুং/স্ত্রী) সাথে আছেন, ঐ ব্যক্তি অনেক আত্মিক কাজ করতে পারে এবং অনেক হারিয়ে যাওয়া আত্মাকে সে ঈশ্বরের কাছে ফিরিয়ে আনতে পারে। এটাই জল ও আত্মার সুসমাচারে এবং ঈশ্বরের ধার্মিকতার বিশ্বাস। জল ও আত্মার সুসমাচার ঈশ্বর প্রদত্ত, আমাদের কোন ভল কার্য্য দ্বারা ইহা পাই নাই, যেহেতু এটা ঈশ্বরের মধ্যে দিয়ে এসেছে তাই আমরা তাঁর কাজ করতে পারি। 
৩৬ পদে বলা হয়েছে, “যেমন লেখা আছে, 
তোমার জন্য আমরা সমস্ত দিন 
নিহত হইতেছি;
আমরা বধ্য মেষের ন্যায় গণিত
হইলাম।”
উহাদের মধ্যে যারা জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস করে তারা এমন যারা আসলে পৃথিবীতে এই আচরণে জীবন-যাপন করবে। বস্তুতঃ জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাসীরা অন্যদের দ্বারা প্রায়ই ঘৃণিত হয়। যারা নিজেদের খ্রীষ্টিয়ান বলে দাবী করে তাদের ব্যক্তিগত বিশ্বাস ভ্রান্ত।
অন্যকথায়, নূতন জন্ম প্রাপ্ত খ্রীষ্টিয়ানেরা বৌদ্ধদের চেয়ে নামধারী খ্রীষ্টিয়ানদের দ্বারা বেশি ঘৃণিত হয়। এই অনুচ্ছেদে ঈশ্বরের বাক্য জল ও আত্মার সুসামাচারে বিশ্বাসীদেরকে তাই বলেছেন যে, “তোমার জন্য আমরা সমস্ত দিন নিহত হইতেছি; আমরা বধ্য মেষের ন্যায় গণিত হইলাম।” এমনকি ঈশ্বরের অনুসরনের দ্বারা আমাদের প্রভু তাঁর বাপ্তিস্ম এবং ক্রুশীয় মৃত্যুর মাধ্যমে, “বধ্য মেষের ন্যায় গণিত হইলেন।” প্রভু এই পৃথিবীতে এসে এবং এরূপ জীবন- যাপনের দ্বারা আমাদেরকে মুক্ত করেছেন।
 
 

ঈশ্বরের ধার্মিকতা পৃথিবীর সমস্ত পাপের উপর বিজয়ী হয়েছে

 
৩৭ পদে বলা হয়েছে “কিন্তু যিনি আমাদিগকে প্রেম করিয়াছেন, তাঁহারই দ্বারা আমরা এই সকল বিষয়ে বিজয়ী অপেক্ষাও অধিক বিজয়ী হই।” এই সমস্ত পাপের উপর আমরা কিভাবে বিজয়ী হতে পারি? ঈশ্বরের প্রেমে বিশ্বাসের শক্তিতে আমরা আমাদের বিজয় ঘোষণা করতে পারি। 
যারা জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস করে, তাদের ঈশ্বরের ক্ষমতা আছে। কিন্তু যে জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস করে না, তার অন্তরে শুধু পাপ রয়েছে। যারা পাপের মধ্যে থাকে তাদের বিশ্বাস এবং পরিত্রাণ আবেগের বশে ওঠা-নামা করে, তাই তাদের কোন ক্ষমতা নাই। তারা নিজেদের দ্বারা ক্ষমতাবান হতে পারে না কিন্তু ঈশ্বর প্রদত্ত সুসমাচার দ্বারা ক্ষমতাশালী হতে পারে। তারা যন্ত্রণা এবং দূর্দশার বিরুদ্ধে বিজয়ী হতে পারে। ধার্মিকেরা অবশ্যই পাপীদের বিরুদ্ধে আত্মিকযুদ্ধে অবতীর্ণ হতে পারে, এবং তাদের নিকটে জল ও আত্মার সুসমাচার প্রচার করতে পারে। ধার্মিকদের অবশ্যই ধৈর্য্য সহকারে জীবন-যাপন করতে হবে এবং সুসমাচারের জন্য নির্যাতনকে অদৃষ্ট হিসাবে মেনে নিতে হবে। ঈশ্বরের পক্ষে জীবন- যাপনই আমাদের অদৃষ্ট।
এশিয়ার একটি প্রবাদে বলা হয়েছে, “কেউ একটি দিনও যদি পড়া বন্ধ করে, সে কটু বাক্য উচ্চারণ করতে পারে।” তাহলে আমাদের সম্বন্ধে কি? যদি আমরা ঈশ্বর এবং তাঁর সুসমাচারের সাথে একদিন জীবন-যাপন না করি, তাহলে কুকর্মের দ্বারা আমরা দ্রুত নিচের দিকে ধাবিত হই। এভাবেই আমরা মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত জীবন-যাপন করি। কিন্তু যদি আমরা খ্রীষ্টে জীবন-যাপন করি, ত্যাগ স্বীকার করি এবং ঈশ্বরের জন্য নির্যাতিত হই এবং যদি আমরা মন্দ আত্মার বাহিনীর সঙ্গে আত্মিক যুদ্ধ করি, তাহলে আমাদের হৃদয়ে আত্মিক খাদ্যে পরিপূর্ণ হবে, যা থেকে আমরা চলার জন্য নূতন শক্তি পাব।
খ্রীষ্টিয়ানেরা তখনই পতিত হয় যখন তারা খ্রীষ্টের পক্ষে জীবন-যাপন করে না। কিন্তু যখন আমরা খ্রীষ্টের পক্ষে জীবন-যাপন করি, তখন আমাদের আত্মিক শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং শারীরিক স্বাস্থ্য ও উদ্যোম আরও শক্তিশালী হয়।
৩৮-৩৯ পদে বলা হয়েছে, “কেননা আমি নিশ্চয়ই জানি, কি মৃত্যু, কি জীবন, কি দূতগণ, কি আধিপত্য সকল, কি উপস্থিত বিষয় সকল, কি ভাবী বিষয় সকল, কি পরাক্রম সকল, কি উৰ্দ্ধ স্থান, কি গভীর স্থান, কি অন্য কোন সৃষ্ট বস্তু, কিছুই আমাদের প্রভু খ্রীষ্ট যীশুতে অবস্থিত ঈশ্বরের প্রেম হইতে আমাদিগকে পৃথক করিতে পারিবে না।” জল ও আত্মার সুসমাচারের জন্য একজন বিশ্বাসী হিসাবে পৌল এই যুক্তি দেখিয়েছেন। একই সত্য আমাদের জন্যও প্রযোজ্য; মৃত্যু কি জীবন কোনটিই আমাদেরকে খ্রীষ্ট থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারে না।
প্রাচীন যুগে রোম সম্রাজ্যের মত সেই সমস্ত জাগতিক শাসকেরা খ্রীষ্টিয়ানদের বাধ্য করত তাদের বিশ্বাস স্বীকার করার জন্য এবং বিভিন্ন ধরনের প্রলোভন উচ্চ পদ, স্ত্রী সম্পত্তি ইত্যাদির মাধ্যমে বিশ্বাসের স্বীকারোক্তি আদয় করতে চাইত। কিন্তু সত্যিকারের বিশ্বাসীরা কখনও ক্ষমতা, প্রলোভন, সমান বা সম্পত্তি কোন কিছুর কাছেই মাথানত করেনি।
 বিশ্বাস এমন কোন জিনিষ নয় যে পৃথিবীর অন্য কোন জিনিষের সঙ্গে বিনিময় করা যায়। কেউ যদি আমাদের একটা ব্লাঙ্ক চেক দিয়ে বলে, “তুমি সুসমাচার বন্ধ করলে আমি তোমাকে এই চেকটি দেব;” আমাদের ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা এবং ঈশ্বরের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসের কারণে আমরা উত্তর দিতে পারব, “তোমরা নিজেরই ওটার প্রয়োজন, তুমি ওটা খরচ কর। আমার কাছে ওটা সাধারণ কাগজ ছাড়া আর কিছুই নয়।”
 
 
একমাত্র জল ও আত্মার সুসমাচারেই ঈশ্বরের ধার্মিকতা নিহিত আছে
 
অনেকে আমাকে বলেছে, “আপনি যদি এ কথা স্বীকার করেন যে, শুধু মাত্র ক্রুশীয় রক্তে বিশ্বাসই সঠিক বিশ্বাস, তাহলে আমরা আপনার বিশ্বাসকে অনুমোদন করব। আমরা যে, শুধু আপনাকে অভিযুক্ত করা থেকে বিরত থাকব তাই নয়, বরং আপনাকে সাহায্য ও করব।” এই সব ধর্মীয় নেতারা বিশেষভাবে আমার সাথে এ রকম আপোষ করতে চেয়েছেন। কিন্তু ঈশ্বরের বাক্য দিয়ে বিচার করলে দেখা যায় যে, ঈশ্বরের ধার্মিকতাই আসল এবং নিশ্চিত। যেটা ভুল সেটা ভুলই, সত্য সব সময়ই সত্য। কোন ভুল বিশ্বাসকে স্বীকৃতি দেওয়া ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা। সুতরাং আমি যে তাদের বিশ্বাসকে অনুমোদন করতে অসমর্থ শুধু তাই নয়, কিন্তু আমি অবশ্যই নিরবচ্ছিন্নভাবে তাদের প্রতারণাকে কটাক্ষ করে যাব। 
“আপনি কি শুধু ক্রুশীয় রক্তে বিশ্বাস করেন? তাহলে আপনার হৃদয়ে অবশ্যই পাপ রয়েছে। আপনি নরক যোগ্য। আমাকে যতই কঠোর এবং অনমনীয় মনে হোক না কেন, আপনাকে আমি সাহায্য করতে পারব না। সত্য যা তা সত্যই।”এই সমস্ত কথার জন্য মানুষ আমার কাছ থেকে দূরে থাকে, মোট কথা তারা আমার কাছে ঘেষতে পারে না। অনেকে আমাকে তাদের নিজেদের মতো মনে করে, তারা অনেক সময় আমার সাথে এ বিষয়ে এভাবে কথা বলতে চায়। কিন্তু প্রতি বারেই আমি তাদের বলেছি, “তোমরা ভ্রান্ত পালক এবং ভন্ড, যারা ঈশ্বরের নামে জীবিকা নির্বাহের ব্যবসা করছ, সাধারণ চোর ছাড়া কিছু নও।” এমন কথা বললে কে আমাকে পছন্দ করবে? কিন্তু যেটা না সেটা না, এই কারণে আমি আপনার স্থানে এতটা দৃঢ় এবং নির্ভিক।
 আমি যদি শুধু মাত্র যীশুর রক্ত বিশ্বাস করি, তাহলে আমাকে অনেক অনেক ক্ষমতা দেওয়া হবে, এ রকম প্রলোভনও আমাকে দেখানো হয়েছে। কিন্তু উপরোক্ত অংশে যেমন বলা হয়েছে, “কি উপস্থিত বিষয় সকল, কি ভাবী বিষয় সকল, কি গভীর স্থান, কি অন্য কোন সৃষ্ট বস্তু।” উচ্চ কি গভীর কোন ক্ষমতাই আমাদের প্রয়োজন নাই। আমরা যারা নূতন জন্ম প্রাপ্ত, এসবের আমাদের প্রয়োজন নাই। এবং এগুলো আমরা পছন্দও করি না।
 এই অংশে আরো বলা হয়েছে যে, প্রভু যীশু খ্রীষ্টে স্থিত ঈশ্বরের প্রেম থেকে কোন সৃষ্ট বস্তুই আমাদেরকে পৃথক করতে পারবে না। সারা বিশ্ব-ব্রক্ষ্মান্ডও যদি আমাদের বিরোধীতা করে, তবু ঈশ্বরের যে প্রেম আমাদের উদ্ধার করেছে, সেই প্রেম থেকে আমাদের পৃথক করতে পারবে না।
 কিছু কিছু খ্রীষ্টিয়ানরা বিশ্বাস করে যে, অতি প্রাকৃতিক জীবের অস্তিত্ব রয়েছে। এমনকি অনেক পালকেরাও এই সব অস্থিত্বে বিশ্বাস করে। কিন্তু এই জাতীয় কোন অস্বাভাবিক কিছু নেই। আমি যখন সেমিনারীতে ছিলাম, সেখানকার একজন শিক্ষ এই সব অস্তিত্বে বিশ্বাস করতেন, আমি তাকে জিজ্ঞাস করলাম, “শাস্ত্র থেকে কি আপনার এই বিশ্বাসের প্রমাণ দিতে পারেন?” অবশ্যই তিনি আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলেন না। আসলেই এমন কোন অস্বাভাবিক কোন কিছু নেই। ঈশ্বর জগতকে এমন প্রেম করলেন যে, নিজের একজাত পুত্রকে দান করলেন। এমন কোন অস্তিত্ব যদি থাকতই, তাহলে যীশুর শুধুমাত্র পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করার প্রয়োজন ছিল না।
অনেক অর্থ খরচ করে, অনেক গবেষনার পর আমরা চাঁদে পৌঁছেছি। এমনকি মঙ্গল গ্রহে ও আমাদের অনুসন্ধান কাজ চালানো হয়েছে, কিন্তু পৃথিবীর বাইরে প্রাণের অস্তিত্ব আছে এমন কোন প্রমাণ আবিস্কার করা যায়নি। শাস্ত্রের উপর নির্ভর করে আমি দৃঢ়ভাবে বলতে পারি যে, বৈজ্ঞানিক গবেষনায় এবং প্রযুক্তিগত সামর্থে মানুষের যত উন্নতিই হোক না কেন, এবং যত দ্রুতই আমরা মহাবিশ্বে পৌঁছাই না কেন, অতি প্রাকৃতিক প্রাণের অস্তিত্ব আমরা পাব না। বাইবেল বলে যে, যীশু খ্রীষ্টে স্থিত ঈশ্বরের প্রেম থেকে কোন সৃষ্ট বস্তুই আমাদেরকে ঈশ্বরের প্রেম থেকে পৃথক করতে পারবে না। ঈশ্বরের প্রেম তাহলে কি? জল ও আত্মার সুসমাচার ভিন্ন অন্য কিছু নয়। এটাই ঈশ্বরের প্রেম। যে পরিত্রাণ আমাদের উদ্ধার করেছে, জল ও আত্মার সুসমাচারের মাধ্যমে আমাদের পাপ থেকে মুক্ত করেছে সেটাই ঈশ্বরের প্রেম, এই প্রেম থেকে কেউ আমাদেরকে পৃথক করতে পারবে না।
 নবম অধ্যায়ে প্রেরিত পৌল আবার বিশ্বাসের কথা বলেছেন, কিন্তু অষ্টম অধ্যায়ের উপসংহারে প্রেমের চূড়ান্ত ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। রোমীয় পুস্তকের প্রথম অধ্যায় থেকে অষ্টম অধ্যায় পর্যন্ত একটি বিষয়ের আলোচনা করা হয়েছে; অষ্টম অধ্যায়ে এই অংশে সর্বশেষ হওয়াতে এখানে বিশ্বাসের চুড়ান্ত ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। অষ্টম অধ্যায়ে ঈশ্বরের বাক্য আমাদের বলে যে, যারা জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাসী, ঈশ্বরের প্রেম থেকে তারা অবিচ্ছেদ্য।
যারা এ রকম বিশ্বাস করে না, তারা এ রকম হতে পারে না। প্রভুর জন্য হয়তো তারা সাময়িকভাবে বেঁচে থাকার চেষ্টা করতে পারে, কিন্তু মৃত্যু পর্যন্ত এই বিশ্বাস রক্ষা করে চলা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। দশ বিশ বছর তার হয়তো ধর্মীয় জীবন-যাপন করতে পারে, কিন্তু ক্রমান্বয়ে তাদের বিশ্বাস ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে মরে যাবে। ঈশ্বর থেকে এমন বিচ্ছিন হয়ে যাবে যে, ঈশ্বরের জন্য তখন আর কিছুই করার থাকবেন। এমন নয় যে, তারা কাজ কম করে, কিন্তু তাদের হৃদয়ে খ্রীষ্টের জন্য যে প্রেম সেটাই বিলীন হয়ে যাবে। যেহেতু তাদের হৃদয়ে পবিত্র আত্মা বসবাস করেন না, তাই প্রভুর জন্য তাদের হৃদয়ে কোন প্রেম থাকতে পারে না। বরং সংক্ষেপে বলতে গেলে তাদের হৃদয়ে পাপ থাকে।
যতই দিন যাচ্ছে, জল ও আত্মার যে সুসমাচার দ্বারা প্রভু আমাদের উদ্ধার করেছেন, সেই পরিত্রাণের প্রেমের গভীরতা এবং শুচিতা আমি আবারো বেশী বুঝতে পারছি। আমি যখন প্রথম প্রভুর দর্শন পেয়েছিলাম, প্রভুর প্রেমের প্রশংসার গভীরতা ছিল শান্ত, পুকুরে ঢিল ছুড়লে যেমন ছোট ছোট ঢেউ জাগে ঠিক তেমনি। যীশু আমার সমস্ত পাপ তুলে নিয়েছেন এবং এই ভাবে আমাকে পাপহীন করেছেন, আমার সেই অনুভূতিটা ছিল খুব শান্ত। কিন্তু যখন থেকে যতই আমি সুসমাচার প্রচারে জীবন-যাপন করছি, ততই অকল্পনীয়ভাবে আমার হৃদয়ের সেই ছোট ছোট ঢেউগুলো ক্রমান্বয়ে বৃহত্তর এবং গভীরতর হচ্ছে, যেন আমার হৃদয়ে একটি বোমা বিস্ফোরণ হচ্ছে।
কে বলে যে আমাদের শুধু ক্রুশীয় রক্তে বিশ্বাস করা উচিত? রোমীয় পুস্তক পৌল পরিস্কারভাবে এবং দ্ব্যর্থহীনভাবে জল ও আত্মার সুসমাচারের কথা বলেছেন, “অথবা তোমরা কি জাননা যে, আমরা যত লোক খ্রীষ্ট যীশুর উদ্দেশে বাপ্তাইজিত হইয়াছি, সকলে তাঁহার মৃত্যুর উদ্দেশে বাপ্তাইজিত হইয়াছি? অতএব আমরা তাঁহার মৃত্যুর উদ্দেশে বাপ্তিস্ম দ্বারা তাঁহার সহিত সমাধিপ্রাপ্ত হইয়াছি; যেন, খ্রীষ্ট যেমন পিতার মহিমা দ্বারা মৃতগণের মধ্য হইতে উত্থাপিত হইলেন, তেমনি আমরাও জীবনের নূতনতায় চলি” (রোমীয় ৬:৩-৪)। 
জল ও আত্মার সুসমাচার কি চুড়ান্তভাবে মহৎ নয় এবং সর্বব্যাপী শুচি নয়? যত অল্প বিশ্বাসই হোক না কেন, জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস করলে মানুষ পাপ থেকে মুক্ত হতে পারে। যত অধর্মই থাকুক, জলও আত্মার সুসমাচার দ্বারা আপনার বিশ্বাসকে পূর্ণতা দেওয়া হয়েছে। আপনি দূর্বলই হোন না কেন, জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাসের মাধ্যমে আপনি উদ্ধার পেয়েছেন। যদিও আমাদের নিজেদের কোন ক্ষমতা নেই, কিন্তু যদি আমরা ঈশ্বরের জন্য এবং ঈশ্বরের সাথে বাঁচি, তাহলে আমাদের হৃদয়ের যত নোংরামী সব দূর হয়ে যায়।
 কিন্তু যারা প্রথম থেকে বিশ্বাস করে না, শেষে তারা ঈশ্বরের বিপক্ষে চলে যায় এবং তাঁকে ত্যাগ করবে; এমনকি এই সুসমাচার দশ বছর আগে শোনার পরে সেই অনুযায়ী জীবন-যাপন করলেও। চোখ এবং কান থাকা সত্ত্বেও ঈশ্বরের সত্যের প্রতি যারা সেগুল বন্ধ করে রাখে, তারা এতটাই বোকা যে, নিজ হাতে ঈশ্বরের আশীর্বাদ ঠেলে দিয়ে নরকের দিকে ধাবিত হচ্ছে। তাদের পাপ দ্বারা প্রতিদিন তারা খ্রীষ্টকে ক্রুশে দিচ্ছে, যদিও যীশুর বাপ্তিস্ম না হলে ক্রুশীয় মৃত্যু হত না।
যত দিন যাচ্ছে ততই আমি এই সুসমাচারের মহত্ত্ব ও শুচিতা আরও গভীরভাবে উপলব্দি করতে পারছি। যত দুর্বল হই, সুসমাচারে প্রকাশিত প্রভুর প্রেমের গভীরতাও পরিপূর্ণতা আমি ততবেশী উপলব্ধি করতে পারি এবং এই জন্য ততবেশী ঈশ্বরের প্রশংসা করি। এই সুসমাচার যত প্রচার করি, আমার কণ্ঠস্বর তত উচ্চ হয়, যত প্রচার করি, আমি আরো সবল হই, যত বেশী এই সুসমাচার প্রচার করি, ততবেশী অনুপ্রাণীত হই।
নূতন জন্ম লাভ করার পরেও আপনি যদি ঈশ্বরের বাক্য না শোনেন এবং তাঁর পক্ষে কাজ না করেন, আপনার হৃদয়ে আগাছা জমতে শুরু করবে এবং এই আগাছার কারণে একসময় আপনার হৃদয় বদ্ধ হয়ে যাবে। যখনই এরকম হবে, তখনই প্রশংসামূলক গান করুন এবং ঈশ্বরের বিষয় চিন্তা করুন। প্রশংসা পান করাতে আপনার হৃদয় ধৌত হয়ে যাবে এবং তাতে আপনার পূর্ণ জাগরিতা হবে।
আপনার হৃদয়ে ভেজাল যা কিছু আছে, তা ঝেড়ে ফেলা উচিত এবং ঈশ্বরের বাক্য দ্বারা হৃদয়কে নবায়ন করা উচিত। আমাদের হৃদয় ইতিপূর্বে পরিস্কার হয়েছে, কিন্তু যখনই জগতের বিভিন্ন পাপ, অধর্ম প্রবেশ করে, আমাদেরকে দ্বিধান্বিত এবং এলোমেলো করে ফেলে; তখন আমরা প্রভুর প্রশংসার গান করে এবং ঈশ্বরের আরাধনার মাধ্যমে হৃদয়কে নবায়ন ও পুনর্জাগরিত করতে পারি। আমরা যেখানেই থাকি না কেন ঈশ্বরের প্রশংসার মাধ্যমে আমরা আনন্দিত ও উল্লাসিত হতে পারি। যারা পাপের ক্ষমা পেয়েছে, তাদের হৃদয়ে কোন পাপ নেই, তাই তাদের হৃদয় থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ধন্যবাদ, প্রশংসা ও আনন্দ বেরিয়ে আসে। আমাদের আনন্দ পূর্বক হৃদয়ের প্রশংসা গীতের মাধ্যমে আগাছাগুলো দূর হয়ে যায়। 
সময়ে সময়ে আমাদের দূর্বলতাগুলো প্রকাশিত হয়। কারণ বিভিন্ন পরিস্থিতির কারণে আমাদের চিন্তা এবং অনুভূতি সহজেই পরিবর্তিত হতে পারে, খ্রীষ্টিয় ভাইবোনদের সাথে থাকলে যদিও আমরা আনন্দিত এবং ভাল মনে থাকতে পারি, কিন্তু অনেক সময় একাকী থাকলে আমরা কলুষিত হয়ে পড়তে পারি। এই জন্য নিজের মাংসের দিকে তাকিয়ে পৌল চিৎকার করে বলেছেন, “দুর্ভাগ্য মনুষ্য আমি! এই মৃত্যুর দেহ হইতে কে আমাকে নিস্তার করিবে? আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের দ্বারা আমি ঈশ্বরের ধন্যবাদ করি।”
 মাংসে দূর্বল হওয়া সত্ত্বেও জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস করার দ্বারা প্রেরিত পৌল পাপ থেকে মুক্ত হয়ে পূর্ণতা পেয়েছিলেন। শুধু মাত্র পৌলই কি এই রকম? আমিও পৌলের মত। আপনিও কি পৌলের মত নন?
জগতের লোকেরা যখন একত্রিত হয়, তখন তারা মদ্যপানের আসর বসায়, পুরুষেরা তাদের চাকরী-বাকরী, প্রমোশন-ডিমোশনের গল্প করে এবং মহিলারা স্বামী, সন্তান, বাড়ী সম্পত্তি ইত্যাদি নিয়ে গর্ব করে। কিন্তু ধর্মীয় লোকদের আলাপ আলোচনা জগতের লোকদের চেয়ে গুনগতভাবে ভিন্ন। এমনকি যখন আমরা একসাথে রুটি খাই তখন সারা পৃথিবী ব্যাপী আত্মা জয়ের যে কাজ চলছে সেই বিষয়ে আলোচনা করি, ভারত, জাপান, ইউরোপ, আফ্রিকা, যুক্তরাষ্ট্র ইত্যাদি রাষ্ট্রে প্রভুর কাজের আলোচনা করি, ঈশ্বরের প্রশংসনা করি এবং পরস্পরের আত্মিক সহভাগিতা উপলব্ধি করি। 
যখন আমরা রোমীয় পুস্তক পড়ি তখন পৌলের হৃদয়ের বিশ্বাসের উপলব্ধি করতে পারি। ঈশ্বরের পরিত্রাণ কত মহৎ বুঝতে তাও পারি। সুসমাচারের চমৎকারিত্ত্ব বুঝতে পারি এবং বাক্যের নিগূঢ় তত্ত্ব অনুধাবন করতে পারি। কারণ আমরা প্রভুর পরিত্রাণের পরিপূর্ণতা এবং শুচিতা গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারি; আমরা তাঁর ধার্মিকতার প্রশংসা না করে পারি না।
এই মুহূর্তে সারা পৃথিবীও যদি পরিবর্তিত হয়ে যায়, তবুও ঈশ্বরের দেওয়া জল ও আত্মার যে সুসমাচার আমাদের পাপ থেকে উদ্ধার করেছে, তা অপরিবর্তনীয় থেকে যাবে। কারণ খ্রীষ্টের প্রেম আমাদেরকে উদ্ধার করেছে, এবং এই প্রেম আমাদের কখনও ত্যাগ করেনি, সব সময় আমাদের মধ্যে আছে; আমাদের যা করতে হবে তা হল জগত থেকে ফিরে ঈশ্বরের প্রতি দৃষ্টিপাত করতে হবে। আমরা দূর্বল এবং এই দূর্বলতার কারণে মাঝে মাঝে আমরা জগতের ফাঁদে আটকে যাই; কিন্তু যতবার এরকম হয় ততবারই আমাদের ঈশ্বরের দিকে ফিরতে হবে এবং প্রভু যে আমাদের উদ্ধার করেছেন সেই সত্যে বিশ্বাস করতে হবে। তার পরেও আমাদের মাংসময় দেহ পরিবর্তিত হতে পারে এবং পাপের দাসত্বে জীবন-যাপন করতে পারে। এই জন্য মাংসকে স্বীকার করতে এবং আত্মিক চিন্তাভাবনার মধ্যে বাঁচতে হবে। হৃদয়ে আগাছা জন্মানো বন্ধ করতে হলে সব সময় ঈশ্বরের দিকে দৃষ্টি রেখে ধার্মিকতার প্রশংসা করতে হবে। 
জল ও আত্মার সুসমাচার যে কতটা পরাক্রমী আপনি কি তা এখনও বুঝতে পারছেন? যেহেতু সমগ্র রোমীয় পুস্তক জল ও আত্মার সুসমাচারের ভিত্তির উপরে রচিত, তাই প্রথমে এই সুসমাচারে বিশ্বাস ছাড়া আমরা ঈশ্বরের বাক্যের তৎপর্য বুঝতে পারি না।
প্রভুর ধন্যবাদ করি যে, আমাদের তিনি এই বাক্যের নিগূঢ়তত্ত্ব অনুধাবন করতে দিয়েছেন। ঈশ্বরের ধার্মিকতা, – যা হল খ্রীষ্টের প্রেম, তা থেকে কেউই আমাদের পৃথক করতে পারে না। আপনি যদি ঈশ্বরের ধার্মিকতায় বিশ্বাস করতে চান, তাহলে আপনার প্রায়শ্চিত্ত ও পরিত্রাণের জন্য যোহনের দ্বারা যীশুর বাপ্তিস্ম এবং তাঁর ক্রুশীয় রক্ত সেচনে বিশ্বাস করুন। তাহলে আপনিও ঈশ্বরের ধার্মিকতা লাভ করতে পারবেন।
 আমাদের ঈশ্বরের ধার্মিকতার আশীর্বাদ আপনার সহবর্ত্তী হোক।