Search

শিক্ষা

বিষয় ৯: রোমীয় পুস্তক (রোমীয় পুস্তকের ভাষ্য)

[1-2] সুসমাচারে প্রকাশিত ঈশ্বরের ধার্মিকতা (রোমীয় ১:১৬-১৭)

< রোমীয় ১:১৬-১৭ >
 “কেননা আমি সুসমাচার সম্বন্ধে লজ্জিত নহি; কারণ উহা প্রত্যেক বিশ্বাসীর পক্ষে পরিত্রাণার্থে ঈশ্বরের শক্তি; প্রথমত: যিহূদীদের পক্ষে, আর গ্রীকদের পক্ষে। কারণ, ঈশ্বর-দেয় এক ধার্মিকতা সুসমাচারে প্রকাশিত হইতেছে, তাহা বিশ্বাসমূলক ও বিশ্বাস-জনক, যেমন লেখা আছে, “কিন্তু ধার্মিক ব্যক্তি বিশ্বাস হেতু বাঁচিবে।”
 
 

আমাদের অবশ্যই ঈশ্বরের ধার্মিকতা অর্জন করতে হবে

 
 খ্রীষ্টের সুসমাচার সম্পর্কে প্রেরিত পৌল লজ্জিত ছিলেন না। তিনি দৃঢ়রূপে সুসমাচার প্রচার করতেন। যীশুতে বিশ্বাস করার পরেও অনেকে পাপের জন্য ক্রন্দন করে। ঈশ্বরের ধার্মিকতা সম্বন্ধে অজ্ঞতার কারণে তারা এমন করে। আমাদের নিজস্ব ধার্মিকতা পরিত্যাগ করে, ঈশ্বরীয় ধার্মিকতা অর্জনের মাধ্যমে আমরা উদ্ধার পেতে পারি।
 প্রেরিত পৌল কেন সুসমাচার প্রচারে লজ্জিত ছিলেন না? প্রথমতঃ এর মাধ্যমে ঈশ্বরীয় ধার্মিকতা প্রকাশিত হয়েছে।
 সুসমাচারে গ্রীক ভাষায় euaggelion যার অর্থ ‘সু-খবর’ বেথলেহেমে যীশুর জন্মের সময় পাহারারত মেষপালকদের কাছে স্বর্গ দূত বললেন, “উর্দ্ধলোকে ঈশ্বরের মহিমা, পৃথিবীতে (তাঁহার) প্রীতিপাত্র মনুষ্যদের মধ্যে শান্তি।”(লূক ২:১৪ পদ) এটাই ছিল সু-খবর ‘শান্তি’ প্রীতিপাত্র মনুষ্যদের জন্য। প্রভুর সুসমাচার আমাদের সমস্ত পাপ হতে মুক্ত করে, এবং জগতের সমস্ত পাপ ধৌত করে। যীশু আমাদের সমস্ত পাপ ধুয়ে দিয়েছেন। যারা কীট পতঙ্গের মত পাপের কাঁদায় হাবুডুবু খাচ্ছে, তিনি নিজেই তাদের সমস্ত পাপ ধুয়ে দিলেন। 
 প্রথমতঃ প্রেরিত পৌল বলেন, যে সুসমাচারের মধ্যে ঈশ্বরের ধার্মিকতা প্রকাশিত হয়েছে। সেই সুসমাচার আমাদের সমস্ত পাপ মুছে দিয়েছে। ঈশ্বরের ধার্মিকতা আমাদেরকে সাধু এবং ধার্মিক করে, অনন্ত জীবন লাভ করতে এবং পাপ মুক্ত হতে সাহায্য করে।
 মানুষের ধার্মিকতা কি? আমরা কোন বিষয় বড়াই করার না মাধ্যমে, ঈশ্বরের সাক্ষাতে নিজেদেরকে জাহির করতে চাই। ভুরি ভুরি সৎ কর্মের মাধ্যমে আমরা মানবীয়। ধার্মিকতা প্রদর্শন করি। যাহোক, যীশুর ধার্মিকতা আমাদের সমস্ত পাপ থেকে উদ্ধার করেছে, সুসমাচারে ঈশ্বরীয় ধার্মিকতা প্রকাশিত হয়েছে। এটাই ঈশরের ধার্মিকতা।
 বর্তমান সময়ে অধিকাংশ খ্রীষ্টিয়ানেরা ঈশ্বরীয় ধার্মিকতা না জেনেই সুসমাচার প্রচার করে। তারা বলেন, “যীশুতে বিশ্বাস কর, তাহলে তুমি মুক্তি পাবে এবং ধনী হবে।’’ কিন্তু এটা ঈশ্বরীয় ধার্মিকতার সুসমাচারের শিক্ষা নয়। সুসমাচার অন্য সব কিছুর চেয়ে বেশী জনপ্রিয় হলেও অধিকাংশ লোকের অজ্ঞতার কারণে সুসমাচার বুঝতে পারে না। ঠিক যেমন, ‘বাইবেল’ সর্বাধিক বিক্রীত পুস্তক হলেও তার ভিতরের বিষয়স্তু মানুষ যেমন বুঝতে পারে না, সুসমাচারের বেলায়ও তারা বুঝতে পারে না। ঈশ্বরের দেওয়া সুসমাচার পৃথিবীতে সবচেয়ে মূল্যবান এবং উপকারী।
 “কারণ, ঈশ্বর-দেয় এক ধার্মিকতা সুসমাচারে প্রকাশিত হইতেছে, তাহা বিশ্বাসমূলক ও বিশ্বাসজনক।” ঈশ্বরের সুসমাচার হল মরুভূমির মরুদ্যানের মত। যারা অনেক পাপ করেছিলেন, তাদের জন্য যীশু এসেছিলেন, এবং তিনি তাদের পাপ ধুয়ে দিয়েছেন। যাহোক, নিজেদের ধার্মিকতা প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে মানুষ ঈশ্বরের ধার্মিকতাকে অবহেলা করছে-যা জগতের সমস্ত পাপ ধুয়ে দেয়। যারা নিজেদের কর্ম (সেবা, উৎসর্গ, আগ্রহ, দান, অনুতাপের প্রার্থনা, উপবাস প্রার্থনা, এবং প্রভুর দিন পালন করার জন্য ঈশ্বরের বাক্যের তাৎপর্য ব্যাখ্যা ইত্যাদি) দেখাতে চায়, এবং ঈশ্বরের দান অগ্রাহ্য করে, তারা তাঁর ধার্মিকতাকেও অবজ্ঞা করে।
 
 

ডুমুরের পাতা একসঙ্গে সেলাই করে নিজেদের আচ্ছাদন করে

 
 আদিপুস্তক ৩:২১ পদে লেখা আছে, “আর সদাপ্রভু ঈশ্বর আদম ও তাঁহার স্ত্রীর নিমিত্ত চর্ম্মের বস্ত্র প্রস্তত করিয়া তাঁহাদিগকে পরাইলেন।”
 শয়তানের প্রবঞ্চনায় পতিত হয়ে প্রথম মানব আদম এবং হবা ডুমুরের পাতা সেলাই করে নিজেদেরকে আচ্ছাদিত করলেন।ডুমুরের পাতার আবরণ এবং চৰ্ম্ম নির্মিত বস্ত্রের মধ্যে পার্থক্য বিশেষ লক্ষ্যণীয়। মানবীয় ধার্মিকতা এবং ঈশ্বরীয় ধার্মিকতার মধ্যে যে পার্থক্য, সেটা এখানে প্রকাশ পেয়েছে।
 আদিপুস্তক ৩:৭ পদে লেখা আছে, “আর ডুমুরবৃক্ষের পত্র সিঙ্গাইয়া ঘাগরা প্রস্তুত করিয়া লইলেন।” আপনি কি কখনও মূলার পাতা একত্রে জোড়া দিয়েছেন? আমরা কোরীয়রা মূলার পাতা ধানের কুটা দিয়ে জোড়া দেই এবং শুকাই। শীতকালে আমরা শীমের সাথে ভাপে সিদ্ধ করে খাই। এটা খুবই সু-স্বাদু খাবার।
 পাপ করার পর আদম এবং হবা ডুমুরের পাতা জোড়া দিয়ে আবরণ তৈরী করলেন। এই কাজটি সৎ কর্ম, নিজের সচেষ্টায় আত্মা ধার্মিকতা-এই সবের সামিল। ঈশ্বরীয় ধার্মিকতা নয়। ডুমুরের পাতার আবরণ তৈরীর মাধ্যমে এটাই প্রকাশিত হয় যে, সৎ কর্মের দ্বারা মানুষ ঈশ্বরের সাক্ষাতে নিজের পাপ ঢাকতে চায়। নিজস্ব ধার্মিকতা, আরাধনা, আত্মদান, আত্মচেষ্টা, সেবামূলক কাজ এবং অনুতাপের প্রার্থনা একত্রে জোড়া দেওয়ার মানে এর দ্বারা মনের পাপ ঢেকে রাখা, অর্থাৎ তা প্রতিমা পূজার সমান, এর দ্বারা ঈশ্বরের সাক্ষাতে মানুষের গর্ব/অহংকার প্রকাশিত হয়।
 বিভিন্ন পাতা একত্রে যুক্ত করে, আবরণ তৈরী করে আমরা কি ঈশ্বরের দৃষ্টি থেকে আমাদের পাপ ঢাকতে পারি? সৎ কর্ম দ্বারা কি আমাদের পাপ ঢেকে রাখতে পারি? কক্ষনো না। একদিনের মধ্যেই পাতাগুলো ঝরে পড়তে থাকবে এবং তিন দিন পরে দেখা যাবে সব পাতা ঝরে গেছে। সাজিয়ে দিয়ে তৈরি বস্ত্র বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। যারা ডুমুরের পাতা সেলাই করে বস্ত্র তৈরি করে, অর্থাৎ নিজেদের কর্মের মাধ্যমে ঈশ্বরের সেবা করে ধার্মিক হতে চায়, তারা স্বর্গ-রাজ্যে প্রবেশ করতে পারে না। নিজেদের কর্মের মাধ্যমে অর্জিত ধার্মিকতার দ্বারা আমরা পাপের ক্ষমা লাভ করতে পারি না।
 ডুমুরের পাতা সেলাই করে আদম এবং হবা যখন নিজেদের লুকাতে চাইলেন, তখন ঈশ্বর ডেকে বললেন, “আদম, তুমি কোথায়?” উদ্যানে গাছের আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে রেখে তিনি উত্তর দিলেন, “আমি ভীত হয়েছি, কারণ আমি উলঙ্গ। এইজন্য আমি নিজেকে লুকিয়েছি।” পাপী নিজেকে গাছের আড়ালে লুকায়। বাইবেলে বারবার মানুষকে গাছের সাথে তুলনা করা হয়েছে। যাদের হৃদয়ে পাপ থাকে তারা মানুষের আড়ালে নিজেকে লুকাতে চায়। গীর্জার মত যেখানে অনেক লোকের সমাগম হয়, সেখানে একেবারে পিছনে বা একেবারে সামনে না বসে মাঝামাঝি তারা মানুষের ভীড়ের মাঝে বসতে চায়।
 কিন্তু ঈশ্বরের সাক্ষাতে তারা নিজেদের পাপ লুকাতে পারে না। নিজেদের ধার্মিকতা পরিত্যাগ করে ঈশ্বরীয় ধার্মিকতা গ্রহণ করার মাধ্যমে অবশ্যই তাদের পাপের ক্ষমা পেতে হবে। যাদের বিশ্বাস অস্বচ্ছ যারা সত্য বিশ্বাস করে না, মানুষের ভীড়ে নিজেকে লুকিয়ে রেখে, সৎ কাজের মাধ্যমে নিজেদের পাপ ঢেকে রাখার চেষ্টা করে, তারাও স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করতে চায়, কিন্তু তারা নরকে নিক্ষিপ্ত হবে। ঈশ্বরের সাক্ষাতে পাপীদেরকে প্রকাশিত করতে হবে, ঈশ্বরের কাছে নিজেকে ছেড়ে দিতে হবে।
 আদম, যিনি ডুমুরের পাতা সেলাই করে আবরণ তৈরী করে ছিলেন, ঈশ্বর তাঁকে বলেন, “কেন তুমি ফল খেয়েছো? কে তোমাকে খাইয়েছে?” “হে ঈশ্বর, তুমি আমাকে যে স্ত্রীলোক দিয়েছো , সে আমাকে ফল দিয়েছে এবং আমি তা খেয়েছি।” “হবা, তুমি কেন এটা করলে?” “সাপ আমাকে ভুলিয়েছিল, তাই খেয়েছি।” তাই সদাপ্রভু ঈশ্বর সাপকে বললেন, “তুমি এই কর্ম করেছ, তাই সমস্ত পশুগণের মধ্যে তুমি সর্বাপেক্ষা অধিক শাপগ্রস্হ, তুমি বুকে হাঁটবে এবং সারা জীবন ধুলি ভোজন করবে।” এই জন্য সরীসৃপ বুক ঘসে চলে। আবার ঈশ্বর আদম এবং হবাকে বললেন, “তোমরাও পাপ করেছো। তোমরা প্রতারিত হয়েছ এবং যে তোমাদেরকে পাপ করিয়েছে তার সাথে তোমরাও একই পাপে পাপী।” বর্তমান কালে অনেক মিথ্যা প্রচারকেরা ভ্রান্ত সুসমাচার প্রচার করে এবং বলে, ‘অগ্নি গ্রহণ কর।” যারা তাদের কথায় বিশ্বাস করে, এই সব ভ্রান্ত প্রচারকদের মত, তারাও বিচারিত হবে এবং নরকে যাবে।
 
 

আদম ও তাঁর স্ত্রীর জন্য ঈশ্বর চামড়ার বস্ত্র প্রস্তুত করলেন

 
 ঈশ্বর চিন্তা করলেন “শয়তান দ্বারা প্রতারিত হয়ে আদম এবং হবা পাপ করলেও আমি তাদের পরিত্যাগ করব না। আমি আসলেই মানুষকে আমার প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি করার মনোনয়ন নিয়েছিলাম, আমার পুত্র করতে চেয়েছিলাম; তাই আমার সংকল্প পূরণ করা জন্য আমি তাদের রক্ষা করব।” ঈশ্বর এই সংকল্প নিয়েছিলেন। কাজেই ঈশ্বর তাঁদের পাপ পশুর উপর অর্পণ করলেন, পশুটিকে হত্যা করে তার চামড়া ছাড়িয়ে ঈশ্বর আদম এবং হবাকে সেই চামড়া দ্বারা আচ্ছাদন করলেন। এর দ্বারা তিনি আমাদের পরিত্রাণের প্রতীক স্থাপন করলেন। আসলে ডুমুরের পাতার মত উদ্ভিদ বস্তু দিয়ে তৈরী পোষাক একদিনের বেশী টেকেনা, তা বারবার সংস্কার করতে হয়। ঈশ্বর আদম এবং হবাকে অনন্ত জীবন দ্বারা আবৃত করলেন, বললেন, “আদম ও হবা তোমরা এখানে এস, আমি তোমাদের জন্য পশুর চামড়া দিয়ে যে বস্ত্র তৈরী করেছি তা পরিধান কর। তোমাদের জন্য পশুটি মরেছে, এটা তারই চামড়ার বস্ত্র।” আদম এবং হবাকে নূতন জীবন দেবার উদ্দেশে ঈশ্বর চামড়ার তৈরী বস্ত্র পরানোর মাধ্যমে তাদেরকে ঈশ্বরীয় ধার্মিকতার আশীর্বাদ যুক্ত করলেন। সদাপ্রভু ঈশ্বর, আদম এবং তাঁর স্ত্রীর জন্য চামড়ার বস্ত্র তৈরী করলেন এবং তাদের পরালেন, এভাবেই ঈশ্বর বিশ্বাসীগণকে তাঁর ধার্মিকতায় পূর্ণ পরিত্রাণের বস্ত্রে আবৃত করেন।
 যাহোক, মানুষের সৃষ্ট পরিত্রাণ যা ডুমুরের পাতার বস্ত্রের তৈরী, তা ঈশ্বরীয় পরিত্রাণ হতে সম্পূর্ণ পৃথক। রক্ত-মাংস দেহ দানের মাধ্যমে প্রভু ঈশ্বরীয় ধার্মিকতার পরিত্রাণকে আচ্ছাদিত করেছেন। তাঁর বাপ্তিস্মের মাধ্যমে তিনি আমাদের সমস্ত পাপ তুলে নিলেন এবং আমাদের পক্ষে ক্রুশীয় মৃত্যু দ্বারা বিচারিত হলেন। যীশুর বাপ্তিস্ম ও রক্তের সুসমাচারের মাধ্যমে ঈশ্বরীয় ধার্মিকতায় বিশ্বাস ক’রে আমরা ঈশ্বরের কাছ হ’তে পাপের ক্ষমা পেতে পারি। এই সুসমাচারই পাপীকে পাপ থেকে উদ্ধার করে।
 পৃথিবীতে অনেকে ঈশ্বরীয় ধার্মিকতাকে অবহেলা করে নিজস্ব ধার্মিকতায় প্রতিষ্ঠা পেতে চায়। রোমীয় ১০:১-৪ পদে আছে, “ভ্রাতৃগণ, আমার হৃদয়ের সুবাসনা এবং তাহাদের জন্য ঈশ্বরের কাছে বিনতি এই, যেন তাহাদের পরিত্রাণ হয়। কেননা আমি তাহাদের পক্ষে এই সাক্ষ্য দিতেছি যে, ঈশ্বরের বিষয় তাহাদের উদ্যোগ আছে, কিন্তু তাহা জ্ঞানানুযায়ী নয়। ফলতঃ ঈশ্বরের ধার্ম্মিকতা না জানায় এবং নিজ ধাম্মির্কতা স্থাপন করিবার চেষ্টা করায়, তাহারা ঈশ্বরের ধার্ম্মিকতার বশীভূত হয় নাই; কেননা ধার্ম্মিকতার নিমিত্ত, প্রত্যেক বিশ্বাসীর পক্ষে, খ্রীষ্টই ব্যবস্থার পরিণাম।”
 ঈশ্বরীয় ধার্মিকতা অবজ্ঞা ক’রে ইস্রায়েলীয়রা নিজেদের ধার্মিকতাকে বৈধ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল। পাপ সম্বন্ধে সচেতন করার জন্য ঈশ্বর তাদের ব্যবস্থা দিয়েছিলেন। দশ আজ্ঞার মাধ্যমে মানুষ পাপের জ্ঞান পায় এবং সমাগম তাম্বুর বলিদান প্রথার অনুরূপ তাঁর পরিত্রাণের পাপার্থক বলি নূতন নিয়মে যীশুর বলিদানের যথার্থ প্রতিরূপ। যাহোক, ইস্রায়েলীয়েরা ঈশ্বরীয় ধার্মিকতা সম্বন্ধে জানত না।
 
 
কেন যীশু বাপ্তাইজিত হলেন?
 
 যীশু কেন বাপ্তাইজিত হলেন? এই পৃথিবীর সমস্ত পাপ ধুয়ে দেওয়ার উদ্দেশে যোহন বাপ্তাইজক যীশুকে বাপ্তাইজিত করেছিলেন। বাপ্তিস্ম গ্রহণের পূর্বে যীশু যোহন বাপ্তাইজককে বললেন, “এখন সম্মত হও, কেননা এইরূপে সমস্ত ধার্মিকতা সাধন করা আমাদের পক্ষে উপযুক্ত” (মথি ৩:১৫পদ)। এই কারণে যীশু বাপ্তাইজিত হয়েছিলেন। জগতের মানুষের সমস্ত পাপ ধুয়ে দেওয়ার উদ্দেশে তিনি বাপ্তাইজিত হয়ে ছিলেন। বাপ্তাইজিত হওয়ার মাধ্যমে তিনি জগতের পাপভার তুলে নিয়েছেন। “ঐ দেখ, ঈশ্বরের মেষশাবক যিনি জগতের পাপভার লইয়া যান” (যোহন ১:২৯পদ)। তিনি সমস্ত পাপ তুলে নিয়ে এবং ক্রুশে পাপের প্রায়শ্চিত্ত করলেন। কিন্তু যীশুই যে পাপীর প্রকৃত ত্রাণকর্তা, একথা ইস্রায়েলীয়েরা বিশ্বাস করল না। 
 ইস্রায়েলীয়রা নিজেদেরকে ঈশ্বরীয় ধার্মিকতার কাছে সমর্পণ করেন নাই, কিন্তু যীশুই ব্যবস্থার সমাপ্তি ঘটিয়েছেন এবং যারা বিশ্বাস করে তাদের জন্য ঈশ্বরীয় ধার্মিকতা দান করেছেন। জগতের সমস্ত পাপ ধৌত করার মাধ্যমে তিনি ব্যবস্থার যুগ শেষ করেছেন। বিশ্বাসীদের পবিত্র করার উদ্দেশে ব্যবস্থার অভিশাপ নিজের কাঁধে নিয়ে তিনি বিচারিত হয়েছেন। তিনিই ব্যবস্থার অভিশাপ দূরীভূত করেছেন। সমস্ত মানুষকে যীশু তাদের পাপ থেকে উদ্ধার করেছেন সমগ্র মানব জাতির পাপ ধৌত করার উদ্দেশে তিনি বাপ্তাজিত হয়েছিলেন, যেন তাঁর মাংসময় দেহে জগতের পাপভার অর্পিত হয়। 
 এই জন্য তিন নিজ দেহকে বাপ্তাইজিত করার জন্য যোহনের কাছে এসেছিলেন। তাঁর বাপ্তিস্ম এবং ক্রুশীয় মৃত্যুর মাধ্যমে জগতের সমস্ত পাপ নিজে বহন করলেন এবং এইভাবেই ব্যবস্থার বিচারের হাত থেকে আমাদেরকে তিনি যথাযথ ভাবে উদ্ধার করলেন।
 এখানেই ব্যবস্থার যুগের শেষ হল এবং ঈশ্বরীয় পরিত্রাণের ধার্মিকতা শুরু হল। যোহন বাপ্তাইজকের কাছে বাপ্তিস্মের মাধ্যমে জগতের সমস্ত পাপ নিজ কাঁধে বহন করলেন এবং ক্রুশে মৃত্যুবরণ করলেন। যীশুর ধার্মিকতার পরিত্রাণে বিশ্বাস করার পরেও কিভাবে মানুষের হৃদয়ে পাপ থাকতে পারে?
 “কারণ ঈশ্বর-দেয় এক ধার্মিকতা সুসমাচারে প্রকাশিত হইতেছে, তাহা বিশ্বাসমূলক ও বিশ্বাসজনক।” যীশুর বাপ্তিস্ম এবং তাঁর ক্রুশীয় রক্তই হল ঈশ্বরের ধার্মিকতা। যীশুর বাপ্তিস্ম এবং রক্তে বিশ্বাস করাই হল ঈশ্বরীয় ধার্মিকতায় বিশ্বাস করা।
 যীশুর বাপ্তিস্মের মাধ্যমে ঈশ্বরীয় ধার্মিকতা প্রকৃতভাবে পরিপূর্ণ হয়েছে। আমি চাই আপনি যেন তা বিশ্বাস করেন। তাহলে আপিন পাপ থেকে মুক্ত হবেন। পাপীদেরকে, যীশুর বাপ্তিস্মে বিশ্বাসের মাধ্যমে পাপ থেকে মুক্ত হয়ে ধার্মিকতা লাভের অধিকার দেওয়া হয়েছে। উপরোন্ত, যীশুর ক্ৰুশীয় প্রায়শ্চিত্ত হল ঈশ্বরের বিচারের ধার্মিকতা। “খ্রীষ্টই ব্যবস্থার যুগের সমাপ্তি।” যারা ব্যবস্থার অধীনে জীবন-যাপন করে তাদের উপরে ঈশ্বরের বিচার নেমে আসবে। ঈশ্বরের ব্যবস্থা দ্বারা পাপ প্রকাশিত হয় এবং প্রমানিত হয় যে, পাপের বেতন মৃত্যু, অভিশাপ এবং নরক। কাজেই যীশুর বাপ্তিস্ম এবং ক্রুশীয় রক্তের দ্বারা ব্যবস্থার যুগ শেষ হয়েছে। যীশু আমাদের সময় পাপ তুলে নিয়েছেন এবং ধার্মিকতায় পূর্ণ করার জন্য ব্যবস্থা শেষ হয়েছে।
 
 
নির্বুদ্ধিরা প্রদীপ নিল কিন্তু সাথে তেল নিল না
 
 আসুন, মথি ২৫:১-১৩ পদ দেখি, “তখন স্বর্গ-রাজ্য এমন দশটি কুমারীর তুল্য বলিতে হইবে, যাহারা আপন আপন প্রদীপ লইয়া বরের সহিত সাক্ষাৎ করিতে বাহির হইল। তাহাদের মধ্যে পাঁচজন নির্বুদ্ধি, আর পাঁচজন সুবুদ্ধি ছিল। কারণ যাহারা নির্বুদ্ধি তাহারা আপন আপন প্রদীপ লইল, সঙ্গে তেল লইল না; কিন্তু সুবুদ্ধিরা আপন আপন প্রদীপের সহিত পাত্রে করিয়া তেল লইল। আর বর বিলম্ব করাতে সকালে ঢুলিতে ঢুলিতে ঘুমাইয়া পড়িল। পরে মধ্য রাত্রে এই উচ্চরব হইল, দেখ, বর! তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করিতে বাহির হও। তাহাতে সেই কুমারীরা সকলে উঠিল, এবং আপন আপন প্রদীপ সাজাইল। আর নির্বুদ্ধিরা সুবুদ্ধিদিগকে বলিল, তোমাদের তৈল হইতে আমাদের কিছু দেও, কেননা আমাদের প্রদীপ নিবিয়া যাইতেছে। কিন্তু সুবুদ্ধিরা উত্তর করিয়া কহিল, হয় ত তোমাদের ও আমাদের জন্য কুলাইবে না; তোমরা বরং বিক্রেতাদের নিকটে গিয়া আপনাদের জন্য ক্রয় কর। তাহারা ক্রয় করিতে যাইতেছে, ইতিমধ্যে বর আসিলেন; এবং যাহারা প্রস্তুত ছিল, তাঁহারা তাহার সঙ্গে বিবাহ বাটিতে প্রবেশ করিল; আর দ্বার রুদ্ধ হইল। শেষে অন্য সকল কুমারীরাও আসিয়া কহিতে লাগিল, প্রভু, প্রভু আমাদিগকে দ্বার খুলিয়া দিউন। কিন্তু তিনি উত্তর করিয়া কহিলেন, তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, আমি তোমাদিগকে চিনি না। অতএব জাগিয়া থাক, কেননা তোমরা সেই দিন বা সেই দন্ড জান না।” এখানে বরের জন্য অর্থাৎ আমাদের প্রভুর আগমনের জন্য অপেক্ষারত দশ কুমারীর দৃষ্টান্তটি রয়েছে।
 শাস্ত্রে ঈশ্বরের ধার্মিকতা সম্বন্ধে কি বলা হয়েছে? আসুন দেখি, লেখা আছে যে, বরের সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য এই দশ কুমারীর ঘটনাটি দ্বারা স্বর্গরাজ্যে প্রবেশের বিষয়টি বর্ণনা করেছে। কে স্বর্গ-রাজ্যে প্রবেশ করে? দশ কুমারীর মধ্যে কে স্বর্গ-রাজ্যে প্রবেশ করেছিল? যীশুতে বিশ্বাস করেও কেন তাদের কেউ কেউ স্বর্গ-রাজ্যে প্রবেশ করতে পারল না? এই অংশের মাধ্যমে প্রভু আমাদের সেই বিষয় বলেছেন। দশ কুমারীর মধ্যে ৫জন ছিল নির্বুদ্ধি ও ৫ জন ছিল সুবুদ্ধি। নির্বুদ্ধিরা প্রদীপ নিলেও সাথে তেল নিল না। প্রদীপ মণ্ডলীর প্রতীক। তারা প্রদীপ নিল সাথে, কিন্তু সাথে তেল নিল না, অর্থাৎ। অনেকে আছে পবিত্র আত্মার বাপ্তিস ছাড়াই যারা মন্ডলীতে অস। যাওয়া করে, (তেল মানে “পবিত্র আত্মা”)।
 নির্বুদ্ধিরা কি করল? তারা প্রদীপ নিল কিন্তু সাথে তেল নিল না। যীশুতে বিশ্বাস করার পরেও, নিয়মিত ভাবে মন্ডলীতে যোগ দিলেও অনেকে নূতন জন্ম প্রাপ্ত হতে পারে না। অনেকে বলে, "আমার মন্ডলী সত্যিই দৃঢ়বিশ্বাসী। পৃথিবীর সব খ্রীষ্টিয়ান এইকথা বলবে। তাদের নিজস্ব মন্ডলীর প্রতিষ্ঠাতা এবং কিছু কিছু ব্যক্তি সম্পর্কে তারা গর্ব করে। নির্বুদ্ধিরা প্রদীপ নিল, সাথে তেল নিল না, কিন্তু সুবুদ্ধিরা প্রদীপ নিল এবং পাত্রে তেলও নিল।
মানুষ কি? ঈশ্বরের সাক্ষাতে মানুষ মৃৎপাত্রের মত। সে ধুলি। ধুলি থেকে মানুষকে তৈরী করা হয়েছে। সুতরাং মানুষ হল এমন একটি পাত্র যাতে ঈশ্বরকে ধারণ করা যায়। সুবুদ্ধিরা প্রদীপের সাথে পাত্রে তেলও নিল।
 
 
নির্বুদ্ধিদের তেলবিহীন প্রদীপ আছে, তারা আবেগ-তাড়িত
 
 বাইবেল বলে যে, যীশুতে বিশ্বাস করে এমন অনেক নির্বুদ্ধি কুমারী মানুষের মাঝে আছে। তারা প্রদীপ নেয় কিন্তু সাথে তেল নেয় না। তার মানে তারা নূতন জন্ম প্রাপ্ত নয়। তেল ছাড়া সলতে কি বেশী সময় জ্বলতে পারে? যে সব বিশ্বাসীরা এখনও নূতন জন্ম লাভ করেনি তাদের প্রথমতঃ প্রভুর প্রতি উষ্ণ প্রেম নাই। যার স্থায়ীত্ব চার অথবা পাঁর বছর। পরবর্তীতে এই প্রেম লোপ পায়। তাদের বোঝা উচিত যে, তারা পাপ থেকে মুক্তি পায়নি।
 যারা নূতন জন্ম লাভ করেনি অথবা যাদের তেল (পবিত্র আত্মা) নেই, তারা এমন কথা বলে, “অনেক দিন আগে আমার খুব ভাল বিশ্বাস ছিল। প্রথম দিকে আমি ভাল ছিলাম কিন্তু এখন নেই। আপনিও শীঘ্রই আমার মত হবেন।” এরা নূতন জন্ম বিহীন জীবন- যাপন কারী ভ্রান্ত ভাববাদি ও ভাক্ত। তেল (পবিত্র আত্মা) এর উপর তাদের বিশ্বাস প্রতিষ্ঠিত নয়, তাই পরিত্রাণের বিশ্বাস অবশ্যই তাদের থাকতে হবে। তাদের বিশ্বাস আবেগ-নির্ভর। যীশুর জল ও রক্তে বিশ্বাস করার মাধ্যমে তাদের অবশ্যই পরিত্রাণ পেতে হবে এবং ঈশ্বরের দান হিসাবে তেল গ্রহণ করা উচিত। সলতে হল মানুষের হৃদয়।
 আলোচিত অংশে দেখা যাচ্ছে যে, কুমারীরা বরের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে। এখানে আমাদের অবশ্যই তৎকালীন ইস্রায়েল সমাজের পটভূমি বুঝতে হবে। তাদের বিয়ে হয় রাতে এবং বরের আগমনের সাথে সাথে অনুষ্ঠানও শুরু হয়। সুতরাং কন্যাকে অবশ্যই বরের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এভাবেই ইস্রায়েলদের বিবাহ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।
 “আর বর বিলম্ব করাতে সকলে ঢুলিতে ঢুলিতে ঘুমাইয়া পড়িল।” তখন উচ্চ রব হল, “দেখ বর।” তখন কুমারীরা জেগে উঠল এবং চেহারায় প্রসন্নতা ফিরিয়ে আনার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ল। দশ কুমারী বরের জন্য অপেক্ষা করার সময় এই রব শোনা গেল, “দেখ বর।” “তাহাতে সেই কুমারীরা উঠিল এবং আপন আপন প্রদীপ সাজাইল। আর নির্বুদ্ধিরা সুবুদ্ধিদিগকে বলিল, তোমাদের তেল হইতে আমাদিগকে কিছু দেও, কেননা আমাদের প্রদীপ নিভিয়া যাইতেছে।” নির্বুদ্ধিরা সব সময়ই বোকা ছিল। বর আসার আগেই তাদের তেল প্রস্তুত রাখা উচিত ছিল। সতে যতই দূর্বল হোক না কেন, প্রদীপের তেল তাদের ফুরাত না।
 যে কুমারীদের তেল ছিল না, তারা শুধু তাদের সলতে পোড়াল। অর্থাৎ শুধুমাত্র তাদের হৃদয় পুড়ছিল। “আমাকে নূতন জন্ম প্রাপ্ত হতে হবে, নূতন জন্ম প্রাপ্ত জীবন-যাপন করতে হবে এবং পবিত্র আত্মায় পূর্ণ হতে হবে।” খুব সহজেই তারা তাদের হৃদয় পুড়িয়ে ফেলে। আমাদের ছোট বেলায় ঘরে কেরোসিনের বাতি জ্বালান হতো, যদিও আমরা কাগজের টুকরো সেই বাটিতে জ্বালাতে চাইতাম, চোখের পলকে তা পুড়ে ছাই হয়ে যেত। আগুনের শিখা খুব লম্বা ও উজ্জ্বল হয়ে উঠত। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে তা পুড়ে নিঃশেষ হয়ে যেত। নির্বুদ্ধি, যারা তেল হীন, তারা তাদের হৃদয় (আবেগে) পুড়িয়ে ছাই করে এবং প্রভুর সাথে মিলিত হওয়ার সময় দেখা যায় তাদের বিশ্বাস আগুনে পুড়ে নিঃশেষ হয়ে গেছে। তাদের মধ্যে পবিত্র আত্মা নেই। পবিত্র আত্মা না থাকা অবস্থায়ও তারা বিশ্বাস করে যে তারা সঠিক। “♫ এসো, হে প্রজ্বল্যমান আত্মা এসো ♫” তারা তাড়াহুড়ার মধ্যে থাকে। তখন তারা নাচতে থাকে (তারা তাকে পবিত্র আত্মার নাচ বলে, বুক দুলিয়ে বলে, “এসো, দয়াকরে এসো।” তারা বোকা এবং উন্মাদ। ভিতরে পাপ থাকলে আমরা ত্রাণকর্তার সাক্ষাতে অবশ্যই বোকা থাকব। যীশুতে বিশ্বাস করেও আমাদের হৃদয়ে যদি পাপ থাকে, তাহলে আমরা নির্বুদ্ধি কুমারীর মত। কখনও নির্বুদ্ধি কুমারী হবেন না।
 
 
পাপে কলুষিত ভাৰ্য্যাকে প্রভু কিভাবে বিবাহ করতে পারেন?
 
 সদাপ্রভু ঈশ্বর পবিত্র। ঈশ্বরই বর, ঈশ্বরের পুত্রই বর, যাঁর কোন পাপ নেই। ঈশ্বরই আমাদের বর। তাহলে পাপ থাকা অবস্থায় আপনি কি ঈশ্বরের দেখা পেতে চান? তাহলে সেটা হবে খুব বোকামী এবং নির্বুদ্ধিতার কাজ। 
 যীশু আমাদের বর, তিনি এই পৃথিবীতে এলেন এবং ভাৰ্য্যাকে পবিত্র করলেন। তাঁর বাপ্তিস্মের মাধ্যমে সমস্ত পাপ ধুয়ে নিয়ে মানুষকে ধার্মিক করলেন এবং তাদের তাঁর ভাৰ্য্যাতে পরিনত করলেন। তিনি তাদেরকে তার ভাৰ্যা মনোনীত করলেন। যখন সময় পূর্ণ হল তাদের মধ্যে পাঁচজন বলল, “অনুগ্রহ করে আসুন।” কিন্তু বাকি পাঁচজন অন্ধকারে দাঁড়িয়ে রইল। বর এসে জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমরা কেমন ছিলে?” পাপের কারণে শেষের পাঁচজনের মুখ অন্ধকার হয়ে গেল। তাদের হৃদয়ের এখানে সেখানে পাপ লেগে ছিল তাই তারা গভীর ভাবে দুঃখিত ছিল। 
 হৃদয়ে পাপ থাকা অবস্থায় ক্রন্দনরত ভাৰ্য্যাকে প্রভু কিভাবে বিবাহ করতে পারেন? “প্রভু, আমাকে এই ভাবে পবিত্র করার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ জানাই।” এই ধরণের লোকেরা (নারী/পুরুষ) দূর্বল হওয়া সত্ত্বেও তাদের আত্মিক বরের সাক্ষাত পেয়ে আনন্দিত হবে, কারণ বর তাদেরকে প্রেম করেছেন এবং প্রেমের মাধ্যমে তাদের দূর্বলতা এবং অন্যান্য সাজগোজের জিনিষ পাঠিয়ে ভাৰ্য্যাকে প্রস্তত করবেন। তখন এই সমস্ত জিনিষে সজ্জিত হয়ে ভাৰ্য্যা তার বরের সাথে মিলিত হওয়ার জন্য প্রস্তত হবে।
 আমাদিগকে পরিচালনা দেওয়ার জন্য আমাদের প্রভুকে বর হিসাবে এই পৃথিবীতে পাঠান হয়েছিল। যেন আমরা ভাৰ্য্যা হিসাবে তাঁর সাথে মিলিত হতে পারি। পাপ থেকে আমাদের উদ্ধার করার জন্য যর্দন নদীতে তিনি তাঁর মাংসকে সমর্পণ করলেন। “আর সেই বাক্য মাংসে মুর্তিমান হইলেন, এবং আমাদের মধ্যে প্রবাস করিলেন, আর আমরা তাঁহার মহিমা দেখিলাম, যেমন পিতা হইতে আগত একজাতের মহিমা; তিনি অনুগ্রহে ও সত্যে পূর্ণ” (যোহন১:১৪)। প্রভুতে বিশ্বাস করার মাধ্যমে আমরা যেন অনুগ্রহের পূর্ণতা, সত্য এবং পাপের ক্ষমা পাই। এইজন্য তিনি আমাদের সব পাপ তুলে নিলেন। যর্দ্দন নদীতে বর তাঁর ভাৰ্য্যার সমস্ত পাপ তুল নিলেন। ভাৰ্য্যার পরিবর্তে নিজে ক্রুশে বিচারিত হয়ে প্রভু তাঁর ভাৰ্য্যাকে পাপ থেকে মুক্ত করলেন।
 
 
অর্থ এবং কষ্টার্জিত পরিশ্রম দ্বারা আমি কি পবিত্র আত্মাকে কিনতে পারি?
 
 যাহোক, বর নিকটবর্তী হওয়াতে নির্বুদ্ধিরা যখন দেখল তাদের তেল পুড়ে শেষ হয়ে গেছে; তখন তারা সুবুদ্ধিদের কাছে তেল চাইল। পবিত্র আত্মাকে কি আমরা ভাগাভাগী করতে পারি? অর্থ দিয়ে কি আমরা পবিত্র আত্মাকে কিনতে পারি? সৎ কাজ, পরিশ্রম বা অর্থের বিনিময়ে আমরা কি পাপের ক্ষমা কিনতে পারি? সুবুদ্ধিরা তাদের পরামর্শ দিল যেন তারা আত্মিক উদ্দীপনা (প্রচারকদের কাছ থেকে পবিত্র আত্মা) ক্রয় করে। নির্বুদ্ধিরা মনে করল তারা ইতিপূর্বেই তাদের কাছ থেকে তা কিনেছে। তারা ভাবল অর্থ দিয়ে তারা তেল কিনতে পারবে। তারা আগ্রহ সহকারে ধর্মীয় জীবন-যাপন করছে, বড় বড় দান দিয়েছে এবং উপাসনায় গিয়েছে, কঠোর নিয়ম নিয়ম মেনে গীর্জাতে যোগ দিয়েছে, এবং বারবার প্রার্থনা করছে; তারা ভেবেছিল এইসব কাজের বিনিময়ে তারা কিছু পাবে।
 কিন্তু জগতের কোন কিছুর বিনিময়ে প্রভুর দেওয়া পাপের ক্ষমা কেউ-ই কিনতে পারে না। প্রভুর সাক্ষাতে পাওয়া পর্যন্ত নির্বুদ্ধিরা আবেগের দ্বারা চলতে চেষ্টা করছে। নির্বুদ্ধিদের মধ্যে একজন কুমারী এই বলে ধর্মীয় জীবন-যাপন শুরু করল, “আমি তোমাকে অনুসরন করব প্রার্থনার জন্য এবং অনুতাপের প্রার্থনার জন্য আমি পাহাড়েও যাব। আসুন আমরা তাঁর সেবা করি, সুসমাচার প্রচারের জন্য বিদেশে যাই।”
 অবশেষে তুরিধ্বনিসহ বর এলেন। বর আসার পরে নির্বুদ্ধির তেল কিনতে গেল, কিন্তু যারা পাপের ক্ষমা পেয়েছিল, তেল (পবিত্র আত্মা) নিয়ে প্রস্তুত ছিল তাঁরা বিবাহ ভোজে যোগ দিল। সমস্ত কিছু প্রস্তুত করার পরে বর তাঁর ভার্য্যর সঙ্গে সাক্ষাত করল। তার পরে তিনি দরজা বন্ধ করে দিলেন। যীশু নিজের ইচ্ছামত পাঁচজন কুমারীকে গ্রহণ করলেন তা নয়। বাইবেল ‘পাঁচ’ সংখ্যার অর্থ ‘অনুগ্রহ’ যারা অনুগ্রহে পাপের ক্ষমা পেয়েছে এবং তাঁর অনুগ্রহে এবং সৎ কাজে বিশ্বাস করে, তাদেরকে এই পাঁচ কুমারীর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। তাদের জন্য বর যা করছেন, তারা তা স্বীকার করে এবং তারা প্রভুর ধার্মিকতায় বিশ্বাস করে, যা তাদেরকেও ধার্মিক করে। যাহোক, অন্য পাঁচজনও এলো এবং বলল, “প্রভু, প্রভু, আমাদের জন্য দরজা খুলে দিন।” কিন্তু তিনি উত্তর করলেন, “সত্য, সত্য, আমি তোমাদের বলছি, আমি তোমাদের চিনি না।”
 
 
আমাদের পাপ মুছে গেলেই কেবল আমরা পবিত্র আত্মারূপ দান লাভ করতে পারি
 
 যারা তেল নিয়ে প্রস্তুত থাকে না, তারা প্রভুর সাক্ষাত পায় না। প্রভু শুধু তাদেরকেই স্বর্গ-রাজ্যে গ্রহণ করেন, যারা ঈশ্বরের ধার্মিকতায় বিশ্বাস করে এবং স্বর্গ-রাজ্যের অপেক্ষা করে এবং সত্য হৃদয়ে পাপের ক্ষমা পেয়েছে। প্রভু প্রতিজ্ঞা করেছেন, “মন ফিরাও, এবং তোমরা প্রত্যেকজন তোমাদের পাপ মোচনের নিমিত্ত-যীশু খ্রীষ্টের নামে জলে বাপ্তাইজিত হও।” তাহলে পাপ মোচনের পরে কি হবে? “তাহা হইলে পবিত্র আত্মারূপ দান প্রাপ্ত হইবে” (প্রেরিত ২:৩৮)। আপনি যদি ঈশ্বরের ধার্মিকতার সুসমাচার গ্রহণ করেন, তাহলে সত্যি আপনার হৃদয়ের পাপ মুছে যাবে এবং পবিত্র আত্মা আপনার উপরে আসবেন। দৈহিকভাবে আপনি পবিত্র আত্মার উপস্থিতি উপলব্ধি করতে পারবেন। তথাপি পবিত্র আত্মা আছেন। আমরা বলতে পারি আমাদের কোন পাপ নেই, কারণ পবিত্র আত্মা এবং ঈশ্বরের বাক্য আমাদের হৃদয়ে আছেন। দূর্বল হলেও যদি কেউ ঈশ্বরের ধার্মিকতা গ্রহণ করে, তাহলে সে ধার্মিক হতে পারে। কিন্তু ঈশ্বরের ধার্মিকতা যার নেই, সে পাপী রয়ে যায়।
 
 
কারণ, এখানেই ঈশ্বরের ধার্মিকতা প্রকাশিত হয়েছে
 
 প্রভু জল ও আত্মার দ্বারা এসেছিলেন, তাঁর বাপ্তিস্মের মাধ্যমে তিনি আমাদের পাপ থেকে উদ্ধার করেছেন। বাপ্তিস্ম গ্রহণের মাধ্যমে তিনি আমাদের পাপ তুলে নিয়েছেন এবং আমাদের পাপের জন্য আমাদের পরিবর্তে ক্রুশে রক্ত সেচন করেছেন। এ ব্যাপারে প্রেরিত পৌল যোহন, এবং পিতর কি বলেন? তারা একসঙ্গে যীশুর রক্ত মাংসের কথা বলে। তাঁরা যীশুর বাপ্তিস্ম এবং রক্তের কথা বলেন। মথি ৩:১৩ পদে, যীশুর বাপ্তিস্মের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। পাপীদের পাপ মুক্ত করার জন্য যীশু বাপ্তাইজিত হলেন এবং যর্দ্দন নদীতে জগতের সমস্ত পাপ ধুয়ে দিলেন।
 আসুন, ১পিতর ৩:২১ পদ দেখি, পিতর সাক্ষ্য দেন যে, যীশুর বাপ্তিস্ম হল পরিত্রাণের প্রতিরূপ। “আর এখন উহার প্রতিরূপ বাপ্তিস্ম- অর্থাৎ মাংসের মালিন্যত্যাগ নয়, কিন্তু ঈশ্বরের নিকট সৎসংবেদের নিবেদন- তাহাই যীশু খ্রীষ্টের পুনরুত্থান দ্বারা তোমাদিগকে পরিত্রাণ করে। তিনি স্বর্গে গমন করিয়া ঈশ্বরের দক্ষিণে আছেন; দূতগণ ও কর্তৃত্ব সকল ও পরাক্রমসমূহ তাঁহার বশীকৃত হইয়াছে” (১পিতর ৩:২১,২২ পদ)। 
 লেখা আছে, “আর এখন উহার প্রতিরূপ বাপ্তিস্ম তাহাই যীশু খ্রীষ্টের পুনরুত্থান দ্বারা তোমাদিগকে পরিত্রাণ করে।” বাপ্তিস্মের মাধ্যমে যীশু তাঁর মাংসে আমাদের পাপ তুলে নিলেন, সেটাই আমাদের পরিত্রাণের প্রমাণ। তিনি ক্রুশে রক্ত সেচন করলেন, তাতে প্রমানিত হয় যে, আমাদের স্থলে আমাদের পাপের জন্য তিনি বিচারিত হলেন। আমি যা বলতে চাচ্ছি আপনি কি তা বুঝতে পারছেন? তাই বাইবেল বলে যে, যীশু তিনি, যিনি জল ও রক্ত এবং পবিত্র আত্মা দ্বারা এসেছিলেন (১যোহন ৫:৬-৯)। মহাযাজক হারোণ যেমন বলির উপর হস্তাপর্ণ দ্বারা তাঁর লোকদের পাপ অর্পণ করতেন যীশু তেমনি মাংসময় দেহে পৃথিবীতে এসে সমস্ত পাপ নিজের উপরে নিলেন।
 জল, অর্থাৎ বাপ্তিস্ম, পরিত্রাণের প্রতিরূপ। লেখা আছে, তার অর্থ মাংসের মালিন্য ত্যাগ নয়। তার মানে এই নয় যে, পাপের ক্ষমা পাওয়ার পরে আমরা পাপ করি না। যীশুর বাপ্তিস্মের মাধ্যমে আমরা পাপের ক্ষমা লাভ করতে পারি। তাহলে আমরা কি মাংসে পাপ করি না? হ্যাঁ, আমরা করি। পাপের ক্ষমা সম্পর্কে অনেকের ভুল ধারণা আছে, তারা বলে, “এমন ধার্মিক লোক পৃথিবীতে নাই, যে সৎকর্ম করে, পাপ করে না” (উপদেশক ৭:২০)। মাংস সব সময় দূর্বল, মৃত্যু পর্যন্ত দূর্বল। যতক্ষণ পর্যন্ত না মরে ততক্ষণ পর্যন্ত পাপ করে। “মাংসের মলিন্যত্যাগ নয়, কিন্তু ঈশ্বরের নিকট সৎসংবেদের নিবেদন।” যীশুর বাপ্তিস্ম এবং রক্তে বিশ্বাসের মাধ্যমে আমাদের বিবেক ঈশ্বরের উদ্দেশে সৎ বিবেক হয়। প্রভু আমাদের পাপ তাঁর বাপ্তিস্মের মাধ্যমে তুলে নিয়েছেন এই বিশ্বাসে আমাদের বিবেক ঈশ্বরকে প্রভু এবং ত্রাণকর্তা হিসাবে আহবান করতে পারে।
 
 
যীশুর বাপ্তিস্ম ও রক্ত আমাদের আত্মিক বৃদ্ধি দান করে
 
 যীশুর বাপ্তিস্ম এবং রক্ত আমাদের আত্মিক জীবনে পরিপূর্ণতা আনে। যীশুর বাপ্তিস্ম আমাদের হৃদয়ের বৃদ্ধিদাতা এবং প্রতিরূপ যা আমাদের পাপ ধৌত করে। তাই প্রেরিত পৌল বলেন, বাপ্তিস্ম হল প্রতিরূপ যা আমাদের উদ্ধার করে।
 আসুন, ১পিতর ১:২২-২৩ পদ দেখি, “তোমরা সত্যের আজ্ঞবহতায় অকল্পিত ভ্রাতৃপ্রেমের নিমিত্ত আপন আপন প্রাণকে বিশুদ্ধ করিয়া অন্তঃকরণে পরস্পর একাগ্র ভাবে প্রেম কর; কারণ তোমরা ক্ষয়ণীয় বীৰ্য্য হইতে নয়, কিন্তু অক্ষর বীর্য্য হইতে ঈশ্বরের জীবন্ত ও চিরস্থায়ী বাক্য পূনর্জাত হইয়াছে।”
 যীশুর বাপ্তিস্ম এবং রক্তে বিশ্বাসের মাধ্যমে আমরা নূতন জন্ম লাভ করেছি এবং সমস্ত পাপের ক্ষমা পেয়েছি। প্রভুর লিখিত বাক্যে বিশাস করে আমরা নূতন জন্ম লাভ করেছি। “ঈশ্বরের জীবন্ত ও চিরস্থায়ী বাক্য দ্বারা” আমরা নূতন জন্ম লাভ করেছি। হাল্লিলূয়া! জীবন্ত ও চিরস্থায়ী বাক্য দ্বারা আমাদের নূতন জন্ম হয়েছে। ঈশ্বরের বাক্য হল আইনবিশেষ, মাপকাঠির সাথে তুলনা করা যায়। এটা পরিত্রাণের চাবি কাঠি। পরিত্রাণের জন্য ঈশ্বরের মাপকাঠি কখনও পরিবর্তন হয় না।
 যোহন ১:১৯ পদে, যোহন বাপ্তাইজক বলে, “ঐ দেখ ঈশ্বরের মেষশাবক, যিনি জগতের পাপভার লইয়া যান” জীবনের প্রকৃত খাদ্য ঈশ্বরের মেষশাবক যর্দ্দন নদীতে বাপ্তাইজিত হয়েছিলেন এবং তাঁর মাংস ও রক্ত দ্বারা আমাদের উদ্ধার করেছেন। 
 ঈশ্বরের বাক্যে বিশ্বাসের মাধ্যমে আমরা পবিত্র হয়েছি এবং উদ্ধার পেয়েছি। বাইবেল বলে, “অতএব বিশ্বাস শ্রবণ হইতে এবং শ্রবণ খ্রীষ্টের বাক্য দ্বারা হয়,” এবং “কারণ ঈশ্বর-দেয় এক ধার্ম্মিকতা সুসমাচারে প্রকাশিত হইতেছে, তাহা বিশ্বাসমূলক ও বিশ্বাসজনক, যেমন লেখা আছে, “কিন্তু ধার্ম্মিক ব্যাক্তি বিশ্বাস হেতু বাঁচিবে”(রোমীয় ১০:১৭, ১:১৭)। সুসমাচারে বিশ্বাসের মাধ্যমে আমরা ধার্মিক হতে পারি।
 আপনি কি পবিত্র হয়েছেন? - আমেন। আপনার কি কোন পাপ নাই? এটাই হল সুসমাচার, সু-খবর, গ্রীক ভাষায় ‘Euaggelion’। ঈশ্বরের ধার্মিকতা কি? তা হল এই সত্য যে, আমাদের জন্য রক্ত মাংস দান করার মাধ্যমে প্রভু আমাদের পাপ মুছে দিয়েছেন। ঈশ্বরের ধার্মিকতা আমাদের পবিত্র করেছে। ঈশ্বরের ধার্মিকতা হল আমাদের যীশু, যিনি ছিলেন নিষ্পাপ, যিনি জগতের সমস্ত পাপ তুলে নিয়েছেন। এবং পাপীদের জন্য ক্রুশবিদ্ধ হয়েছেন। জল অর্থাৎ বাপ্তিস্ম জগতের সমস্ত পাপ ধৌত করেছেন। এই সত্যের মাধ্যমে ঈশ্বরের ধার্মিকতা দেওয়া হয়েছে যে, যীশু তাঁর বাপ্তিস্ম ও ক্রুশীয় মৃত্যুর মাধ্যমে জগতের পাপ তুলে নিয়েছেন। তাঁর বাপ্তিস্ম এবং মৃত্যুতে ঈশ্বরের ধার্মিকতা নিহিত এবং ক্রুশ হল বিচারের প্রতিরূপ। সুসমাচারে ঈশ্বরের এই ধার্মিকতা প্রকাশিত হয়েছে।