< ইফিষীয় ২:১৪-২২ >
“কেননা তিনিই আমাদের সন্ধি; তিনি উভয়কে এক করিয়াছেন, এবং মধ্যবর্ত্তী বিচ্ছেদের ভিত্তি ভাঙ্গিয়া ফেলিয়াছেন, শত্রুভাবে, বিধিবদ্ধ আজ্ঞাকলাপরূপ ব্যবস্থাকে, নিজ মাংসে লুপ্ত করিয়াছেন; যেন উভয়কে আপনাতে একই নূতন মনুষ্যরূপে সৃষ্টি করেন, এইরূপে সন্ধি করেন; এবং ক্রুশে শত্রুভাবে বধ-করণ পূর্বক সেই ক্রুশ দ্বারা এক দেহে ঈশ্বরের সহিত উভয় পক্ষের মিলন করিয়া দেন। আর তিনি আসিয়া “দূরবর্ত্তী” যে তোমরা, তোমাদের কাছে সন্ধির, ও নিকটবর্ত্তীদের কাছেও সন্ধির সুসমাচার জানাইয়াছেন। কেননা তাঁহারই দ্বারা আমরা উভয় পক্ষের লোক এক আত্মায় পিতার নিকটে উপস্থিত হইবার ক্ষমতা পাইয়াছি। অতএব তোমরা আর অসম্পর্কীয় ও প্রবাসী নহ, কিন্তু পবিত্রগণের সহপ্রজা এবং ঈশ্বরের বাটির লোক। তোমাদিগকে প্রেরিত ও ভাববাদীগনের ভিত্তিমূলের উপরে গাঁথিয়া তোলা হইয়াছে; তাহার প্রধান কোনস্থ প্রস্তর স্বয়ং খ্রীষ্ট যীশু। তাঁহাতেই প্রত্যেক গাঁথুন সুসংলগ্ন হইয়া প্রভুতে পবিত্র মন্দির হইবার জন্য বৃদ্ধি পাইতেছে; তাঁহাতে আত্মাতে ঈশ্বরের আবাস হইবার নিমিত্ত তোমাদিগকেও এক সঙ্গে গাঁথিয়া তোলা হইতেছে।”
ঈশ্বর থেকে মানুষকে কি বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে?
তার পাপ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে
দত্তক সন্তান দারিদ্রতার কারণ
কোরীয় যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর এই পর্যন্ত অর্ধ শতাব্দি অধিক্রান্ত হয়েছে। কোরিয়ান লোকেরা ভয়ানকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিল। কোরিয়ান যুদ্ধের ফলে, অনেক ছোট ছেলেমেয়ে বিদেশে দত্তক দেয়া হয়েছিল। এমনকি জাতিসংঘের সৈন্যরা কোরিয়াতে এসেছিল এবং আমাদেরকে ঐ সময় অতিশয় সাহায্য করেছিল, কিন্তু অনেক সৈন্যরা গত হওয়ার পর অনেক ছেলেমেয়েরা পিতৃহীন হয়েছিল।
অনেক জাতিসংঘের সৈন্য যখন তারা দেশে ফিরছিল তখন তাদের স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের তাদের পরিবারের কাছে রেখে গিয়েছিল। এই ছেলেমেয়েদের অনেককেই তাদের মায়েরা শিশু আশ্রমে পরিত্যাগ করেছিল এবং তখন তাদের দত্তক গ্রহণ করে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। এটা ছিল অত্যন্ত সৌভাগ্যর বিষয় যে এই ছোট ছেলেমেয়েরা পালক পিতা পেয়েছিল এবং খুব ভালভাবে বেড়ে উঠেছিল।
এই দত্তক ছেলেমেয়েরা উপলব্দি করতে পেরেছিল যে, তাদের পিতা মাতা এবং তাদের প্রতিবেশী থেকে তাদের দেখতে সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং তারা বেশ বয়স্ক,এবং তারা শিখেছিল যে, কোরিয়া নামক অনেক দূর দেশ থেকে দত্তক হয়েছিল। কেন আমার পিতামাতা আমাকে পরিত্যাগ করল? তারা কি আমাকে এই দূর দেশে পাঠিয়েছিল কারণ তারা আমাকে ঘৃনা করত? তাদের ছোট মনে এই ছেলেমেয়েরা বুঝতে পারত না ঠিক কি ঘটেছিল? তাদের কৌতুহল ও ঘৃনা তাদের আসল পিতামাতার প্রতি বৃদ্ধি পেতে থাকল ও তাদের সহিত মিলিত হবার আকাঙ্ক্ষা তিরোহিত হতে থাকল।
“আমি বিস্মিত হলাম আমার পিতামাতা কেমন ছিল ? তারা কিভাবে আমাকে পরিত্যাগ করতে পারল? আর এটা করতে পারল কারণ তারা আমাকে ঘৃনা করত?” না, এর জন্য একটা সম্ভাব্য কারণ আছে।তারা সম্ভবত অনেক ভুল বুঝেছিল এবং মাঝে মাঝে অনেক ঘৃনা অনুভব করত। আর অন্য সময় তারা একাধিক বিষয় চিন্তা করতে দৃঢ় সংকল্প ছিল না। তারা পূর্বে এ বিষয়ে সতর্ক ছিল, সময় যেতে থাকল এবং ছেমেমেয়েরা বেড়ে উঠতে লাগল।তারা বিবাহিত হল, সন্তানাদি হল এব তাদের নিজেদের পরিবার গঠিত হল।
আমি একটি স্থানীয় টিভি নেটওয়ার্কের প্রোগ্রামের মাধ্যমে আমি এই সব ছেলেমেয়েদের বিষয়ে উৎসাহী হয়ে উঠছিলাম। এই প্রোগ্রামে একজন টিভি সাংবাদিক জার্মানীতে বসবাসকারী একজন মহিলাম সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন, মহিলা ছিলেন ঐ সময় বিশ বছর এবং তিনি থিওলজি অধ্যায়ন করছিলেন, প্রথমত মহিলা সাংবাদিকদের খুব বেশী এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করছিলেন, কারণ তিনি ছিলেন দত্তক। সাংবাদিক তাকে বুঝিয়ে নিশ্চিত করলেন যে, সাক্ষাৎকার বিদেশে দত্তক গ্রহণের ধারাকে প্রধান অবলম্বন হিসাবে সাহায্য করবে। মহিলা সম্মত হলেন।
একজন সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল, যদি আপনার প্রকৃত পিতামাতার সঙ্গে সাক্ষাত করতে পারেন তাহলে আপনি কি বলবেন? এ বিষয়ে আপনার সবচেয়ে কৌতুহল কি? মহিলা উত্তর করলেন, “আমি ঠিক বুঝতে পারছি না, কেন তারা আমাকে দত্তক প্রদান করলেন। যদি তারা আমাকে ঘৃনা করে সেটা আমি তাদেরকে জিজ্ঞেস করতে চাই।”
তার জন্মদাত মা টিভি সম্প্রচারে মহিলাটির সাক্ষাৎকার দেখেছিলেন, এবং বলেছিলেন যে, তিনি তার কন্যার সঙ্গে সাক্ষাত করতে চান। এই কারণে দুইজন সাক্ষাত করতে এসেছিলেন।
মা খুব ভোরে বিমান বন্দরে চলে গেলেন এবং তার কন্যার আসবার অপেক্ষায় ছিলেন। যখন একজন যুবতী মহিলা বহিরাগমন থেকে বের হচ্ছিলেন, তার মা কেবল দাঁড়িয়েছিলেন এবং কাঁদছিলেন।
এই দুইজন কলনও মুখোমুখি সাক্ষাত করেননি। টিভিতে মা তার ঐ বেড়ে ওঠা মেয়েকে প্রথম দেখেছিলেন। যদিও তারা ভিন্ন ভাষায় কথা বলছিলেন, তারা আন্তরিকভাবেই বলছিলেন, এবং প্রবল আবেগের মাধ্যমে তারা দৃষ্টি বিনিময় করলেন। তারা পরস্পর মুখ স্পর্শ করলেন, যখন মা তার কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছিলেন। তারা সকলেই কাঁদছিলেন এবং বার বার বলছিলেন তিনি খুব দুঃখিত।
মা তার কন্যাকে ঘরে আনলেন এবং তারা এক সঙ্গে খেয়েছিলেন। অবশ্যই, মেয়ে কেবল জার্মান ভাষায় কথা বলছিলেন এবং মা কেবল কোরিয়ান ভাষায়, তারা মৌখিকভাবে সংবাদাদি আদান প্রদান করছিলেন। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা হল তারা ছিল মা ও কন্যা, তারা নিজেদের বুঝবার মত তৈরী করছিলেন। তাদের অনেক নির্বাক মুহূর্ত ছিল এবং তারা আকার ইঙ্গিতের মাধ্যমে তাদের মনের ভাব বিনিময় করছিলেন, তারা চোখ ও মন দিয়ে কথা বলছিলেন এবং পরস্পর মুখ স্পর্শ করছিলেন।
প্রসঙ্গক্রমে সে জার্মানীতে ফিরে আসে, কন্যা জানত যে, তার জন্মদাতা মা তাকে ভালবাসে। সাংবাদিক তার চলে যাওয়ার পূর্বে পুনরায় সাক্ষাৎকার নিতে চাইলেন। “আমার আর জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন নেই কেন আমার মা আমাকে দত্তক দিয়েছিলেন। আমার মা এখনও গরীব। এই দেশের সম্পদশালী লোকেরা এত ধনী যে তারা বিদেশী গাড়ী চালায়, কিন্তু আমার মা এখনও দরিদ্রতার মধ্যে বাস করছেন।” তিনি বলে চললেন, “যদিও আমি ঐ প্রশ্ন মাকে জিজ্ঞেস করতে পারলাম না এবং তার কাছ থেকে কোন উত্তরও পেলাম না, আমি দেখতে পেলাম যে, তিনি দরিদ্রতা থেকে বাঁচাতে দূরে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। এই কারণে আমি তাকে ঐ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন অনুভব করি নাই, এবং সব সন্দেহ ও ঘৃনা এখন চলে গেছে। ”
লোকেরা তাদের অন্তরের পাপের কারণে ঈশ্বর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়
কেন আমরা ঈশ্বর থেকে পৃথক হই এবং কেন আমরা তাঁর নিকটবর্ত্তী হতে পারি না? মহিলা যিনি দত্তক গ্রহণের শিক্ষা পেয়েছিলেন যে, তার জন্মদাতা মা তাকে দারিদ্রতার হাত থেকে রক্ষা করার জন্যই পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। ঈশ্বরের সত্য কি একই? ঈশ্বর আমাদিগকে তাঁর আপন প্রতিমূৰ্ত্তিতে সৃষ্টি করেছিলেন। তাঁর থেকে কি আমাদের পৃথক করতে পারেন? উত্তর এই যে, শয়তান মানুষকে পাপ করতে প্রলুব্ধ করে এবং পাপ তাকে ঈশ্বর থেকে পৃথক করে।
মূলত ঈশ্বর আপন প্রতিমূর্ত্তিতে মানুষ সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁর সৃষ্টিকে তিনি গভীরভাবে প্রেম করেন। মানুষকে ঈশ্বরের প্রেমের সামগ্রী হিসাবে সৃষ্টি করেছিলেন এবং অন্য সৃষ্টি অপেক্ষা অনেক শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করেছিলেন। যা হোক, একজন পতিত দূত নাম শয়তান ঈশ্বর থেকে মানুষকে পৃথক করেছিল। শয়তান মানুষকে ঈশ্বরের বাক্যে বিশ্বাস না করতে প্রলুব্ধ করেছিল, এবং তাকে সদসদ্, জ্ঞানদায়ন বৃক্ষের ফল খেতে উৎসাহিত করেছিল।
মানুষ এভাবেই তার পাপের কারণে ঈশ্বর থেকে পৃথক হয়েছিল। মানুষ এভাবে ঈশ্বরের অবাধ্য হয়েছিল। মানুষ জীবন বৃক্ষের ফল ভোজন করে নাই, যা অনন্ত জীবন দেয়, যা ঈশ্বরের অনুমোদিত, কিন্তু নিষিদ্ধ ফল খেয়েছিল যা তাকে সদসদ্, জ্ঞান দিয়েছিল। এর ফলে মানুষ ঈশ্বর থেকে পৃথক হয়েছিল।
পূর্বে ঈশ্বরের প্রেমের বাধাজনক মানুষের অবাধ্যতা এবং ঔদ্ধত্য তাঁর থেকে মানুষকে পৃথক করেছিল। তার অন্তরে পাপ বাস করার কারণে মানুষ অবশেষে ঈশ্বর থেকে বিচ্ছিন্ন হল। ঐ কারণে দীর্ঘকাল যাবৎ মানুষ ঈশ্বর থেকে পৃথকভাবে বাস করছিল এবং ক্লেশ ভোগ করছিল। কেন সৃষ্টির পর ঈশ্বর আমাদিগকে পরিত্যাগ করলেন, কেন তিনি আমাদিগকে পাপে দায়বদ্ধ হতে দিলেন? কেন তিনি আমাদিগকে দূবল করে তৈরী করার পর নরকে পাঠালেন? এটা অধিক ভাল হত যদি তিনি আমাদিগকে প্রথম স্থানে তৈরী না করতেন। আমাদের নূতন জন্মের পূর্বে আমার অনেক প্রশ্নের মধ্যে বেঁচে ছিলাম যেমন কৌতুহল, সন্দেহ এবং ঘৃনা।
যখন আমি টিভি অনুষ্ঠানে দত্তক মহিলাকে দেখছিলাম, আমি উপলব্দি করলাম যে, মানুষ ও ঈশ্বরের মধ্যে যে সম্পর্ক, সে ও তার মায়ের মধ্যে একই সম্পর্ক বিদ্যমান। কোন দুর্দশা, ভুল বুঝাবুঝি, অভিশাপ বা যে কোন প্রকারের পাপ কোন বিষয়বস্তু ছাড়া ঈশ্বর থেকে মানুষকে পৃথক করতে পারে। আমি আরও বুঝতে পারলাম যে, ঈশ্বর ও মানুষের মধ্যে সম্পর্কের ভিত্তি হল প্রেম, তথাপি এটা ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টির জন্য সম্ভব ছিল।
মা তার মেয়েকে ঘৃনা বশত পাঠিয়ে দেন নাই। সেইরূপে ঈশ্বর পাপের কারণে মানুষকে ঘৃনা বশত তাঁর নিজের কাছ থেকে পৃথক করেন নাই। মানুষকে ঘৃনা করার ঈশ্বরের কোন কারণ নেই এবং ঈশ্বরকে ঘৃনা করার মানুষের কোন কারণ নেই। আমরা পরস্পরকে প্রেম করি। মানুষ ঈশ্বর হতে পৃথক থেকে শয়তানের চাতুরীক্রমে পাপী মানুষে পরিণত হয়।
ঈশ্বর আমাদিগকে যীশুর মাধ্যমে সমাদরের সহিত গ্রহণ করেছেন
“কিন্তু এখন খ্রীষ্ট যীশুতে, পূর্ব্বে দূরবর্ত্তী ছিলে যে তোমরা, তোমরা খ্রীষ্টের রক্ত দ্বারা নিকটবর্ত্তী হইয়াছ। কেননা তিনিই আমাদের সন্ধি; তিনি উভয়কে এক করিয়াছেন, এবং মধ্যবর্ত্তী বিচ্ছেদের ভিত্তি ভাঙ্গিয়া ফেলিয়াছেন, শত্রুভাবে, বিধিবদ্ধ আজ্ঞাকলাপরূপ ব্যবস্থাকে, নিজ মাংসে লুপ্ত করিয়াছেন; যেন উভয়কে আপনাতে একই নূতন মনুষ্যরূপে সৃষ্টি করেন, এইরূপে সন্ধি করেন; (ইফিষীয় ২:১৩-১৫)। যোহনের দ্বারা যীশু বাপ্তাইজিত হয়ে আজ্ঞাকলাপে ব্যবস্থা দ্বারা তিনি জগতের সমস্ত পাপ মোচন করেছেন। তারপর তিনি ক্রুশে তাঁর রক্ত সেচন করেছেন এবং মানুষকে তার পাপ থেকে রক্ষা করেছেন এবং তাকে ঈশ্বরের দ্ধারা সমাদর করেছেন ঈশ্বর এখন তাদের সমাদর করেন যারা তাঁর দ্বারা পরিস্কৃত হয়েছে। আপনি কি জল ছাড়া পৃথিবীকে কল্পনা করতে পারেন ? বেশী আগে নয়, আমি ইঞ্চন শহরে একটি বাইবেল মিটিং-এ যোগদান করেছিলাম কোরিয়ার সবচেয়ে বড় বন্দর যেখানে ঐ সময়ে কয়েকদিন যাবত ট্যাপের জল খাওয়া যাচ্ছিল না এবং আমি ভাবলাম ‘জল ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না।’
যদি ঈশ্বর এক মাসের জন্য এই পৃথিবীকে জল বিহীন করতেন, তাহলে শহরগুলো দুর্গন্ধ, নোংরা ও সমস্ত ব্যাপ্তিশীল তৃষ্ণার কারণে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে। আমরা জলের মূল্য বুঝি যা ঈশ্বর আমাদিগকে দিয়েছেন। জল যেমন মানুষের সম্পূর্ণ প্রয়োজনীয় বিষয়, যর্দ্দন নদীতে যোহনের কাছে যীশুর বাপ্তিস্ম যা ছিল সমান অপরিহার্য্য।
যদি যীশু যোহনের দ্বারা বাপ্তাইজিত হতে এই জগতে না আসতেন তাহলে কিভাবে যীশুতে বিশ্বাসীগণ পাপের ক্ষমা গ্রহণ করতেন? ঠিক যেমন মানুষ জল ছাড়া বাঁচতে পারে না, তেমনি এই পৃথিবীর। প্রত্যেকে তাদের পাপে মারা যেতন যদি যোহন যীশুকে বাপ্তাইজিত না করতেন।
যাহোক, যেহেতু যীশুর বাপ্তিস্ম আমাদের সমস্ত পাপভার তুলে নিয়েছে, আমরা এখন জ্ঞানে অতি সাহসীবোধ করছি। যা আমাদের অন্তরকে পরিস্কৃত করেছে এবং আমরা পরিত্রাণের দ্বারা সৌভাগ্যবান। যীশুর বাপ্তিস্ম আমাদের চুড়ান্ত বিশ্বাস। তাছাড়া তাঁর বাপ্তিস্ম অন্তরে বাসকারী পবিত্র আত্মা গ্রহণের জন্য সম্পূর্ণ প্রয়োজনীয়।
যীশুর একজন অন্যতম শিষ্য পিতর বলেন, “এর এখন উহার প্রতিরূপ বাপ্তিস্ম - অর্থাৎ মাংসের মালিন্য ত্যাগ নয়, কিন্তু ঈশ্বরের নিকটে সৎসংবেদের নিবেদন—তাহাই যীশু খ্রীষ্টের পুনরুত্থান দ্বারা তোমাদিগকে পরিত্রাণ করে” (১ পিতর ৩:২১)। পিতরের বিতৃতিতে বলা হয়েছে যে, যীশু যোহন বাপ্তাইজকের দ্বারা বাপ্তাইজিত হলেন। এবং আমাদের পাপ থেকে রক্ষা করার জন্য তাঁর রক্ত সেচন করলেন। যীশুর বাপ্তিস্ম যা সত্য সুসমাচার দ্বারা পৃথিবীর সমস্ত পাপ ধৌত করেছেন।
এখন আমরা যাত্রা ৩০:১৭-২১ পদে লিখিত অংশে প্রক্ষালন পাত্র সম্পর্কে দেখি। “আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি প্রক্ষালন কার্য্যের জন্য পিত্তলময় এক প্রক্ষালন পাত্র ও তাহার পিত্তলময় খুরা প্রস্তুত করিবে; এবং সমাগম-তাম্বুর ও বেদীর মধ্যস্থানে রাখিবে, ও তাহার মধ্যে জল দিবে। হারোণ ও তাহার পুত্রগণ তাহাতে আপন আপন হস্ত ও পদ ধৌত করিবে। তাহারা যেন না মরে, এই জন্য সমাগম-তাম্বুতে প্রবেশকালে জলে আপনাদিগকে ধৌত করিবে;কিম্বা পরিচর্য্যা করণার্থে, সদাপ্রভুর উদ্দেশে অগ্নিকৃত উপহার দগ্ধ করণার্থে বেদীর নিকটে আগমন কালে আপন আপন হস্ত ও পদ ধৌত করিবে, তাহারা যেন না মরে এই জন্য করিবে; ইহা তাহাদের পক্ষে চিরস্থায়ী বিধি, পুরুষানুক্রমে হারোণ ও তাহার বংশের নিমিত্ত।”
সমাগম তাম্বুর মধ্যে পিত্তলময় প্রক্ষালন পাত্র ছিল, যা সমাগম তাম্বু ও বেদীর মাঝখানে রাখবে, এবং সেখানে প্রক্ষালনের জন্য সর্বদা জল থাকবে। যদি এই প্রক্ষালন পাত্র না থাকত তাহলে কেমন নোংরাভাবে যাজকগণ ঐসব বলি উৎসর্গ করত।
কত রক্ত ও নোংরা যাজকগণ ঐসব বলি উৎসর্গ করেন, যারা প্রতিদিন অসংখ্য বলি উৎসর্গ করেন এবং পাপার্থক বলির উপরে হস্তার্পণ করেছিলেন এবং তখন তাদেরকে হত্যা করেছিলেন? যদি সমাগম তাম্বুতে প্রক্ষালন পাত্র না থাকত, যাজকগণ খুব নোংরা হয়ে যেতেন।
এই কারণে ঈশ্বর তাদের জন্য প্রক্ষালন পাত্র তৈরী করলেন, সুতরাং তারা ধৌত হাতে তাঁর কাছে আসতে পেরেছিল। পাপীরা তাদের পাপগুলি পাপার্থক বলির উপরে হস্তার্পণের দ্ধারা স্থানান্তর করেন এবং তখন যাজক তাদের পক্ষে ঈশ্বরের কাছে বলি উত্সর্গ করেন। ঈশ্বর তাম্রময় জলের প্রক্ষালন পাত্র প্রস্তত করেন, সুতরাং যাজকগণ পবিত্র স্থানে ঢুকবার অধিকার পেল। সুতরাং তারা জলে ধৌত করতে পারতেন অন্যথায় মারা যেতেন। এমনকি একজন যাজক পবিত্র স্থানে প্রবেশ করতে পারতেন না যখন একটি পশুর রক্তে রঞ্জিত হতেন। এই কারণ যাজক প্রক্ষালন পাত্রের জলে তার সমস্ত ময়লা প্রক্ষালন করতেন ও ঈশ্বরের নিকটবর্ত্তী হতেন যেন লোকদের জন্য বলি উৎসর্গ করেন।
যীশুর বাপ্তিস্ম জগতের সমস্ত পাপ ধৌত করেছিল
যর্দ্দন নদীতে যোহন কর্ত্তৃক যীশুর বাপ্তিস্মের মাধ্যমে জগতের সমস্ত পাপ তাঁর উপরে স্থানান্তরিত হয়েছিল। তাঁর জলে সম্পূর্ণ নিমজ্জন তাঁর মৃত্যুর প্রতীক এবং তাঁর জল থেকে উঠে আসা তাঁর পুনরুত্থানের প্রতিনিধিত্ব করে। অন্যকথায়, যীশু যোহন কর্ত্তৃক বাপ্তাইজিত হয়ে জগতের সমস্ত পাপ তুলে নিয়েছেন, ক্রুশে মরে পাপের দেনা পরিশোধ করেছেন, তাঁর মৃত্যু আমাদের পাপের জন্য পরিশোধ স্বরূপ এবং তাঁর পুনরুত্থান আমাদিগকে অনন্ত জীবন দিয়েছে।
যদি আমরা বিশ্বাস না করি যে, যীশু তাঁর বাপ্তিস্মের মাধ্যমে আমাদের সমস্ত পাপ তুলে নিয়েছেন তাহলে আমাদের অন্তর পাপে পূর্ণ থাকে। সে কারণে কিভাবে আমরা ঈশ্বরের নিকটবর্ত্তী হতে পারি? পাপ ক্ষমার সুসমাচার কোন সাম্প্রদায়িক মতবাদ নয় কিন্তু ঈশ্বরের সত্য।
আমরা প্রকৃত জ্ঞান ব্যাতিত বিশ্বাস করতে পারি না, অন্যকথায়, আমরা পৃথিবীকে জয় করতে পারি না যদি আমরা বাস্তবিক যোহনের দ্বারা যীশুর বাপ্তাইজিত হওয়ার বিষয যত্ন না করি। সকল জীবিত প্রানী বেঁচে থাকার জন্য তাদের জলের প্রয়োজন, আমাদের পাপের ক্ষমার প্রয়োজন এবং যীশুর বাপ্তিস্মের জল দ্বারা আমরা বিশ্বাসে বেঁচে থাকি এবং স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করি। যীশু বাপ্তাইজিত হলেন, ক্রুশে মরলেন এবং আমাদেরকে পাপ থেকে রক্ষার জন্যে পুনরুত্থিত হলেন। এই হল জল ও আত্মার সুসমাচার যা আমাদের সমস্ত অন্তর দিয়ে বিশ্বাস করা আবশ্যক।
যদিও যীশু মৃত্যুর জন্য ক্রুশারোপিত হয়েছিলেন, তিনি শাস্তির যোগ্য কিছুই না করেও শাস্তি পেলেন। তিনি এই জগতে এসেছিলেন আমাদের সমস্ত পাপ ধৌত করতে, ৩০ বছর বয়সে বাপ্তাইজিত হলেন এবং ৩৩ বছর বয়সে তাঁর ক্রুশীয় মৃত্যুর মাধ্যমে আমাদের মুক্তিদাতা হলেন। কোন ব্যাপার নয় ঈশ্বর মানুষকে তাঁর সন্তান করতে চেয়েছিলেন কিন্তু আমরা কেমন দূবল ও পাপে পূর্ণ ছিলাম। সে কারণে যীশু বাপ্তাইজিত হলেন। ঈশ্বর আমাদিগকে পাপ ক্ষমা দিলেন এবং একই সময়ে পবিত্র আত্মা দান করলেন।
“যদি কারো জল ও আত্মা হইতে নূতন জন্ম না হয়, সে ঈশ্বরের রাজ্য দেখিতেও পারে না, ইহাতে প্রবেশ করতেও পারে না” ( যোহন ৩:৩-৫ )। আপনি জ্ঞান হোন ও বিশ্বাস করুন যে, যীশু আমাদের সমস্ত পাপ ধৌত করার জন্য বাপ্তাইজিত হয়েছিলেন। এমনকি যদি কোন খ্রীষ্টিয়ান নূতন জন্ম প্রাপ্ত হয় যদি সে সত্য বিবেচনা না করে যে, যীশু খ্রীষ্ট তাঁর বাপ্তিস্মের মাধ্যমে জগতের সমস্ত পাপ তুলে নিয়েছেন, তার অন্তর শীঘ্রই মলিন হয়। আমরা দেহধারী মানুষ, আমাদের দৈনন্দির জীবনে আমরা পাপ দ্বারা মলিন হতে বাধ্য। সে কারণে আমরা সর্বদা বিশ্বাস দ্বারা বেঁচে থাকি, যীশুর বাপ্তিস্ম, তাঁর রক্ত ও তাঁর পুনরুত্থান বিবেচিত। এই বিশ্বাস আমাদের স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ না করা পর্যন্ত ধরে রাখবে।
যীশুর আর কোন মনোনয়ন ছিল না কিন্তু বাপ্তাইজিত হলেন এবং আমাদের পাপের জন্য মরলেন, সুতরাং আমাদের তদ্রুপ করার জন্য বিশ্বাস করা আবশ্যক সুতরাং তিনি আমাদের পরিত্রাণ আনয়ন করেছেন। আমাদের এই সুন্দর সুসমাচারে বিশ্বাস করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই যা পৃথিবীকে সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত করেছেন।
আমরা প্রভুর ধন্যবাদ করি যে, তিনি আমাদিগকে জল ও আত্মা সুসমাচার দিয়েছেন। ঈশ্বর আমাদিগকে তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ দান তার অদ্বিতীয় পুত্রকে তাঁর বাপ্তিস্ম ও রক্তের মাধ্যমে আমাদেরকে রক্ষা করার জন্য দিয়েছেন।
কারণ আমরা যেন ঈশ্বরের নিকটবর্ত্তী না হই এবং তাঁর থেকে পৃথক হয়ে জীবন যাপন করি, আমাদের অন্তরে পাপ রয়েছেন।যীশু যোহন কর্ত্তৃক বাপ্তাইজিত হয়ে জগতের সমস্ত পাপ তুলে নিয়েছেন।আর ঈশ্বর ও মানুষের বিদ্বেষ সৃষ্টিকারী দেওয়াল ভেঙ্গে দিয়েছেন। মানুষ ও ঈশ্বরের মধ্যে সম্পর্ক তাঁর রক্তে ও বাপ্তিস্মের দ্বারা পূর্বের অবস্থানে ফিরিয়ে এনেছেন। তাঁর এই দানের জন্য আমরা তাঁকে ধন্যবাদ দিই। বাস্তব পিতামাতার দৃষ্টি থেকে তাদের প্রকৃত পিতামাতার দিকে তাদের সন্তান বড় হোক। কিন্তু এটা ছিল ঈশ্বরের অতুলনীয় প্রেম, যার দ্বারা যীশু আমাদের পাপীদের রক্ষা করলেন। যীশুর বাপ্তিস্ম ও রক্ত উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ। যদি পৃথিবীতে কোন জল না থাকত, কোন জীবন্ত প্রাণী বেঁচে থাকতে পারত? যীশুর বাপ্তিস্ম ব্যাতিত কেউই তাঁর অন্তরে পাপ ব্যাতিত থাকত না। যদি যীশু বাপ্তাইজিত না হতেন এবং যদি ক্রুশের উপরে না মরতেন, কেউই পাপের ক্ষমা পেত না। সৌভাগফ্রবশতঃ যীশু বাপ্তাইজিত হলেন এবং আমাদের জন্য অবশেষে বলিকৃত হলেন যদিও আমরা দীন ও ভ্রান্ত ছিলাম আমরা তাঁর বাপ্তিস্ম ও ক্রুশীয় রক্তে বিশ্বাস দ্বারা পবিত্র আত্মা গ্রহণ করতে পেরেছি।
লোকেরা যারা যীশু খ্রীষ্টে বাপ্তিস্ম ও ক্রুশীয় রক্তে বিশ্বাস করে তারা ঈশ্বরের নিকটবর্ত্তী হতে পারে,প্রার্থনা ও তাঁর প্রশংসা করতে পারে। এখন আমরা প্রভুর প্রশংসা করতে ও তাঁর আরাধনা করতে সমর্থ কারণ আমরা তাঁর সন্তান হয়েছি। এই হল ঈশ্বরের অনুগ্রহ ও তাঁর আশীর্বাদ। যীশুর বাপ্তিস্মের সুসমাচার ও তাঁর ক্রুশীয় রক্ত সত্যিই বিস্ময়কর। আমরা সকলে পরিত্রাণ গ্রহণ করতে পারি এবং এই সুন্দর সুসমাচারের দ্বারা অন্তরে বাসকারী পবিত্র আত্মা গ্রহণ করতে পারি।