Search

শিক্ষা

বিষয় ১১: আবাস

[19-1] সর্বশক্তিমান ঈশ্বর কর্ত্তৃক স্বর্গরাজ্য শাসিত হবে (প্রকাশিত বাক্য ১৯:১-২১)

সর্বশক্তিমান ঈশ্বর কর্ত্তৃক স্বর্গরাজ্য শাসিত হবে
< প্রকাশিত বাক্য ১৯:১-২১ >
“এই সকলের পরে আমি যেন স্বর্গস্থিত বৃহৎ লোকারণ্যের মহারব শুনিলাম, তাহারা বলিতেছে হাল্লিলূয়া, পরিত্রাণ ও প্রতাপ ও পরাক্রম আমাদের ঈশ্বরেরই; কেননা তাঁহার বিচারাজ্ঞা সকল সত্য ও ন্যায্য; কারণ যে মহাবেশ্যা আপন বেশ্যাক্রিয়া দ্বারা পৃথিবীকে ভ্রষ্ট করিত, তিনি তাহার বিচার করিয়াছেন, তাহার হস্ত হইতে আপন দাসগণের রক্তপাতের পরিশোধ লইয়াছেন। পরে তাহারা দ্বিতীয় বার কহিল, হাল্লিলূয়া; আর যুগপর্য্যায়ের যুগে যুগে সেই বেশ্যার ধূম উঠিতেছে। পরে সেই চব্বিশ জন প্রাচীন ও চারি প্রাণী প্রণিপাত করিয়া সিংহাসনে উপবিষ্ট ঈশ্বরের ভজনা করিলেন, কহিলেন, আমেন; হাল্লিলূয়া। পরে সেই সিংহাসন হইতে এই বাণী নির্গত হইল, হে ঈশ্বরের দাসগণ, তোমরা যাহারা তাঁহাকে ভয় কর, তোমরা ক্ষুদ্র কি মহান্‌ সকলে আমাদের ঈশ্বরের স্তবগান কর। পরে আমি বৃহৎ লোকারণ্যের রব ও বহুজলের কল্লোল ও প্রবল মেঘগর্জ্জনের ন্যায় এই বাণী শুনিলাম, হাল্লিলূয়া, কেননা আমাদের ঈশ্বর প্রভু, যিনি সর্ব্বশক্তিমান্‌, তিনি রাজত্ব গ্রহণ করিলেন। আইস, আমরা আনন্দ ও উল্লাস করি, এবং তাঁহাকে গৌরব প্রদান করি, কারণ মেষশাবকের বিবাহ উপস্থিত হইল, এবং তাঁহার ভার্য্যা আপনাকে প্রস্তুত করিল। আর ইহাকে এই বর দত্ত হইল যে, সে উজ্জ্বল ও শুচি মসীনা-বস্ত্রে আপনাকে সজ্জিত করে, কারণ সেই মসীনা-বস্ত্র পবিত্রগণের ধর্ম্মাচরণ। পরে তিনি আমাকে কহিলেন, তুমি লিখ, ধন্য তাহারা, যাহারা মেষশাবকের বিবাহভোজে নিমন্ত্রিত। আবার তিনি আমাকে কহিলেন, এ সকল ঈশ্বরের সত্য বাক্য। তখন আমি তাঁহাকে ভজনা করিবার জন্য তাঁহার চরণে পড়িলাম। তাহাতে তিনি আমাকে কহিলেন, দেখিও, এমন কর্ম্ম করিও না; আমি তোমার সহদাস, এবং তোমার যে ভ্রাতৃগণ যীশুর সাক্ষ্য ধারণ করে, তাহাদেরও সহদাস; ঈশ্বরেরই ভজনা কর; কেননা যীশুর যে সাক্ষ্য, তাহাই ভাববাণীর আত্মা। পরে আমি দেখিলাম, স্বর্গ খুলিয়া গেল, আর দেখ, শ্বেতবর্ণ একটী অশ্ব; যিনি তাহার উপরে বসিয়া আছেন, তিনি বিশ্বাস্য ও সত্যময় নামে আখ্যাত, এবং তিনি ধর্ম্মশীলতায় বিচার ও যুদ্ধ করেন। তাঁহার চক্ষু অগ্নিশিখা, এবং তাঁহার মস্তকে অনেক কিরীট; এবং তাঁহার একটী লিখিত নাম আছে, যাহা তিনি ব্যতীত অন্য কেহ জানে না। আর তিনি রক্তে ডুবান বস্ত্র পরিহিত; এবং ঈশ্বরের বাক্য এই নামে আখ্যাত। আর স্বর্গস্থ সৈন্যগণ তাঁহার অনুগমন করে, তাহারা শুক্লবর্ণ অশ্বে আরোহী, এবং শ্বেত শুচি মসীনা-বস্ত্র পরিহিত। আর তাঁহার মুখ হইতে এক তীক্ষ্ণ তরবারি নির্গত হয়, যেন তদ্দ্বারা তিনি জাতিগণকে আঘাত করেন; আর তিনি লৌহদণ্ড দ্বারা তাহাদিগকে শাসন করিবেন; এবং তিনি সর্ব্বশক্তিমান্‌ ঈশ্বরের প্রচণ্ড ক্রোধরূপ মদিরাকুণ্ড দলন করেন। আর তাঁহার পরিচ্ছদে ও ঊরুদেশে এই নাম লেখা আছে, রাজাদের রাজা ও প্রভুদের প্রভু৷ পরে আমি দেখিলাম, এক জন দূত সূর্য্যমধ্যে দাঁড়াইয়া আছেন; আর তিনি উচ্চ রবে চীৎকার করিয়া, আকাশের মধ্যপথে যে সকল পক্ষী উড়িয়া যাইতেছে, সে সকলকে কহিলেন, আইস, ঈশ্বরের মহাভোজে একত্র হও, যেন রাজগণের মাংস, সহস্রপতিবর্গের মাংস, শক্তিমান্‌ লোকদের মাংস, অশ্বগণের ও তদারোহীদের মাংস, এবং স্বাধীন ও দাস, ক্ষুদ্র ও মহান্‌ সকল মনুষ্যের মাংস ভক্ষণ কর। পরে আমি দেখিলাম, ঐ অশ্বারোহী ব্যক্তির ও তাঁহার সৈন্যের সহিত যুদ্ধ করিবার জন্য সেই পশু ও পৃথিবীর রাজগণ ও তাহাদের সৈন্যগণ একত্র হইল। তাহাতে সেই পশু ধরা পড়িল, এবং যে ভাক্ত ভাববাদী তাহার সাক্ষাতে চিহ্ন-কার্য্য করিয়া পশুর ছাবধারী ও তাহার প্রতিমার ভজনাকারীদের ভ্রান্তি জন্মাইত, সেও তাহার সঙ্গে ধরা পড়িল; তাহারা উভয়ে জীবন্তই প্রজ্বলিত গন্ধকময় অগ্নিহ্রদে নিক্ষিপ্ত হইল। আর অবশিষ্ট সকলে সেই অশ্বারোহী ব্যক্তির মুখ হইতে নির্গত তরবারি দ্বারা হত হইল; এবং সমস্ত পক্ষী তাহাদের মাংসে তৃপ্ত হইল।”
 
 

টীকা

 
পদ ১: “এই সকলের পরে আমি যেন স্বর্গস্থিত বৃহৎ লোকারণ্যের মহারব শুনিলাম, তাহারা বলিতেছে হাল্লিলূয়া, পরিত্রাণ ও প্রতাপ ও পরাক্রম আমাদের ঈশ্বরেরই”
এই অনুচ্ছেদটি মেষশাবকের সাথে সাধুগণের বিবাহের দিনে প্রভু ঈশ্বরের প্রশংসার কথা বর্ণনা করে৷ আমাদের প্রভু ঈশ্বর সাধুগণকে তাদের পরিত্রাণ ও গৌরব দিয়েছেন, যেন তারা উত্তম উদ্দেশ্যে তাঁর প্রশংসা করতে পারে৷ তাই সাধুগণ তাদের সমস্ত পাপ থেকে এবং অসহনীয় শাস্তি থেকে উদ্ধারের এই মহা অনুগ্রহের জন্য রূপান্তরিত সাধুগণ আকাশে অবিরত প্রভু ঈশ্বরের প্রশংসা করছে৷
“আল্লেলুয়া” বা “হাল্লেলুয়া” শব্দটি হিব্রু শব্দ “Halal”- এর অন্তর্ভুক্ত, যার অর্থ প্রশংসা করা, এবং “Yah” – এর অর্থ “যিহোবা”- যার অর্থ হচ্ছে “যিহোবার প্রশংসা”৷ পুরাতন নিয়মে গীতসংহিতা ১১৩-১১৮ অধ্যায়গুলিকে ""Hallel of Egypt,`` এবং ১৪৬-১৫০ অধ্যায়গুলিকে বলা হয় ""Psalms of Hallel``
এই ""Psalms of Hallel`` হচ্ছে কত গুলো গানের সমষ্টি, যা যিহুদী লোকেরা দুঃখ ও আনন্দের সময় গাইত, এবং যা তাদেরকে দুঃখময় ও মহা দুঃখ দুর্দশার সময়ে শক্তি যোগাত, এবং তারা পরিত্রাণ ও বিজয়ের দিনেও এই আনন্দের গান গাইত৷ তাছাড়া যখনই ""Halleluiah`` প্রশংসা করা হত তখনই এই গান গাওয়া হত৷ এর কারণ হল, এই পৃথিবীতে প্রভুর মহামারীর বিচার সত্য এবং ন্যায্য, তাছাড়া পরিত্রাণ, ক্ষমতা এবং গৌরব একমাত্র ঈশ্বরের অধিকারে৷ 
    
পদ ২: “কেননা তাঁহার বিচারাজ্ঞা সকল সত্য ও ন্যায্য; কারণ যে মহাবেশ্যা আপন বেশ্যাক্রিয়া দ্বারা পৃথিবীকে ভ্রষ্ট করিত, তিনি তাহার বিচার করিয়াছেন, তাহার হস্ত হইতে আপন দাসগণের রক্তপাতের পরিশোধ লইয়াছেন।”
পৃথিবীর সমস্ত ধর্মীয় নেতা এবং সমস্ত অবিশ্বাসীদের উপর সপ্তবাটির মারী ঢেলে দিয়ে প্রভু ঈশ্বর প্রতিশোধ নেবেন, এটাই ঈশ্বরের সত্য ও ন্যায্য বিচার৷ কেননা এই জগতে যে সমস্ত ধর্মীয় নেতারা ঈশ্বরের পাপমুক্ত ধার্মিক দাসগণকে হত্যা করেছিল, তারা ঈশ্বর কর্ত্তৃক অনন্ত মৃত্যুর যোগ্য হবে৷
জীবিত অবস্থায় ঈশ্বরের দাসেরা কি এমন কোনো কাজ করেছে, যার কারণে পার্থিব ধর্মাবলম্বীরা তাদেরকে হত্যা করতে পারে? অবশ্যই না! কিন্তু তারপরেও সমগ্র পৃথিবীর পার্থিব ধর্মাবলম্বীরা প্রভু ঈশ্বরের সন্তানদের হত্যা করার উদ্দেশ্যে একত্রিত হচ্ছে৷ ঠিক তেমনিভাবে, এই হত্যাকারীদের উপর সপ্তবাটির মহামারী ঢেলে দেওয়া হবে, যা ঈশ্বরের ধার্মিকতাতেও প্রকাশ পেয়েছে৷
 
পদ ৩: “পরে তাহারা দ্বিতীয় বার কহিল, হাল্লিলূয়া; আর যুগপর্য্যায়ের যুগে যুগে সেই বেশ্যার ধূম উঠিতেছে।”
সাধুগণ আকাশে প্রভু ঈশ্বরের প্রশংসা করছেন, কেননা যিনি মেষশাবক হয়েছেন, সেই যীশু ঈশ্বরের সাথে তাদের বিবাহের দিন উপস্থিত৷
“আর যুগপর্য্যায়ের যুগে যুগে সেই বেশ্যার ধূম উঠিতেছে”৷ এখানে ধোঁয়া বের হয়ে আসছে বলতে বোঝানো হয়েছে যে, ঈশ্বর সপ্তবাটির মহামারী ঢেলে অগ্নির দ্বারা এই পৃথিবী ধ্বংস করবেন৷ এটি আমাদেরকে দেখায় যে, এই পৃথিবী কখনই অধঃপতন বা সর্বনাশ থেকে রক্ষা পাবে না, কেননা এর ধংসযজ্ঞ হবে মারাত্মক এবং অনন্ত৷
 
পদ ৪: “পরে সেই চব্বিশ জন প্রাচীন ও চারি প্রাণী প্রণিপাত করিয়া সিংহাসনে উপবিষ্ট ঈশ্বরের ভজনা করিলেন, কহিলেন, আমেন; হাল্লিলূয়া।”
এই ঘটনাটি, প্রভু যীশুর সাথে সাধুগণের বিবাহের দিন এতই গৌরবের বিষয় যে স্বর্গে ২৪ জন প্রাচীন এবং চারি প্রাণী সিংহাসনে উপবিষ্ট প্রভু ঈশ্বরের ভজনা ও প্রশংসা করছেন৷ এই কারণেই আকাশে ঈশ্বরের সমস্ত দাসগণ প্রভু ঈশ্বরের প্রশংসা করছেন৷
 
পদ ৫: “পরে সেই সিংহাসন হইতে এই বাণী নির্গত হইল, হে ঈশ্বরের দাসগণ, তোমরা যাহারা তাঁহাকে ভয় কর, তোমরা ক্ষুদ্র কি মহান্‌ সকলে আমাদের ঈশ্বরের স্তবগান কর।”
কেননা, সাধুগণের সাথে মেষশাবকের বিবাহের দিন তাঁর সমস্ত সাধুগণ ও দাসগণ যারা প্রভু ঈশ্বরকে বিশ্বাসের দ্বারা উদ্ধার পেয়েছে, তাদের জন্য মহা আনন্দের৷ এই জন্য সিংহাসন থেকে এই বাণী, তাদের সকলকে ঈশ্বরের প্রশংসা করতে বলছে৷ ঈশ্বরের দাসগণ ও সাধুগণের, প্রভুর প্রশংসা ও উল্লাস করার এখন সময় আসছে৷
 
পদ ৬: “পরে আমি বৃহৎ লোকারণ্যের রব ও বহুজলের কল্লোল ও প্রবল মেঘগর্জ্জনের ন্যায় এই বাণী শুনিলাম, হাল্লিলূয়া, কেননা আমাদের ঈশ্বর প্রভু, যিনি সর্ব্বশক্তিমান্‌, তিনি রাজত্ব গ্রহণ করিলেন। ”
এই পদ আমাদেরকে বলে যে, প্রভু ঈশ্বরের রাজত্বের সময় নিকটবর্তী, তাঁর সাধুগণ ও দাসগণের জন্য নদীর ন্যায় প্রবাহিত, অনন্ত শান্তি, আনন্দ এবং আশীর্বাদ গ্রহণের এটাই এখন উপযুক্ত সময়৷ এ জন্যই তারা প্রভু ঈশ্বরের প্রশংসা করছেন, কেননা এই পৃথিবীতে মহামারী হবে, তাই তাদের নিমিত্ত ঈশ্বর কর্ত্তৃক রাজত্ব করার সময় এসেছে, তা হল, তাঁর সমস্ত সাধুগণকে গৌরাবন্বিত করার জন্য ঈশ্বরের সময় এসেছে৷ এই সময় সাধুগণের প্রশংসার ধ্বনি হবে মেঘগর্জন ও বহুজলের কল্লোলের ন্যায়৷ সাধুগণের চমত্কার প্রশংসার ধ্বনি সহকারে এভাবে প্রভুর রাজ্যে বিবাহ ভোজ শুরু হবে৷
 
পদ ৭: “আইস, আমরা আনন্দ ও উল্লাস করি, এবং তাঁহাকে গৌরব প্রদান করি, কারণ মেষশাবকের বিবাহ উপস্থিত হইল, এবং তাঁহার ভার্য্যা আপনাকে প্রস্তুত করিল।”
ঈশ্বর কর্ত্তৃক আনিত সপ্তবাটির মহামারী এখন শেষ হয়েছে, এই পদ আমাদেরকে বলে যে, সমস্ত সাধুগণের আনন্দ ও উল্লাস করার সময় এসেছে৷ সাধুগণ আনন্দ উল্লাস করবে কেননা, আমাদের প্রভু ঈশ্বরের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে এবং তাঁর রাজ্যে বাস করতে, তাদের সেই দিন উপস্থিত হয়েছে৷ সাধুগণের সাথে বাস করতে, আমাদের প্রভু নুতন আকাশ ও নুতন পৃথিবী পবিত্র নগরী ও তাঁর বাগান প্রস্তুত করেছেন, এবং সমস্ত গৌরব ও সম্পদ এবং তিনি কেবলমাত্র তাদের জন্য অপেক্ষা করছেন৷ এই সাথে সাধুগণ প্রভুর সাথে চিরদিন রাজত্ব করবে৷ 
 
পদ ৮: “আর ইহাকে এই বর দত্ত হইল যে, সে উজ্জ্বল ও শুচি মসীনা-বস্ত্রে আপনাকে সজ্জিত করে, কারণ সেই মসীনা-বস্ত্র পবিত্রগণের ধর্ম্মাচরণ।”
ঈশ্বর সাধুগণকে নুতন বস্ত্র দিয়েছেন, যা সুন্দর মসীনা৷ যে কেউ প্রভু ঈশ্বরে জীবনযাপন করেছে, প্রভু তাকে এই বস্ত্রে আবৃত করেন৷ এই স্বর্গীয় বস্ত্র ঘামে ভেজা নয়৷ এটা আমাদেরকে এই বিষয়ে বলে যে, আমরা আমাদের মানবীয় প্রচেষ্টা বা বিনিময়ের দ্বারা নয়, কিন্তু প্রভু ঈশ্বর কর্ত্তৃক জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাসের দরুন আমরা মেষশাবকের ভার্য্যা হই৷
খ্রীষ্টারী পরিহিত লাল ও বেগুনী সুতার সাথে যাজক ও রাজাদের মূল্যবান মিহি মসীনা সুতার দ্বারা সজ্জিত, তারা ঈশ্বরের অনুগ্রহ ও ধার্মিকতায় সজ্জিত হয়ে ঈশ্বরের সন্তান হয়েছে৷
এই অনুচ্ছেদে, “কারণ সেই মসীনা-বস্ত্র পবিত্রগণের ধর্ম্মাচরণ” এর অর্থ হচ্ছে প্রভু ঈশ্বর কর্ত্তৃক পরিত্রাণের অনুগ্রহ দানের মাধ্যমে যারা সাধু হয়েছে, তারা তাদের বিশ্বাস রক্ষার্থে খ্রীষ্টারী ও তার অনুসারীদের দ্বারা সাক্ষ্যমরত্বের মাধ্যমে ঈশ্বরকে গৌরব প্রদান করবে৷ অন্যকথায়, “ধর্ম্মাচারণ” ধার্মিকতার ব্যবস্থা প্রকাশ করে না, বরং সাধুগণের সাক্ষ্যমরত্ব নির্ভর করে তাদের বহুমূল্যবান বিশ্বাসের মাধ্যমে৷ যেমন শেষকালে যীশু খ্রীষ্টের সমস্ত ভার্য্যাগণ সাক্ষ্যমর হবে, যারা প্রভুতে তাদের বিশ্বাস স্থাপন করেছিল, এর এই পৃথিবীতে থাকাকালীন অবস্থায় খ্রীষ্টারী ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল ও যুদ্ধ করেছিল৷
তাদের সাক্ষ্যমরত্বের বিশ্বাসকে প্রস্তুত করতে, সমস্ত সাধুগণ প্রথম সাড়ে তিন বছরের মহাক্লেশের নিমিত্ত অবশ্যই প্রতিপালিত হবে, এবং যখন এই সাড়ে তিন বছর অতিক্রম করবে, তারা বাস্তবিক সাক্ষ্যমর হবে৷
 
পদ ৯: “পরে তিনি আমাকে কহিলেন, তুমি লিখ, ধন্য তাহারা, যাহারা মেষশাবকের বিবাহভোজে নিমন্ত্রিত। আবার তিনি আমাকে কহিলেন, এ সকল ঈশ্বরের সত্য বাক্য।”
এই পৃথিবীতে যখন ঈশ্বরের মারী সমাপ্ত হবে, প্রভু ঈশ্বর মেষশাবকের বিবাহ ভোজে সমস্ত সাধুগণকে নিমন্ত্রণ করবেন, (প্রভু রাজ্য প্রতিষ্ঠা ও রাজত্ব করবেন), এবং তিনি তাদেরকে খ্রীষ্টের রাজ্যে বসবাস করার অনুমতি দেবেন৷ যারা মেষশাবকের বিবাহ ভোজে নিমন্ত্রিত হয়েছে, তারা আশীর্বাদ প্রাপ্তদের একজন হয়েছে৷ আমাদের প্রভু আমাদেরকে বলেছেন যে, তিনি তাঁর এই প্রতিজ্ঞাত বাক্য সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হবেন না৷ যখন সেই দিন চূড়ান্তভাবে আসবে, সাধুগণ প্রভুর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হবে৷ আমাদের প্রভু তাঁর ভার্য্যাদের যারা জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাসের দ্বারা তাদের সমস্ত পাপ ধৌত করেছে, তাদেরকে নিয়ে যেতে এই পৃথিবীতে ফিরে অস্বেন৷ আর প্রভু তাঁর ভার্য্যাদের সাথে তাঁর রাজ্যে যুগপর্যায়ে যুগে যুগে বাস করবেন৷ 
প্রভুর সাথে সাধুগণের একতা সম্পন্ন হয়েছে তখনই, যখন তারা খ্রীষ্টে রূপান্তরিত হয়েছে, এবং সেই সময় তারা সহস্রাব্দের রাজ্যের অনন্ত গৌরব ও পুরস্কার গ্রহণ করেছে৷ হাল্লিলুয়া! আমি প্রভু ঈশ্বরের প্রশংসা ও ধন্যবাদ করি যে, তিনি আমাদেরকে তাঁর সন্তান করেছেন৷
 
পদ ১০: “তখন আমি তাঁহাকে ভজনা করিবার জন্য তাঁহার চরণে পড়িলাম। তাহাতে তিনি আমাকে কহিলেন, দেখিও, এমন কর্ম্ম করিও না; আমি তোমার সহদাস, এবং তোমার যে ভ্রাতৃগণ যীশুর সাক্ষ্য ধারণ করে, তাহাদেরও সহদাস; ঈশ্বরেরই ভজনা কর; কেননা যীশুর যে সাক্ষ্য, তাহাই ভাববাণীর আত্মা।”
সমস্ত গৌরব সাধুগণ একমাত্র প্রভু ঈশ্বরকেই প্রদান করবে৷ একজনই, যিনি সাধুগণের সমস্ত ভজনা ও প্রশংসা গ্রহণ করেন, তিনি অদ্বিতীয় আমাদের ত্রিত্ব ঈশ্বর৷ “কেননা যীশুর যে সাক্ষ্য, তাহাই ভাববাণীর আত্মা।” অংশটির অর্থ হচ্ছে যে, যীশুর সাক্ষ্য ও ভাববাণী পবিত্র আত্মার মধ্য দিয়ে আসে৷
 
পদ ১১: “পরে আমি দেখিলাম, স্বর্গ খুলিয়া গেল, আর দেখ, শ্বেতবর্ণ একটী অশ্ব; যিনি তাহার উপরে বসিয়া আছেন, তিনি বিশ্বাস্য ও সত্যময় নামে আখ্যাত, এবং তিনি ধর্ম্মশীলতায় বিচার ও যুদ্ধ করেন।”
যখন শেষ সময় আসবে, আমাদের প্রভু ঈশ্বর শ্বেত বর্ণ অশ্বের উপর আরোহন করে তাঁর ধর্মশীলতায় শয়তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন, এবং তাকে বেঁধে অতল গহ্বর ও অগ্নির হ্রদে নিক্ষেপ করবেন৷
এখানে যীশু খ্রীষ্টের নাম “বিশ্বস্ত” ও “সত্য”৷ “বিশ্বস্ত” শব্দের অর্থ হচ্ছে, যীশু খ্রীষ্ট বিশ্বাসযোগ্য, এই শব্দ তাঁর বিশ্বস্ততা ও সততা প্রকাশ করে৷ “সত্য” এই শব্দের অর্থ, তিনি মিথ্যা থেকে মুক্ত, “সত্য” এই শব্দ আমাদের বলে যে, খ্রীষ্ট ঈশ্বরের ন্যায্য বিচারে খ্রীষ্টারীকে জয় করবে৷
 
পদ ১২: “তাঁহার চক্ষু অগ্নিশিখা, এবং তাঁহার মস্তকে অনেক কিরীট; এবং তাঁহার একটী লিখিত নাম আছে, যাহা তিনি ব্যতীত অন্য কেহ জানে না।”
প্রভুর চোখ- “অগ্নিশিখার” ন্যায়, এই বাক্যাংশ আমাদের বলে যে, সমস্ত কিছুর বিচার করার ক্ষমতা তাঁর আছে৷ অপরদিকে “তাঁহার মস্তকে অনেক কিরীট” এই অংশের অর্থ হচ্ছে, আমাদের প্রভু শয়তানের বিরুদ্ধে তাঁর যুদ্ধে বিজয়োল্লাস করবেন, কেননা তিনি সর্বজ্ঞ ও সর্বশক্তিমান ঈশ্বর৷
 
পদ ১৩: “আর তিনি রক্তে ডুবান বস্ত্র পরিহিত; এবং ঈশ্বরের বাক্য এই নামে আখ্যাত।”
যারা আমাদের প্রভুর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে তারা তাঁর অগ্নিময় ক্রোধের যোগ্য হয়েছে, তিনি এই সমস্ত শত্রুগণের বিচারের দ্বারা সাধুগণের শত্রুদের প্রতিফল দেবেন৷ এই ঈশ্বর যীশু খ্রীষ্ট নিজেই করেছেন, বাস্তবিক আমাদের প্রভু মাংসিক দেহে এই পৃথিবীতে এসেছিলেন, যোহনের দ্বারা বাপ্তিস্ম গ্রহণ করে জগতের সমস্ত পাপ বহন করেছিলেন, এবং সেই সমস্ত পাপ ক্রুশে বহন করেছেন, এবং সমগ্র মানবজাতির পাপ মুছে দিয়েছেন৷
“রক্তে ডুবান বস্ত্র” এই রক্ত বলতে খ্রীষ্টের নিজের রক্তের কথা বলা হয়নি৷ কিন্তু প্রভু যখন বিচারাসনে বসে মহাক্রোধে তাঁর শত্রুদের পদদলন করছেন, সেই পদদলিত শত্রুর রক্তই প্রভুর পরিচ্ছদে ছিটে গেছে৷
“ঈশ্বরের বাক্য” যীশুর চরিত্রকে প্রকাশ করে৷ কেননা আমাদের প্রভু ক্ষমতাপূর্ণ বাক্য দ্বারা সমস্ত কিছুই করেছেন, তাঁর নাম দত্ত হয়েছে “ঈশ্বরের বাক্য”
 
পদ ১৪-১৬: “আর স্বর্গস্থ সৈন্যগণ তাঁহার অনুগমন করে, তাহারা শুক্লবর্ণ অশ্বে আরোহী, এবং শ্বেত শুচি মসীনা-বস্ত্র পরিহিত। আর তাঁহার মুখ হইতে এক তীক্ষ্ণ তরবারি নির্গত হয়, যেন তদ্দ্বারা তিনি জাতিগণকে আঘাত করেন; আর তিনি লৌহদণ্ড দ্বারা তাহাদিগকে শাসন করিবেন; এবং তিনি সর্ব্বশক্তিমান্‌ ঈশ্বরের প্রচণ্ড ক্রোধরূপ মদিরাকুণ্ড দলন করেন। আর তাঁহার পরিচ্ছদে ও ঊরুদেশে এই নাম লেখা আছে- রাজাদের রাজা ও প্রভুদের প্রভু৷”
ঈশ্বরের সৈন্যগণ সর্বদা তাঁর কার্যের পরিচর্যা করে, তারা তাঁর গৌরবযুক্ত অনুগ্রহ পরিহিত হয়েছে৷
ঈশ্বর তাঁর মুখ নির্গত বাক্য দ্বারা এই পৃথিবীর বিচার করবেন৷ আমাদের প্রভু সর্বদায় তাঁর মুখ নির্গত বাক্য দ্বারা আমাদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছেন, এবং তাঁর ক্ষমতায় তিনি সর্বদায় এই প্রতিজ্ঞা সমূহ পরিপূর্ণ করেন৷ একজন, যিনি এই জগতের বিচার করবেন এবং শয়তানকে ধ্বংস করবেন, তিনি যীশু খ্রীষ্ট, রাজাদের রাজা এবং প্রভুদের প্রভু৷
 
পদ ১৭: “পরে আমি দেখিলাম, এক জন দূত সূর্য্যমধ্যে দাঁড়াইয়া আছেন; আর তিনি উচ্চ রবে চীৎকার করিয়া, আকাশের মধ্যপথে যে সকল পক্ষী উড়িয়া যাইতেছে, সে সকলকে কহিলেন, আইস, ঈশ্বরের মহাভোজে একত্র হও”
শয়তান এবং তার অনুসারীদের সাথে পৃথিবী স্বভাবিকভাবেই যীশু খ্রীষ্টের দ্বারা ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে৷ ঈশ্বরের মহাভোজের ন্যায় এই পৃথিবীর ধ্বংসের বিষয়ে বাইবেল বর্ণনা করে৷
 
পদ ১৮: “যেন রাজগণের মাংস, সহস্রপতিবর্গের মাংস, শক্তিমান্‌ লোকদের মাংস, অশ্বগণের ও তদারোহীদের মাংস, এবং স্বাধীন ও দাস, ক্ষুদ্র ও মহান্‌ সকল মনুষ্যের মাংস ভক্ষণ কর।”
এই বাক্য আমাদেরকে বলে যে, আর সমস্ত পৃথিবী এবং তার মধ্যে সমস্ত কিছু প্রভু ঈশ্বর কর্ত্তৃক মহামারী দ্বারা মৃত্যুতে পতিত হবে, তখন মৃতদের ভক্ষণের দ্বারা পাখিরা তাদের উদর পূর্ণ করে আকাশে উড়ে বেড়াবে৷ তারা এরূপ করবে, কেননা ঈশ্বর এই পৃথিবীতে সপ্তবাটির মহামারী ঢেলে দেবেন৷ আমাদের প্রভু আমাদেরকে বলেছেন যে, ‘যেখানে মরা থাকে,সেখানে শকুন যুটিবে” (মথি ২৪:২৮)৷ শেষ কালে, পৃথিবীতে পাপীদের জন্য কেবল ধ্বংস, মৃত্যু এবং নরকের যাতনা হবে৷ কিন্তু সাধুদের জন্য, খ্রীষ্টের রাজ্যে আশীর্বাদের রাজত্ব হবে৷
 
পদ ১৯: “পরে আমি দেখিলাম, ঐ অশ্বারোহী ব্যক্তির ও তাঁহার সৈন্যের সহিত যুদ্ধ করিবার জন্য সেই পশু ও পৃথিবীর রাজগণ ও তাহাদের সৈন্যগণ একত্র হইল।”
শেষে খ্রীষ্টারী, শয়তানের দাস, এবং তার অনুসারীগণ প্রভুর দাসগণ ও তাঁর সাধুগণের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে, এবং তাদেরকে জয় করতে চেষ্টা করবে৷ কিন্তু, যেহেতু আমাদের প্রভু রাজাদের রাজা, তিনি খ্রীষ্টারী এবং ভাক্ত ভাববাদীদের সংগ্রহ করবেন, তাদেরকে অগ্নির হ্রদে নিক্ষেপ করবেন এবং তাঁর বাক্যের তরবারি দ্বারা তাদের দাসগণকে হত্যা করবেন৷
 
পদ ২০: “তাহাতে সেই পশু ধরা পড়িল, এবং যে ভাক্ত ভাববাদী তাহার সাক্ষাতে চিহ্ন-কার্য্য করিয়া পশুর ছাবধারী ও তাহার প্রতিমার ভজনাকারীদের ভ্রান্তি জন্মাইত, সেও তাহার সঙ্গে ধরা পড়িল; তাহারা উভয়ে জীবন্তই প্রজ্বলিত গন্ধকময় অগ্নিহ্রদে নিক্ষিপ্ত হইল।”
“পশু” বলতে খ্রীষ্টারীকে বোঝানো হয়৷ “ভাক্ত ভাববাদী” হল খ্রীষ্টারীর দাস, যে অলৌকিক কার্যের দ্বারা লোকদেরকে সত্য বাক্যের বিশ্বাস থেকে সরিয়ে আনে৷ আমাদের প্রভু শয়তান, পশু খ্রীষ্টারী, ভাক্ত ভাববাদী এবং শয়তানের অনুসারী যারা খ্রীষ্টারীর প্রতিমাগণের ভজনা করেছে ও ঈশ্বরের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে, সাধুগণের বিরুদ্ধে, জল ও আত্মার সুসমাচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে, তাদেরকে ধ্বংস করবেন৷
“গন্ধকময় অগ্নিহ্রদ” বলতে নরককে বোঝানো হয়েছে৷ নরক অগাধলোকের কূপ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন, অগাধলোকের কূপেশয়তানের বাহিনী অস্থায়ীরূপে থাকবে, কিন্তু তাদের অনন্ত শাস্তি ভোগের স্থান হল “অগ্নিহ্রদ”৷ সাধারণতঃ বাইবেলে অগ্নি ও গন্ধককে, ঈশ্বর কর্ত্তৃক শাস্তিভোগ ও বিচারের উপকরণ হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে৷ 
এই পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার পরে, আমাদের প্রভু তাঁর সাধুদের সাথে নিয়ে এই পৃথিবীতে ফিরে আসবেন, প্রথমেই শয়তান এবং তার দাসগণকে ধ্বংস করবেন, এবং পরে খ্রীষ্টের রাজ্য খুলে দেবেন৷ তখন সাধুগণ প্রভুর সাথে খ্রীষ্টের রাজ্যে সহস্র বছর রাজত্বের নিমিত্ত বাস করবেন৷
 
পদ ২১: “আর অবশিষ্ট সকলে সেই অশ্বারোহী ব্যক্তির মুখ হইতে নির্গত তরবারি দ্বারা হত হইল; এবং সমস্ত পক্ষী তাহাদের মাংসে তৃপ্ত হইল।”
প্রভু ঈশ্বরের মুখ নির্গত বাক্য দ্বারা যেমন এই জগৎ সৃষ্টি হয়েছে, ঠিক তেমনিভাবে, তাঁর মুখ নির্গত বিচারিত বাক্য দ্বারা ঈশ্বরের সমস্ত শত্রু ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে৷ অতএব, সাধুগণ, শয়তান, খ্রীষ্টারী ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, বিশ্বাসে সাক্ষ্যমরত্ব গ্রহণের দ্বারা ঈশ্বরকে গৌরব দেবে এবং খ্রীষ্টের রাজ্যে তাদের প্রত্যাশা রাখবে৷