Search

Bài giảng

বিষয় ১১: আবাস

[13-1] খ্রীষ্টারীর উত্থান (প্রকাশিত বাক্য ১৩:১-১৮)

খ্রীষ্টারীর উত্থান
< প্রকাশিত বাক্য ১৩:১-১৮ >
“ আর আমি দেখিলাম, সমুদ্রের মধ্য হইতে এক পশু উঠিতেছে; তাহার দশ শৃঙ্গ” ও সপ্ত মস্তক; এবং তাহার শৃঙ্গগুলিতে দশ কিরীট, এবং তাহার মস্তকগুলিতে ঈশ্বরনিন্দার কতিপয় নাম। সেই যে পশুকে আমি দেখিলাম, সে “চিতাবাঘের তুল্য, আর তাহার চরণ ভল্লুকের ন্যায়, এবং মুখ সিংহমুখের ন্যায়”; আর সেই নাগ আপনার পরাক্রম ও আপনার সিংহাসন ও মহৎ কর্ত্তৃত্ব তাহাকে দান করিল। পরে দেখিলাম, তাহার ঐ সকল মস্তকের মধ্যে একটা মস্তক যেন মৃত্যুজনক আঘাতে আহত হইয়াছিল, আর তাহার সেই মৃত্যুজনক আঘাতের প্রতীকার করা হইল; আর সমুদয় পৃথিবী চমৎকার জ্ঞান করিয়া সেই পশুর পশ্চাৎ চলিল। আর তাহারা নাগের ভজনা করিল, কেননা সে সেই পশুকে আপন কর্ত্তৃত্ব দিয়াছিল; আর তাহারা সেই পশুর ভজনা করিল, কহিল, এই পশুর তুল্য কে? এবং ইহার সহিত কে যুদ্ধ করিতে পারে? আর এমন এক মুখ তাহাকে দত্ত হইল, যাহা দর্প ও ঈশ্বর-নিন্দা করে, এবং তাহাকে বিয়াল্লিশ মাস পর্য্যন্ত কার্য্য করিবার ক্ষমতা দেওয়া গেল। তাহাতে সে ঈশ্বরের নিন্দা করিতে মুখ খুলিল, তাঁহার নামের ও তাঁহার তাম্বুর, এবং স্বর্গবাসী সকলের নিন্দা করিতে লাগিল। আর পবিত্রগণের সহিত যুদ্ধ করিবার ও তাহাদিগকে জয় করিবার ক্ষমতা তাহাকে দত্ত হইল; এবং তাহাকে সমস্ত বংশের ও লোকবৃন্দের ও ভাষার ও জাতির উপরে কর্ত্তৃত্ব দত্ত হইল। তাহাতে পৃথিবী-নিবাসীদের সমস্ত লোক তাহার ভজনা করিবে, যাহাদের নাম জগৎপত্তনের সময়াবধি হত মেষশাবকের জীবন পুস্তকে লিখিত নাই। যদি কাহারও কান থাকে সে শুনুক৷ যদি কেহ বন্দিত্বের পাত্র থাকে, সে বন্দিত্বে যাইবে; যদি কেহ খড়গ দ্বারা হত্যা করে, তাহাকে খড়গ দ্বারা হত হইতে হইবে। এস্থলে পবিত্রগণের ধৈর্য্য ও বিশ্বাস দেখা যায়। পরে আমি আর এক পশুকে দেখিলাম, সে স্থল হইতে উঠিল, এবং মেষশাবকের ন্যায় তাহার দুই শৃঙ্গ ছিল, আর সে নাগের ন্যায় কথা কহিত। সে ঐ প্রথম পশুর সমস্ত কর্ত্তৃত্ব তাহার সাক্ষাতে পরিচালনা করে; এবং যে প্রথম পশুর মৃত্যুজনক আঘাতের প্রতীকার করা হইয়াছিল, পৃথিবীকে ও তন্নিবাসীদিগকে তাহার ভজনা করায়। আর সে মহৎ মহৎ চিহ্ন-কার্য্য করে; এমন কি মনুষ্যদের সাক্ষাতে স্বর্গ হইতে পৃথিবীতে অগ্নি নামায়। এইরূপে সেই পশুর সাক্ষাতে যে সকল চিহ্ন-কার্য্য করিবার ক্ষমতা তাহাকে দত্ত হইয়াছে, তদ্দ্বারা সে পৃথিবীনিবাসীদের ভ্রান্তি জন্মায়; সে পৃথিবীনিবাসীদিগকে বলে, যে পশু খড়গ দ্বারা আহত হইয়াও বাঁচিয়া ছিল, তাহার এক প্রতিমা-নির্ম্মাণ কর। আর তাহাকে এই ক্ষমতা দত্ত হইল যে, সে ঐ পশুর প্রতিমার মধ্যে নিশ্বাস প্রদান করে, যেন ঐ পশুর প্রতিমা কথা কহিতে পারে, ও এমন করিতে পারে যে, যত লোক সেই পশুর প্রতিমার ভজনা না করিবে, তাহাদিগকে বধ করা হয়। আর সে ক্ষুদ্র ও মহান্‌, ধনী ও দরিদ্র, স্বাধীন ও দাস, সকলকেই দক্ষিণ হস্তে কিম্বা ললাটে ছাব ধারণ করায়; আর ঐ পশুর ছাব অর্থাৎ নাম কিম্বা নামের সংখ্যা যে কেহ ধারণ না করে, তাহার ক্রয় বিক্রয় করিবার অধিকার বদ্ধ করে। এস্থলে জ্ঞান দেখা যায়। যে বুদ্ধিমান্‌, সে ঐ পশুর সংখ্যা গণনা করুক; কেননা তাহা মনুষ্যের সংখ্যা, এবং সেই সংখ্যা ছয় শত ছেষট্টি।”
 


টীকা

 
পদ ১: “ আর আমি দেখিলাম, সমুদ্রের মধ্য হইতে এক পশু উঠিতেছে; তাহার দশ শৃঙ্গ ও সপ্ত মস্তক; এবং তাহার শৃঙ্গগুলিতে দশ কিরীট, এবং তাহার মস্তকগুলিতে ঈশ্বরনিন্দার কতিপয় নাম। ”
প্রেরিত যোহন সমুদ্রের মধ্য থেকে একটি পশুকে উঠে আসতে দেখেছিলেন৷ পৃথিবীতে যখন খ্রীষ্টারীর উত্থান হবে তখন সে যা করবে, যোহন যে পশুটি দেখেছিলেন, ঈশ্বর সে পশুটির মধ্যে দিয়ে তা আমাদেরকে দেখিয়েছেন৷ ঈশ্বর যোহনকে সপ্ত মস্তক ও দশ শৃঙ্গ বিশিষ্ট এক পশুকে দেখিয়েছেন আমাদেরকে এটা বলতে নয় যে, প্রকৃতি পৃথিবীতে এই আকৃতির পশুর আবির্ভাব হবে এবং সে সক্রিয় হবে, কিন্তু আমাদেরকে এটা বলতে যে, এই পশু ক্ষমতা ও শক্তি নিয়ে আবির্ভূত হবে, সাধুগণকে নির্যাতন করবে এবং তাদের মধ্যে থেকে সাক্ষ্যমর তৈরী করবে৷ 
আসলে এর মানে কি এই যে, প্রকাশিত বাক্যে যা কিছু প্রকাশ করা হয়েছে, তা শুধু প্রতিকী? মোটেও না৷ শেষ সময়ে খ্রীষ্টারীর আবির্ভাব এবং তার কাজকে প্রকাশ করতে ঈশ্বর এইরূপে দর্শনের মধ্যে দিয়ে কথা না বলে পারেন নি৷ এটাই শক্তি এবং সর্বময় ক্ষমতা, যার মাধ্যমে কেবল ঈশ্বর একাই কথা বলতে পারেন৷ প্রকাশিত বাক্যের ১৩ অধ্যায়ের মধ্যে দিয়ে আমরা অবশ্যই শেষ সময়ের প্রানবন্ত চিত্র দেখতে সক্ষম হব৷
প্রথমে যোহন যা দেখেছিলেন তা হল, সমুদ্রের মধ্যে হতে একটি পশু উঠে আসছিল৷ পশুটির সপ্ত মস্তক এবং দশ শৃঙ্গ এখানে পৃথিবীতে আবির্ভূত খ্রীষ্টারীর শক্তির কথা বলা হয়েছে৷ এই অংশে, “তাহার দশ শৃঙ্গ ও সপ্ত মস্তক; এবং তাহার শৃঙ্গগুলিতে দশ কিরীট, এবং তাহার মস্তকগুলিতে ঈশ্বরনিন্দার কতিপয় নাম। ”-এর অর্থ হল, খ্রীষ্টারী পৃথিবীর জাতিগণকে একত্রিত করে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে দাঁড় করাবে৷ এটা আমাদেরকে আরো বলে যে, সে পৃথিবীর সমস্ত রাজাদের শাসন করবে৷ দশ কিরীট তাদের বিজয় নির্দেশ করে এবং পশুর মস্তকে ঈশ্বর নিন্দার নাম তাদের শ্লাঘাকে নির্দেশ করে৷
একীভূত বিভিন্ন জাতির একই লক্ষ্যে গড়ে উঠা জাতিপুঞ্জের দ্বারা ভবিষ্যত পৃথিবী পরিচালিত হবে৷ এই সমন্বিত মহা ক্ষমতাধর শক্তি হবে একটি বিশাল আন্তর্জাতিক জোট যা তাদের সার্বভৌমত্ব বৃদ্ধি করবে এবং পৃথিবীর সমস্ত জাতির উপরে কর্তৃত্ব করবে এবং পৃথিবীতে যখন খ্রীষ্টারীর আবির্ভাব হবে, এমন সময় সে-ই মহাশক্তির ক্ষমতাধর ব্যক্তি হবে৷ সে ঈশ্বরের শত্রু এবং এমন একজন যে শয়তানের শক্তির দ্বারা আচ্ছন্ন এবং একজন মন্দের দাস৷
 
পদ ২: “সেই যে পশুকে আমি দেখিলাম, সে “চিতাবাঘের তুল্য, আর তাহার চরণ ভল্লুকের ন্যায়, এবং মুখ সিংহমুখের ন্যায়”; আর সেই নাগ আপনার পরাক্রম ও আপনার সিংহাসন ও মহৎ কর্ত্তৃত্ব তাহাকে দান করিল।”
খ্রীষ্টারী এই পৃথিবীতে তার আবির্ভাবের দ্বারা সাধুগণের এবং পৃথিবীর লোকদের প্রতি যা করবে এই বাক্যে আমাদেরকে তা বলা হয়েছে৷ খ্রীষ্টারী সাধুগণের প্রতি এরূপ নিষ্ঠুরতা করবে, কারণ সে শয়তানের থেকে এগুলো করার শক্তি ও ক্ষমতা লাভ করবে৷ যখন খ্রীষ্টারী আবির্ভূত হবে তখন সে কিভাবে সাধুগণের উপরে হস্তক্ষেপ করবে, সাধুগণ তাদের সাক্ষ্যমরের মৃত্যুর দ্বারা খ্রীষ্টারীর থেকে কি প্রকারের দুঃখভোগ সহ্য করবে, এখানে এই বাক্যে আমাদেরকে সেটাই দেখানো হয়েছে৷
খ্রীষ্টারী কত হিংস্র তা এই বাক্যে আমাদেরকে দেখানো হয়েছে, এই অংশ, “তাহার চরণ ভল্লুকের ন্যায়” দ্বারা বোঝায় তার ক্ষমতা কত ধ্বংসাত্মক৷ এখানে “নাগ” প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বর কর্তৃক সৃষ্ট, যে তার সিংহাসনের জন্য তার সাথে প্রতিদন্ধিতা করেছিল৷ যে পশুটি এই অধ্যায়ে আবির্ভূত হয়েছে সেটা এমন একজনকে নির্দেশ করে, যে নাগের থেকে ক্ষমতা লাভ করেছিল এবং যে ঈশ্বর এবং তার সাধুগণের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর কাজে লিপ্ত৷
শয়তান, স্বর্গভ্রষ্ট একজন দূত, সে এমন একজনকে তার শক্তি ও ক্ষমতা প্রদান করবে যে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে, এবং ঈশ্বর ও তাঁর সাধুগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তাকে তার মৃত্যুর দিকে চালিত করবে৷ শয়তানের ক্ষমতায় আচ্ছন্ন খ্রীষ্টারী ভবিষ্যতে ঈশ্বরের লোকদের এবং সমস্ত মানবজাতিকে অত্যাচার করবে৷
 
পদ ৩: “পরে দেখিলাম, তাহার ঐ সকল মস্তকের মধ্যে একটা মস্তক যেন মৃত্যুজনক আঘাতে আহত হইয়াছিল, আর তাহার সেই মৃত্যুজনক আঘাতের প্রতীকার করা হইল; আর সমুদয় পৃথিবী চমৎকার জ্ঞান করিয়া সেই পশুর পশ্চাৎ চলিল।”
এই পদ আমাদেরকে বলে যে, খ্রীষ্টারীর আবির্ভাব হবে সপ্ত রাজার একজন হিসাবে৷ খ্রীষ্টারীকে পশু বলা হয়েছে, কারণ সে সাধুগণের উপর পশুতুল্য অত্যাচার করবে৷
ঈশ্বরের শত্রু এবং সাধুগণএক হয়ে শেষ কালে এমনকি মৃত্যুর মত সমস্যার সমাধানও করতে সক্ষম হবে৷ এই রূপে শেষকালে অনেকে তার উপরে বিশ্বাস আনবে যে, সে মারীর মত সমস্যার সমাধান করতে পারে৷ কিন্তু সে ঈশ্বরের শত্রু৷ যদিও সে জাগতিকভাবে লোকদেরকে তার কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করবে, তথাপি ঈশ্বর ও তাঁর সাধুগণের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর জন্য সে ধ্বংস হবে৷

পদ ৪: “আর তাহারা নাগের ভজনা করিল, কেননা সে সেই পশুকে আপন কর্ত্তৃত্ব দিয়াছিল; আর তাহারা সেই পশুর ভজনা করিল, কহিল, এই পশুর তুল্য কে? এবং ইহার সহিত কে যুদ্ধ করিতে পারে? ”
এই পদ আমাদেরকে বলে যে, সেই একজনকে সেই নাগ তার সমস্ত ক্ষমতা প্রদান করবে যে পশুতুল্য আচরণ করবে, যাকে সে তার দাসে পরিনত করবে৷ এই কারণে, এই পৃথিবীর সমস্ত লোক নাগকে ঈশ্বর হিসাবে চিন্তা করবে, ভয়ে কম্পিত হবে এবং তার আরাধনা করবে৷ কারণ এই সময় পৃথিবীতে কোনো রাজার এই পশুর তুল্য ক্ষমতা থাকবে না, তার নিজেকে ঈশ্বর বলে ঘোষণা করা এবং তার ঈশ্বরত্বরোপণকে কেউই রোধ করতে সক্ষম হবে না৷
নাগ যেভাবে তাকে ক্ষমতা প্রদান করেছে, তাতে প্রত্যেকে সেই নাগ ও সেই পশুকে সম্মান করবে এবং পরবর্তীতে তাদেরকে ঈশ্বর রূপে সমাদর করবে৷ এরূপ ক্ষমতার অধিকারী খ্রীষ্টারী যখন আবির্ভূত হবে, যারা আলোর তুলনায় অন্ধকারকে বেশী ভালবাসে তারা তাকে অনুসরণ করবে, তারা তাকে তাদের ঈশ্বর রূপে আরাধনা করবে এবং তাকে উচ্চে উঠাবে৷
 
পদ ৫: “আর এমন এক মুখ তাহাকে দত্ত হইল, যাহা দর্প ও ঈশ্বর-নিন্দা করে, এবং তাহাকে বিয়াল্লিশ মাস পর্য্যন্ত কার্য্য করিবার ক্ষমতা দেওয়া গেল।”
সাড়ে তিন বছরের (৪২ মাস) নিমিত্ত দর্পকারী কথা বলার জন্য সেই পশু নাগ হতে দর্পপুর্ণ হৃদয় এবং তার ক্ষমতা লাভ করবে৷ সেই পশু এভাবে সাধুগণ এবং এই পৃথিবীর লোকদেরকে সাড়ে তিন বছর অত্যাচার করার নিমিত্ত ক্ষমতা লাভ করবে৷ এইভাবে সেই পশুর কাছে সমস্ত পাপীদের আত্মসমর্পণ করা সমাপ্ত হবে এবং শেষান্তে সেই পশুর সাথে তারা তাদের ধ্বংসে পতিত হবে৷
 
পদ ৬: “তাহাতে সে ঈশ্বরের নিন্দা করিতে মুখ খুলিল, তাঁহার নামের ও তাঁহার তাম্বুর, এবং স্বর্গবাসী সকলের নিন্দা করিতে লাগিল।”
সেই পশু নাগ হতে ক্ষমতা লাভ করে তিন বছর ছয় মাস ঈশ্বরের নামের, তাঁর দূতগণ এবং সাধুগণের নিন্দা করবে, অভিশাপ দেবে এবং প্রকাশ্যে তাদের বিরোধিতা করবে৷ নাগ যেভাবে তাকে যা করতে বলবে, সমস্ত জিনিসই সে সেভাবে করবে৷ এখানে, আমাদেরকে অনুধাবন ও বিশ্বাস করতে হবে যে, শয়তানের কার্য – অর্থাৎ সাড়ে তিন বছরের জন্য পশুটিকে ঈশ্বরনিন্দার ক্ষমতা প্রদান করা – কেবলমাত্র ঈশ্বরের অনুমতি সাপেক্ষেই সম্ভব৷
মূলকথা খ্রীষ্টারীর অস্তিত্বই ঈশ্বর এবং তাঁর লোকেদের নিন্দায় পূর্ণ৷ নাগ হতে ক্ষমতা লাভ করে মহাক্লেশের প্রথম সাড়ে তিন বছর খ্রীষ্টারী ঈশ্বরের নাম এবং তাঁর লোকেদের নিন্দা করবে৷
 
পদ ৭: “আর পবিত্রগণের সহিত যুদ্ধ করিবার ও তাহাদিগকে জয় করিবার ক্ষমতা তাহাকে দত্ত হইল; এবং তাহাকে সমস্ত বংশের ও লোকবৃন্দের ও ভাষার ও জাতির উপরে কর্ত্তৃত্ব দত্ত হইল।”
পশুটি নাগ হতে পবিত্রগণকে হত্যা এবং পবিত্রগণের মধ্য হতে সাক্ষ্যমর করার ক্ষমতা লাভ করবে৷ আর সে সমস্ত পৃথিবীর উপরে কর্তৃত্ব করবে, তার অধীনস্থ এই পৃথিবীর প্রত্যেককে তার মুখাপেক্ষী করাতে ক্ষমতাপ্রাপ্ত হবে৷
এই পৃথিবীতে রাজত্ব করতে হলে তাকে সাধুগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এবং জয়লাভ করতে হবে, তাই খ্রীষ্টারী সাধুগণকে হত্যা করবে৷ খ্রীষ্টারী শয়তান কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত, সে একজন স্বর্গভ্রষ্ট দূত, যে ঈশ্বরের ন্যায় আরাধ্য হতে চায়৷ এরূপে যে সমস্ত সাধুগণ নুতন জন্ম পায় নি তাদেরকে হত্যা করার দ্বারা সে সকলের ভক্তিভাজন হবে৷ এই মহাক্লেশের সময়ে সমস্ত সাধুগণ খ্রীষ্টারীর দ্বারা নির্যাতিত এবং সাক্ষ্যমর হবে৷
 
পদ ৮: “তাহাতে পৃথিবী-নিবাসীদের সমস্ত লোক তাহার ভজনা করিবে, যাহাদের নাম জগৎপত্তনের সময়াবধি হত মেষশাবকের জীবন পুস্তকে লিখিত নাই। ”
খ্রীষ্টারী যখন এই পৃথিবী জয় করবে, যারা জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস দ্বারা নুতন জন্ম লাভ করেছে তারা ব্যতীত প্রত্যেকে – অর্থাৎ যাদের নুতন জন্ম হয়নি – তারা তাকে ঈশ্বর হিসাবে পূজা করবে৷ কিন্তু খ্রীষ্টারী শুধু সেই সমস্ত পাপীদের দ্বারাই পূজিত হবে যাদের নাম জীবন পুস্তকে লিখিত নেই৷
 
পদ ৯: “যদি কাহারও কান থাকে সে শুনুক৷”
এটা আমাদেরকে বলে যে, যারা ঈশ্বরের লোক তাদেরকে সাক্ষ্যমরের মৃত্যুর জন্য তাদের (নারী/পুরুষ) বিশ্বাসকে প্রস্তুত করতে হবে, এই সমস্ত বিষয় শাস্ত্রে যেভাবে লেখা রয়েছে, তেমনি যথাযতভাবে পূর্ণ হবে৷
 
পদ ১০: “যদি কেহ বন্দিত্বের পাত্র থাকে, সে বন্দিত্বে যাইবে; যদি কেহ খড়গ দ্বারা হত্যা করে, তাহাকে খড়গ দ্বারা হত হইতে হইবে। এস্থলে পবিত্রগণের ধৈর্য্য ও বিশ্বাস দেখা যায়।”
ঈশ্বর এখানে বলেছেন যে, শেষ সময়ে যারা সাধুগণকে হত্যা করবে, তিনি তাদের উপরে একই মৃত্যু এবং ক্লেশ আনয়ন করবেন৷ মহাক্লেশ পার হওয়ার প্রথম সাড়ে তিন বছরে সাধুগণ খ্রীষ্টারী দ্বারা হত হবে৷ কিন্তু যারা সাধুগণকে এইভাবে হত্যা করবে, ঈশ্বর তাদেরকে আরো বড় মহাক্লেশ এবং দুঃখভোগ ফিরিয়ে দেবেন৷ এইরূপে সমস্ত সাধুগণকে অবশ্যই তাদের হৃদয়কে একীভূত করতে হবে, প্রভুর বাক্যে বিশ্বাসের মাধ্যমে এই কঠিন ক্লেশকে জয় করতে হবে এবং সাক্ষ্যমরের মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার দ্বারা ঈশ্বরকে গৌরব প্রদান করতে হবে৷

পদ ১১: “পরে আমি আর এক পশুকে দেখিলাম, সে স্থল হইতে উঠিল, এবং মেষশাবকের ন্যায় তাহার দুই শৃঙ্গ ছিল, আর সে নাগের ন্যায় কথা কহিত।”
এখানে আমরা প্রথম পশুকে নয়, দ্বিতীয় পশুকে দেখতে পাই৷ দ্বিতীয় পশুটিও নাগের ন্যায় চিন্তা করে এবং কথা বলে৷ সে যে নাগের ন্যায় এটা চিন্তা করে তা নয়, কিন্তু এই বিশ্বাসের উপর তার কাজের ভিত্তিতে সে আরো ভয়ঙ্করভাবে সাধুগণকে নির্যাতন করবে৷ এই পশু খ্রীষ্টারীর ভাববাদী৷

পদ ১২: “সে ঐ প্রথম পশুর সমস্ত কর্ত্তৃত্ব তাহার সাক্ষাতে পরিচালনা করে; এবং যে প্রথম পশুর মৃত্যুজনক আঘাতের প্রতীকার করা হইয়াছিল, পৃথিবীকে ও তন্নিবাসীদিগকে তাহার ভজনা করায়।”
প্রথম পশু কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত দ্বিতীয় পশুটি যখন প্রথম পশুর ভজনা করবে এবং পৃথিবীতে অবশিষ্ট থেকে যাওয়া প্রত্যেককেও তার ভজনা করাবে৷ তার কাজ হবে প্রথম পশুর ভজনা করা এবং প্রত্যেককে ঈশ্বরের ন্যায় তার আরাধনা করানো৷ এই কাজের কারণে, প্রথম পশু এবং সে ঈশ্বরের ন্যায় সমস্ত লোকের উপাসনার বস্তু হবে৷ এটাই তার বৈশিষ্ট এবং শয়তানের স্বীয় সত্য৷
 
পদ ১৩: “আর সে মহৎ মহৎ চিহ্ন-কার্য্য করে; এমন কি মনুষ্যদের সাক্ষাতে স্বর্গ হইতে পৃথিবীতে অগ্নি নামায়।”
শয়তান যেভাবে এই পৃথিবীর মানুষের সামনে মহা চিহ্ন-কার্য সম্পাদন করবে, তাতে সে অনেক লোককে প্রতারিত করতে সক্ষম হবে৷ এমনকি মানুষের সাক্ষাতে তার স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে আগুন নামানোর ক্ষমতা থাকবে৷
 
পদ ১৪: “এইরূপে সেই পশুর সাক্ষাতে যে সকল চিহ্ন-কার্য্য করিবার ক্ষমতা তাহাকে দত্ত হইয়াছে, তদ্দ্বারা সে পৃথিবীনিবাসীদের ভ্রান্তি জন্মায়; সে পৃথিবীনিবাসীদিগকে বলে, ‘যে পশু খড়গ দ্বারা আহত হইয়াও বাঁচিয়া ছিল, তাহার এক প্রতিমা-নির্ম্মাণ কর।”
কিন্তু শয়তান শীঘ্রই তার আসল রূপ প্রকাশ করবে৷ সে যা চায় তা হল মানুষের হৃদয় থেকে ঈশ্বরের প্রতি তাদের যে বিশ্বাস তা হরণ করতে এবং ঈশ্বরের পরিবর্তে তাদেরকে তার আরাধনা করাতে চায়৷ এটা অর্জন করতে সে মানুষের সাক্ষাতে অনেক আশ্চর্য কাজ করবে এবং ঈশ্বরের লোককে হত্যা করবে৷ তার অন্তিম উদ্দেশ্য পূর্ণ করতে – অর্থাৎ ঈশ্বরের সমান হতে – সে ঈশ্বরের স্থানে আরোহন করার চেষ্টা করবে৷ এভাবে সে প্রথম পশুটির একটি প্রতিমা নির্মান করবে এবং লোকদেরকে দিয়ে এটাকে ঈশ্বরের ন্যায় ভজনা করাবে৷ 
 
পদ ১৫: “আর তাহাকে এই ক্ষমতা দত্ত হইল যে, সে ঐ পশুর প্রতিমার মধ্যে নিশ্বাস প্রদান করে, যেন ঐ পশুর প্রতিমা কথা কহিতে পারে, ও এমন করিতে পারে যে, যত লোক সেই পশুর প্রতিমার ভজনা না করিবে, তাহাদিগকে বধ করা হয়।”
নিজেকে ঈশ্বর তুল্য করার পথে সবচেয়ে বর বাধা হয়ে দাঁড়াবে ঈশ্বরের লোকেরা, শয়তান এই বাধা পার হতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করবে৷ এভাবে যারা পশুটির প্রতিমার আরাধনা না করবে, তারা সংখ্যায় যতই হোক না কেন সেটা কোনো ব্যাপার নয়, সে সবাইকে হত্যা করবে৷ কিন্তু সাধুগণ এই পশুর নিকটে আত্মসমর্পণ করবে না৷ তাদের পরবর্তী জীবনের চেয়ে এই সময়ের অসংখ্য সাধুগণ স্বেচ্ছায় তাদের বিশ্বাসের পক্ষে সাক্ষ্যমরের মৃত্যুকে আলিঙ্গন করবে৷ খ্রীষ্টারী যেভাবে সাধুগণের উপরে মহাক্লেশ আনয়ন করেছে, ঈশ্বরও তেমনি তার জন্য সপ্তবাটির মহামারী এবং অনন্তকালীন জ্বলন্ত অগ্নির শাস্তি প্রস্তুত করেছেন৷ 
 
পদ ১৬-১৭: “আর সে ক্ষুদ্র ও মহান্‌, ধনী ও দরিদ্র, স্বাধীন ও দাস, সকলকেই দক্ষিণ হস্তে কিম্বা ললাটে ছাব ধারণ করায়; আর ঐ পশুর ছাব অর্থাৎ নাম কিম্বা নামের সংখ্যা যে কেহ ধারণ না করে, তাহার ক্রয় বিক্রয় করিবার অধিকার বদ্ধ করে।”
ক্লেশের শেষ পর্যায়ে খ্রীষ্টারী সবাইকে তার বশে আনতে তাদের ডান হাত বা কপালে একটা সংখ্যা ধারণ করাতে চাইবে৷ এই চিহ্নটি পশুর চিহ্ন৷ সকলকে তার দাস করতে খ্রীষ্টারী তার লোকদেরকে তার চিহ্নগ্রহণ করতে বাধ্য করবে৷
লোকদের জীবনযাপন নিজের অনুরূপ করতে খ্রীষ্টারী তার রাজনৈতিক পরিকল্পনা সহ অগ্রসর হবে৷ যার কাছে তার পশুর সংখ্যা না থাকবে, খ্রীষ্টারীর উপর তার (নারী/পুরুষ) আনুগত্যের প্রমান না থাকবে, তাতে সে যে কারোর জন্যই ক্রয়-বিক্রয় করার অধিকার বদ্ধ করে দেবে৷ এই চিহ্নটি হল পশুটির নাম বা তার সংখ্যা৷ ভবিষ্যতে যখন পশুটি পৃথিবীতে আসবে তখন প্রত্যেকে সেই পশুটির নামের বা সংখ্যার তৈরী ছাব গ্রহণ করতে বাধ্য হবে৷ আমাদের অবশ্যই নিজেদেরকে ঈশ্বরের সতর্কবাণী মনে করিয়ে দিতে হবে যে, যারা এই চিহ্ন গ্রহণ করবে তারা অগ্নি ও গন্ধকের হ্রদে নিক্ষিপ্ত হবে৷
 
পদ ১৮: “এস্থলে জ্ঞান দেখা যায়। যে বুদ্ধিমান্‌, সে ঐ পশুর সংখ্যা গণনা করুক; কেননা তাহা মনুষ্যের সংখ্যা, এবং সেই সংখ্যা ছয় শত ছেষট্টি।””
পশুটির সংখ্যা হল ৬৬৬৷ সংক্ষেপে এর অর্থ হল যে, পশুটি নিজেই ঈশ্বর৷ এমন কোন সংখ্যা আছে যাতে বোঝায় যে, “একজন মানুষ ঈশ্বর হয়?” এই ধরনের সংখ্যাকে খ্রীষ্টারীর সংখ্যা বোঝায়৷ এরূপে আমরা এই চিহ্ন গ্রহণ করব না, যেহেতু আমাদের পক্ষে ত্রিত্ব ঈশ্বরই আমাদের ঈশ্বর৷ সাধুগণ অবশ্যই প্রভুতে তাদের বিশ্বাসের দ্বারা শয়তানের উপরে জয়লাভ করবে এবং প্রভুকে গৌরব প্রদান করবে৷ এটাই সর্বোত্তম বিশ্বাস এবং আরাধনা যার মাধ্যমে সাধুগণ ঈশ্বরকে গৌরব প্রদান করতে পারে৷ আসুন বিশ্বাসের দ্বারা আমরা বিজয়ী হই৷
 
 
উপযুক্ত সময়ের বিবরণ
 
১৩ অধ্যায়ের আলোচনার বিষয়বস্তু হল খ্রীষ্টারী এবং শয়তানের আবির্ভাব৷ তাদের আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে সাধুগণ তাদের সাথে আত্মিক যুদ্ধে লিপ্ত হবে, যার ফলে খ্রীষ্টারীর দ্বারা সাক্ষ্যমর হওয়া ব্যতীত তাদের আর কোনো উপায় থাকবে না৷ খ্রীষ্টারী শয়তানের একজন দাস, সে সাধুগণকে নির্যাতন করবে ও সাধুগণ সাক্ষ্যমর হবে৷
এই যুগে বাস করা অবস্থায় এ যুগের সমস্ত খ্রীষ্টিয়ান এবং অখ্রীষ্টিয়ানকে অবশ্যই সমানভাবে প্রকাশিত বাক্য জানতে হবে৷ প্রকাশিত বাক্য ১৩ অধ্যায়ে ভাববাণী করে বলা হয়েছে যে, একটি সময় আসবে যখন শয়তান খ্রীষ্টারীকে ঈশ্বরের ন্যায় উপাস্য পাত্রে পরিণত করবে৷ শয়তান পৃথিবীর ক্ষমতাপূর্ণ রাজনৈতিক নেতাদের একজনকে মহাক্ষমতা প্রদান করবে এবং তাঁকে ঈশ্বর ও তাঁর সাধুগণের বিরুদ্ধে দাঁড় করাবে৷ বিশেষ করে খ্রীষ্টারী নিজেকে ঈশ্বরের ন্যায় উপাস্য পাত্রে পরিণত করবে এবং তাঁর বিরুদ্ধে অবতীর্ণ হবে৷
ঈশ্বরের লোকসহ প্রত্যেককেই পশুত্ব স্বভাবের খ্রীষ্টারী কর্তৃক আনীত যন্ত্রণা এবং ক্লেশ হতে মহাদুঃখভোগ স্বীকার করবে৷ মূল অনুচ্ছেদে আমাদেরকে দেখানো হয়েছে যে, খ্রীষ্টারীর প্রতিমা শয়তানের নিঃশ্বাস গ্রহণ করেছে, বলা হয়েছে সে একটা জীবিত প্রাণী, লোকেদের ক্ষতি করার ক্ষমতা তার আছে৷ যারা নুতন জন্ম প্রাপ্ত হয়নি তারা এভাবে তার কাছে আত্মসমর্পণ করবে এবং তার দাসে পরিণত হবে৷ অন্যকথায়, যারা শয়তানের নিমিত্ত ঈশ্বরের তুল্য প্রতিমা পূজা না করবে, তারা সংখ্যায় যত বেশী হোক না কেন তাদেরকে হত্যা করা হবে৷ শয়তানও সবাইকে তার চিহ্ন বা সংখ্যা সকলের ডান হাতে বা কপালে গ্রহণ করতে বাধ্য করবে৷
আমাদেরকে অবশ্যই পূর্বেই আগাম বিশ্বাসে প্রস্তুত থাকতে হবে, এবং ভবিষ্যতে প্রকাশিত বাক্য ১৩ অধ্যায়ে প্রকাশিত এই বাক্যের অর্থ বোঝা এবং বিশ্বাস করার দ্বারা বিশ্বাসের সাথে শয়তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে ও সেই যুদ্ধে জয়লাভ করতে হবে৷ আজকের ঈশ্বরের লোকেরা অবশ্যই প্রকাশিত বাক্যের এই বাক্য বিশ্বাস ও শিক্ষার দ্বারা প্রভুকে গৌরব প্রদান করবে এবং এভাবে অটলভাবে শয়তানের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তাকে পরাজিত করে জীবিত হবে৷
 

নরকের উত্পত্তি
 
নরকের অপরিহার্যতা এবং এর অস্তিত্ব কেন তা প্রথমে আমাদেরকে জানতে হবে৷ নরক শয়তানের নিমিত্ত প্রস্তুতিকৃত একটি স্থান৷ বাইবেল আমাদেরকে বলে যে, শুরুতে সে শয়তান ছিল না, কিন্তু সে ঈশ্বরের সৃষ্ট অনেক দূতগণের একজন ছিল৷ কিন্তু দর্পের সাথে ঈশ্বরের সঙ্গে প্রতিদন্ধিতা করার দ্বারা এই স্বর্গদূত তার পাপের মূল্যরূপে শয়তানে পরিণত হয়েছিল, এবং নরকই একমাত্র স্থান যেখানে তাকে অবরুদ্ধ করতে ঈশ্বর সৃষ্টি করেছিলেন৷
এই দূত কিভাবে পতিত হয়েছিল তা যিশাইয় ১৪: ১২-১৫ পদে বর্ণনা করা হয়েছে, “হে প্রভাতি-তারা! ঊষা-নন্দন! তুমি ত স্বর্গভ্রষ্ট হইয়াছ! হে জাতিগণের নিপাতনকারী, তুমি ছিন্ন ও ভূপাতিত হইয়াছ! তুমি মনে মনে বলিয়াছিলে, ‘আমি স্বর্গারোহণ করিব, ঈশ্বরের নক্ষত্রগণের ঊর্দ্ধে আমার সিংহাসন উন্নত করিব; সমাগম-পর্ব্বতে, উত্তরদিকের প্রান্তে, উপবিষ্ট হইব; আমি মেঘরূপ উচ্চস্থলীর উপরে উঠিব, আমি পরাৎপরের তুল্য হইব। তুমি ত নামান যাইবে পাতালে, গর্ত্তের গভীরতম তলে।”
এ সেই দূত যে ঈশ্বরের সিংহাসনের লোভে স্বর্গে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল৷ একমাত্র ঈশ্বরই তার চেয়ে উপরে, এটা দেখে সে ঈশ্বরকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চেয়েছিল এবং তার সিংহাসনে বসতে চেয়েছিল, এবং ব্যর্থ বিদ্রোহের কারণে সে নিজেই ঈশ্বর কর্তৃক স্বর্গ থেকে বিতাড়িত হয়েছিল এবং শেষ পরিণতিতে শয়তানে পরিণত হয়েছিল৷ এই যে দূত শয়তানকে অনুসরণ করেছিল, বাইবেলেও এই দূতকে মন্দ আত্মা হিসাবে নির্দেশ করে৷
ঈশ্বরের সৃষ্ট যে সৃষ্টি, যে তার বিরুদ্ধে দাঁড়াবে তিনি তাকে তার উচিত শাস্তির প্রতিদান দিতে তার নিমিত্ত “নরক” নামের এই স্থান প্রস্তুত করেছেন৷ যদিও ধারণা করা হয় শয়তান সীমাহীনভাবে ঈশ্বরের প্রতিদন্ধিতা করবে এবং তাঁর কাজের নিন্দা করবে, তথাপি যখন জল ও আত্মার সুসমাচার প্রত্যেকের কাছে প্রচারিত হবে পরিণামস্বরূপ তখন সে সহস্র বর্ষের নিমিত্ত অগাধ লোকের কূপে যেতে বাধ্য হবে৷ 
কারণ শয়তান ঈশ্বরের বিপক্ষতা করার পাপের জন্য অনুতপ্ত নয়, সে সর্বদা নিজেকে ঈশ্বরের ন্যায় উচ্চীকৃত করার চেষ্টা করবে এবং পরিণতিতে সে অনন্তকালের নিমিত্ত নরকের ভয়াবহ শাস্তি ভোগ করবে৷ শয়তানের একেবারে পতন না হওয়া পর্যন্ত সে লোকদেরকে তার উপাসক তৈরী করার দ্বারা অবিরাম ঈশ্বর ও ধার্মিকগণের বিরোধিতা করবে৷ সে ঈশ্বর এবং তাঁর সাধুগণের নিন্দা করে বাইবেলে এই পতিত দূতকে শয়তান বা মন্দ আত্মা এবং নাগ বা পুরাতন সর্প বলা হয়েছে (প্রকাশিত বাক্য ১২:৯)৷
 


পশুটির সংখ্যা ৬৬৬

 
অবশেষে ঈশ্বর শয়তানকে কারাগারে বন্দী করবেন৷ কিন্তু নরকে অবরুদ্ধ হওয়ার পূর্বে শয়তান লোকদেরকে ৬৬৬ চিহ্নটি অর্থাৎ তার নাম ও সংখ্যা তাদের ডান হাত বা কপালে গ্রহণ করতে বাধ্য করবে৷ যার এই চিহ্ন থাকবে না সে তার সমস্ত ক্রয় বিক্রয় রোধ করবে৷
৭ সংখ্যাটি একটি পূর্ণাঙ্গ সংখ্যা, যা ঈশ্বরকে ইঙ্গিত করে৷ অন্যদিকে, ঈশ্বর তাঁর নিজের অনুরূপ এবং প্রতিমূর্তিতে ষষ্ঠ দিনে মানুষকে সৃষ্টি করেছিলেন, তাই ৬ সংখ্যাটি মানুষকে ইঙ্গিত করে৷ এখানে ৬৬৬ সংখ্যাটি মানুষকে ত্রিত্ব ঈশ্বর হতে চেষ্টার অহংকারকে প্রকাশ করে৷ ভবিষ্যত খুব দুরে নয়, এই পৃথিবীতে সময় আসছে যখন লোকেরা ৬৬৬ চিহ্নটি গ্রহণ করবে৷
প্রকাশিত বাক্য ১৩ অধ্যায়ে আমাদেরকে বলা হয়েছে যে, দশ জাতি থেকে সাত রাজার উত্থান হবে৷ তাদের মধ্যে মহাশক্তি এবং শয়তান কর্তৃক ক্ষমতা দত্ত রয়েছে, সে এই পৃথিবীকে তার শাসনের অধীন করতে বাধ্য করবে৷ তার মৃত্যুজনক ক্ষতের প্রতিকার এবং আকাশ থেকে আগুন নামানোর মত এইরূপ মহা অলৌকিক কার্য সাধন করে সে পৃথিবীর সমস্ত লোককে তার অনুসরণ করাবে৷
অন্যকথায়, লোকেরা ঈশ্বরকে যতটা অনুসরণ করে শয়তান তাদেরকে দিয়ে তাকে আরো বেশী অনুসরণ করাবে, ফলে অনেক লোক তাকে ঈশ্বররূপে ভজনা করবে৷ সমস্যার সময়ে খ্রীষ্টারী শয়তানের থেকে মহাক্ষমতা লাভ করে দেবতার ন্যায় আবির্ভূত হয়ে পৃথিবী যে কঠিন অর্থনৈতিক সমস্যার সম্মুখীন হবে তা সমাধানের দ্বারা ঈশ্বরের ন্যায় প্রত্যককে তার অনুসরণ করাতে চাইবে৷ পরিনামে শেষ সময়ে শয়তান সরাসরি ঈশ্বরের সাথে প্রতিদন্ধিতা করার চেষ্টার দ্বারা তার আসল রূপ প্রকাশ করবে৷
দানিয়েলের পুস্তকে আমরা যেমন দেখতে পাই যে, যখন মহাক্লেশের প্রথমার্ধ শেষ হবে তখন সে চরম কঠিনতায় রূপান্তরিত হবে৷ এই প্রথমার্ধ সাড়ে তিন বছর স্থায়ী, যে সময়টা হল ভয়ঙ্কর মারী এবং শয়তানের ক্ষমতাপূর্ণ রাজত্বের সময়৷ কিন্তু যখন এই সাড়ে তিন বছর পার হয়ে যাবে, তখন তার চেয়েও আরো ভয়ঙ্কর টর্নেডো এবং যাতনা আসবে৷ এই সময় পৃথিবীর লোকেদের মধ্যে কাজ করার জন্য শয়তানকে ক্ষমতা দত্ত হবে, যারা তার কথা শুনবে না, তাদেরকে সে হত্যা করবে, তার চিহ্ন কার্য দ্বারা অর্থাৎ আকাশ থেকে আগুন নামিয়ে লোকদেরকে প্রতারিত করবে, এবং তাদেরকে দিয়ে ঈশ্বর নিন্দার কাজ করাবে৷
একই সময়ে, খ্রীষ্টারী শয়তান হতে সমস্ত ক্ষমতা লাভ করবে, সে সাধুদের নিন্দা করবে এবং যারা তাকে না মানবে তাদের সবাইকে সে হত্যা করবে৷ ৭-৮ পদ যেমন আমাদেরকে বলে, “আর পবিত্রগণের সহিত যুদ্ধ করিবার ও তাহাদিগকে জয় করিবার ক্ষমতা তাহাকে দত্ত হইল; এবং তাহাকে সমস্ত বংশের ও লোকবৃন্দের ও ভাষার ও জাতির উপরে কর্ত্তৃত্ব দত্ত হইল। তাহাতে পৃথিবী-নিবাসীদের সমস্ত লোক তাহার ভজনা করিবে, যাহাদের নাম জগৎপত্তনের সময়াবধি হত মেষশাবকের জীবন পুস্তকে লিখিত নাই।” যাহোক, এই সময়ে যারা পশুটির ভজনা করতে অস্বীকার করবে তারা নুতন জন্মপ্রাপ্ত ঈশ্বরের লোক ব্যতীত অন্য কেউ নয়, যাদের নাম মেষশাবকের জীবন পুস্তকে লিখিত রয়েছে৷ 
 

সাক্ষ্যমরের মৃত্যুর ঘটনা
 
সাক্ষ্যমরের মৃত্যুর ঘটনাটি হবে এইরকম যে, যে সব সাধুগণ জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাসের মাধ্যমে নুতন জন্ম লাভ করেছে, তারা তাদের বিশ্বাস রক্ষার জন্য এবং শয়তানের ছাব নিতে অস্বীকার করার জন্য মৃত্যুকে আলিঙ্গন করবে৷ অন্যভাবে বলতে গেলে, যখন মহাক্লেশের প্রথম সাড়ে তিন বছর শেষ পর্যায়ে পৌঁছাবে তখন সে মারাত্মক রূপ ধারণ করবে৷ এই সময় ধার্মিকেরা তাদের বিশ্বাসরক্ষার জন্যে সাক্ষ্যমরের মৃত্যুবরণ করতে প্রস্তুত থাকবে৷
যাহোক, যারা যীশুকে তাদের ত্রাণকর্তারূপে বিশ্বাস করলেও জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস করে না এবং এভাবে তাদের পাপের প্রতিকার লাভ করে নি এবং যাদের হৃদয়ে এখনও পাপ রয়েছে, তারা শয়তানের দলভুক্ত হবে এবং ফলে তার কাছে আত্মসমর্পণ করবে৷ কেননা যারা যীশুকে বিশ্বাস করে, কিন্তু নুতন জন্ম প্রাপ্ত হয়নি, অন্তরে পবিত্র আত্মা নেই, শেষকালে শয়তানের চাপ যখন চরম পর্যায়ে পৌঁছাবে, তখন তারা শয়তানের কাছে আত্মসমর্পণ করবে, তাদের ডান হাত অথবা কপালে তার চিহ্ন গ্রহণ করবে এবং ঈশ্বরের ন্যায় তার আরাধনা করবে৷
আমরা অবশ্যই স্পষ্টভাবে জানি যে, যারা পাপের ক্ষমা পেয়েছে, একমাত্র তারাই এই সময় শয়তানকে ভজনা করবে না৷ আমাদেরকে আরো বুঝতে হবে যে, ঈশ্বর আমাদেরকে স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, যারা পশুটির কাছে আত্মসমর্পণ করবে, শয়তানের সাথে তিনি তাদেরকেও অগ্নি ও গন্ধকের হ্রদে নিক্ষেপ করবেন৷
৯-১০ পদে আমাদেরকে বলা হয়েছে, “যদি কাহারও কান থাকে সে শুনুক৷ যদি কেহ বন্দিত্বের পাত্র থাকে, সে বন্দিত্বে যাইবে; যদি কেহ খড়গ দ্বারা হত্যা করে, তাহাকে খড়গ দ্বারা হত হইতে হইবে। এস্থলে পবিত্রগণের ধৈর্য্য ও বিশ্বাস দেখা যায়।” এই সময়ে খ্রীষ্টারী এবং তার অনুসারীগণ ধার্মিকদের উপর মহানির্যাতন আনয়ন করবে, তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে এবং তারা তাদের খড়গ দ্বারা ধার্মিকদেরকে মৃত্যুতে সমর্পণ করবে৷ যাহোক, এখানে আমাদেরকে নির্দিষ্টভাবে যা বুঝতে হবে তা হল, যারা ধার্মিকদেরকে নির্যাতন ও হত্যা করবে, ঈশ্বর অবশ্যম্ভাবীভাবে আমাদের সেই সব শত্রুদের উপরে প্রতিশোধ নেবেন৷
এইরূপে ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞায় বিশ্বাসের দ্বারা সাধুগণ অবশ্যই তাদের নির্যাতন ও মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে গমন করবে৷ ঈশ্বর কি আমাদের সাধুগণকে তাদের জন্য সমুচিত প্রতিফল আনয়ন করবেন না, আমাদের হতাশাব্যঞ্জক বিচারের দৃষ্টিভঙ্গি আমরা কিভাবে বন্ধ রাখতে পারি? কিন্তু যে শত্রুরা আমাদের ক্ষতি করে ঈশ্বর তাদের উপরে প্রতিশোধ নিতে আমাদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছেন, আমাদের মৃত্যু মূল্যহীন হবে না৷ যারা ধার্মিকদেরকে পীড়ন ও দমন করে রাখে, ঈশ্বর অবশ্যই তাদের উপরে প্রতিশোধ নেবেন এবং ধার্মিকদেরকে তাদের পুনরুত্থান, রূপান্তর, ও মেষশাবকের বিবাহ ভোজে অংশগ্রহণ করতে পরিচালিত করবেন এবং তাদেরকে সহস্র বছর প্রভুর সাথে রাজত্ব করতে এবং অনন্তকাল তাঁর সাথে বাস করতে দেবেন৷ আমরা সবাই এটাতে বিশ্বাস করি এবং এর জন্য প্রত্যাশা করি৷ অতএব, আমাদের প্রভু যথার্থ ঈশ্বর যিনি আমাদের সকল প্রত্যাশা পূর্ণ করবেন৷