Search

শিক্ষা

বিষয় ৩: জল ও আত্মার সুসমাচার

[3-1] শাশ্বত মুক্তি (যোহন ৮:১-১২ পদ)

শাশ্বত মুক্তি
(যোহন ৮:১-১২ পদ)
“পরে তাহারা প্রত্যেকে আপন আপন গৃহে গেল, কিন্তু যীশু জৈতুন পর্ব্বতে গেলেন। আর প্রত্যূষে তিনি পুনর্ব্বার ধর্ম্মধামে আসিলেন; এবং সমুদয় লোক তাঁহার নিকটে আসিল; আর তিনি বসিয়া তাহাদিগকে উপদেশ দিতে লাগিলেন। তখন অধ্যাপক ও ফরীশীগণ ব্যভিচারে ধৃতা একটা স্ত্রীলোককে তাঁহার নিকটে আনিল, ও মধ্যস্থানে দাঁড় করাইয়া তাঁহাকে কহিল, হে গুরু, এই লোকটা ব্যভিচারে, সেই ক্রিয়াতেই, ধরা পড়িয়াছে। ব্যবস্থায় মোশি এ প্রকার লোককে পাথর মারিবার আজ্ঞা আমাদিগকে দিয়াছেন ; তবে আপনি কি বলেন? তাহারা তাঁহার পরীক্ষা-ভাবেই এই কথা কহিল, যেন তাঁহার নামে দোষারোপ করিবার সূত্র পাইতে পারে। কিন্তু যীশু হেঁট হইয়া অঙ্গুলি দ্বারা ভুমিতে লিখিতে লাগিলেন। তখন তাহারা ইহা শুনিয়া, এবং আপন আপন সংবেদ দ্বারা দোষীকৃত হইয়া, একে একে বাহিরে গেল, প্রাচীন লোক অবধি আরম্ভ করিয়া শেষ জন পর্য্যন্ত গেল; তাহাতে কেবল যীশু অবশিষ্ট থাকিলেন, আর সেই স্ত্রীলোকটি মধ্যখানে দাঁড়াইয়াছিল। তখন যীশু মাথা তুলিয়া, স্ত্রীলোকটি ছাড়া আর কাহাকেও দেখিতে না পাইয়া, তাহাকে কহিলেন, হে নারী, যাহারা তোমার নামে অভিযোগ করিয়াছিল, তাহারা কোথায়? কেহ কি তোমাকে দোষী করে নাই? সে কহিল, না প্রভু, কেহ করে নাই। তখন যীশু তাহাকে বলিলেন, আমিও তোমাকে দোষী করি না; যাও, এখন অবধি আর পাপ করিও না। যীশু আবার লোকদের কাছে কথা কহিলেন, তিনি বলিলেন, আমি জগতের জ্যোতি; যে আমার পশ্চাৎ আইসে, সে কোন মতে অন্ধকারে চলিবে না, কিন্তু জীবনের দীপ্তি পাইবে।”
 
 
যীশু কত পাপ মুছে দিয়েছেন?
জগতের সকল পাপ
 
 যীশু আমাদের শাশ্বত মুক্তি দিয়েছেন। পৃথিবীতে এমন কেউ নেই যে, যীশুকে ত্রাণকর্তা হিসাবে বিশ্বাস করলে মুক্তি পাবে না। তিনি আমাদের সকলকে পাপ থেকে মুক্ত করেছেন। যে পাপী তার পাপের জন্য যন্ত্রণাভোগ করছে, সে বুঝতে পারে না যে, বাপ্তিস্মের মাধ্যমে যীশু তাকে পাপ থেকে মুক্ত করেছেন।
 আমাদের সকলকে পরিত্রাণের সত্য জানতে এবং তাঁতে বিশ্বাস করতে হবে। তাঁর বাপ্তিস্মের মাধ্যমে যীশু আমাদের সকল পাপ তুলে নিয়েছেন। আমাদের পক্ষে বিচারিত হয়ে আমাদের জন্য ক্রুশে মৃত্যুবরণ করেছেন।
 জল ও আত্মার পরিত্রাণে আমাদের সকলকে বিশ্বাস করা উচিত, এটাই পাপ মুক্তির শাশ্বত পথ, যীশুর যে মহাপ্রেম আমাদের ধার্মিকগণিত করেছে, তাতে আমাদের বিশ্বাস করা উচিত। আপনার পরিত্রাণের জন্য যর্দ্দন নদীতে ও ক্রুশে তিনি যা করেছেন তা বিশ্বাস করুন।
 যীশু আমাদের সমস্ত গোপন পাপ জানেন। পাপ সম্বন্ধে অনেকের ভুল ধারনা আছে। তারা মনে করে এমন কিছু পাপ আছে যা কখনই ক্ষমা হবে না। যীশু সব পাপ, প্রত্যেকটি পাপের প্রায়শ্চিত্ত করেছেন।
 পৃথিবীতে এমন কোন পাপ নেই যা তিনি ক্ষমা করেন নি। পৃথিবীর সমস্ত পাপ তিনি ক্ষমা করেছেন, পাপী বলতে কেউ নেই। আপনি কি এমন সুসমাচার জানেন, যা আপনাকে পাপ, এমনকি ভবিষ্যতের পাপ থেকেও আপনাকে মুক্ত করেছে। সেই সুসমাচারে বিশ্বাস করুন, মুক্ত হউন। এবং ঈশ্বরের গৌরবের মধ্যে ফিরে আসুন।
 
 
ব্যভিচারে ধৃত স্ত্রীলোকটি
 
পৃথিবীতে কতজন ব্যভিচার করে?
সকলে
 
 যোহন ৮ অধ্যায়ে ব্যভিচারে ধৃত একজন স্ত্রীলোকের বর্ণনা আছে। তাকে যীশু কিভাবে মুক্ত করলেন সেই বর্ণনা আমরা দেখতে পাই। সে প্রভুর যে অনুগ্রহ পেয়েছিল, সেই অনুগ্রহ আমরা আলোচনা করব। এটা আমরা জানি যে, সকলেই সারাজীবন ধরে ব্যভিচার করে। প্রত্যেক হৃদয় ব্যভিচার করে।
 আমরা এত বেশি এই পাপ করেছি যে, আমরা তা বুঝতে পারছিনা। কেন? কারণ, আমাদের জীবন ব্যভিচারে পূর্ণ। আমি সেই স্ত্রীলোকটির ঘটনার সাথে আমাদের মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম যে, এমন কেউ আছে কিনা যে, ব্যভিচার করে নাই। আমি এমন কাউকে পেলাম না যে, ঐ স্ত্রীলোকটির মত নয়। আমরা সবাই একই রকম। আমরা সবাই একই রকম। আমরা শুধু অভিনয় করি যে, আমরা করি না।
 আপনার কি ধারনা যে আমি ভুল বলছি? না, আমি ভুল বলছি না। বিশ্বস্তভাবেনিজের দিকে তাকান। পৃথিবীর বুকে সকলে এই পাপ করেছে। পথে কোন স্ত্রীলোকের দিকে তাকিয়ে চিন্তার মাধ্যমে এবং কর্মের মাধ্যমে, সব সময় সর্ব স্থানে এই পাপ করেছি।
 তারা উপলব্ধি করে না যে তারা এটা করছে। এমনকি মৃত্যু দিন পর্যন্ত তারা বুঝতে পারে না যে, সারা জীবন অসংখ্য বার তারা ব্যভিচার করেছে। শুধু যারা ধরে পড়ে তারাই নয়, কিন্তু যারা কখনই ধরা পড়ে নাই তারাও। চিন্তার মাধ্যমে এবং কর্মের মাধ্যমে সকলেই এটা করে।এটা কি আমাদের জীবনের একটা অংশ নয়? আপনি কি মর্ম্মাহত? কিন্তু এটা সত্য কথা। আমরা লজ্জা পাই বলে নিরব থাকি। আমি বিশ্বাস করি আজকের দিনে মানুষ সব সময় ব্যভিচার করে কিন্তু তারা সেটা বুঝতে পারছে না। মানুষ আত্মায়ও ব্যভিচার করে। আমরা ঈশ্বরের সৃষ্ট, সারাজীবন বুঝতে পারি না যে, আমরা আত্মায় ব্যভিচার করছি। অন্য দেবতার
উপাসনা করা আত্মিক ব্যভিচার, কারণ প্রভু ঈশ্বরই সমস্ত মানুষের একমাত্র স্বামী।
 ঐ কর্মে ধৃত স্ত্রীলোকটিও আমাদের অন্য সকলের মত মানুষ ছিল, আমাদের মত সেও ঈশ্বরের অনুগহ পেয়ে পাপের মুক্তি পেয়েছিল। কিন্তু কপটা ফরীশীরা তাকে সবার মাঝে দাঁড় করিয়ে তার প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ করছিল, যেন তারা বিচারকের আসনে বসেছিল। তারা তাকে মারতে যাচ্ছিল, তারা উপহাস করছিল, এমন ভাব দেখাচ্ছিল যে তারা নিষ্পাপ, জীবনে কখনও ব্যভিচার করেনি।
 যে সকল খ্রীষ্টিয়ান সন্তানগণ জানে যে, তারা নিজেরাই পাপের স্তুপ, তারা কখনও ঈশ্বরের সাক্ষাতে অন্যের বিচার করে না। বরং তারা জানে যে, সারা জীবন তারা ব্যভিচার করেছে; ঈশ্বরের অনুগহে পাপ থেকে মুক্ত হয়েছে। যারা বুঝতে পারে যে, তারা ব্যভিচার পাপে পাপী, তারা ঈশ্বরের অনুগহে পাপ থেকে মুক্ত হওয়ার উপযুক্ত।
 
 

কে ঈশ্বরের অনুগ্রহ পায়?

 
কে ঈশ্বরের অনুগ্রহ পায়?
অযোগ্য ব্যক্তি

যে ব্যভিচার না করে শুদ্ধ জীবন-যাপন করে সে কি ঈশ্বরের অনুগ্রহ পায়? নাকি যে ব্যভিচার দ্বারা নিজেকে কলুষিত করেছে সে ঈশ্বরের অনুগ্রহ পায়? যে এই পাপ করেছে সে প্রচুররূপে মুক্তির অনুগ্রহ পায়। যে নিজেকে সাহায্য করতে পারে না, যে দূর্বল বা অসহায়, সেই মুক্তি পায়। সে ঈশ্বরের অনুগ্রহ পায়।
যারা মনে করে তাদের কোন পাপ নেই, তারা মুক্তি পেতে পারে না। মুক্ত হাওয়ার মত কিছু না থাকলে, কিভাবে তারা মুক্তি পাবে?
 ব্যভিচারে ধৃত স্ত্রীলোকটিকে ধর্মগুরু এবং ফরীশীরা টেনে যীশুর কাছে নিয়ে এল, তাদের মাঝখানে তাকে দাঁড় করিয়ে যীশুর কাছে
প্রশ্ন করল, “হে গুরু, এই স্ত্রীলোকটি ব্যভিচারে, সেই ক্রিয়াতেই, ধরা পড়িয়াছে। তবে আপনি কি বলেন?” কেন তারা স্ত্রীলোকটিকে যীশুর কাছে নিয়ে এল এবং তাঁকে পরীক্ষা করল?
 তারা নিজেরা সারা জীবন ব্যভিচার করেছে, যীশুকে যেন দোষী করতে পারে এইজন্য যীশুর মাধ্যমে তার বিচার করতে চাইল এবং তাকে হত্যা করতে চাইল।
 তাদের মনের ভিতর কি ছিল যীশু তা জানতেন, এবং ঐ মহিলারও সব বিষয় জানতেন। তাই তিনি বললেন, “তোমাদের মধ্যে যে নিষ্পাপ সেই প্রথমে ইহাকে পাথর মারুক” – তখন ধর্মগুরু ও ফরীশীরা, প্রাচীনতম থেকে শেষ জন পর্যন্ত একে একে সেই স্থান ত্যাগ করল, শুধু সেই স্ত্রীলোকটি এবং যীশু রয়ে গেলেন।
 ধর্মগুরু এবং ফরীশী ও ধর্মীয় নেতারা ঐ স্থান ত্যাগ করে চলে গেল। তারা ঐ স্ত্রীলোকটির বিচার করতে চাইল, এমন ভাব দেখাল যেন তারা নিজেরা কোন দিন ঐ পাপ করেনি। যীশু এই পৃথিবীতে তাঁর প্রেম প্রচার করেছেন। তিনি প্রেমের আধার। যীশু লোকদের খাবার দিয়েছেন, মৃতকে বাঁচিয়েছেন, লাসারকে জীবন দিয়েছেন, কুষ্ঠিকে সুস্থ করেছেন এবং দরিদ্রদের জন্য আরও অনেক পরাক্রম কাজ করেছেন। সমস্ত পাপ তুলে নিয়ে পাপীকে জীবন দিয়েছেন।
 যীশু আমাদের ভালবাসেন, তিনি সর্বশক্তিমান, সবকিছু করতে পারেন। ধর্মগুরু ও ফরীশীরা যীশুকে তাদের শ্ত্রু মনে করেছিল। এই জন্যই তারা ধৃত স্ত্রীলোকটিকে তাঁর সামনে আনল এবং তাঁর পরীক্ষা করল।
 তারা জিজ্ঞাসা করল, “ব্যবস্থায় মোশি এই প্রকার লোককে পাথর মারিবার আজ্ঞা আমাদিগকে দিয়াছেন, তবে আপনি কি বলেন?” তারা মনে করল তিনি পাথর মারতে বলবেন। কেন? কারণ ব্যবস্থায় লিখিত নিয়মানুসারে ব্যভিচারে ধৃত ব্যক্তি পাথর নিক্ষেপের দ্বারা মৃত্যুর যোগ্য।
 সকলকেই পাথর মেরে হত্যা করতে হবে এবং সকলেরই গন্তব্য নরক। যীশু তাদেরকে পাথর মারতে বললেন না, কিন্তু তার পরিবর্তে বললেন, “তোমাদের মধ্যে যে নিষ্পাপ সে আগে উহাকে পাথ মারুক।”
 
ঈশ্বর কেন ব্যবস্থায় ৬১৩টি বিষয় দিলেন?
আমরা যেন বুঝতে পারি যে আমরা পাপী
 
ব্যবস্থা ক্রোধ আনয়ন করে। ঈশ্বর পবিত্র এবং ব্যবস্থাও পবিত্র। এই পবিত্র ব্যবস্থা ৬১৩ টি বিষয়ের মাধ্যমে আমাদের কাছে এসেছে। আমরা যে পাপী এবং অসম্পূর্ণ এই উপলব্ধি যেন আমাদের হয় এই জন্য ঈশ্বর ৬১৩ টি বিষয় দিলেন। ঈশ্বরের অনুগহে আমরা মুক্তি পেতে পারি, ব্যবস্থা আমাদের এই শিক্ষা দেয়। যদি আমরা এই সত্য না জানতাম, শুধু লিখিত অর্থেই গ্রহণ করতাম, তাহলে ঐ স্ত্রীলোকটির মত আমাদেরকেও পাথরের আঘাতে মৃত্যুবরণ করতে হত।
 ধর্মগুরু ও ফরীশীরা এই সত্য জানত না বিধায় তারা স্ত্রীলোকটিকে পাথর মারতে চাইল এবং আমাদেরকেও হয়তো তাই করত। একজন অসহায় স্ত্রীলোককে কে পাথর মারতে পারে? যদি সে এই কর্মে ধরাও পড়ে, পৃথিবীতে এমন কেউ নেই যে তাকে পাথর মারতে পারে।
 ব্যবস্থা অনুযায়ী বিচারিত হতে হলে শুধু ঐ স্ত্রীলোকটিই নয়, আমাদের প্রত্যেককে ভয়ংকর বিচারের সম্মুখীন হতে হতো। কিন্তু আমাদের মত জঘন্য পাপীকে যীশু আমাদের প্রাপ্য ন্যায্য বিচার থেকে উদ্ধার করেছেন। ব্যবস্থা অনুসারে বিচার হ’লে আমাদের সমস্ত পাপ নিয়ে আমরা কখনো বেঁচে থাকতে পারতাম না। আমাদের প্রত্যেককে নরকে যেতে হতো।
 ধর্মগুরু ও ফরীশীরা লিখিত ব্যবস্থাই শুধু জানত। ব্যবস্থা যথার্থ ভাবে অনুসরন করা হলে, যারা বিচার করত, বিচারিতদের মত তারা নিজেরাও বিচারিত হত এবং মরত। প্রকৃতপক্ষে, মানুষ যেন তার পাপ সম্বন্ধে বুঝতে পারে এই জন্যই ব্যবস্থা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ব্যবস্থাকে সঠিকভাবে বুঝতে পারে নাই বলে তারা নিজেরা কষ্টভোগ করেছে এবং ব্যবস্থার অপপ্রয়োগ করেছে।
 সেকালের ফরীশীদের মত বর্তমানের ফরীশীরাও লিখিত ব্যবস্থা শুধু জানে। ঈশ্বরের অনুগ্রহ ও ন্যায় বিচার এবং সত্য তাদের বোঝা উচিত, পাপ মুক্তির সুসমাচার শিক্ষা দেওয়া উচিত।
 ফরীশীরা বলল, “ব্যবস্থায় মোশি এই প্রকারের লোককে পাথর মারিবার আজ্ঞা আমাদিগকে দিয়াছেন। তবে আপনি কি বলেন?” পাথর হাতে নিয়ে তারা এই প্রশ্ন করল। তারা ভেবেছিল যীশুর কিছুই বলার নাই। তারা অপেক্ষা করছিল, যীশু তাদের ফাঁদে পা দেবেন।
 ব্যবস্থা অনুসারে এই বিচার করলে পরবর্তীতে যীশুর প্রতিও পাথর মারা হত। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, দুই জনকে এক সাথে পাথর মারবে। আবার যদি তিনি পাথর মারতে নিষেধ করতেন তাহলে ব্যবস্থা লঙ্ঘন এবং ঈশ্বর নিন্দার দায়ে তারা যীশুকে দায়ী করত। কী ভয়ংকর এক পরিস্থিতি!
 কিন্তু যীশু নিরবে ধুলিতে আঙ্গুল দিয়ে লিখতে লাগলেন এবং তারা অবিরত প্রশ্ন করতে থাকলো, “আপনি কি বলেন? মাটিতে কি লিখছেন? আমাদের প্রশ্নের উওর দিন। আপনি কি বলেন?” যীশুর প্রতি আঙ্গুল উচিয়ে তারা তাকে অপমান করতে লাগল।
 যীশু উঠে তাদের বললেন, তাদের মধ্যে নিষ্পাপ ব্যক্তি আগে পাথর মারুক। তারপর আবার তিনি নীচু হয়ে ধুলিতে লিখতে লাগলেন, এই কথা শুনে, প্রাচীনতম ব্যক্তি থেকে শেষ জন পর্যন্ত তাদের বিবেক দ্বারা দোষী হয়ে একে একে সেই স্থান ত্যাগ করল। শুধুমাত্র যীশু এবং সেই মহিলা বাকি থাকলেন।
 
 
তোমাদের মধ্যে যে নিষ্পাপ, সে প্রথমে তাকে পাথর মারুক
 
পাপ কোথায় লিপিব্ধ থাকে?
আমাদের হৃদয় ফলকে এবং জীবন পুস্তকে
 
 যীশু তাদের বললেন, “তোমাদের মধ্যে যে নিষ্পাপ সে-ই প্রথমে ইহাকে পাথর মারুক।” এবং তিনি মাটিতে লিখতে লাগলেন। প্রথমে কয়েক জন প্রাচীন লোক সেই স্থান ত্যাগ করল। প্রাচীনেরা বেশী পাপ করেছিল। তাই প্রথমে তারা চলে গেল। তাদের সাথে সাথে অল্প বয়স্করাও চলে গেল। ধরুন, আমরা ঐ স্ত্রীলোকটিকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছি এবং যীশু আমাদের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছেন। যীশু যদি আমাদিগকে বলতেন, যে, তোমাদের মধ্যে যে নিষ্পাপ সেই প্রথমে তাকে পাথর মারুক, তাহলে আপনি কি করতেন?
 যীশু মাটিতে কি লিখছিলেন? আমাদের সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বর দুই জায়গায় আমাদের পাপ লেখেন।
 প্রথমত আমাদের হৃদয়ে ফলকে তিনি আমাদের পাপ লেখেন। “যিহুদার পাপ লৌহ লেখনী ও হীরকের কাঁটা দিয়া লিখিত হইয়াছে, তাহাদের চিত্ত ফলকে ও তাহাদের যজ্ঞবেদির শৃঙ্গে তাহা খোদিত হইয়াছে” (যিরামিয় ১৭:১ পদ)।
 আমাদের প্রতিনিধি যিহুদার মাধ্যমে ঈশ্বর এই কথা বলেন। লোহার কলম এবং হীরকের কাঁটা দিয়ে মানুষের পাপ ক্ষোদিত হয়। সেগুলো আমাদের হৃদয় ফলকে লিপিবব্ধ হয়। যীশু নিচু হয়ে মাটিতে মানুষের পাপগুলো লিখছিলেন।
 ঈশ্বর জানেন আমরা পাপ করি, আমাদের হৃদয় ফলকে তিনি আমাদের পাপগুলো লেখেন। প্রথমত, আমাদের কর্ম, অর্থাৎ পাপগুলো তিনি লেখেন কারন ব্যবস্থার বিচারে আমরা অসহায়। যেহেতু হৃদয় ফলকে আমাদের পাপ লেখা থাকে তাই ব্যবস্থার দিকে তাকালেই আমরা বুঝতে পারি আমরা পাপী। আমাদের হৃদয়ে অর্থাৎ বিবেক লিপিবব্ধ থাকায় আমরা বুঝতে পারি ঈশ্বরের সাক্ষাতে আমরা পাপী।
তারপর দ্বিতীয়বার নিচু হয়ে যীশু মাটিতে লিখতে লাগলেন। বাইবেল বলে, আমাদের সমস্ত পাপ ঈশ্বরের সাক্ষাতে জীবন পুস্তকে লেখা থাকে (প্রকাশিত বাক্য ২০:১২ পদ)। এই পুস্তকে প্রত্যেক ব্যক্তির নাম ও পাপ লেখা থাকে। আমাদের হৃদয় ফলকেও সেগুলো লেখা থাকে। জীবন পুস্তকে এবং আমাদের হৃদয় ফলকে দুই জায়গায় আমাদের পাপ লিপিবব্ধ থাকে। প্রাচীন অথবা অল্প বয়স্ক, প্রত্যেক হৃদয়ে পাপ লিপিবব্ধ থাকে। এই কারণে যীশুর সম্মূখে পাপ সম্পর্কে
তাদের বলার থাকে না, স্ত্রীলোকটিকে যারা পাথর মারতে চেয়েছিল তারা শেষ পর্যন্ত তাঁর বাক্যের কাছে অসহায় হয়ে পড়ল।
 
দুই জায়গায় লিখিত পাপগুলো কখন মুছে ফেলা হয়?
যখন যীশুর জল ও রক্তের সুসমাচার হৃদয়ে ধারন করে পাপ থেকে মুক্তি পাই
 
 যাহোক, আমরা যখন পরিত্রাণ লাভ করি, জীবন পুস্তকে লিখিত আমাদের পাপগুলো মুছে যায় এবং জীবন পুস্তকে আমাদের নাম লেখা হয়। যাদের নাম জীবন পুস্তকে লেখা আঁচে তারা স্বর্গে যাবে। মানুষের ভাল কাজগুলো তারা করেছে, সবগুলোই জীবন পুস্তকে লেখা থাকে। তারা স্বর্গ রাজ্যে গ্রাহ্য হয়। যারা পাপ থেকে মুক্ত হয় তারা অনন্তকাল স্থায়ী রাজ্যে গৃহিত হয়।
 প্রতিটি মানুষের পাপ দুই জায়গায় লিখিত হয়। কাজেই ঈশ্বরকে কেহ প্রতারণা করতে পারে না। হৃদয়ে পাপ করেনি বা ব্যভিচার করেনি এমন কোন ব্যক্তি নেই। আমরা সকলে পাপী, সকলে অশুদ্ধ যীশুর দেওয়া পাপ মুক্তি যারা হৃদয়ে গ্রহণ করে না, মানসিক যন্ত্রনাভোগ করা ছাড়া তাদের কোন উপায় নাই। তারা আত্মায় বিশ্বাসী নয়, ঈশ্বরের সাক্ষাতে এবং অন্যদের সাক্ষাতেও তারা ভীত থাকে। কিন্তু যে মুহূর্তে তারা হৃদয়ে জল ও আত্মার পাপ মুক্তির সুসমাচার গ্রহণ করে, তখনই হৃদয়-ফলকে এবং জীবন-পুস্তকে লিখিত তাদের সমস্ত পাপ মুছে পরিষ্কার হয়ে যায়। তারা সব পাপ থেকে মুক্ত হয়।
 স্বর্গে জীবন-পুস্তক রয়েছে। জল ও আত্মার মাধ্যমে যারা পাপ মুক্ত হয়েছে, তাদের নাম জীবন-পুস্তকে লেখা আছে এবং তারা স্বর্গে যাবে। এই কারণে নয় যে পৃথিবীতে তারা কোন পাপ করে নাই, কিন্তু এই কারণে যে তারা জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস করেছে। এটাই ‘বিশ্বাসের ব্যবস্থা’ (রোমীয় ৩:২৭ পদ)।
 খ্রীষ্টিয় সহ ভ্রাতা-ভগ্নিগণ, ব্যভিচারে ধৃত স্ত্রীলোকটির মতো ধর্মগুরু এবং ফরীশীরাও একই পাপে পাপী ছিল।
 আসলে, তারা কোন পাপ করে নাই – এই অভিনয়ের মাধ্যমে নিজেদেরকে প্রতারণা করে তারা বরং আরো বেশি পাপ করেছে। ধর্মীয় নেতারা ছিল অনুমতি প্রাপ্ত (লাইসেন্স) চোর। তারা ছিল জীবনের চোর, আত্মার চোর। নিজেরা পাপ থেকে মুক্ত না হয়ে অন্যদেরকে তারা সৎ হওয়ার শিক্ষা দিত।
 ব্যবস্থা অনুসারে কেউই নিষ্পাপ নয়। কোন লোক ধার্মিকগণিত হয় এই কারণে নয় যে, সে পাপ করে নাই; কিন্তু পাপ থেকে উদ্ধার পেয়ে জীবন-পুস্তকে তার নাম লিখিত হয়েছে এইজন্য সে ধার্মিকগণিত হয়। জীবন-পুস্তকে তার নাম লেখা হয়েছে কিনা এটাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ মানুষ পাপহীন ভাবে বাঁচতে পারে না, পাপ থেকে তার মুক্ত হতেই হবে।
 আপনি স্বর্গ রাজ্যে গ্রাহ্য হবেন কিনা, তা নির্ভর করে আপনি তা বিশ্বাস করেন কিনা তার উপরে। যীশুর পরিত্রাণ আপনি গ্রহণ করবেন কিনা তার উপরেই নির্ভর করে আপনি ঈশ্বরের অনুগ্রহ পাবেন কিনা, সেই ধৃত স্ত্রীলোকটির ভাগ্যে কি ঘটেছিল? মৃত্যুর অপেক্ষায় চোখ বন্ধ করে বসেছিল। সম্ভবত ভয়ে এবং মন পরিবর্তনের জন্য সে কাঁদছিল। মৃত্যুর মুখে পড়লে মানুষ সৎ হয়ে যায়।
 “হে ঈশ্বর, এটা ঠিক যে আমাকে মরতে হবে। দয়া করে আমার আত্মা গ্রহণ কর, আমার প্রতি সহানুভুতিশীল হও। যীশু, আমাকে কৃপা কর।” প্রেমের পরিত্রাণের জন্য সে যীশুর কাছে সনিরবন্ধ বিনতি করছিল। “হে ঈশ্বর, তুমি আমার বিচার করলে আমি দন্ড পাব, তুমি যদি বল আমার কোন পাপ নেই, আমার পাপ তাহলে মুছে যাবে। এটা সম্পূর্ণরূপে তোমার ইচ্ছার উপরে নির্ভর করে।” সম্ভবতঃ সে এই কথাগুলো বলছিল। সব কিছু যীশুর উপর ছেড়ে দিয়েছিল। যে স্ত্রীলোকটিকে যীশুর সম্মুখে আনে হয়েছিল সে বলেনি, “আমি ভুল করেছি, আমার ব্যভিচার পাপ ক্ষমা কর।” সে বলেছিল “যদি তুমি আমাকে পাপ থেকে উদ্ধার কর তাহলে আমি উদ্ধার পাব। অন্যথায় আমি নরকে যাব। আমি তোমার ক্ষমা চাই। আমি ঈশ্বরের প্রেম চাই, আমার প্রতি ঈশ্বরের দয়া চাই।” চোখ বন্ধ করে সে তার পাপ স্বীকার করছিল।
 তখন যীশু তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “যাহারা তোমার নামে অভিযোগ করিয়াছিল, তাহারা কোথায়? কেহ কি তোমাকে দোষী করে নাই?” সে উত্তর দিল, “না প্রভু, কেহ করে নাই।”
 এবং যীশু তাকে বললেন, “আমিও তোমাকে দোষী করি না;” যীশু যর্দন নদীতে তাঁর বাপ্তিস্মের মাধ্যমে তার সকল পাপ ইতিপূর্বে তুলে নিয়েছিলেন এবং তাকে পাপ থেকে উদ্ধার করেছিলেন। এখন, স্ত্রীলোকটি নয়, যীশুকেই পাপের জন্য বিচারিত হতে হল।
 
 
তিনি বললেন, “আমিও তোমাকে দোষী করিনা।”
 
যীশু কি স্ত্রীলোকটিকে দোষী করেছিলেন?
না
 
স্ত্রীলোকটি যীশুর পরিত্রাণের আশীর্বাদ প্রাপ্ত হয়েছিল। সে তার সমস্ত পাপ হতে মুক্তি পেয়েছিল। প্রভু যীশু বলেন যে, তিনি আমাদের সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত করেছেন, আমাদের ধার্মিকগণিত করেছেন।
 বাইবেল অনুসারেই তিনি বলেন, আমাদের পাপের মূল্য হিসাবে তিনি ক্রুশে মৃত্যুবরণ করলেন এবং যর্দ্দন নদীতে বাপ্তিস্ম নেওয়ার মাধ্যমে আমাদের পাপ তুলে নিলেন। তিনি পরিষ্কারভাবে বলেন যে, যারা তাঁর বাপ্তিস্মে এবং ক্রুশীয় মৃত্যু বিচারে বিশ্বাসের মাধ্যমে পাপমুক্ত হতে চায়, তাদের সকলকে তিনি পাপ হতে মুক্ত করেছেন। আমাদের প্রত্যেকের যীশুর বাক্য জানা এবং তা পালন করা উচিত। তাহলে আমরা সবাই পাপমুক্ত হয়ে আশীর্বাদ প্রাপ্ত হব।
“হে ঈশ্বর তোমার সাক্ষাতে আমার কোন গুণ নেই, প্রতিভা নেই। আমার পাপ ছাড়া তোমাকে দেখানোর মত আর কিছু নেই। আমি বিশ্বাস করি যীশুই আমার পাপ থেকে উদ্ধার কর্তা। যর্দ্দন নদীতে তিনি আমার পাপ তুলে নিয়েছেন এবং ক্রুশে আমার পক্ষে প্রায়শ্চিত্ত সাধন করেছেন। তাঁর বাপ্তিস্ম ও রক্তের মাধ্যমে আমার সমস্ত পাপ তুলে নিয়েছেন। প্রভু আমি তোমাকে বিশ্বাস করি।”
 এই ভাবেই আপনি মুক্ত হতে পারেন। যীশু আমাদের ‘দোষী করেন নাই।’ তিনি আমাদের ঈশ্বরের সন্তান হবার অধিকার দিয়েছেন। যারা জল ও আত্মার পরিত্রাণে বিশ্বাস করে, তাদের পাপ তিনি তুলে নিয়েছেন এবং তাদেরকে ধার্মিকগণিত করেছেন।
 প্রিয় বন্ধুগণ, সেই স্ত্রীলোকটি উদ্ধার পেয়েছিল। ব্যভিচারে ধৃত সেই স্ত্রীলোকটি যীশুর কাছে এসে আত্মিক উদ্ধার পেয়েছিল। আমরাও তেমন আশীর্বাদ পেতে পারি। যারা নিজেদের পাপ জানে এবং মুক্ত হওয়ার জন্য ঈশ্বরের অনুগ্রহ চায়, যারা যীশুর জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস করে, তারা পাপ থেকে মুক্ত হয় এবং ঈশ্বরের অনুগ্রহ পায়। যারা পাপে আছে, তাদেরকে পাপ থেকে মুক্ত হতে হবে। যারা পাপ করছে অথচ নিজেদের পাপ সম্পর্কে বুঝতে পারছে না, তার উদ্ধারও পাবে না, আশীর্বাদও পাবে না।
 যীশু সমস্ত জগতের পাপভার তুলে নিয়েছেন (যোহন ১:২৯ পদ)। যীশুকে বিশ্বাস করে পৃথিবীর যে কোন পাপী পাপ হতে উদ্ধার পেতে পারে। যীশু স্ত্রীলোকটিকে বললেন, ‘আমি তোমাকে দোষী করি না’। যেহেতু তিনি তার পাপ তুলে নিয়েছেন, তাই তাকে দোষী করলেন না। আমাদের সকলের পাপও তিনি নিজের উপরে নিয়ে নিয়েছেন। এবং আমাদের পক্ষে আমাদের স্থলে বিচারিত হয়েছেন।
 
 
যীশুর সম্মুখে আমাদেরকেও পাপ থেকে উদ্ধার পেতে হবে
 
ঈশ্বরের প্রেম এবং ঈশ্বরের অনুগ্রহ এই দুইটির মধ্যে কোনটি শ্রেষ্ঠ?
ঈশ্বরের প্রেম
 
পাথর-হাতে-ধরা সেই ফরীশীরা এবং আজকের ধর্মীয় নেতারা ব্যবস্থাকে আক্ষরিক অর্থে ব্যাখ্যা করে। তারা বিশ্বাস করে, ব্যভিচার করলে পাথর মেরে হত্যা করতে হবে, কারণ ব্যবস্থায় এই রকমই লেখা আছে। তারা কাম দৃষ্টিতে স্ত্রীলোকের দিকে তাকায়, আর অভিনয় করে তারা ব্যভিচার করছে না। তারা পাপ থেকে উদ্ধার পাবে না, পরিত্রাণও পাবে না।ধর্মগুরু ও ফরীশীরা ছিল এই জগতের নৈতিকতাবাদী। যীশু তাদেরকে আহবান করে নাই। তারা কখনও তাঁর কাছে শুনতে পাবে না, ‘আমি তোমাকে দোষী করব না’।
 ব্যভিচারে ধৃত সেই স্ত্রীলোকটি এই আনন্দের কথা শুনেছিল। আপনি যদি তাঁর সাক্ষাতে সৎ হন, আপনিও তার মত আশীর্বাদ প্রাপ্ত হবেন। “হে ঈশ্বর, আমি সারা জীবন ধরে ব্যভিচার করি। আমি এত বেশি এই পাপ করি, সেই জন্য আমি বুঝতে পারি না যে আমি তা করছি। সারা দিনে অনেক বার আমি পাপ করি।”
 ব্যবস্থাকে যখন আমরা স্বীকার করি, এবং এই সত্যকে যখন আমরা মেনে নেই যে আমরা পাপী, আমাদিগকে মরতে হবে, সততার সঙ্গে ঈশ্বরের সাক্ষাতে নিজেদের স্বরূপ উন্মোচন করে বলি, “হে ঈশ্বর, আমি এই রকম। দয়াকরে আমাকে উদ্ধার কর;” তখন ঈশ্বর আমাদের উদ্ধার করবেন এবং আমরা আশীর্বাদ পাব।
 যীশুর প্রেম, অর্থাৎ জল ও আত্মার সুসমাচারে ঈশ্বরের বিচারকে জয় করেছে। “আমিও তোমাকে দোষী করি না।” তিনি আমাদের দোষী করেন না বরং বলেন, “তুমি উদ্ধার পেয়েছ।” আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্ট করুণাময়ী ঈশ্বর। তিনি আমাদের জগতের সমস্ত পাপ হতে উদ্ধার করেছেন।
 আমাদের ঈশ্বর ন্যায় বিচারের ঈশ্বর এবং প্রেমের ঈশ্বর। জল ও আত্মার প্রেম তাঁর বিচারের চেয়েও মহৎ।
 
 

তাঁর বিচারের চেয়ে তাঁর প্রেম মহত্তর

 
কেন তিনি আমাদের সবাইকে উদ্ধার করলেন?
কারণ, তাঁর বিচারের চেয়ে তাঁর প্রেম মহৎ
 
 ন্যায়-বিচার সাধন করবার জন্য তিনি যদি আমাদের বিচার করতেন তাহলে সব পাপীকেই নরকে পাঠাতে হত। কিন্তু যীশু যে প্রেমে আমাদের উদ্ধার করেন তা ন্যায় বিচারের চেয়ে মহৎ, ঈশ্বর তাঁর একমাত্র পুত্র যীশুকে পাঠিয়েছিলেন। যীশু আমাদের সকলের পাপ তাঁর নিজের উপরে নিলেন এবং আমাদের বিচারদন্ডও তিনি নিলেন। এখন, যারা যীশুকে ত্রাণকর্তা হিসাবে গ্রহণ করে, তারা তাঁর সন্তান হয়, এবং ধার্মিকগণিত হয়। কারণ তাঁর বিচারে দন্ডের চেয়ে তাঁর প্রেম মহৎ; তিনি আমাদের সকলকে উদ্ধার করেছেন।
 ঈশ্বর তাঁর ন্যায়-বিচার অনুসারে আমাদের বিচার করেন নাই, এইজন্য অবশ্যই ঈশ্বরের ধন্যবাদ করা উচিত। ধর্মগুরু, ফরীশী ও তাদের শিষ্যদেরকে যীশু বলেছিলেন যে, ঈশ্বর তাদের কাছে উপহার চান না, কিন্তু ঈশ্বরীয় দয়া বা জ্ঞান চান। অনেকে ঈশ্বরের সাক্ষাতে প্রতিদিন গরু বা ছাগল উৎসর্গ করে এবং প্রার্থনা করে, “হে ঈশ্বর, আমার প্রতিদিনের পাপ ক্ষমা কর”। ঈশ্বর আমাদের কাছে উপহার চান না, বরং আমরা যেন জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস করি তিনি তাই চান। তিনি আমাদের মুক্ত করতে চান, আমাদের বিশ্বাস গ্রহণ করতে চান। আপনি কি এসব দেখতে পাচ্ছেন? যীশু আমাদের পরিত্রাণ দিয়েছেন।
যীশু পাপ ঘৃণা করেন, কিন্তু ঈশ্বরের সৃষ্ট মানুষের জন্য তাঁর তীব্র প্রেম রয়েছে। আদিকালে পূর্ব থেকেই তাঁর এই সংকল্প ছিল যে, তিনি তাঁর বাপ্তিস্ম ও রক্তের মাধ্যমে আমাদের পাপ মুছে ফেলবেন এবং আমাদিগকে ঈশ্বরের সন্তান করবেন। আমরা যেন পাপ মুক্ত হয়ে তাঁর সন্তান হই এবং যীশুকে পরিধান করি এই জন্য ঈশ্বর আমাদের সৃষ্টি করেছিলেন। এটাই আমাদের তথা তাঁর সৃষ্টির প্রতি তাঁর প্রেম।
 ঈশ্বর যদি তাঁর ব্যবস্থানুযায়ী আমাদের মত পাপীদের ন্যায্য বিচার করতেন, তাহলে আমাদের সবাইকে মরতে হত। কিন্তু তাঁর পুত্রের বাপ্তিস্ম এবং ক্রুশীয় মৃত্যুতে সাধিত বিচার দ্বারা তিনি আমাদের উদ্ধার করেছেন।
 আপনি কি বিশ্বাস করেন? আসুন, পুরাতন নিয়ম থেকে এ বিষয়ে আমরা নিশ্চিত হই।
 
 
প্রান্তরে পরিত্যায্য ছাগের উপর হারোণ হস্তার্পণ করতেন
 
ইস্রায়েলের প্রতিনিধি হিসাবে কে জীবিত ছাগের উপরে ইস্রায়েলদের পাপ অর্পণ করতেন?
মহাযাজক
 
পুরাতন নিয়মে অভিষেক এবং নুতন নিয়মের বাপ্তিস্ম দ্বারা জগতের সমস্ত পাপীর পূর্ণ প্রায়শ্চিত্ত সাধন করা হয়েছে। পুরাতন নিয়মে, নির্দোষ ছাগের উপরে হস্তার্পণের মাধ্যমে মহাযাজক ইস্রায়েল জাতির সারা বছরের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতেন।
 “পরে হারোণ সেই জীবিত ছাগের মস্তকে আপনার দুই হস্ত অর্পণ করিবে, এবং ইস্রায়েল সন্তানগণের সমস্ত অপরাধ ও তাহাদের সমস্ত অধর্ম অর্থাৎ তাহাদের সর্ববিধ পাপ তাহার উপরে স্বীকার করিয়া সে সমস্ত ঐ ছাগের মস্তকে অর্পণ করিবে; পরে যে প্রস্তুত হইয়াছে, এমন লোকের হস্ত দ্বারা তাহাকে প্রান্তরে পাঠাইয়া দিবে” (লেবীয় ১৬:২১ পদ)।
 পুরাতন নিয়মে এইভাবে পাপের প্রায়শ্চিত্ত করা হত। প্রতিদিনের
পাপ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য লোকেরা একটা নির্দোষ মেষশাবক ও একটা ছাগ সমাগম তাম্বুতে নিয়ে আসত এবং যজ্ঞ বেদিতে উৎসর্গ করত। বলির উপরে তার সমস্ত পাপ অর্পণ করার উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট ব্যক্তিটিকে সেই বলির মস্তকের উপরে হস্তার্পণ করত। তারপর সেই বলিতে হত্যা করা হত এবং যাজক বলির রক্ত যজ্ঞ বেদির শৃংগে ছিটিয়ে দিতেন।
 যজ্ঞ বেদির চার কোনায় শৃংগ ছিল (প্রকাশিতবাক্য ২০:১২) পদে বর্ণিত জীবন পুস্তক এই শৃংগের প্রতিরূপ। বাকী রক্ত মাটিতে ছিটান হত। মাটি মানুষের হৃদয় ফলকের প্রতিরূপ, কারণ মানুষকে মাটি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। লোকেরা এইভাবে প্রতিদিনের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করত।
 কিন্তু তারা প্রতিদিন পাপ পার্থক্যবলি উৎসর্গ করতে পারত না। তাই সারা বছরের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য ঈশ্বর একটি দিন নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন, সপ্তম মাসের দশম দিন ছিল এই প্রায়শ্চিত্ত দিন। এই দিনে ইস্রায়েল জাতির প্রতিনিধি হিসাবে মহাযাজক দুইটি ছাগ আনতেন এবং তাদের সমস্ত পাপ হস্তার্পণের মাধ্যমে ছাগের উপরে অর্পণ করতেন। এইভাবে ইস্রায়েল জাতির পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য মহাযাজক ঈশ্বরের সাক্ষাতে ছাগ উৎসর্গ করতেন।
 “পরে হারোণ সেই জীবিত ছাগের মস্তকে আপনার দুই হস্ত অর্পণ করিবে, এবং ইস্রায়েল সন্তানগণের সমস্ত অপরাধ ও তাহাদের সমস্ত অধর্ম অর্থাৎ তাহাদের সর্ববিধ পাপ তাহার উপরে স্বীকার করিয়া সে সমস্ত ঐ ছাগের মস্তকে অর্পণ করিবে” (লেবীয় ১৬:২১ পদ)।
সমস্ত ইস্রায়েল জাতির প্রতিনিধিরূপে, মহাযাজক হিসাবে হারোণকে ঈশ্বর নিযুক্ত করেছিলেন, প্রত্যেকে আলাদাভাবে হস্তার্পণ করার পরিবর্তে সকলের প্রতিনিধিরূপে মহাযাজক সারা বছরের পাপ মুক্তির জন্য ছাগের উপরে হস্তার্পণ করতেন। এবং ইস্রায়েল জাতির সমস্ত পাপ তিনি স্বীকার করতেন, “হে ঈশ্বর, তোমার ইস্রায়েল সন্তানগণ পাপ করেছে। আমরা প্রতিমাপূজা করেছি, তোমার ব্যবস্থা লংঘন করেছি, তোমার নাম অনর্থক নিয়েছি, অন্য মূর্ত্তি তৈরী করে তোমার চেয়ে তাদের বেশি প্রেম করেছি। বিশ্রামবারকে আমরা পবিত্র রাখতে পারিনি, পিতা-মাতাকে সমাদর করিনি, নরহত্যা করেছি,
 ব্যভিচার করেছি, এবং চুরি করেছি ………। আমরা ঈর্ষা ও রাগের বশবর্তী হয়েছি
 তিনি সমস্ত পাপের তালিকা করতেন। “হে ঈশ্বর, ইস্রায়েল সন্তানগণ বা আমি, আমরা কেউই তোমার ব্যবস্থা পালন করতে পারিনি। পাপ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য, আমাদের সমস্ত পাপ এই ছাগের মস্তকে অর্পণ করার জন্য আমি হস্তার্পণ করছি।” সমস্ত লোকের পক্ষে বলির উপরে হস্তার্পণ করতেন এবং বলির উপরে সকলের পাপ অর্পণ করতেন। অভিষেক, অথবা হস্তার্পণ বলতে বুঝায় “অর্পণ করা”(লেবীয় ১:১-৪, ১৬:২০,২১ পদ)।
 
পুরাতন নিয়মের কালে কিভাবে প্রায়শ্চিত্ত করা হত?
পাপার্থক বলির উপরে হস্তার্পণের মাধ্যমে
 
 বলির উপরে পাপ অর্পণ করার মাধ্যমে, পাপ থেকে উদ্ধার পাবার উদ্দেশ্যে ঈশ্বর ইস্রায়েল জাতিকে বলিদানের প্রথা দিয়েছিলেন। তিনি নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন যে পাপার্থক বলিটি নির্দোষ হতে হবে এবং ব্যক্তির পরিবর্তে বলিদান করা হবে।
 প্রায়শ্চিত্তের দিনে পাপর্থক বলিকে হত্যা করা হত এবং তার রক্ত মহাপবিত্র স্থানের ভিতরে নিয়ে সাতবার পাপবরণের উপরে ছিটিয়ে দেওয়া হত। এইভাবে ইস্রায়েল জাতি সপ্তম মাসে দশম দিনে তাদের সারা বছরের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করত।
 বলি উৎসর্গের জন্য মহাযাজক একাই পবিত্র স্থানে প্রবেশ করতেন, কিন্তু অন্য লোকেরা বাইরে দাঁড়িয়ে থাকত। মহাযাজক সাতবার রক্ত ছিটাবার সময় তাঁর এফোদ বস্ত্রের উপরস্থিত ঘন্টা বাজাতেন এবং লোকেরা বাইরে দাঁড়িয়ে তা শুনতো, এই সুবর্ণ ঘন্টার ধ্বনি হল আনন্দ পূর্ণ সুসমাচারের ধ্বনি।
এটা সত্য নয় যে, যীশু কিছু সংখ্যক লোককে ভালবেসে তাদেরকে পাপ থেকে উদ্ধার করেছেন। যীশু তাঁর বাপ্তিস্মের মাধ্যমে সারা পৃথিবীর সমস্ত মানুষের পাপ একবারে তুলে নিয়েছেন। তিনি
আমাদেরকে একবারেই মুক্ত করতে চাইলেন। আমাদের পাপ প্রতিদিন ক্ষমা হতে পারে না, কিন্তু সেগুলো একবারেই ক্ষমা করা হয়েছে।
 অভিষেক এবং পাপার্থক বলির মাধ্যমে পুরাতন নিয়মে প্রায়শ্চিত্ত সাধন করা হয়েছে। সকল মানুষের সামনে জীবিত ছাগের মস্তকের উপরে হারোণ হস্তার্পণ করতেন এবং সমস্ত লোকের সারা বছরের কৃত সকল পাপ একে একে স্বীকার করতেন। প্রত্যেকের সামনে তিনি ছাগের উপরে পাপগুলো অর্পণ করতেন। তাহলে লোকদের পাপগুলো গেল কোথায়? সেগুলো ঐ ছাগের উপরে অর্পণ করা হয়েছে।
 একজন উপযুক্ত লোক দ্বারা ছাগলটিকে পাঠিয়ে দেওয়া হত। সমস্ত ইস্রায়েল জাতির পাপসহ ছাগলটিকে জলহীন- ঘাসহীন প্রান্তরে ছেড়ে দেওয়া হত। জ্বলন্ত সুর্যের নিচে ছাগলটিকে ঘুরাঘুরি করত অবশেষে মারা যেত। ইস্রায়েল জাতির পাপের জন্য ছাগলটি মারা যেত।
 এটাই ঈশ্বরের প্রেম, মানুষকে পাপ থেকে উদ্ধার করার প্রেম। সেইকালে এইভাবে একবছরের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করা হত। কিন্তু আমরা নুতন নিয়মের যুগে বাস করছি। ২০০০ বছর হয়ে গেছে যীশু জগতে এসেছিলেন, তিনি হলেন এবং পুরাতন নিয়মে যে ভাববাণী করা হয়েছিল, তা পূর্ণ করলেন। তিনি এলেন এবং আমাদের সকলকে পাপ হতে উদ্ধার করলেন।
 
 
আমাদের সকলকে উদ্ধার করার জন্য
 
‘যীশু’ অর্থ কি?
ত্রাণকর্তা, তিনি তাঁর প্রজাদের পাপ থেকে উদ্ধার করবেন
 
আসুন, মথি ১ অধ্যায় পড়ি। “ তিনি এই কথা ভাবিতেছেন এমন সময় দেখ, প্রভুর এক দূত স্বপ্নে তাঁহাকে দর্শন দিয়া কহিলেন, যোষেফ, দয়ুদ-সন্তান, তোমার স্ত্রী মরিয়মকে গ্রহণ করিতে ভয় করিও না, কেননা তাঁহার গর্ভে যাহা জন্মিয়াছে, তাহা পবিত্র আত্মা হইতে হইয়াছে; আর তিনি পুত্র প্রসব করিবেন, এবং তুমি তাঁহার নাম যীশু [ত্রাণকর্তা] রাখিবে; কারণ তিনিই আপন প্রজাদিগকে তাহাদের পাপ হইতে ত্রাণ করিবেন” (মথি ১:২০,২১ পদ)।
 জগতের পাপ থেকে উদ্ধার করার উদ্দেশ্যে তাঁর পুত্র যীশু খ্রীষ্টকে জগতে পাঠানোর জন্য ঈশ্বর কুমারী মরিয়মের গর্ভ ধার করলেন। একজন স্বর্গদূতকে মরিয়মের কাছে পাঠালেন। স্বর্গদূত মরিয়মকে বললেন, “আর দেখ, তুমি গর্ভবতী হইয়া পুত্র প্রসব করিবে, ও তাঁহার নাম যীশু রাখিবে”; অর্থাৎ মরিয়মের পুত্র ত্রাণকর্তা হবেন। যীশু খ্রীষ্ট অর্থ যিনি তাঁর প্রজাদের উদ্ধার করবেন। অর্থাৎ ত্রাণকর্তা।
 যর্দ্দন নদীতে তাঁর বাপ্তিস্মের মাধ্যমে যীশু জগতের পাপভার তুলে নিলেন। তিনি যোহন বাপ্তাইজকের কাছে বাপ্তাইজিত হলেন এবং সমস্ত জগতের পাপ তুলে নিলেন। আসুন, মথি ৩:১৩-১৭ পদ পড়ি।
 “তৎকালে যীশু যোহন দ্বারা বাপ্তাইজিত হইবার জন্য গালীল হইতে যর্দ্দনে তাঁহার কাছে আসিলেন। কিন্তু যোহন তাঁহাকে বারণ করিতে লাগিলেন, বলিলেন, আপনার দ্বারা আমারই বাপ্তাজিত হওয়া আবশ্যক, আর আপনি আমার কাছে আসিতেছেন? কিন্তু যীশু উত্তর করিয়া তাঁহাকে কহিলেন, এখন সম্মত হও, কেননা এইরূপে সমস্ত ধার্মিকতা সাধন করা আমাদের পক্ষে উপযুক্ত। তখন তিনি তাঁহার কথায় সম্মত হইলেন। পরে যীশু বাপ্তাইজিত হইয়া অমনি জল হইতে উঠিলেন; আর দেখ, তাঁহার নিমিত্ত স্বর্গ খুলিয়া গেল, এবং তিনি ঈশ্বরের আত্মাকে কপোতের ন্যায় নামিয়া আপনার উপর আসিতে দেখিলেন। আর দেখ, স্বর্গ হইতে এই বাণী হইল, ইনিই আমার প্রিয় পুত্র, ইহাঁতেই আমি প্রীত।”
 আমাদের সকলকে সমস্ত পাপ থেকে উদ্ধার করার জন্য যীশু যোহন বাপ্তাইজকের কাছে গিয়েছিলেন। তিনি জলের মধ্যে হেঁটে গেলেন এবং যোহনের কাছে মাথা নত করলেন। “যোহন, আমাকে বাপ্তাইজ কর। সমস্ত ধার্মিকতা সাধন করা আমাদের পক্ষে উপযুক্ত।
জগতের পাপভার তুলে নেওয়ার জন্য, বাপ্তিস্মের মাধ্যমে আমি তাদের পাপ থেকে উদ্ধার করার জন্য, সকল পাপীকে তাদের পাপ থেকে তুলে নিতে চাই। আমাকে এখন বাপ্তাইজ কর। সম্মত হও।”
 এভাবে সমস্ত ধার্মিকতা সাধন করা উপযুক্ত ছিল। যোহন বাপ্তাইজকের মাধ্যমে যীশু বাপ্তাইজিত হলেন। এবং সেই মুহূর্তে, ঈশ্বরের যে ধার্মিকতা আমাদের সমস্ত পাপ থেকে উদ্ধার করে, তা সম্পূর্ণরূপে সাধিত হলো।
 এভাবেই তিনি আমাদের সমস্ত পাপ তুলে নিলেন। আমাদের সমস্ত পাপও যীশুর উপরে বর্তালো। আপনি কি তা বুঝতে পারছেন?
 যীশুর বাপ্তিস্ম ও আত্মার পরিত্রাণে বিশ্বাস করুন এবং মুক্তি লাভ করুন
 
কিভাবে ধার্মিকতা পরিপূর্ণরূপে সাধিত হলো?
যীশুর বাপ্তিস্মের মাধ্যমে
 
ঈশ্বর প্রথমেই ইস্রায়েলদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, হস্তার্পণ ও পাপার্থক বলিদানের মাধ্যমে সকল পাপ ধুয়ে নেওয়া হবে। প্রত্যেক ব্যক্তির পক্ষে পৃথকভাবে হস্তার্পণ করা অসম্ভব বিধায় ঈশ্বর মহাযাজক হারোণকে দায়িত্ব দিলেন, যেন তিনি সকলের পক্ষ হয়ে বলিদান উৎসর্গ করেন। এভাবে তিনি একবারেই সারা বছরের পাপ পাপার্থক বলির উপর অর্পণ করতেন। পাপ থেকে উদ্ধারের জন্য এটা তাঁর প্রজ্ঞা ও ক্ষমতা। ঈশ্বর জ্ঞানী এবং বিস্ময়কর।
 জগতকে পাপ থেকে উদ্ধার করার জন্য তিনি তাঁর পুত্র যীশুকে জগতে পাঠালেন। কাজেই, পাপার্থক বলি প্রস্তুত ছিল। মানবজাতির পক্ষে একজন প্রতিনিধিরও প্রয়োজন ছিল। যিনি হস্তার্পণের মাধ্যমে যীশুর মস্তকে সমগ্র জগতের পাপ অর্পণ করবেন। যোহন বাপ্তাইজক সেই প্রতিনিধি। মথি ১১:১১ পদ অনুসারে, ঈশ্বর যীশুর আগেই সেই প্রতিনিধিকে পাঠালেন।
যোহন বাপ্তাইজক ছিলেন মানুষের সর্বশেষ মহাযাজক। মথি ১১:১১ পদে যেমন লেখা আছে, “স্ত্রীলোকের গর্ভজাত সকলের
মধ্যে যোহন বাপ্তাইজক হইতে মহান কেহই উৎপন্ন হয় নাই।” মানবজাতির তিনি একমাত্র প্রতিনিধি। সমস্ত সৃষ্টির প্রতিনিধিরূপে তিনি যোহনকে পাঠালেন যেন যোহন বাপ্তিস্মের মাধ্যমে যীশুর উপরে জগতের পাপভার অর্পণ করতে পারেন।
 বর্তমানে ছয়শ কোটি মানুষ। যদি যীশুর মাথায় হস্তার্পণ দ্বারা তাদের পাপ তাঁর উপরে অর্পণ যায়, তাহলে তাঁর মাথার অবস্থা কি হবে? ছয়শ কোটির বেশি লোক যদি যীশুর মস্তকে হস্তার্পণ করত, তাহলে সেটা সুন্দর দৃশ্য হতো না। কিছু অতি উৎসাহী লোক হয়তো এমনভাবে তাঁর মাথায় চাপ প্রয়োগ করত, তাতে হয়তো তাঁর চুলও পড়ে যেত। ঈশ্বর তাঁর ঐশ্বরিক জ্ঞানে তাই যোহন বাপ্তাইজককে নিয়োগ করলেন, যেন তিনি সকলের পক্ষে হস্তার্পণ দ্বারা জগতের পাপ তাঁর উপরে অর্পণ করেন।
 মথি ৩:১৩-১৭ পদে লিপিবব্ধ আছে, “তৎকালে যীশু যোহন দ্বারা বাপ্তাইজিত হইবার জন্য গালীন হইতে যর্দ্দনে তাঁহার কাছে আসিলেন।” এ সময় যীশুর বয়স ছিল ৩০ বছর। জন্মের ৮ দিন পর যীশুর ত্বকছেদ হয়। সেই সময় থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত তাঁর সম্বন্ধে অল্প কিছু বিষয় লিখিত আছে। পুরাতন নিয়মকে পূর্ণ করার জন্য এবং স্বর্গীয় মহাযাজক হওয়ার জন্য যীশুকে ৩০ বছর বয়স পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল। দ্বিতীয় বিবরণে ঈশ্বর মোশিকে বলেছিলেন যে, মহাযাজকের দায়িত্ব পালন করার জন্য মহাযাজকের বয়স কমপক্ষে ৩০ বছর হতে হবে। যীশু স্বর্গীয় মহাযাজক। আপনি কি তা বিশ্বাস করেন?
 নূতন নিয়মে, মথি ৩:১৩,১৪ পদে বলা হয়েছে, “তৎকালে যীশু যোহন দ্বারা বাপ্তাইজিত হইবার জন্য গালীন হইতে যর্দ্দনে তাঁহার কাছে আসিলেন। কিন্তু যোহন তাঁহাকে বারণ করিতে লাগিলেন, বলিলেন, আপনার দ্বারা আমারই বাপ্তাজিত হওয়া আবশ্যক, আর আপনি আমার কাছে আসিতেছেন?” মানবজাতির প্রতিনিধি কে? যোহন বাপ্তাইজক। তাহলে স্বর্গের প্রতিনিধি কে? দুই প্রতিনিধির সাক্ষাত হলো। তাঁদের মধ্যে মহত্তর কে? অবশ্যই স্বর্গীয় মহাযাজক।
তাই যোহন বাপ্তাইজক প্রচন্ড সাহসিকতার সাথে তৎকালীন ধর্মীয় নেতাদের চিৎকার ক’রে বললেন, “হে সর্পের বংশেরা! মন ফিরাও।” যীশুর সাক্ষাতে সহসা নম্র হলেন। “আপনার দ্বারা আমারই বাপ্তাইজিত হওয়া আবশ্যক, আর আপনি আমার কাছে আসিতেছেন?”
 এই সময়ে যীশু বললেন, “এখন সম্মত হও, কেননা এইরূপে সমস্ত ধার্মিকতা সাধন করা আমাদের পক্ষে উপযুক্ত।” ঈশ্বরের ধার্মিকতা পূর্ণরূপে সাধন করতে যীশু জগতে এসেছিলেন। এবং যোহন বাপ্তাইজক দ্বারা বাপ্তিস্ম গ্রহণের মাধ্যমে তা তিনি সাধন করলেন।
 “তখন তিনি তাঁহার কথায় সম্মত হইলেন। পরে যীশু বাপ্তাইজিত হইয়া অমনি জল হইতে উঠিলেন; আর দেখ, তাঁহার নিমিত্ত স্বর্গ খুলিয়া গেল, এবং তিনি ঈশ্বরের আত্মাকে কপোতের ন্যায় নামিয়া আপনার উপর আসিতে দেখিলেন। আর দেখ, স্বর্গ হইতে এই বাণী হইল, ইনিই আমার প্রিয় পুত্র, ইহাঁতেই আমি প্রীত।”
 যীশুর বাপ্তিস্মের সময় এই ঘটনাগুলো ঘটল। যখন তিনি যোহন বাপ্তাইজক কর্তৃক বাপ্তাইজিত হলেন, তখন জগতের পাপভার তুলে নিলেন এবং স্বর্গদুয়ার খুলে গেল। “আর যোহন বাপ্তাইজকের কাল হইতে এখন পর্যন্ত স্বর্গ-রাজ্য বলে আক্রান্ত হইতেছে,এবং আক্রমীরা সবলে তাহা অধিকার করিতেছে”(মথি১১:১২পদ)।
 ভাববাদীগণ কর্তৃক এবং ব্যবস্থায় যোহন বাপ্তাইজক সম্পর্কে ভাববাণী করা হয়েছিল। “আর যোহন বাপ্তাইজকের কাল হইতে এখন পর্যন্ত স্বর্গ-রাজ্য বলে আক্রান্ত হইতেছে, এবং আক্রমীরা সবলে তাহা অধিকার করিতেছে।” যে কেউ তাঁর বাপ্তিস্মে বিশ্বাস করে, কোন বিতর্ক ছাড়াই সে স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে।
 
 
আমিও তোমাকে দোষী করি না
 
কেন যীশু ক্রুশীয় মৃত্যু দ্বারা বিচারিত হলেন?
কারণ, তিনি সমস্ত পাপ তুলে নিলেন
 
 যোহন বাপ্তাইজক দ্বারা বাপ্তাইজিত হয়ে যীশু জগতের সমস্ত পাপ তুলে নিলেন। পরে তিনি স্ত্রীলোকটিকে বললেন, “আমি তোমাকে দোষী করি না।” যর্দ্দনে জগতের সমস্ত পাপ তুলে নিলেন বিধায় তিনি স্ত্রীলোকটিকে দোষী করলেন না; স্ত্রীলোকটিকে নয়, যীশুকেই সকল পাপের জন্য বিচারিত হতে হয়েছিল।
 যীশু জগতের সমস্ত পাপ মুছে দিলেন। ক্রুশীয় যন্ত্রনার কথা স্মরণ করে তিনি কতটা ভীত ছিলেন তা আমরা দেখতে পাই, কারণ “পাপের বেতন মৃত্যু।” এই দন্ড সরিয়ে নেওয়ার জন্য জৈতুন পর্বতে তিনি তিনবার ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলেন। যীশু মানবীয় রক্ত মাংসের দেহে ছিলেন, সুতরাং অনুমান করা যায় যে, তিনি সেই যন্ত্রনার কথা মনে ক’রে ভীত হয়ে পড়েছিলেন। বিচার নিষ্পন্ন করার জন্য যীশুকে নিজের রক্তসেচন করতে হলো।
 পুরাতন নিয়মে পাপের মূল্যরূপে পাপার্থক বলির যেমন রক্তসেচন করতে হতো, তেমনি ক্রুশে যীশুকে বলিকৃত হতে হলো। পূর্বেই তিনি জগতের পাপভার তুলে নিয়েছিলেন, এবং তারপর পাপ থেকে উদ্ধারের জন্য তাঁকে জীবন দিতে হলো। তিনি জানতেন যে, ঈশ্বরের সাক্ষাতে তাঁকে বিচারিত হতে হবে।
 যীশুর হৃদয়ে কোন পাপ ছিল না। কিন্তু বাপ্তিস্মের মাধ্যমে যেহেতু জগতের সমস্ত পাপ তাঁর উপর অর্পিত হয়েছিল, তাই ঈশ্বরকে তাঁর নিজ পুত্রের বিচার করতে হলো। এইরূপে প্রথমতঃ ঈশ্বরের ধার্মিকতা সাধিত হলো, দ্বিতীয়তঃ আমাদের পরিত্রাণের জন্য তিনি তাঁর প্রেম প্রদান করলেন। এই কারণে যীশুকে ক্রুশে বিচারিত হতে হলো।
 “আমিও তোমাকে দোষী করি না। আমিও তোমার বিচার করি না।” আমাদের ইচ্ছাকৃত অনিচ্ছাকৃত বা জানা অজানা সমস্ত পাপ ঈশ্বর কর্তৃক বিচারিত হওয়ার দরকার ছিল।
 ঈশ্বর আমাদের বিচার করেন নাই। কিন্তু যীশু যেহেতু তাঁর বাপ্তিস্মের মাধ্যমে আমার সমস্ত পাপ নিজের উপরে নিয়েছিলেন; তাই ঈশ্বর যীশুর বিচার করলেন। ঈশ্বর প্রেমময় ও করুণাময় বিধায় পাপীদের বিচার করতে চাইলেন না। বাপ্তিস্ম ও ক্রুশীয় রক্তই আমাদের প্রায়শ্চিত্তের প্রেম প্রকাশ করে। “কারণ ঈশ্বর জগতকে এমন প্রেম করিলেন যে, আপনার একজাত পুত্রকে দান করিলেন,
যেন, যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে বিনষ্ট না হয়, কিন্তু অনন্ত জীবন পায়” (যোহন ৩:১৬ পদ)।
 এভাবেই আমরা তাঁর প্রেম জানতে পারি। ব্যভিচার ধৃত স্ত্রীলোকটিকে যীশু দোষী করেন নাই।
স্ত্রীলোকটি ব্যভিচার পাপে ধরা পড়েছিল, তাই সে জানত সে পাপী। শুধু হৃদয়ে সে পাপ করেছিল তাই নয়, দেহেও সে পাপ বহন করছিল। নিজের পাপ অস্বীকার করার তার কোন উপায় ছিল না। সে বিশ্বাস করেছিল যে, যীশু তার সমস্ত পাপ তুলে নিয়েছেন, তাই সে রক্ষা পেল। যীশুর প্রায়শ্চিত্তে বিশ্বাস করলে আমরা পরিত্রাণ পাই। একথা বিশ্বাস করুন; আমাদের নিজেদের মঙ্গলের জন্য বিশ্বাস করুন;
 
কে সর্বাপেক্ষা ধন্য?
যার কোন পাপ নেই
 
 সব মানুষ পাপ করে। সব মানুষ ব্যভিচার করে। কিন্তু পাপের কারণে সকলকে বিচারিত হতে হয়নি। আমরা সকলে পাপ করেছি, কিন্তু যারা যীশুর প্রায়শ্চিত্তে বিশ্বাস করে, তাদের হৃদয়ে কোন পাপ থাকে না। যে ব্যক্তি যীশুর পরিত্রাণে বিশ্বাস করে, সে সর্বাপেক্ষা সুখী। যারা পাপ থেকে মুক্ত হয়েছে এবং যীশুতে ধার্মিকগণিত হয়েছে, তারা সর্বাপেক্ষা ধন্য, আশীর্বাদপ্রাপ্ত।
 রোমীয় ৪:৭ পদে ঈশ্বর আমাদের আনন্দের কথা বলেছেন, “ধন্য তাহারা, যাহাদের অধর্ম ক্ষমা হইয়াছে, যাহাদের পাপ আচ্ছাদিত হইয়াছে;” মৃত্যু পর্যন্ত আমরা সবাই পাপ করি। ঈশ্বরের দৃষ্টিতে আমরা অবজ্ঞাত এবং অসম্পূর্ণ। ব্যবস্থা সম্বন্ধে সচেতন থেকেও আমরা পাপ করেই চলেছি। আমরা খুব দূর্বল।
 কিন্তু ঈশ্বর তাঁর একজাত পুত্রের বাপ্তিস্ম ও রক্তের মাধ্যমে আমাদিগকে মুক্ত করেছেন, এবং বলেন যে, আপনি এবং আমি, আমরা আর পাপী নই, তাঁর সাক্ষাতে ধার্মিকগণিত হয়েছি। তিনি আমাদিগকে তাঁর সন্তান আখ্যা দেন।
 জল ও আত্মার সুসমাচার, প্রায়শ্চিত্তের সুসমাচার। আপনি কি তা বিশ্বাস করেন? যারা বিশ্বাস করে তাদেরকে তিনি ধার্মিক, মুক্তিপ্রাপ্ত ও তাঁর সন্তান আখ্যা দেন। পৃথিবীতে সবচেয়ে সুখী ব্যক্তিটি কে? যে বিশ্বাস করে এবং পাপমুক্ত হয়। আপনি কি পাপমুক্ত হয়েছেন? যীশু কি আপনার পাপ নিতে অস্বীকার করেছেন? না, তাঁর বাপ্তিস্মের মাধ্যমে তিনি আপনার সমস্ত পাপ তুলে নিয়েছেন।
 আসুন,যোহন ১:২৯ পদ পাঠ করি।
 
 
যেন ঝাড়ু দিয়ে ঝেঁটিয়ে দূর করলেন
 
কতটা পাপ যীশু তুলে নিলেন?
পৃথিবীর সমস্ত পাপ
 
“পরদিন তিনি যীশুকে আপনার নিকটে আসিতে দেখিলেন, আর কহিলেন, ঐ দেখ, ঈশ্বরের মেষশাবক, যিনি জগতের পাপভার লইয়া যান”(যোহন ১:২৯ পদ)।
 “ঐ দেখ, ঈশ্বরের মেষশাবক, যিনি জগতের পাপভার লইয়া যান।”
 যোহন বাপ্তাইজক যর্দনে যীশুর উপরে সমস্ত পাপ অর্পণ করলেন। পরদিন তিনি সাক্ষ্য দিলেন যে, ঈশ্বরের মেষশাবক হিসাবে যীশু জগতের পাপভার তুলে নিয়েছেন। জগতের সমস্ত পাপ নিজ কাঁধে তুলে নিলেন।
 জগতের পাপভার বলতে বুঝানো হয়েছে – সৃষ্টির শুরু থেকে অনন্তকাল পর্যন্ত কৃত মানুষের সকল পাপ। ২০০০ বছর আগে যীশু আমাদের পাপ তুলে নিয়েছেন এবং আমাদের মুক্ত করেছেন। ঈশ্বরের মেষশাবক হিসাবে তিনি আমাদের পাপ তুলে নিয়েছেন এবং আমাদের পক্ষে বিচারিত হয়েছেন।
 মানুষ যত রকম পাপ করে, তার সবগুলোই তাঁর উপর অর্পিত হয়েছে। তিনি ঈশ্বরের মেষশাবক হলেন এবং জগতের পাপ তুলে নিলেন।
 জগতের সমস্ত পাপীকে পাপ থেকে উদ্ধার করার জন্য যীশু নিজেকে নত করলেন এবং পৃথিবীতে এলেন। আমরা দূর্বল, আমরা দুষ্ট, আমরা মূর্খ, আমরা অসার, আমরা অসম্পূর্ণ – এই জন্য আমরা পাপ করি। যর্দ্দনে বাপ্তিস্মের সময় যীশুর উপরে আমাদের পাপ সকল অর্পণ করা হলো এবং ঝেঁটিয়ে দূর করা হল। ক্রুশে তাঁর মাংসিক মৃত্যুর মাধ্যমে তিনি তা সমাপ্ত করলেন। তিনি কবর প্রাপ্ত হলেন এবং তৃতীয় দিবসে পুনরুত্থিত হলেন।
 যীশু আপনাদের সকলকে পাপ মুক্ত করেছেন। আপনারা পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী ব্যক্তি। দূর্বলতার কারণে ভবিষ্যতে যে পাপ করবেন তাও তিনি তুলে নিয়েছেন।
 আপনার হৃদয়ে কি পাপ রয়েছে? – না।
 যীশু কি সব তুলে নিয়েছেন? হ্যাঁ, তিনি তুলে নিয়েছেন।
 সব মানুষই একরকম, কেউ তার প্রতিবেশীর চেয়ে বেশি পবিত্র নয়। বেশিরভাগ মানুষ ছলনাকারী বিধায়, তারা ভাবে যে তারা পাপী নয়। কিন্তু তারাও আসলে পাপী। পৃথিবীটা পাপ চাষের গ্রীন হাউজ (কাঁচের ঘর)। মহিলারা ঠোঁটে লিপষ্টিক মেখে, মুখে পাউডার মেখে, চুলের পরিচর্যা করে, সুন্দর কাপড় ও হাইহিল জুতো পরে বাইরে বের হয়। পুরুষেরা নাপিতের কাছে চুল কাটায়, নিজেকে সুন্দর করে, পরিষ্কার কাপড় পরে, আকর্ষণীয় টাই পরে এবং জুতো উজ্জ্বল করে।
 বাহ্যিকভাবে তাদেরকে রাজপুত্র বা রাজকন্যা হিসাবে দেখাতে চাইলেও ভিতরে তাদের আর্বজনার স্তুপ।
অর্থ কি মানুষকে সুখী করতে পারে? স্বাস্থ্য কি মানুষকে সুখী করতে পারে? না। পাপ থেকে মুক্তিই কেবল সত্যিকার অর্থে সুখী করতে পারে। বাহ্যিকভাবে কোন লোককে সুখী মনে হলেও ভিতরে ভিতরে পাপের কারণে হয়তো সে দুঃখার্ত। সে বিচারের ভয়ে ভীত। একজন মুক্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তি ছেঁড়া কাপড় পরলেও সিংহের মত সাহসী। তার হৃদয়ে কোন পাপ নেই। “প্রভু, তোমাকে ধন্যবাদ জানাই, আমার মত পাপীকে তুমি উদ্ধার করেছো, আমার সব পাপ মুছে দিয়েছো। আমি দেখতে সুন্দর না হলেও আমি তোমার ধন্যবাদ করি যে, তুমি আমাকে উদ্ধার করেছো। চিরকালের জন্য পাপ থেকে উদ্ধার করেছো। ঈশ্বরের গৌরব হোক।”
 ঈশ্বরের মেষশাবক হিসাবে যীশু জগতের পাপ তুলে নেওয়ায় আমরা পাপ থেকে মুক্ত হয়েছি। ক্রুশে তিনি আমাদের পরিত্রাণ সাধন করেছেন। আপনার এবং আমার, আমাদের সকলের এবং জগতের পাপভার তিনিই তুলে নিলেন, এই জন্যই আমরা পাপ মুক্ত হয়েছি।
 
 

ঈশ্বরের সঙ্কল্প অনুসারে

 
যীশু খ্রীষ্ট হৃদয়ে থাকলে কি পাপ থাকতে পারে?
না, আমাদের পাপ থাকে না
 
 প্রিয় বন্ধুগণ, ব্যভিচারে ধৃত স্ত্রীলোকটি যীশুর কথায় বিশ্বাস করে মুক্ত হতে পেরেছিল। তার কথা বাইবেলে এই কারণে লিপিবদ্ধ হয়েছিল যে, সে পাপ থেকে মুক্ত হয়ে ঈশ্বরের আশীর্বাদ লাভ করতে পেরেছিল এবং অন্য দিকে কপটা অধ্যাপক ও ফরীশীরা যীশুর কাছ থেকে পালিয়ে গিয়েছিল।
 যীশুকে বিশ্বাস করলে আপনি স্বর্গে যাবেন। কিন্তু যীশুর কাছ থেকে দূরে সরে গেলে নরকে যাবেন। যীশুর কাজকে বিশ্বাস করলে স্বর্গে যাবেন, অবিশ্বাস করলে নরকে যাবেন। নিজের চেষ্টায় কেউ কখনও পাপ থেকে উদ্ধার পেতে পারে না, যীশুর পরিত্রাণের মাধ্যমেই পারে।
 আসুন আমরা ইব্রীয় ১০ অধ্যায় থেকে পাঠ করি।
“কারণ ব্যবস্থা আগামী উত্তম উত্তম বিষয়ের ছায়া বিশিষ্ট, তাহা সেই সকল বিষয়ে অবিকল মুর্তি নহে; সুতরাং একরূপ যে সকল বার্ষিক যজ্ঞ নিয়ত উৎসর্গ করা যায়, তদ্দ্বারা, যাহার নিকটে উপস্থিত হয়, তাহাদিগকে ব্যবস্থা কখনও সিদ্ধ করিতে পারে না। যদি পারিত, তবে ঐ যজ্ঞ কি শেষ হইত না? কেননা আরাধনাকারীরা একবার শুচিকৃত হইলে তাহাদের কোন পাপ-সংবেদ আর থাকিত না। কিন্তু ঐ সকল যজ্ঞে বৎসর বৎসর পূনর্ব্বার পাপ স্মরণ করা হয়। কারণ বৃষের কি ছাগের রক্ত যে পাপ হরণ করিবে, ইহা হইতেই পারে না। এই কারণ খ্রীষ্ট জগতের প্রবেশ করিবার সময়ে বলেন, ‘তুমি যজ্ঞ ও নৈবেদ্য ইচ্ছা কর নাই, কিন্তু আমার জন্য দেহ রচনা করিয়াছ; হোমে ও পাপার্থক বলিদানে তুমি কৃত হও নাই। তখন আমি কহিলাম, দেখ, আমি আসিয়াছি, -গ্রন্থখানিতে আমার বিষয় লিখিত আছে -হে ঈশ্বর, যেন তোমার ইচ্ছা পালন করি।’ উপরে তিনি কহেন, ‘যজ্ঞ, নৈবেদ্য, হোম ও পাপার্থক বলিদান তুমি ইচ্ছা কর নাই’ – এই সকল ব্যবস্থানুসারে উৎসৃষ্ট হয় –তৎপরে তিনি বলিলেন, ‘দেখ, তোমার ইচ্ছা পালন করিবার জন্য আমি আসিয়াছি।’ তিনি প্রথম বিষয় লোপ করিতেছেন, যেন দ্বিতীয় বিষয় স্থির করেন। সেই ইচ্ছাক্রমে, যীশু খ্রীষ্টের দেহ একবার উৎসর্গ করণ দ্বারা, আমরা পবিত্রীকৃত হইয়াছি।” (ইব্রীয় ১০:১-১০ পদ)।
 “ঈশ্বরের সঙ্কল্প অনুসারে” যীশু তাঁর নিজের জীবন উৎসর্গ করে একবারে আমাদের পাপ সকল তুলে নিলেন এবং আমাদের পক্ষে বিচারিত হলেন, এবং পুনরুত্থিত হলেন। এজন্য আমরা পবিত্র হয়েছি। “পবিত্র হয়েছি” কথাটি সম্পূর্ণ অতীতকালে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ আবার প্রায়শ্চিত্ত করার প্রয়োজন নাই।
 “আর প্রত্যেক যাজক দিন দিন সেবা করিবার এবং একরূপ নানা যজ্ঞ পুনঃ পুনঃ উৎসর্গ করিবার জন্য দাঁড়ায়; সেই সকল যজ্ঞ কখনও পাপ হরণ করিতে পারে না। কিন্তু ইনি পাপার্থক একই যজ্ঞ চিরকালের জন্য উৎসর্গ করিয়া ঈশ্বরের দক্ষিণে উপবিষ্ট হইলেন, এবং তদবধি অপেক্ষা করিতেছেন, যে পর্যন্ত তাঁহার শত্রুগণ তাঁহার পাদপীঠ না হয়। কারণ যাহারা পবিত্রকৃত হয়, তাহাদিগকে তিনি একই নৈবেদ্য দ্বারা চিরকালের জন্য সিদ্ধ করিয়াছেন” (ইব্রীয় ১০:১১-১৪ পদ)।
 আপনারা সকলে চিরকালের জন্য পবিত্র হয়েছেন। আপনি যদি আগামীকাল পাপ করেন, তাহলে কি আবার পাপী হবেন? তিনি কি সেই সকল পাপও তুলে নেননি? তিনি তুলে নিয়েছেন। তিনি ভবিষ্যতের পাপও তুলে নিয়েছেন।
 “আর পবিত্র আত্মাও আমাদের কাছে সাক্ষ্য দিতেছেন, কারণ অগ্রে তিনি বলেন, ‘সেই কালের পর, প্রভু কহেন, আমি তাহাদের সহিত এই নিয়ম স্থির করিব, আমি তাহাদের হৃদয়ে আমার ব্যবস্থা দিব, আর তাহাদের চিত্তে তাহা লিখিব,’ তৎপরে তিনি বলেন, ‘এবং তাহাদের পাপ ও অধর্ম সকল আর কখনও স্মরণে আনিব না।’ ভাল, যে স্থলে এই সকল মোচনে হয়, সেই স্থলে পাপার্থক নৈবেদ্য আর হয় না” (ইব্রীয় ১০:১৫-১৮ পদ)।
“এই সকল মোচন হয়” কথাটির দ্বারা পৃথিবীর সমস্ত পাপের পূর্ণ প্রায়শ্চিত্ত সাধন বুঝায়। যীশু আমাদের ত্রাণকর্তা। এবং আপনার ত্রাণকর্তা। যীশুতে বিশ্বাস করার মাধ্যমে আমরা পাপ মুক্ত হয়েছি। এটা যীশুর প্রায়শ্চিত্ত, ঈশ্বরের মহাঅনুগ্রহ এবং মহাদান। আপনি এবং আমি, আমরা যারা সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হয়েছি, আমরা পৃথিবীর সবচেয়ে আশীর্বাদ প্রাপ্ত।