সমাগম তাম্বুর প্রাঙ্গণ তৈরির কাজে যে উপকরণগুলো ব্যবহার করা হয়েছিল, সেগুলো হল নীল, বেগুনি ও উজ্বল লালচে সুতা এবং পাকানো সাদা মসীনা৷ ফটকের উচ্চতা ছিল ২.২৫ মিটার এবং এর প্রস্থ ছিল প্রায় ৯ মিটার৷ এ পর্দাটি সাদা মসীনা দ্বারা তৈরী ছিল৷ যেটি চারটি স্তম্ভের উপরে ঝোলানো ছিল৷ এটা এমনভাবে ছিল যে যখনই কোনো ব্যক্তি সমাগম তাম্বুর প্রাঙ্গণে প্রবেশের চেষ্টা করত, তারা সহজেই এর ফটক খুঁজে পেত৷
সমাগম তাম্বুর প্রাঙ্গণের ফটক তৈরীতে ব্যবহৃত নীল, বেগুনি ও লাল সুতা এবং পাকানো সাদা মসীনা দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায় যে, ঈশ্বর তাঁর পুত্র যীশুর চারটি কাজের মাধ্যমে আমাদেরকে সমস্ত পাপ হতে উদ্ধার করবেন৷
প্রথম, নীল সুত্র আমাদের কি দেখায় ? নীল সুত্র আমাদেরকে যীশুর সত্যের একটি অংশ দর্শায়, যিনি এই পৃথিবীতে এসে, ও যোহনের নিকট বাপ্তিস্ম গ্রহণ করে পাপীদের প্রকৃত মশীহ হয়েছিলেন৷ বাস্তবে, যর্দন নদীতে যোহনের নিকট যে বাপ্তিস্ম গ্রহণ করেছিলেন, সেটি যীশু কর্তৃক একেবারে ও সকলের নিমিত্ত জগতের সকল পাপ তুলে নেওয়ার সত্য৷ প্রকৃতপক্ষে সকল মানবজাতির প্রতিনিধি, যোহন বাপ্তাইজকের কাছে বাপ্তাইজিত হয়ে যীশু জগতের সকল পাপ আপন কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন৷ যেহেতু এইভাবে সকল মানবের পাপ খ্রীষ্টের আপন মস্তকে স্থানান্তরিত হয়েছিল, তাই যারা এই সত্যে বিশ্বাস করে তাদের হৃদয়ে কোনো পাপ নেই৷
দ্বিতীয়, আবাস তাম্বুর প্রাঙ্গনের দ্বারে পাকানো বেগুনী সূত্রের প্রকৃত অর্থ কি ? সেটি আমাদের বলে যে যীশুই প্রকৃত রাজাদের রাজা৷বাস্তবে, যীশুই বিশ্বব্রহ্মান্ড সৃষ্টি করেছিলেন, তিনি কোনো সৃষ্ট জীব নন, তিনিই স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা, এবং প্রকৃত মশীহ যিনি পৃথিবীতে এসেছিলেন৷ তিনি, অর্থাৎ মশীহ, প্রকৃতপক্ষে একজন মানুষের দেহের সাদৃশ্যে এই পৃথিবীতে এসেছিলেন৷ যোহনের নিকট তিনি যে বাপ্তিস্ম গ্রহণ করেছিলেন তার মাধ্যমে জগতের সকল পাপ আপন দেহে বহন করে, এবং তাঁর বলিকৃত মৃত্যু ও পুনরুত্থানের মাধ্যমে, যারা তাদের মশীহকে স্বীকার , ভয় ও বিশ্বাস করেছে, সেই সকল মানুষকে তাদের পাপ ও দন্ডাজ্ঞা থেকে রক্ষা করেছেন৷
বাস্তবে যীশু আমাদের পরম ঈশ্বর ও পরম মশীহ৷ তিনিই পরম ত্রাণকর্তা৷ কারণ যীশু তাঁর বাপ্তিস্মের দ্বারা আমাদের সকল জগতের পাপ নিজের উপর গ্রহণ করেছিলেন, ক্রুশের উপর রক্তপাত ও মৃত্যুবুরণ এবং তাঁর মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হওয়ার দ্বারা, তিনি কেবল আমাদের সকল পাপ ধৌতই করেন নি, কিন্তু তিনি আমাদের স্থানে যন্ত্রনাদায়ক পাপের দন্ড ভোগ করেছিলেন৷
তৃতীয়ত, লালচে সুতা রক্তের প্রতি নির্দেশ করে যা যীশু ক্রুশে সেচন করেছিলেন, এবং এর অর্থ আমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস করে খ্রীষ্ট তাদেরকে নুতন জীবন দিয়েছেন৷ লাল সুত্রের সত্য আমাদের বলে যে যোহনের নিকট তিনি তাঁর গৃহীত বাপ্তিস্ম গ্রহণ করবার মাধ্যমে জগতের পাপ আপন দেহে বহন করে কেবল আমাদের নিজেদের পাপের দন্ড গ্রহণ করেন নি, বরং তিনি যারা পাপের বিষয়ে মৃত, সেই বিশ্বাসীদের জীবন-প্রদানকারী বিশ্বাস দান করবার দ্বারা নুতন জীবন দান করেছিলেন৷ যারা তাঁর বাপ্তিস্ম ও তিনি যে রক্ত সেচন করেছিলেন, তাতে বিশ্বাস করে, তাদের যীশু প্রকৃতই নুতন জীবন দান করেছেন৷
তাহলে, পাকানো মিহি মসীনার অর্থ কি ? পাকানো মিহি মসীনা প্রকাশ করে যে নুতন নিয়মের সাথে, ঈশ্বর পুরাতন নিয়মে লিখিত তাঁর পরিত্রাণের প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করেছিলেন৷ এই মসীনা আমাদের আরো বলে যে নুতন নিয়মে যীশু যখন তাঁর বাপ্তিস্মের দ্বারা জগতের সকল পাপ নিজের উপরে তুলে নিয়েছিলেন এবং আমাদের পাপের কারণে ক্রুশের উপরে বিচারিত হয়েছিলেন, তখন তিনি সেই পরিত্রাণ পূর্ণ করেছিলেন যা ঈশ্বর তাঁর নিয়মেরবাক্য দ্বারা ইস্রায়েলীয়দের ও আমাদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন৷
যিশাইয় ১:১৮ তে যিহোবা ঈশ্বর বলেছেন, “আইস, আমরা উত্তর প্রত্যুত্তর করি; তোমাদের পাপ সকল সিন্দূরবর্ণ হইলেও হিমের ন্যায় শুক্লবর্ণ হইবে; লাক্ষার ন্যায় রাঙ্গা হইলেও মেষলোমের ন্যায় হইবে।” এছাড়া, পুরাতন নিয়মের বলিদান বিধিতে আবাস তাম্বুতে কিভাবে বলিদান উত্সর্গ করা হত, যে বিধির মধ্যে হস্তার্পনের দ্বারা ইস্রায়েলের লোকেদের পাপ বলিকৃত মেষশাবকের উপরে চলে যেত, সেটি ইস্রায়েলীয়দের ও আমাদের কাছে করা ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা ছিল৷ সেটি ঈশ্বরের সেই প্রতিজ্ঞার প্রকাশ ছিল যেটিতে তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে ভবিষ্যতে তিনি ঈশ্বরের মেষশাবকের মাধ্যমে জগতের সকল লোকেদেরকে তাদের দৈনন্দিন ও বার্ষিক পাপ থেকে পরিত্রাণ করবেন৷
এটি প্রতিজ্ঞাত মশীহের আগমনের চিহ্নও বটে৷ সুতরাং, নুতন নিয়মের কালে যখন যীশু খ্রীষ্ট পুরাতন নিয়মের পথ অনুসারে তাঁর বাপ্তিস্ম গ্রহণ করবার দ্বারা নিজের উপর একেবারে জগতের সকল পাপ তুলে নিয়েছিলেন, তখন তা ছিল ঈশ্বরের নিয়মের বাস্তবায়ন৷ আমাদেরকে তাঁর সমস্ত প্রতিজ্ঞার বাক্য দিয়ে, ঈশ্বর দেখিয়েছেন যে তিনি ঠিক যেমনটা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, ঠিক সেইভাবেই সেই সকল প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করেছিলেন৷ যীশু যে বাপ্তিস্ম গ্রহণ করেছিলেন তা এই সত্য প্রকাশ করে যে নিয়মের ঈশ্বর তাঁর সকল নিয়ম বাস্তবায়িত করেছেন৷