Search

শিক্ষা

বিষয় ৯: রোমীয় পুস্তক (রোমীয় পুস্তকের ভাষ্য)

[1-3] ধার্মিক ব্যক্তি বিশ্বাস হেতু বাঁচিবে (রোমীয় ১:১৭ পদ)

< রোমীয় ১:১৭ পদ >
 “কারণ ঈশ্বর-দেয় এক ধার্ম্মিকতা সুসমাচারে প্রকাশিত হইতেছে, তাহা বিশ্বাসমূলক ও বিশ্বাসজনক, যেমন লেখা আছে, “কিন্তু ধার্ম্মিক ব্যক্তি বিশ্বাস হেতু বাঁচিবে।”
 
 
আমাদেরকে অবশ্যই বিশ্বাস দ্বারা বাঁচতে হবে 
 
 ধার্মিক কিসে বাঁচে? বিশ্বাসে।ধার্মিক বিশ্বাস দ্ধারা বাঁচে।আসলে ‘বিশ্বাস’ শব্দটি খুবই সাধারণ হলেও এটাই বাইবেলের প্রাণ।ধার্মিক শুধু বিশ্বাস দ্বারাই বাঁচবে। আশা করি, আমরা এই অংশে আলোকিত হব, কারণ, আমরা মাংসে আছি এবং পবিত্র আত্মা আমাদের মধ্যে বাস করেন। বাইবেলের নিগুঢ়তত্ত্ব না জেনে নিজের চিন্তা- চেতনা থেকে আমরা বাক্যের ব্যাখ্যা করে থাকি। হয়তো বাইবেলের আক্ষরিক অর্থ বুঝতে পারি। যুগপৎ ভাবে আমাদের মাংস ও আত্মা রয়েছে ।তাই বাইবেল বলে, আমরা যারা ধার্মিক, তারা বিশ্বাস দ্বারা বাঁচব, কারণ আমরা পাপের ক্ষমা পেয়েছি। 
 
 
সমস্যাটা হল এই যে, মাংস ভাল কিছু করতে পারে না। 
 
কিন্তু সমস্যটা হল এই যে, আমাদের মাংসও রয়েছে। তাই অনেক ক্ষেত্রে আমরা মাংস অনুসারে বিচার করে থাকি। কখনও কখনও মাংসের বদ্ধমূল ধারনা থেকে আমরা বিচার করি এবং উপলব্ধি করি। এবং যখন বিশ্বাস করার দরকার তখন তাঁর বাক্যে পুরোপুরি বিশ্বাস করি না। কিন্তু বাইবেল স্পষ্টই বলে যে, ধার্মিক কেবল বিশ্বাস দ্বারা বাঁচবে। তাহলে তার মানে কি দাঁড়ায়? আমরা ভাবতে পারি, ‘‘যে ধার্মিকগণ বিশ্বাস দ্বারা বাঁচবে না, তারা কোথায় আছে? এই বাক্যের উপর আপনি কেন এত জোর দিয়েছেন? এটা শাস্ত্রের একমাত্র বাক্য নয়।” 
 আজ আমি আপনাদের এই বাক্য সম্পর্কে বলতে চাই। আমাদের বিশ্বাস দ্বারা বাঁচতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত কোন বিষয়ের ব্যাখ্যা না করি, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা আমাদের অজ্ঞতা বুঝতে পারি না, যদিও আমাদের ধারনা যে আমরা বিষয়টি ভালভাবে জানি। পাপী কোন বিরুদ্ধ শক্তির সঙ্গে যুদ্ধ করে? যে ব্যাক্তি (নারী/পুরুষ) নূতন জন্ম লাভ করেনি, সে তার নিজের চিন্তা এবং মাংসের সাথে যুদ্ধ করে। নূতন জন্ম ব্যাক্তি কার সঙ্গে যুদ্ধ করে? 
 তার মাংস এবং আত্মা পরস্পরের সাথে যুদ্ধ করে। আপনি হয়ত অবাক হচ্ছেন যে, কেন আমি জানা বিষয়টি বলছি, এটা গুরুতপূর্ণ বিষয় বলে আমি বার বার এর ব্যাখ্যা করতে চাই।
 মাংসের দেহে থাকা অবস্থায় একজন নূতন জন্ম প্রাপ্ত ব্যক্তির মাংস এবং আত্মা অবিরত পরস্পরের সাথে যুদ্ধ করে। ধার্মিক ব্যক্তির মাংসিক দেহেও একটি সহজাত প্রবৃত্তি রয়েছে, যার কারণে মানুষ অমিতাচারী জীবন-যাপন করতে চায়, কোন ভুল না করে সম্পূর্ণ বিশুদ্ধতায় পৌঁছাতে চায়, যা ঈশ্বর নির্দেশিত বিশ্বাসের জীবন-যাপন থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।
 তাই আত্মিক সমস্যাগুলির বিষয়েও ধার্মিক ব্যক্তি সঠিক ভাবে বিশুদ্ধতায় পৌঁছাতে চায়, এবং একই সাথে মাংসের বিশুদ্ধতাও চায়। কিন্তু মাংসের বিশ্বাস দ্বারা কি কেউ জীবন-যাপন করতে পারে? পৌল যেমন বলেছেন, “কেননা আমি যাহা ইচ্ছা করি, সেই উত্তম ক্রিয়া করি, সেই উত্তম ক্রিয়া করি না; কিন্ত মন্দ, যাহা ইচ্ছা করি না, কাজে তাহাই করি”(রোমীয়৭:১৯)। মাংস কখনও ভাল কিছু করতে পারে না। আমাদের মাংসের সহজাত প্রবৃত্তি দ্বারা ঈশ্বরের সম্মুখে আমরা খোলাখুলি থাকতে চাই, কিন্তু পাপ ছাড়া মাংস আর কিছুই করতে পারে না।
 
 
মাংসের সাহায্যে আমরা বিশ্বাসে জীবন যাপন করতে পারি না 
 
 কাজেই, দৃঢ়ভাবে বলছি মাংসে ধার্মিক জীবন যাপন করা আর। প্রকৃত বিশ্বাস এই দুইয়ের মাঝে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। বাইবেলের দৃষ্টিকোন থেকে ঈশ্বর সম্বন্ধে আমাদের স্ববিরোধী ধারনা রয়েছে। মাংসে বিশুদ্ধ হওয়া এবং কোন রকম সমস্যা ছাড়া মাংসে জীবন-যাপন করা একবারে অসম্ভব।
মানুষের দেহ ধুলি সমতুল্য। বাইবেল বলে,“কারণ তিনিই আমাদের গঠন জানেন; আমরা যে ধূলিমাত্র, ইহা তাঁহার স্মরণে আছে” 
(গীতসংহিতা ১০৩:১৪ পদ) বুদবুদ যেমন ক্ষণিকের জন্য সৃষ্টি হয়ে মুহূর্তে বিলীন হয়ে যায়, এই বিষয়ও তেমনি। যারা নূতন জন্ম প্রাপ্ত এবং যারা নূতন জন্ম পায়নি উভয়েরই কি পাপ না করার ক্ষমতা আছে? নূতন জন্ম প্রাপ্ত ব্যক্তি কি পাপ এড়িয়ে চলতে পারে ? মাংসিক দেহে আমরা যদি পাপহীন জীবন-যাপন করতে পারি, তবে বিশ্বাসের দ্বারা আমাদের বাঁচার দরকার নেই। তাহলে কি আমরা মাংসিক শক্তিতে বেঁচে থাকতে পারি ? আমরা নিশ্চিত ভাবে জানতে পারি যে, এটা অসম্ভব। সমস্যাটা হল এই যে, আমরা এটা জানতে এবং বুঝতে পারি কিনা যে, আমরা নূতন জন্ম লাভ করেছি কিনা, কারণ মাংস অবিরত পাপ করছে। 
 মাংসময় দেহ সম্পর্কে আমরা কতটুকু জানি? নিজেদেরকে। আমরা কতটুকু চিনি? আপনি হয়তো ভাবতে পারেন, নিজেকে আপনি ১০০% চেনেন, কিন্তু আপনার চরিত্রের সাথে এই চিন্তার বিস্তর ফাঁক রয়েছে। কারণ, আপনি আসলে বিশ্বাস করেন না যে, আপনি পাপে পরিপূর্ণ। মোটামুটি নিজের সম্পর্কে আপনি কতভাগ নিশ্চিত বলে মনে করেন? ৫০% ও অনেক বেশী হয়ে যায়। মানুষ নিজেকে বড়জোর ১০%-২০% বুঝতে পারে। প্রকৃতপক্ষে, নিজের সম্বন্ধে ১০০% ধারনা আছে বলে বিশ্বাস করলেও, নিজেদেরকে। তারা ১০-২০% জানতে পারে। যখন তারা বুঝতে পারে যে তারা আরো পাপ করছে, তখন লজ্জিত হয় এবং প্রভুর পথ পরিত্যাগ করে। তখন তাদের মনে প্রশ্ন জাগে যে, শেষ পর্যন্ত তারা বিশ্বাস ধরে রাখতে পারবে কিনা, এবং বুঝতে পারে যে, তা একেবারে অসম্ভব।
 মানুষের হৃদয় থেকে কীটপতঙ্গ সহ ময়লা জল ও আবর্জনা বের হয়। মনে হয় বিশ্বাসে ধার্মিক জীবন - যাপন করা তাদের পক্ষে অসম্ভব। “হায় হায় মনে হয় যীশুর পথে চলা আমার পক্ষে আর সম্ভব হবে না। ভেবেছিলাম চিরতরে আমার পাপ মুছে যাওয়ার পরে আমার জীবনটা আরো সুন্দর হবে, কিন্তু আমার মাংসিক দেহটা এখনও দূর্বল এবং আমি অশুচি হয়ে পড়েছি, যদিও অনেক আগেই নূতন জন্ম লাভ করেছিলাম।” মাংসিক দেহটা অর্থহীন এবং নোংরা। আমরা নিজেদেকে মোটেই চিনি না এবং বিশেষ করে, আমাদের মাংসের পাপ স্বীকার করতেও চাইনা। কাজেই আমরা বুঝতে পারি যে, বিভিন্ন ধরনের মাংসিক চিন্তা আমাদের ভিতর থেকে বের হয়, যার ফলে আমরা বিশ্বস্ত জীবন - যাপন করতে পারি না। মাংস দ্বারা আমরা বিশ্বস্ত জীবন - যাপন করতে পারি না। নিজের বিভিন্ন রকম পরীক্ষার মধ্য দিয়ে চলার মাধ্যমে আমরা কি ঈশ্বরের সাক্ষাতে ক্রমান্বয়ে পবিত্রীকৃত ও শুচি হতে পারি? তা একবারেই অসম্ভব এবং মৃত্যু পর্যন্ত মাংস পাপ না করে পারে না।
 
 

তাহলে ধার্মিক ব্যক্তি কিভাবে বাঁচে?

 
 “আর তোমরা যদি প্রমাদবশতঃ পাপ কর, মোশির কাছে সদাপ্রভু এই যে সকল আজ্ঞা দিয়াছেন, এই সকল যদি পালন না কর, এমন কি, সদাপ্রভু যে দিনে তোমাদিগকে আজ্ঞা দিয়াছেন, তদবধি তোমাদের পুরুষপরম্পরার জন্য সদাপ্রভু মোশির হস্তে তোমাদিগকে যত আজ্ঞা করিয়াছেন, সেই সকল যদি পালন না কর, এবং তাহা যদি মন্ডলীর অগোচরে প্রমাদবশতঃ হইয়া থাকে, তবে সমস্ত মন্ডলী সদাপ্রভুর উদ্দেশে সৌরভার্থক হোমের জন্য এক গোবৎস ও বিধিমতে তাহার সহিত ভক্ষ্য ও পেয় নৈবেদ্য, এবং পাপার্থক বলির জন্য এক ছাগ উৎসর্গ করিবে। আর যাজক ইস্রায়েল-সন্তানগণের সমস্ত মন্ডলীর জন্য প্রায়শ্চিত্ত করিবে; তাঁহাতে তাহাদিগকে ক্ষমা করা যাইবে, কেননা উহা প্রমাদ, এবং তাহারা সেই প্রমাদ প্রযুক্ত আপনাদের উপহার, সদাপ্রভুর উদ্দেশে অগ্নিকৃত উপহার, ও সদাপ্রভুর সম্মুখে পাপার্থক বলি আনিল। তাহাতে ইস্রায়েল-সন্তানগণের সমস্ত মন্ডলীকে ও তাহাদের মধ্যে প্রবাসী বিদেশীদিগকে ক্ষমা করা যাইবে; কেননা সকল লোক প্রমাদবশতঃ ঐ কর্ম্ম করিল। আর যদি কোন এক ব্যক্তি প্রমাদবশতঃ পাপ করে, তবে সে পাপার্থক বলিরূপে একবর্ষীয়া এক ছাগবৎসা আনিবে। আর যাজক সদাপ্রভুর সাক্ষাতে ঐ প্রমাদী ব্যক্তির জন্য তাহার প্রমাদকৃত পাপপ্রযুক্ত প্রায়শ্চিত্ত করিবে; তাহাতে তাহার প্রায়শ্চিত্ত হইলে তাহার পাপ ক্ষমা হইবে। ইস্রায়েল-সন্তানগণের স্বজাতীয় হউক, কিম্বা তাহাদের মধ্যে প্রবাসী বিদেশী হউক, তোমাদের জন্য প্রমাদীর একই ব্যবস্থা হইবে। (গণনাপুস্তক ১৫:২২-২৯)
 “আর তোমরা যদি প্রমাদবশতঃ পাপ কর, মোশির কাছে সদাপ্রভু এই যে সকল আজ্ঞা দিয়াছেন, এই সকল যদি পালন না কর” প্রমাদবশতঃ” - বাইবেলে এরকম শব্দ অনেকবার ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ মাংসিক দেহে মানুষ অনিচ্ছাকৃত ভাবে পাপ করে এবং যা করা উচিত নয় তাই করে। আমি আপনার কাছে জানতে চেয়েছিলাম - মাংসের পক্ষে শুচি হওয়া সম্ভব কিনা, কিন্তু পাপের ক্ষমা পাওয়ার পরেও তা শুচি হতে পারে না। পাপ ক্ষমা লাভের পরে প্রাথমিক ভাবে মনে হয় যেন মাংসিক দেহ যথাযথ ভাবে শুচি হয়েছে। কিন্তু আসলে এর ফলে আমরা নিজেদেরকে প্রকাশের পরিবর্তে আড়াল করি, মাংস থেকে আবর্জনা বের হয় এবং মাংস সব সময় পাপ করে। মাংস সব সময় সেভাবে পাপ করে, যা ঈশুর ঘৃণা করেন । মাংসিক দেহ কি অসংখ্যবার বা অবিরত পাপ করে না ? যেভাবে ঈশ্বর চান মাংস কি সব সময় সেভাবে বাঁচতে পারে ? ঈশ্বর যা অপছন্দ করেন, মাংস তা পছন্দ করে। মাংস সব সময় নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে পাপ করে।
 ঈশ্বরের ব্যবস্থায় দশ আজ্ঞা নিহিত রয়েছে, যা ৬১৩টি বিধির মাধ্যমে সবিস্তারে বর্ণনা করা হয়েছে। “আমার সাক্ষাতে তোমার অন্য দেবতা না থাকুক। কোন খোদিত প্রতিমা তুমি নির্মাণ করো না। তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর নাম অনর্থক লইও না। বিশ্রামবারকে পবিত্র ভাবে পালন কর। পিতা-মাতাকে সম্মান কর। নরহত্যা কর না। ব্যভিচার করা না। চুরি কর না। প্রতিবেশীর সাক্ষাতে মিথ্যা সাক্ষ্য দিও না। প্রতিবেশীর কোন বস্তুতে লোভ কর না।” প্রথম চারটি আজ্ঞা ঈশ্বরের সাথে সম্পর্ক রাখার ক্ষেত্রে সম্পর্ক যুক্ত। বাকী পঞ্চম থেকে দশম আজ্ঞা পর্যন্ত মানুষের সাথে সম্পর্ক রাখার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ব্যবস্থা পালনের মাধ্যমে কি মাংসকে সন্তুষ্ট করা যায়?
 পথচারীরা যেন নিরাপদে রাস্তা পার হতে পারে, সেজন্য রাস্তায় সাদা রঙ্গের দাগ দেওয়া হয়। কিন্তু মাংস কখনও নিয়ন্ত্রণ-আইন মানতে চায় না।। পাছে লোকে কিছু বলে, এই কারণে মানুষ সাদা দাগের উপর দিয়ে রাস্তা পারাপার হয়। কিন্তু আসলে তারা আই মানতে চায় না। আসলে, কাছে কেউ না থাকলে নিয়ন্ত্রণ - আইন উপেক্ষা করে মানুষ রাস্তা পার হয়।
 মাংস স্বভাবজাতভাবে পাপ করে, সুশিক্ষিত লোকদের উচিত নিয়ন্ত্রণ- আইন মেনে চলা। যাহোক, মাংস তাদেরকে কেবল স্মরণ করিয়ে দেয়। নিয়ন্ত্রণ-আইন মেনে রাস্তা পার হওয়া আমরা অপছন্দ করি এবং যতটা মেনে না চলার চেষ্টা করি। 
 তাহলে ঈশ্বর কি উদ্দেশে আমাদের ব্যবস্থা দিলেন? ব্যবস্থা আমাদের পাপের জ্ঞান দেয় ( রোমীয় ৩:২০পদ )। ব্যবস্থার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি যে, আমরা পাপী এবং দশ আজ্ঞা লঙ্ঘন করেছি। আমরা সব সময় পাপ করছি। ব্যবস্থা চায় আমরা যেন সব সময় ভাল কাজ করি, মন্দ কাজ না করি। তথাপি আমাদের মাংস এতই দূর্বল যে আমরা সব সময় পাপ করি; ব্যবস্থা পালন করতে পারি না। বাইবেল বলে, ধার্মিক ব্যক্তি বিশ্বাস দ্বারা বাঁচবে। তাহলে মাংসিক দেহে জীবন-যাপন করা অবস্থায় ধার্মিক ব্যক্তি কিভাবে বাঁচবে? ধার্মিক ব্যক্তি ঈশ্বরে বিশ্বাস করার মাধ্যমে বাঁচে। আত্মা সব সময় ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করতে চায়, কিন্তু দশ আজ্ঞা লঙ্ঘন করার মাধ্যমে মাংস সব সময় পাপ করছে। মাংস পালাক্রমে পাপ করে, আজ একটি পাপ করে, পরের দিন অন্য পাপটি করে। কিছু পাপ আছে, যেগুলি মাংস অন্য পাপের তুলনায় বেশী করতে চায়। মানুষ (নারী /পুরুষ) দেহে সারাজীবন পাপ করে, এটা কি সত্যি নয়?
 আসুন, পঞ্চম আজ্ঞা দেখি, “পিতা-মাতাকে সমাদর কর।”এটা আক্ষরিক অর্থে যুক্তিযুক্ত এবং সব সময় না পারলেও মানুষ তা পালন করতে চেষ্টা করে। আসুন, পরেরটা আলোচনা করি। পরবর্তীটা হল," নরহত্যা কর না” প্রত্যেকেই মনে মনে অন্যকে হত্যা করে, যদিও অনেকে প্রকাশ্যে মানুষ হত্যা করে। হত্যা করা জঘন্য পাপ, তাই আসুন এটা বাদ দিয়ে পরেরটা দেখি, “ব্যভিচার কর না” এবং “চুরি কর না।” প্রাত্যহিক জীবনে এই পাপশুলো আমরা অহরহ করছি। চুরি-বিদ্যা এবং ব্যভিচারে কোন কোন লোকের সহজাত প্রতিভা রয়েছে। এই পাপগুলো করা তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তারা কি লোভও করে না? (বাইবেল বলে, লোভও একটি পাপ)। যথার্থ জায়গা থেকে অন্যের অধিকারের জিনিস সরিয়ে ফেলতে ( চুরি ) তারা ওস্তাদ। যখনই ইচ্ছা হয়, মাংস এসব কাজ করে।
 ধরুন, আমরা দশটার মধ্যে দুই ধরণের পাপ করি, তাতে কি ঈশ্বরের সাক্ষাতে ধার্মিক হব? না, কখনোই না। মাংসের দ্বারা আমরা ঈশ্বরের সাক্ষাতে ধার্মিক হতে পারি না কারণ, বিন্দু মাত্র পাপও ঈশ্বরের সাক্ষাতে পাপ। মাংস অবিরত পাপ করছে। মৃত্যু পর্যন্ত মাংস ঈশ্বরের সাক্ষাতে পাপ ছাড়া অন্য কিছু করতে পারে না। তাহলে আপনি একদিনের জন্য হলেও কি ঈশ্বরের সাক্ষাতে পাপ করেনি? ঘুমের মধ্যেও মানুষ পাপ করে। কল্পনায় সুন্দরী মহিলাকে দেখে এবং রাতে স্বপ্ন দেখে । আমরা সবাই পাপ করি।
 ঈশ্বর যা নিষেধ করেছেন মাংস তাই করে, ঈশ্বর যা করতে বলেছেন তা করে না।পাপ মুছে যাওয়ার পরেও আমাদের মাংস একই রকম থাকে। তাহলে আমরা কিভাবে শুদ্ধ হতে পারি? মাংস যদি সম্পূর্ণ না-ই হতে পারে, তাহলে পবিত্র হওয়ার উপায় কি? যাহোক, যীশুর মাধ্যমে কি তা সম্ভব নয়? 
 আমরাই ঐ সমস্ত পাপ করছি। যীশুর আগেও কি আমরা পাপ করেছি? –হ্যাঁ , আমরা পাপ করেছি। এখনও আমরা পাপ করি কি না? হ্যাঁ, করি। আমরা কি অবিরত পাপ করি? হ্যাঁ, আমরা মৃত্যু দিন পর্যন্ত যতক্ষণ মাংসময় দেহে আছি, আমরা অবিরত পাপ করছি। আমরা এমন এক পাপে পূর্ণ জীব যে, শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আমি পাপ না কারে পারি না। তাহলে কিভাবে আমরা সমস্ত পাপ হতে মুক্ত হতে পারি? প্রথমতঃ যদি আপনি এখনও নূতন জন্ম না পেয়ে থাকেন, তাহলে আপনাকে অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে আপনি পাপী। তিনি আপনার সমস্ত পাপ মুছে দেন। মুক্ত হওয়ার পরেও আমাদের স্বীকার করা দরকার যে আমরা পাপী, কিন্তু এটাও স্বীকার করতে হবে যে, আমরা পাপ করছি। ব্যবস্থা দ্বারা নিজেদেরকে পরীক্ষা করার পরেও আমাদের স্বীকার করা উচিত যে, আমরা পাপ করছি। এমনকি যদিও ভাল হওয়ার অজুহাতে মাংসময় দেহে মাঝে মাঝে ভাল কাজ করার চেষ্টা করছি। পাপকে আমাদের পাপ বলে স্বীকার করা উচিত।
 
 

 বিশ্বাস দ্বারা আমরা পবিত্র হই

 
 তাহলে এটা স্বীকার করার পরেও কিভাবে আমরা পাপ সমস্যার সমাধান করি? আমরা কি এই বিশ্বাসে পবিত্র হই যে, যোহন বাপ্তাইজকের কাছে বাপ্তিস্ম নেওয়ার মাধ্যমে যীশু আমাদের পাপ তুলে নিয়েছেন এবং আমাদের মুক্ত করার জন্য সেই পাপের কারণে ক্রুশে বিচারিত হয়েছেন?- হ্যাঁ- আমরা এই বিশ্বাসে পবিত্র হয়েছি যে, যীশুর বাপ্তিস্মের সময় আমাদের মাংসের সমস্ত পাপ তাঁর উপরে অর্পিত হয়েছে। তাহলে, “ধার্মিক ব্যক্তি বিশ্বাস হেতু বাঁচিবে” -একথার অর্থ কি?
 আত্মার যে বিশ্বাস, মাংস হেতু নয়। একমাত্র ঈশ্বরে বিশ্বাস, তাঁর বাক্য, তাঁর ব্যবস্থা এবং তাঁর প্রায়শ্চিত্ত আমাদেরকে পবিত্র করতে পারে, এবং তাঁকে বিশ্বাস হেতু আমরা ধার্মিক হয়েছি, এই বিষয় নিশ্চিত হতে পারি। এটা কি সত্য, নাকি সত্য না? এটা সত্য। যদিও আমরা পাপের ক্ষমা পেয়ে ধার্মিক হয়েছি, মাংসের ভাব দূর্বল এবং পূর্ণতা থেকে দূরে। বাইবেল বলে, “কারণ লোকে হৃদয়ে বিশ্বাস করে, ধার্মিকতার জন্য; এবং মুখে স্বীকার করে, পরিত্রাণের জন্য” ( রোমীয় ১০ : ১০ )। এইরূপে প্রেরিত পৌলের মতে, কিন্ত মাংসের ভাব সর্বদাই দূর্বল এবং অসম্পূর্ণ। আমাদের মাংসিকতার কারণে, আমরা ধার্মিকও হতে পারি না এবং ধার্মিকতায় পূর্ণও হতে পারি না। ধার্মিকতা পূর্ণ জীবনে মাংসিকতা থাকতে পারে না।
 ঈশ্বর বিশ্বাস তাঁর নামে সেই ধার্মিক বাজি ব্যক্তি বেঁচে থাকতে পারেন, পাপের ক্ষমা পেতে পারেন এবং আশীর্বাদ পেতে পারেন, যা ঈশ্বর আমাদেরকে দান করেছেন এবং এটাই একমাত্র পথ। তাঁর অনন্তকালীন ধার্মিকতার উপর নির্ভর হেতু আমরা পবিত্ৰীকৃত এবং ধার্মিক হতে পেরেছি, যা আমরা ঈশ্বর হেত গহণ করতে পারি এবং তাঁর উপর আমাদের বিশ্বাস হেতু অনন্ত জীবনের নিমিও বেঁচে থাকি। আমাদের জীবন ঈশ্বরে বিশ্বাসের উপর নির্ভরশীল।---একারণে বাইবেল বলে, ধার্মিক ব্যক্তি বিশ্বাস হেতু বাঁচিবে। আমরা বিশ্বাসে পবিত্ৰীকৃত হয়েছি এবং বিশ্বাসে ঈশ্বরের ধার্মিকতা পরিধান করেছি এবং এই বিশ্বাস হেতুই জীবন-যাপন করছি। এমনকি যদিও মাংসিক ভাব ধার্মিক নয়, কেননা পবিত্ৰীকৃত হওয়ার জন্য চেষ্টা করা বোকামী পারি, যখন ঈশ্বরকে বিশ্বাসের দ্বারা তাঁর সাহায্য গ্রহণ করি এবং তিনি আমাদের ঈশ্বর, আমাদের প্রভু এবং আমাদের মেষপালক হন।
 এজন্য প্রেরিত পৌল বলেন, “ধার্মিক ব্যক্তি বিশ্বাস হেতুই বাঁচিবে।” পুরাতন নিয়মে হবককূক ভাববাদী গ্রন্থে উদ্ধৃত আছে। তিনি আরও বলেন, “এ কারণে ইহাতে ( সুসমাচার ) ঈশ্বরের ধার্মিকতা প্রকাশিত হয়েছে।” ঈশ্বরের ধার্মিকতা কি? এটা কি মানবিক ধার্মিকতার মতই? এটা কি আমাদেরকে ধীরে ধীরে পাপ থেকে পবিত্র করে? আমরা কি নিশ্চিত যে যীশুকে বিশ্বাস করার পরে আমরা পাপ করব না? 
 একমাত্র সুসমাচারেই ঈশ্বরের ধার্মিকতা প্রকাশিত হয়েছে এবং কেবলমাত্র ইহাই আমাদেরকে নিশ্চিতভাবে পাপের ক্ষমা দিয়ে পবিত্র করেছে, কেননা আমরা কখনওই মাংসে ধার্মিক হতে পারি না। “কারণ ঈশ্বর দেয় এক ধার্মিকতা সুসমাচার প্রকাশিত হইতেছে, তা বিশ্বাস মূলক ও বিশ্বাস জনক।” এর অর্থ হচ্ছে যে, একমাত্র বিশ্বাস হেতুই আমরা ধার্মিক হয়েছি। ঈশ্বরকে বিশ্বাস হেতুই ধার্মিক বেঁচে রয়েছে এবং ধার্মিক গণিত হয়েছে। ধার্মিক ব্যক্তি ঈশ্বরের ধার্মিকতা পরিধানের মাধ্যমেই ধার্মিক হয়েছে এবং এই বিশ্বাস হেতু তাঁর সমস্ত আশীর্বাদ গ্রহণ করেছে। 
 
 
আমরা অবশ্যই বিশ্বাস দ্বারা বাঁচবো
 
 বিশ্বাসে জীবন-যাপন করা এই রকম। মানুষের ইচ্ছা শক্তি তাসের ঘরের চেয়ে নড়বড়ে; তা যত দৃঢ় হোক না কেন। মানুষ (নারী / পুরুষ ) বলতে পারে “প্রভু, আমি এটা করব”, কিন্তু মাংস তা করতে পারে না। পাপ ক্ষমা লাভের পর প্রভুতে এবং প্রায়শ্চিত্তের বাক্যে, ব্যবস্থায় বিশ্বাস স্থাপনের দ্বারা আমরা বাঁচি, আমরা যদি দীর্ঘসময় বিশ্বাসে জীবন-যাপন করি, তাহলে কি আমাদের মাংস সৎ স্বভাবের হয়? কখনও না। সুতরাং বিশ্বাসে জীবন-যাপন করার অর্থ হল ঈশ্বরে সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাস স্থাপন করা। সুসমাচারে সম্পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপনের দ্বারা আমরা ধার্মিক হই এবং ঈশ্বরে বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যমে তাঁর অনুগ্রহে আমরা জীবন-যাপন করি। ধার্মিক ব্যক্তি বিশ্বাস দ্বারা বাঁচে। তার মানে আমরা ঈশ্বরে বিশ্বাসের মাধ্যমে বাঁচি। আপনি কি তা বিশ্বাস করেন? হ্যাঁ। নিজ মাংসের কাছে কি আপনার অনেক প্রত্যাশা? আপনি কি মনে করেন, “আমি মাত্র ২০ % আশা করি, আমার দেহের এই অংশ ভাল, কিন্তু অন্য এই অংশটি ভাল নয়।” যাহোক, বাইবেল বলে ধার্মিক বিশ্বাস হেতু বাঁচচে। ঈশ্বর বলেন, মানুষ মাংসে বাঁচতে পারে না, এমনকি ০.১% ও না। প্রভু যত দিন না আবার আসছেন, ততদিন কি পাপ না করে, এবং সামান্যতম প্রত্যাশা নিয়ে আপনি কি বিশ্বাসে বাঁচতে পারেন? আমরা অনেক পাপ করে থাকলেও যীশুতে বিশ্বাসের মাধ্যমে আমরা ধার্মিক হই, ১০০% বিশ্বাস না করলে আমরা পাপী থেকে যাই। খুব অল্প পাপ করলেও কি ঈশ্বর সন্তুষ্ট হন ? মাংসের ধার্মিক জীবন-যাপন করলে কি ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করা যায়?
 
 
ঈশ্বরের ধার্মিকতা আমাদের ধার্মিক করে
 
 আসুন প্ররিত ৩:১-৮ পদ পর্যন্ত পড়ি, “একদিন প্রার্থনার নির্দ্দিষ্ট সময়ে, নবম ঘটিকায়, পিতর ও যোহন ধর্ম্মধামে যাইতেছিলেন; এমন সময়ে লোকেরা এক ব্যক্তিকে বহন করিয়া আনিতেছিল, সে মাতার গর্ভ হইতে খঞ্জ; তাহাকে প্রতিদিন ধর্ম্মধামের সুন্দর নামক দ্বারে রাখিয়া দেওয়া হইত, যেন, ধর্ম্মধামে যাহারা প্রবেশ করে, তাহাদের কাছে ভিক্ষা চাহিতে পারে। সে পিতরকে ও যোহনকে ধর্ম্মধামে প্রবেশ করিতে উদ্যত দেখিয়া ভিক্ষা পাইবার জন্য বিনতি করিতে লাগিল। তাহাতে পিতর যোহনের সহিত তাহার প্রতি একদৃষ্টে চাহিয়া কহিলেন, আমাদের প্রতি দৃষ্টিপাত কর। তাহাতে সে তাঁহাদের প্রতি দৃষ্টি করিয়া রহিল, তাঁহাদের নিকট হইতে কিছু পাইবার অপেক্ষা করিতেছিল। কিন্তু পিতর বলিলেন, রৌপ্য কি স্বর্ণ আমার নাই, কিন্তু যাহা আছে, তাহা তোমাকে দান করি; নাসরতীয় যীশু খ্রীষ্টের নামে হাঁটিয়া বেড়াও। পরে তিনি তাঁহার দক্ষিণ হস্ত ধরিয়া তাহাকে তুলিলেন; তাহাতে তৎক্ষণাৎ তাহার চরণ ও গুল্‌ফ সবল হইল; আর সে লম্ফ দিয়া উঠিয়া দাঁড়াইল, ও হাঁটিয়া বেড়াইতে লাগিল, এবং বেড়াইতে বেড়াইতে, লম্ফ দিতে দিতে, ঈশ্বরের প্রশংসা করিতে করিতে তাঁহাদের সহিত ধর্ম্মধামে প্রবেশ করিল।”
 প্রেরিত পৌল এখানে বলেন, “কিন্তু আমাদের অধার্মিকতা যদি ঈশ্বরের ধার্মিকতা সাব্যস্ত করে, তবে কি বলিব? ঈশ্বর, যিনি ক্রোধে প্রতিফল দেন, তিনি কি অন্যায়ী?” ঈশ্বর কি অন্যায়ী এবং মাংসে থাকাকালীন মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের পাপ তাঁর অনুগ্রহে ক্ষমা করে তিনি কি ভুল করেন? যারা উপহাস করে প্রতি উত্তরে প্রেরিত পৌল বলেন, আমাদের দূর্বলতা যত প্রকাশিত হয় ঈশ্বরের ধার্মিকতা-যা আমাদের উদ্ধার করেছে, তা আরও মহত্তর হয়। যাদের ভিতরে প্রশ্ন রয়েছে যে, সারা জীবন পাপ করে মানুষ কিভাবে পবিত্র হয়, প্রেরিত পৌল তাদের উদ্দেশে এই কথা বলেন, তিনি বলেন যে, মানুষের দূর্বলতায় ঈশ্বরের ধার্মিকতা প্রকাশিত হয়। অর্থাৎ শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত মানুষের মাঝে পাপ করার যে দূর্বলতা রয়েছে, তার মাধ্যমে ঈশ্বরের ধার্মিকতার মহিমা প্রকাশিত হয়। 
 কেউ যদি নিজের চেষ্টায় এবং ধার্মিকতায় ধার্মিক হতে পারে, তাহলে ঈশ্বরের ধার্মিকতার কোন অর্থ হয় না; অর্থাৎ নিজের ধার্মিকতা ৩% এবং ৯৭% ঈশ্বরের সাহায্য, -এক্ষেত্রে ঈশ্বরের ধার্মিকতার কোন অর্থ হয় না। পৌল বলেন যে, কেবলমাত্র ঈশ্বর একাই যীশুর মাধ্যমে আমৃত্যু অবিরত পাপে লিপ্ত মানুষকে উদ্ধার করেছেন। কাজেই, আমাদের অধার্মিকতা ঈশ্বরের ধার্মিকতার প্রাচুর্য্য একদিনের জন্যও আমরা নিজেরা শুদ্ধ হতে পারি না। এই অশুদ্ধ পাপীদেরকে যীশু সম্পূর্ণরূপে শুচি করেছেন, -এই সত্য ঈশ্বরের ধার্মিকতাকে প্রকাশ করে। কাজেই প্রেরিত পৌল বলেন, “আর সে লম্ফ দিয়া উঠিয়া দাঁড়াইল ও হাঁটিয়া বেড়াইতে লাগিল, এবং বেড়াইতে বেড়াইতে, লম্ফ দিতে দিতে, ঈশ্বরের প্রশংসা করিতে করিতে তাহাদের সহিত ধর্ম্মধামে প্রবেশ করিল।” (প্রেরিত ৩:৮ পদ)।
 আমরা কি মাংস দ্বারা ধার্মিক হতে পারি? পাপের ক্ষমা পাওয়ার পরে কি আমাদের মাংস শুদ্ধ হয়? মাংস শুদ্ধ হতে পারে না। পৃথিবীর অন্য সবার কথা বাদ দিন, শুধুমাত্র আপনি এবং আমি কি মাংস দ্বারা শুদ্ধ হতে পারি? -না-প্রভু কি আমাদের যথার্থরূপে উদ্ধার করেছেন ? - হ্যাঁ। প্রভুই আমাদের সমস্ত পাপ থেকে যথার্থরূপে উদ্ধার করেছেন। হৃদয় দিয়ে যদি যীশুকে বিশ্বাস করি, তাহলে কি আমরা পাপী থাকি ? -না। যত অধার্মিকই হই না কেন, আমাদের পাপ আর থাকে না।
 প্রভু বলেন, “আবার তোমরা শুনিয়াছ, পূর্ব্বকালীয় লোকদের নিকটে উক্ত হইয়াছিল, ‘তুমি মিথ্যা দিব্য করিও না, কিন্তু প্রভুর উদ্দেশে তোমার দিব্য সকল পালন করিও।’ কিন্তু আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, কোন দিব্যই করিও না; স্বর্গের দিব্য করিও না, কেননা তাহা ঈশ্বরের সিংহাসন; এবং পৃথিবীর দিব্য করিও না, কেননা তাহা তাঁহার পাদপীঠ; আর যিরূশালেমের দিব্য করিও না, কেননা তাহা মহান্‌ রাজার নগরী। আর তোমার মাথার দিব্য করিও না, কেননা একগাছি চুল সাদা কি কাল করিবার সাধ্য তোমার নাই। কিন্তু তোমাদের কথা হাঁ, হাঁ, না, না, হউক; ইহার অতিরিক্ত যাহা, তাহা মন্দ হইতে জন্মে” মথি(৫:৩৩-৩৭ পদ)। প্রতিজ্ঞা করা পাপ, কারণ আমরা প্রতিজ্ঞা রক্ষা করতে পারি না। সুতরাং ভবিষ্যতে করবেন বলে কোন বিষয়ে দিব্য বা প্রতিজ্ঞা করবেন না। শুধু তাঁর বাক্যে বিশ্বাস করুন, তাহলে বাঁচবেন। তাঁর ধার্মিকতায় বিশ্বাস করলে আপনি ধার্মিক হবেন এবং প্রভুতে বিশ্বাস করলে তিনি আপনাকে সাহায্য করবেন। অনেক রকমের বিভ্রান্তি রয়েছে। মাংসে জীবন-যাপন করা কালে মাংসিক মাপকাঠিতেই আমরা বিভিন্ন বিষয়ের বিচার করি, তাই ঈশ্বরের কাজের সাথে সম্পৃক্ত নয়, এমন বিচার ব্যবস্থা আমাদের ভিতরে রয়েছে। আমাদের ভিতরে দুই ধরনের বিচারক আছে। একটা ব্যক্তি নিজে, অন্যজন যীশু। দুজনই প্রভাব বিস্তার করতে চায়। মাংসে আছি বিধায় আমরা মাংসের ব্যবস্থা তৈরী করে তা পালন করার চেষ্টা করি। মাংস আমাদের বলে, “অবিরত পাপ করলেও তুমি সৎ। ১০০ % ধার্মিক না হলেও আমি তোমাকে ধার্মিক হিসাবে স্বীকৃতি দেব।” মাংসের বিচারক সব সময় ভাল নম্বর দেয়। 
 যাহোক, ঈশ্বরের ধার্মিকতা চান, আমরা যেন ১০০ % পাপহীন হই। তিনি পবিত্র। বিশ্বাসে পাপের ক্ষমা পেলেই কেবল আমরা ধার্মিক হতে পারি। সুতরাং ঈশ্বরের সুসমাচারে বিশ্বাসীগণ তাঁর ধার্মিকতা লাভ করেছে। আমরা ধার্মিক হয়েছি। যারা ঈশ্বরে বিশ্বাস করে, তারা বেঁচে থাকে। ঈশ্বরের সাহায্য তারা আশীর্বাদপ্রাপ্ত, ধার্মিক ব্যক্তি বিশ্বাস হেতু বাঁচবে। অর্থাৎ যারা অবিশ্বাসী এবং মাংস অনুসারে জীবন-যাপন করে, তারা বাঁচতে পারে না। অনেক বড় বিষয়ের খুব ক্ষুদ্র অংশ আমি আলোচনা করছি। স্যুপের রং যতক্ষণ সাদা না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত যেমন হাড়গুলোকে সিদ্ধ করতে হয়, সেই একই ভাবে এই বিষয়টি আমি সবিস্তারে বারবার ব্যাখ্যা করছি।
 
 
 আমাদের বিশ্বাস দরকার 
 
 বাইবেল জানা গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু তাতে বিশ্বাস করা আরো গুরুত্বপূর্ণ। কিছু লোক আছে যারা কেবল শাস্ত্র অনুসারে ঈশ্বরের সৃষ্টিকে বিশ্বাস করে। কিছু লোক আছে যারা বিশ্বাস করে যে, ঈশ্বর স্বর্গ ও মৰ্ত্ত সৃষ্টি করেছেন এবং একমাত্র যীশুই আমাদের আদি পাপ ধৌত করেছেন। তারা বিশ্বাস করে যে, তাদের প্রতিদিনের পাপ প্রতিদিন ধূয়ে ফেলা উচিত। মাংসের ব্যবস্থানুসারে তারা নিজেদেরকে বিচার করে, আমরা কতটা বিশ্বাস করি? ধার্মিক ব্যক্তি বিশ্বাস দ্বারা বাঁচবে। ধার্মিক হওয়া এবং জীবন যাপন করা কেবল মাত্র বিশ্বাস দ্বারা সম্ভব। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের বিশ্বাস দরকার। 
 আপনি কতটা বিশ্বাস করেন? মাংসিক চিন্তায় প্রভাবিত হয়ে আপনি কি এইভাবে নিজের বিচার করেন? “আমি সম্পূর্ণ ঠিক আছি, আমার মাংস সৎ।” অথবা “আমি এত দূর্বল যে, ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখতে পারি না?” আজ ৮০%, পরের দিন ৮৫%, এবং পরে কোন একদিন মাত্র ৫%। এইভাবেই নিজের বিচার করে কি আপনি ভাবেন, “আমার জন্ম না হওয়াই ভাল ছিল”? এটাই কি আপনার চিন্তা ?-হ্যাঁ। আমি এই রকম চিন্তা করি।
 মাঝে মাঝে আমি সত্যি এমন হয়ে যাই। এমন কি আমি যখন নিজেকে হাল্কা করতে চাই, আমি ভাবি, “প্রভুকে না জানলে এবং তাঁকে বিশ্বাস না করলে, আমার ভাল হতো।” বিশ্বাসে জীবন-যাপন করা খুব কঠিন মনে হয়। এ পর্যন্ত এটা খুব কষ্টসাধ্য মনে হয়েছে। আমার অতীত এবং ভবিষ্যত নিয়ে আমি খুব দ্বন্দ্বে আছি। কোন রকমে এ পর্যন্ত বিশ্বাসে যে জীবন-যাপন করছি, তা প্রশংসনীয়। কিন্তু ‘প্রভু এখন আর আমি তোমার সাথে ভাল ভাবে চলতে পারছি না। তোমাকে পাওয়ার পর থেকে পাপ করার ব্যাপারে আমি খুব ভীত হয়ে পড়ি। তোমাকে পাওয়ার পর থেকে বিভিন্ন ধরণের চিন্তা এবং বিচার আমার ভিতরে উদয় হয়। ভাল ভাবে না জেনে তোমাকে আমি অনুসরন করছি। কিন্তু এখন আর তোমাকে অনুসরন করার মত আত্ম-বিশ্বাস আমার মাঝে নেই। কেন ? কারণ, আমি জানি, ঈশ্বর পবিত্র ঈশ্বর এবং বিশুদ্ধ। হায়-প্রভু, আমি তোমাকে আর অনুসরন করতে পারছি না। আমি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছি।`
 কাজেই, ঈশ্বর আমাদের ভাল ভাবে জানেন বলে, আমাদেরকে তিনি বিশ্বাসে জীবন-যাপন করতে বলেছেন। তিনি বলেন, বিশ্বাসে তোমরা ধার্মিক হবে এবং আশীর্বাদ যুক্ত থাকবে। বাপ্তিস্মের মাধ্যমে তোমাদের সমস্ত পাপ যীশুর উপরে অর্পণ করা হয়েছে। ব্যবস্থার মাধ্যমে আমি তোমাদের দেখিয়েছি যে, তোমরা সব সময় পাপ কর। তাই এটা স্বীকার কর যে, পাপের সমস্যা তোমরা সমাধান করতে পার না। তোমাদের ত্রাণকর্তা কি তোমাদের পাপ তুলে নেননি? -হ্যাঁ, তিনি নিয়েছেন। তাহলে, তোমাদের পাপ আছে কি না ?-না।প্রভু কি তোমাদের উদ্ধার করেন নাই ? –হ্যাঁ, তিনি নিয়েছেন। তাহলে, মেঘাচ্ছন্ন এবং অন্ধকার দিনগুলো এই গানটির কথার মত রৌদ্র উজ্জ্বল দিনে পরিনত হবে। “আমার আত্মা আজ সূর্যের আলোয় আলোকিত নয়।”
 
 

আমরা আবার পাপী হতে পারি না

 
 ভবিষ্যতের দিকে তাকালে আমরা আশাহত হতে পারি, কিন্তু যদি বিশ্বাস প্রভুর দিকে তাকাই তাহলে আশার উজ্জ্বল আলো দেখতে পাই। এইজন্য ঈশ্বর বলেছেন যে, ধার্মিক ব্যক্তি বিশ্বাস দ্বারী বাঁচবে। আপনি কি তা বিশ্বাস করেন? – হ্যাঁ। আমরা বিশ্বাসে মুক্তি পাই এবং বিশ্বাসে জীবন-যাপন করি। আমরা কাকে বিশ্বাস করি ? ঈশ্বরে বিশ্বাস করার মাধ্যমে আমরা বাঁচি। কেবল মাত্র ধার্মিকগণই বিশ্বাস দ্বারা বাঁচে। আপনি কি তা বিশ্বাস করেন? -হ্যাঁ। মাংসকে ভাল ভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে আপনি কি বিশ্বাসে ঈশ্বরের ধার্মিকতায় জীবন-যাপন করতে পারেন ? -না। মাংস মন্দ কাজ করলে কি ঈশ্বরের ধার্মিকতা বাতিল হয়ে যায় ? আমরা কি আবার পাপী হই ? -না। 
 গালাতীয় ২:১৮ পদে প্রেরিত পৌল বলেছেন, “কারণ আমি যাহা ভাঙ্গিয়া ফেলিয়াছি, তাহাই যদি পুনর্ব্বার গাঁথি, তবে আপনাকেই অপরাধী বলিয়া দাঁড় করাই।” যে ব্যক্তি (নারী /পুরুষ) বিশ্বাস করে যে, যীশুর উপরে যীশুর বাপ্তিস্মের মাধ্যমে তাদের পাপ অর্পণ করা হয়েছে এবং সেই পাপের কারণেই যীশুকে ক্রুশে বিচারিত হয়েছে, সে আবার কখনও পাপী হতে পারে না। যে ব্যক্তি যীশুকে অস্বীকার করে না, সে সাথে সাথে পবিত্র এবং পাপহীন হয়। কারণ, যীশুর উপরে তার সমস্ত পাপ অর্পণ করা হয়েছে। তাই সে আবার পাপী হতে পারে না। আপনি কি বুঝতে পারছেন? -হ্যাঁ।
 ঈশ্বর, যিনি আমাদের সব সময় রক্ষা করেছেন, তিনি সব সময়ে আমাদের প্রভু, আমাদের পিতা। ঈশ্বর সব সময়ে আমাদের সাহায্য করেন এবং পৃথিবীর অন্ত পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে আছেন। তাই তিনি বলেন, “বিশ্বাসে জীবন-যাপন কর। আমাতে বিশ্বাস করলে আমি তোমাকে সাহায্য করব। স্বর্গে দূতগণ নূতন জন্ম প্রাপ্তদের সাহায্য করেন।” ঈশ্বর এবং আমাদের মাঝে স্বর্গের দূতগণ পরিচারকের কাজ করেন। আমাদের ব্যাপারে তারা সব কিছু প্রভুর কাছে বলেন। ঈশ্বর আমাদের তাঁর সন্তান করেছেন। প্রকৃত ভাবে আমরা পাপী ছিলাম। মাংসের দ্বারা আমরা কখনোই ধার্মিক হতে পারি না, কিন্ত বিশ্বাস দ্বারা আমরা ধার্মিক হতে পারি। 
আমরা প্রভুর ধন্যবাদ করি, প্রভু আমাদের পালক ও পিতা হয়েছেন।