Search

उपदेश

বিষয় ৯: রোমীয় পুস্তক (রোমীয় পুস্তকের ভাষ্য)

[8-9] সবকিছু মঙ্গলের জন্য একসঙ্গে কাজ করছে (রোমীয় ৮:২৮-৩০)

< রোমীয় ৮:২৮-৩০ >
“আর আমরা জানি, যাহারা ঈশ্বরকে প্রেম করে, যাহারা তাঁহার সঙ্কল্প অনুসারে  আহূত, তাহাদের পক্ষে সকলই মঙ্গলার্থে একসঙ্গে কাৰ্য্য করিতেছে। কারণ তিনি যাহাদিগকে পূৰ্ব্বে জানিলেন, তাহাদিগকে আপন পুত্রের প্রতিমূর্ত্তির অনুরূপ হইবার জন্য পূর্ব্বে নিরূপণও করিলেন; যেন ইনি অনেক ভ্রাতার মধ্যে প্রথমজাত হন। আর তিনি যাহাদিগকে পূর্ব্বে নিরূপণ করিলেন, তাহাদিগকে আহবানও করিলেন; আর যাহাদিগকে আহবান করিলেন, তাহাদিগকে ধর্ম্মিক গণিতও করিলেন; আর যাহাদিগকে ধার্ম্মিক  গণিত করিলেন, তাহাদিগকে প্রতাপান্বিতও করিলেন।”
আজ আমরা রোমীয় ৮ অধ্যায়ের এই অংশ আলোচনা করব। বলা হয়েছে যে, যারা ঈশ্বরের পুত্র যীশু খ্রীষ্টে আছে, তাদেরকে পূর্ব থেকেই মনোনীত করা হয়েছে, আহবান করা হয়েছে এবং প্রতাপান্বিত করা হয়েছে। আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করব এবং লোকে কিভাবে ক্রমবর্ধমান পবিত্রতায়র মতবাদে বিশ্বাস করে, সেটাও আলোচনা করব।
রোমীয় ৮:২৮পদে বলেছে, “আর আমরা জানি, যাহারা ঈশ্বরকে প্রেম করে, যাহারা তাঁহার সঙ্কল্প অনুসারে আহূত, তাহাদের পক্ষে সকলই মঙ্গলার্থে একসঙ্গে কাৰ্য্য করিতেছে।” এখানে আমাদের চিন্তা করতে হবে, “যাহারা ঈশ্বরকে প্রেম করে”  তারা কারা।
সমস্ত কিছুই কি মঙ্গলের জন্য একসাথে কাজ করে? ঈশ্বর তাই বলেন। একেবারে আদিতে, মানুষ সৃষ্টির পূর্বে তাঁরই উদ্দেশে মানুষকে তাঁর সন্তান করার জন্য ঈশ্বর সঙ্কল্প করেছিলেন এবং তাঁর এক মাত্র পুত্র যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে চিরকালের জন্য তিনি তাই করলেন।
এখানে আমাদের স্মরণ করতে হবে যে, এদোন উদ্যানে  ভালমন্দের জ্ঞান দায়ক গাছটি ছিল কেন ঈশ্বর এই গাছটি হতে দিলেন? এটাই ভাল হত যদি ঈশ্বর প্রথমেই এই ভালমন্দের জ্ঞান দায়ক গাছটি না রাখতেন। অনেকেই এই বিষয়ে কৌতুহলী।
 কিন্তু ঈশ্বরের একটি পবিত্র উদ্দেশ্য ও সঙ্কল্প ছিল। ঈশ্বর তাঁর নিজের প্রতিমূর্ত্তিতে মানুষকে সৃষ্টি করেছিলেন। আসলে ঈশ্বরের ধার্ম্মিকতা লাভের পূর্বে মানুষ অন্য সৃষ্টি থেকে আলাদা ছিলনা।
 


কেন ঈশ্বর ভালমন্দ জ্ঞান দায়ক এই বৃক্ষটি লাগালেন?


সেই কারণেই আমাদের অবশ্যই জানতে হবে যে, কেন ঈশ্বর আদম ও হবাকে ভালমন্দের জ্ঞান দায়ক বৃক্ষের ফল খেতে নিশেধ করলেন। কারণটা কি ছিল? যেন মানুষ ঈশ্বরের ব্যবস্থার অধীনে থাকে এবং যেন যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে পাপের ক্ষমা পেয়ে যেন তারা তাঁর সন্তান হতে পারে। এই বাক্যে ঈশ্বরের সমস্ত ধার্ম্মিকতা লুকায়িত রয়েছে, “যাহারা ঈশ্বরকে প্রেম করে, তাদের পক্ষে সকলই মঙ্গলার্থে একসঙ্গে কার্য করিতেছে।” যেহেতু ঈশ্বর বলেন, “আর আমরা জানি, যাহারা ঈশ্বরকে প্রেম করে, যাহারা তাঁহার সঙ্কল্প অনুসারে আহূত, তাহাদের পক্ষে সকলই মঙ্গলার্থে একসঙ্গে কাৰ্য্য করিতেছে”(রোমীয় ৮:২৮), তাই আমাদের অবশ্যই যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে দেওয়া জল ও আত্মার সুসমাচারের মধ্যে এই প্রশ্নের  উত্তর খুঁজে পেতে হবে।
সেটা করতে হলে অবশ্যই প্রথমে ঈশ্বরের সুসমাচার আমাদের জানতে হবে। তাহলে আমরা বুঝতে পারব যে, ঈশ্বর যা কিছু সঙ্কল্প করেন এবং সাধন করেন, তা মঙ্গলার্থেই  করেন। কিন্তু এই সত্য বুঝতে হলে আমাদের অবশ্যই জল ও আত্মার সুসমাচার বিশ্বাস  করতে হবে। ঈশ্বরের দেওয়া সুসমাচারে এর উত্তর আমাদের খুঁজতে হবে।  
কেন ঈশ্বর আমাদের সৃষ্টি করলেন, কেন এদোন উদ্দ্যানে ভালমন্দ জ্ঞান দায়ক বৃক্ষটি রোপন করলেন এবং কেন আদম এবং হবাকে সেই গাছের ফল খেতে দিলেন এবং আমদের তাঁর ব্যবস্থা জানতে দিলেন, তার কারণ হল আমরা যেন তাঁর সন্তান হতে পারি। আমাদের প্রভু আমাদের সবাইকে মুক্ত করেছেন, এবং এই সব কিছু ঘটতে দিয়েছেন, যেন আমরা পাপের ক্ষমা পেয়ে অনন্ত জীবন গৌরব ও স্বর্গলাভ করতে পারি। ধূলি থেকে ঈশ্বর মানুষ সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি এবং জন্মগত ভাবেই মানুষ দূর্বল। বাইবেলে প্রায়ই আমাদের মাটির পাত্রের সাথে তুলানা করা হয়েছে। ঈশ্বর কুমার এবং তিনি মাটি থেকে মানুষ তৈরী করেছেন। ধূলি থেকে ঈশ্বর মানুষ সৃষ্টি করলেন এবং জল ও আত্মার প্রেমের প্রাণবায়ু তার মধ্যে প্রবাহিত  করলেন। আমাদেরকে তাঁর নিজের সন্তান করার জন্য ঈশ্বর জল ও আত্মার সত্য দিলেন।
মাটির পাত্র খুব সহজেই ভেঙ্গে যায়। সেইভাবে মানুষকে তাঁর নিজের সন্তান করার জন্য মানুষের দেহ ও আত্মাকে তিনি দূর্বল করে সৃষ্টি করলেন। তাঁর সেই উদ্দেশ্য যীশুর মাধ্যমে তা পূর্ণতা পেল। যীশু মানব জাতির সমস্ত পাপ ধূয়ে দিলে, ঈশ্বরের ধার্ম্মিকতার তাদের সজ্জিত করলেন যেন, জল ও আত্মার সুসমাচারের মাধ্যমে নূতন জন্ম পেয়ে তারা অনন্ত জীবন লাভ করতে পারে। এইজন্যই প্রথম থেকে ঈশ্বর আমাদের নিখুত না করে অসম্পূর্ণ ও দূর্বল করে সৃষ্টি করলেন। 
 


ঈশ্বর কেন প্রথম থেকেই মানুষকে দূর্বল করে সৃষ্টি করলেন?


কেন ঈশ্বর এদোনে ভালমন্দ জ্ঞান দায়ক বৃক্ষ সৃষ্টি করলেন এবং কেন আদম এবং হবাকে তার ফল খেতে নিষেধ করলেন? জল ও আত্মার সুসমাচারে এর কারণ অবশ্যই বুঝা যাবে। আদম এবং হবা যখন পাপে পতিত হল তখন কেন ঈশ্বর বললেন যে, নারীর বংশ শয়তানের মস্তক চূর্ণ কর যে, এবং শয়তান তার পাদমূল চূর্ণ করবে?  এই সমস্ত ঘটেছে যেন মানুষ তাঁর নিজের সন্তান হতে পারে। তাঁর একজাত পুত্র যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে এটাই তাঁর সঙ্কল্প ছিল। 
তাহলে, ঈশ্বরের সঙ্কল্প অনুসারে কাদেরকে “আহূত” বলা যায়? যারা নিজেদের পাপ এবং এবং অধর্ম্ম বুঝতে পারে এবং যারা ঈশ্বরের প্রেম ওয়াদা অন্বেষণ করে। আমাদের অবশ্যই বুঝতে হবে যে, ধর্মতত্ত্বের নিঃশর্ত মনোনয়ের মতবাদ এবং ক্রমবর্ধমান পবিত্রতার মতবাদ ভুল। নিঃশর্ত মনোনয়ের মতবাদ এই কারণে ভুল যে, আমাদের ঈশ্বর এমন ঈশ্বর নন যিনি নিঃশর্তে কাউকে মনোনীত করেন বা কাউকে বাদ দেন। 
বরং ঈশ্বর তাদের নিরূপন ও আহবান করেন যারা নিজেদের পাপের জন্য দুঃখার্ত হয়, তারা জানে যে, নরকে যাওয়া ছাড়া তাদের আর কোন গতি নেই, যাদের উপরে ঈশ্বরের দয়া রয়েছে এবং যাদের কে তিনি জল ও আত্মার সুসমাচারে আহবান করেছেন।
এই পৃথিবীতে যত লোক জন্ম গ্রহন করেছে এবং যতজন তাঁর কাছে ফিরে গিয়েছে, কেউই বিনা কারণে মনোনীত বা প্রত্যাক্ষাত হয়নি। কোন কারণ ছাড়া ঈশ্বর যদি আপনাকে মনোনীত করতেন, তাহলে আপনি অবশ্যই ঈশ্বরের বিপক্ষতা করতেন। এটাও বলা বোকামি যে, কোন কারণ ছাড়াই ঈশ্বর আপনাকে বা অন্য কাউকে দিয়াবলের সন্তান হতে দেন। ঈশ্বর তা করেন না।
যদি ঈশ্বর আপনাকে মনোনীত না করে থাকেন, তার মানে আপনি জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস করেন না। যদি আপনি ঈশ্বরের দেওয়া জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস না করেন তাহলে তিনি আপনাকে পরিত্যাগ করবেন। কারণ আমাদের প্রভু বলেন,“কেননা আমি ধার্ম্মিকদিগকে নয়, কিন্তু পাপীদিগকে ডাকিতে আসিয়াছি” (মথি ৯:১৩)। কিন্তু দুর্ভাগ্য ক্রমে আমাদের ধর্মতত্ত্ববিদেরা যা করেছেন, তার দ্বারা ঈশ্বরকে গোড়া এবং কু-সংস্কারাচ্ছন্ন করা হয়েছে।
 


ঈশ্বরের সংকল্প অনুসারে আহূত কারা?


যারা নরকের যোগ্য সেই সব পাপীরাই ঈশ্বর কর্তৃক আহূত। তারা ঈশ্বরের কাছে আসে এবং স্বীকার করে যে, তারা নরকের যোগ্য এবং দূর্বলতা কারণে এবং মৃত্যু পর্যন্ত তাঁর অবাধ্য হওয়ার কারণে নরকে যাওয়া ছাড়া তাদের উপায় নেই। ঈশ্বর পাপীদেরকে আহবান করেছেন এবং জল ও আত্মার সুসমাচার দ্বারা তাদেরকে শুচি করেছেন। যাদের নরকে যাওয়া ছাড়া উপায় ছিল না, তাদেরকে  আহবান করেছেন এবং জল ও আত্মার সুসমাচার দ্বারা তাদেরকে পাপ থেকে মুক্ত করেছেন।
যারা ভাল এবং ব্যবস্থার বাধ্য, তাদেরকে ঈশ্বর আহবান করেননি। বরং যারা তাঁর অনুসারী, বাঁচার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে এবং যারা বুঝতে পারে যে, তাদের দূর্বলতা তাদেরকে পাপের দিকে ধাবিত করে, যদিও তারা ঈশ্বরে বিশ্বাস করে এবং নির্ভর করে, ঈশ্বর তাদেরকে আহবান করেন। ঈশ্বরের সংকল্প অনুযায়ী এটাই তাঁর আহবান। তাঁর ইচ্ছানুসারে আহূতদের মঙ্গলের জন্য সবকিছু একসঙ্গে কাজ করছে।
ঈশ্বরের আহবানে অবশ্যই আমাদের বিশ্বাস করতে হবে। আমাদের এটা বলা উচিত নয় যে, কোন কারণ ছাড়াই আমরা যীশুতে বিশ্বাস করি। এরকম বিশ্বাস প্রকৃত বিশ্বাস নয়। প্রকৃত বিশ্বাস হল ঈশ্বরের ইচ্ছানুসারে বিশ্বাস, মানুষের নিজের ইচ্ছানুসারে নয়। তার মানে এই কথা বিশ্বাস করা যে, ঈশ্বর আমাদের দুর্বলতা ভালভাবেই জানেন, তাই তিনি একবারেই চিরতরে আমাদের সমস্ত পাপ তুলে নিয়েছেন এবং এইভাবেই তিনি আমাদের পাপ থেকে মুক্ত করেছেন। ঈশ্বরের সংকল্পে, যীশু খ্রীষ্টের বাপ্তিস্ম ও রক্তে আমাদের বিশ্বাস স্থাপনের দ্বারা আমরা তাঁর সন্তান হতে পারি। এটা ঈশ্বরেরই ইচ্ছা যেন, আমরা পাপ থেকে মুক্ত হয়ে তাঁর সন্তান হতে পারি, তাঁর উদ্দেশ্য বুঝে যারা গ্রহণ করে ঈশ্বর তাদের সত্যিই ভালবাসেন এবং তাদের আহবান করেন।
 

ঈশ্বরের মনোনীত কারা?

ঈশ্বরের সাক্ষাতে দুই সারিতে লোক দাঁড়িয়ে নেই যে, ঈশ্বর দক্ষিণ পাশ্বের মনোনীত লোকদের বলবেন যে, “এস এবং যীশুতে বিশ্বাস করে স্বর্গে যাও” এবং বাম পাশ্বের লোকদিগকে বলেন, “নরকে যাও।”
ক্যালভিন অসুসারীরা দাবী করে যে, ঈশ্বর বিনা কারণেই  কাউকে কাউকে মনোনীত করেন এবং অন্যদের প্রথম থেকেই পরিত্যাগ করেন। কিন্তু ঈশ্বর সে রকম নন। যারা তাঁর সংকল্প অনুসারে আহূত তাদের পক্ষে তিনি সমস্ত কিছুকে একসঙ্গে মঙ্গলার্থে ঘটতে দিচ্ছেন। কোন কারণ ছাড়াই নিঃশর্তভাবে আমরা মনোনীত  হয়েছি এমন চিন্তা বোকামী।
তাহলে কি ঈশ্বর অন্যায়ী ঈশ্বর? অবশ্যই না। ঈশ্বর এবং তাঁর ব্যবস্থার কাছে প্রত্যেকেই সমান। বিচারের ক্ষেত্রেও প্রত্যেকে সমান। আমার ঈশ্বরের কাছ থেকে পরিত্রাণের অনুগ্রহ পেয়েছি, যা আমাদের যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে পাপ থেকে উদ্ধার করেছে। এই সত্যে বিশ্বাস করার সুযোগও সবার জন্য সমান। যারা ঈশ্বরের সংকল্প গ্রহণ করে এবং নিজেদের দুর্বলতা বুঝতে পারে এবং জল ও আত্মার সুসমাচার বিশ্বাস করে তাদের জন্য তিনি এই অনুগ্রহ প্রদান করেছেন। 
তাহলে স্বর্গীয় পূর্ব নিরূপন ও মনোনয়নের সত্য কি? তা হল, ঈশ্বরের দেয়া জল ও আত্মার সুসমাচারের মাধ্যমে ঈশ্বরের সংকল্পের মধ্যে আহূত হওয়া। কারণ ঈশ্বর যীশুর মাধ্যমে আমাদের সমস্ত পাপ তুলে নিয়েছেন, আমাদেরকে তাঁর সন্তান করার পরিকল্পনা করেছিলেন যেন আমরা এই পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করে সুসমাচার শোনার সুযোগ পাই। যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমেই ঈশ্বর আগেই এই সমস্ত পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন। এটা ঈশ্বরের সংকল্প ছিল। যখন আমরা ঈশ্বরের সম্মুখে উপস্থিত হই, তখন অবশ্যই প্রথমে আমাদের চিন্তা করতে হবে যে, আমি যাকোবের মত না এষৌর মত।
     শাস্ত্র থেকে আমরা জানতে পারি যে, ঈশ্বর যাকোবকে প্রেম করেছিলেন কিন্তু এষৌকে ত্যাগ করেছিলেন। কয়িন এবং হেবলের ক্ষেত্রেও ঈশ্বর হেবলকে প্রেম করেছিলেন এবং কয়িনকে ত্যাগ করেছিলেন।ঈশ্বর কি কোন কারণ ছাড়াই যাকোব ও হেবলকে প্রেম করেছিলেন এবং এষৌ ও কয়িনকে ত্যাগ করেছিলেন? না। কারণ এষৌ এবং কয়িন নিজেদের শক্তির উপরে নির্ভর ছিল, ঈশ্বরের অনুগ্রহ তারা যাচ্ঞা করেনি; কিন্তু যাকোব এবং হেবল নিজেদের দুর্বলতা জানত, তারা ঈশ্বরের অনুগ্রহ চেয়েছিল এবং তাঁর বাক্যে বিশ্বাস করেছিল।
এই দুইটি দৃষ্টান্তের  মাধ্যমে শাস্ত্রে ঈশ্বর তাঁর পূর্ব নিরূপন ও মনোনয়নের বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন। আমরা কোন দলে পড়ি? এষৌ যেমন নিজের শক্তির উপরে নির্ভর করেছিল, আমরা কি তেমনিভাবে ঈশ্বরের  সাক্ষাত পেতে পারি? না, আমরা পারি না। আমরা কেবল ঈশ্বরের অনুগ্রহে পূর্ণ জল ও আত্মার সুসমাচারের মাধ্যমেই তাঁর সাক্ষাত পেতে পারি। এই দুই দলের মধ্যে ঈশ্বরের দৃষ্টিতে আমরা কোন দলে পড়ি? আমরা ঈশ্বরের সাক্ষাতে সব সময় আশীর্বাদ পেতে চাই, কিন্তু নিজেদের দুর্বলতার কারণে সব সময় তা থেকে বঞ্চিত হই। যদিও আমরা ঈশ্বরের সংকল্প অনুসারে জীবন যাপন করতে চাই, কিন্তু তার পরেও ঈশ্বরের সাক্ষাতে আমরা দুর্বল এবং অসম্পূর্ণ এবং এজন্যই ঈশ্বরের অনুগ্রহ আমাদের যাঞা করা উচিত। ঈশ্বরের কাছ থেকে যদি আমরা আশীর্বাদ পেতে চাই, তাহলে আমাদের যাকোবের মত হতে হবে এবং হেবলের মত বিশ্বাস থাকতে হবে। ঈশ্বরের সাক্ষাতে আমাদের সব সময় স্বীকার করতে হবে যে, আমরা দুর্বল, অসম্পূর্ণ এবং ভীত।
গীতসংহিতা (১৪৫:১৪) পদে আছে, “সদাপ্রভু পতনোন্মুখ সকলকে ধরিয়া রাখেন, অবনত সকলকে উত্থাপন করেন।” বাস্তবিকই প্রত্যেকেই ঈশ্বরের সাক্ষাতে অবনত হয়। আমাদের কোন সাহস নেই। ক্ষুদ্রতম সুবিধা লাভের জন্যেও আমরা আপোষ করি। আমরা কৃতদাস। যদি গভীরভাবে আমরা নিজেদের দিকে তাকাই তাহলে সহজে বুঝতে পারি যে, কতটা বন্দি জীবন আমরা যাপন করি। সবলদের কাছে আমরা নত হই এবং অনেক অসত্য বিষয়ের দ্বারা আমরা সত্যকে অস্বীকার করি। কিন্তু ঈশ্বর এই হীনমন্যদের আহবান করেছেন, তাদেরকে প্রেম করেছেন, যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে পরিত্রাণ দিয়ে তিনি তাদেরকে তাঁর সন্তান করতে চেয়েছেন।
এই সত্য আমাদের অবশ্যই উপলব্দি করা উচিত যে, ঈশ্বরের প্রেম পাওয়ার জন্য আমরা কতটা দুর্বল এবং অসম্পূর্ণ। আমরা পরিপূর্ণভাবে ব্যবস্থা পালন করতে পারি কিনা, নিজেদের কাছে সেই প্রশ্ন আমাদের করা উচিত। তাহলে আমরা তৎক্ষনাই বুঝতে পারব যে, ব্যবস্থা পালন করার কোন সামর্থ আমাদের নেই এবং আমরা সূচি জীবন যাপন করতে পারি না।
যদি আমরা সূচিই হতাম, তাহলে আমাদের কোন ত্রাণকর্তার প্রয়োজন ছিল না। আমরা সূচি হতাম তাহলে ঈশ্বরের সাহায্য ও আশীর্বাদ আমাদের কেন প্রয়োজন হত? যেহেতু আমরা ঈশ্বরের সাক্ষাতে খুবই দুর্বল, তাই তাঁর আশীর্বাদ আমাদের খুবই প্রয়োজন। তাঁর অনুগ্রহের আমাদের প্রয়োজন  রয়েছে। ঈশ্বর আমাদের এত বেশী করুনা করলেন যে, তিনি তার একমাত্র পুত্রকে আমাদের জন্য  প্রেরণ করলেন এবং তাঁর মাধ্যমে আমাদের সমস্ত পাপ ধৌত করলেন। আর আমাদের স্থলে আমাদের বিচার ঈশ্বর তাঁর পুত্রের উপরে বর্তালেন যেন আমরা পাপ থেকে মুক্ত হতে পারি। এই সত্যে  আমাদেরকে অবশ্যই বিশ্বাস করতে হবে। কেবলমাত্র এই বিশ্বাসেই আমরা  ঈশ্বরের সন্তান হতে পারি। তাঁর অনুগ্রহের দ্বারাই আমার তাঁর প্রেমে  সজ্জিত হয়েছি, কিন্তু নিজেদের চেষ্টার দ্বারা পরিত্রাণ অর্জন করার উদ্দেশে নয়।
      যদিও অনেক খ্রীষ্টিয়ান পূর্ব নিরূপন ও মনোনয়নের মতবাদ শিক্ষা দিয়ে থাকেন, তারা নিজেরাও এই মতবাদ সম্পর্কে চিন্তিত। কারণ তাদের সবসময় মাথায় এই চিন্তা থাকে যে, তারা পূর্বে ঈশ্বর কর্ত্তৃক মনোনীত হয়েছে কিনা।
 ক্যালভেনীয় ধর্মতত্ত্বের ৯০% এই দুই মতবাদের উপর প্রতিষ্ঠিত। প্রশ্ন হল যীশুতে বিশ্বাস করা সত্ত্বেও তারা মনোনীত কি-না এই চিন্তায় তারা চিন্তিত। কিন্তু আপনি মনোনীত কি-না সেটা ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ হল এই যে, জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস করে ঈশ্বরের ধার্ম্মিকতার গ্রহন করার মাধ্যমে আপনি পরিত্রাণ পেয়েছেন কি-না। বিশ্বাসী যারা ঈশ্বরের ধার্ম্মিকতা গ্রহণ করেছে তারাই মনোনীত।
থিওলজিতে একজন ডক্টর ডিগ্রীধারী ব্যক্তি ছিলেন যাকে রক্ষনশীল ধর্মতত্ত্ব শিক্ষক হিসাবে বিবেচনা কর হত। তিনি ক্যালভেনীয় শিক্ষার প্রচুর মূল্য দিতেন অর্থাৎ পূর্ব নিরূপন এবং স্বর্গীয় মনোনয়নের মতবাদ।
একদিন আমি এই বিষয়ের উপর বক্তৃতা করছিলাম, তখন একজন ছাত্র আমাকে প্রশ্ন করল, “ভাল, আপনি কি ঈশ্বরের মনোনীত? ঈশ্বর কাকে মনোনীত করেছেন তা আপনি কিভাবে জানেন?”
সেই থিওলজিয়ান উত্তর দিলেন, “কে এইটা জানতে পারে? ঈশ্বরের সাক্ষাতে  উপস্থিত হলেই আমরা এটি জানতে পারব।” সুতরাং ছাত্রটি  আবার জিজ্ঞাসা করল, “ঈশ্বরের সাক্ষাতে উপস্থিত  হওয়ার পরে যদি বলেন যে, আপনি মনোনীত নন, তখন আপনি কি করবেন?”
অধ্যাপক উত্তর দিলেন, “ঈশ্বর যা আগে থেকেই নিরূপন করে রেখেছেন, সে সম্বন্ধে আমার কি করার আছে? এই কারণে আমি বলেছি যে, ঈশ্বরের সাক্ষাতে উপস্থিত হলেই আমরা এর উত্তর পাব।”
ছাত্ররা চিন্তা করল, “তিনি নিশ্চয়ই খুব বিনয়ী লোক। তার মত একজন মহৎ ব্যক্তি নিজেও জানেন না যে, তিনি মনোনীত কি-না, এই কথা তিনি মুখে স্বীকারও করেছেন। সুতরাং এটা খুবই স্বাভাবিক যে, মানুষ মনোনীত কি-না সে তা জানতে পারে না।”
কিন্তু ঈশ্বরের ধার্ম্মিকতায় নিহিত সত্য এখন পরিস্কারভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। কিছু কিছু বিষয় ঈশ্বর মানুষের কাছ থেকে মুক্ত রেখেছিলেন, কিন্তু উপযুক্ত সময় তিনি তা প্রকাশ করেছেন। যে প্রচারক নিজেই জানে না যে, সে পরিত্রাণ পেয়েছে কি-না অথবা সে মনোনীত কি-না, সে কি করে সুসমাচার প্রচার করতে পারে? যারা ঈশ্বরের ধার্ম্মিকতায় বিশ্বাস করে, তারাই ঈশ্বর কর্ত্তৃক আহূত।
 রোমীয় ৮:২৯পদে বলা হয়েছে, “কারণ তিনি যাহাদিগকে পূর্ব্বে জানিলেন, তাহাদিগকে আপন পুত্রের প্রতিমূর্ত্তির অনুরূপ হইবার জন্য পূর্ব্বে নিরূপণও করিলেন; যেন তিনি অনেক ভ্রাতার মধ্যে প্রথম জাত হন।” পিতা ঈশ্বর তাঁর পুত্র যীশু খ্রীষ্টের অনুরূপ করার জন্য আমাদেরকে পূর্বে নিরূপণ করলেন, যেন অনেক ভ্রাতার মধ্যে তাঁর পুত্র “প্রথম জাত” হন। যীশুকে “প্রথম জাত” বলা হচ্ছে। যদি আমরা যীশুতে এবং ঈশ্বরের দেয়া জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস করি, তাহলে আমরা সমস্ত পাপের ক্ষমা পেয়ে তার সন্তান হতে পারি। তাহলে যীশুর সাথে আমাদের সম্পর্ক কি দাঁড়ায়? তিনি আমাদের জ্যেষ্ঠ ভ্রাত হন। তিনি ঈশ্বরের “প্রথম জাত” এবং আমার সবাই তার ছোট ভাইবোন।
      বহুদিন পূর্বে আমি যখন একটা প্রার্থনা গৃহে বাস করতাম,  একজন সুসমাচার প্রচারক আমার কাছে গিয়েছিলেন। তিনি চীনে থাকা অবস্থায় যীশুকে বিশ্বাস করেছিলেন এবং পড়ে কোরিয়াতে এসেছিলেন। একদিন হঠাৎ আমি তাঁর প্রার্থনা শুনে ফেলেছিলাম, তিনি প্রার্থনা করছিলেন, “ভাই যীশু ও পিতা ঈশ্বর আমাকে পরিত্রাণ করার জন্য আমি তোমাদের ধন্যবাদ জানাই। যীশু, আমার বড় ভাই,  আমাকে সাহায্য কর।” যীশু তার ভাই!
আমাদের প্রশ্ন থাকতে পারে যে, ঈশ্বর আমাদের সবকিছু জানেন কি-না। এর উত্তর হলো,- হ্যাঁ তিনি আমাদের সমস্ত কিছুই জানেন। এমনকি জগত সৃষ্টির পূর্বেই তাঁর “একজাত” পুত্রের মাধ্যমে আমাদেরকে উদ্ধার করার জন্য তিনি সংকল্প করে রেখেছিলেন। এটাই ঈশ্বরের পরিকল্পনা ছিল। আমাদের পাপ থেকে মুক্ত করার জন্য তাঁর পুত্র এ জগতে এলেন, বাপ্তাইজিত হলেন এবং  ক্রুশারোপিত হলেন। ঈশ্বর পূর্বেই এটা পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন।
   জগত সৃষ্টির পূর্বে, আমরা বলতে পারি যে, ৩ জনের একটি কনফারেন্স ডেকেছিলেন। ত্রিত্ত্ব ঈশ্বর-পিতা ঈশ্বর, পুত্র ঈশ্বর এবং পবিত্র আত্মন ঈশ্বর পরিকল্পনা করেছিলেন যে, যারা তাঁর ধার্ম্মিকতায় বিশ্বাস করবে, তাদেরকে পরিত্রাণ করবেন। তাঁর সংকল্প ছিল যে, তিনি মানুষ সৃষ্টি করবেন বং তাদেরকে তাঁর সন্তান করে একত্রে তাঁর পবিত্র রাজ্যে রাখবেন।
     পিতা ঈশ্বর, পুত্র ঈশ্বর এবং পবিত্র আত্মন ঈশ্বর তিন জনেই এই পরিকল্পনায় একমত হলেন। তারপর কিভাবে মানুষ সৃষ্টি করবেন এবং মানুষকে তাঁর সন্তান করবেন সেই পরিকল্পনা করলেন। পিতা ঈশ্বর সংকল্প করলেন যে, তিনি তাঁর পুত্র যীশুকে জগতে পাঠাবেন, যীশুর বাপ্তিস্ম এবং ক্ৰুশীয় মৃত্যুর পরিকল্পনা করলেন যেন, মানুষ তাঁর পুত্রের প্রতিমূৰ্ত্তি লাভ করতে পারে।
    আমাদের সৃষ্টি করার পিছনে ঈশ্বরের কি সংকল্প ছিল? যেন আমরা তাঁর সন্তান হতে পারি। যীশু কি ঈশ্বর “প্রথমজাত,”? হ্যাঁ, তিনি “প্রথমজাত” এবং যেহেতু  আমরা  ঈশ্বরের  সন্তান হয়েছি, তাই আমরা যীশুর ভাই বা বোন। 
     বছর বয়স পর্যন্ত এই পৃথিবীতে থাকা অবস্থায় যীশু মানুষের জীবনের সমস্ত দুর্বলতা ও অসম্পূর্ণতাগুলো নিজের জীবন দিয়ে বুঝতে পেরেছিলেন। এই জন্য প্রার্থনার সময় আমরা বলি, “যীশু আমি খুবই দুর্বল। এটাই আমার প্রকৃতি। দয়া করে আমাকে সাহায্য কর এবং রক্ষা করা। তোমার বাক্য গ্রহণ করার জন্য মানুষের হৃদয়কে প্রস্তুত কর, অনুগ্রহ কর এবং তাদের সাহায্য কর।” প্রভু আমাদের প্রার্থনা শোনেন এবং  উত্তর দেন। যীশুর কাছে প্রার্থনা করা এবং ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা একই কথা।
কি উদ্দেশে ঈশ্বর আমাদেরকে সৃষ্টি করেছিলেন? আমাদিগকে তাঁর সন্তান করার উদ্দেশে। ঈশ্বর আমাদের সমস্ত কিছুই জানেন। তিনি আমাদিগকে পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করতে দিয়েছেন এবং যীশুর বাপ্তিস্ম এবং ক্ৰুশীয় রক্তের মাধ্যমে আমাদের পাপ থেকে আমাদিগকে মুক্ত করেছেন, কারণ তিনি পূর্বেই তা স্থির করেছেন, এমনকি পৃথিবী সৃষ্টির পূর্বে তিনি আমাদেরকে তাঁর দত্তকপুত্র এবং কন্যারূপে তৈরী করেছেন। অতএব তিনি শুধু আমাদের জীবন এবং মৃত্যুই জানেন না, কিন্তু আমাদের প্রতিটি মুহূর্ত তিনি জানেন। তিনি জানেন কখন আমরা জন্মগ্রহণ করি, আমরা কারা, কখন আমরা বিবাহ করব, কখন আমরা সন্তান জন্ম দিব, এবং আমাদের জীবনে কি ঘটবে। ঈশ্বর, যিনি আমাদের জীবন সম্পর্কে সমস্ত কিছুই জানেন, আমাদিগেকে জল ও আত্মার সুসমাচার দিয়েছেন যাতে আমরা যীশু খ্রীষ্টে বিশ্বাস করতে পারি এবং ঈশ্বরের সন্তান হতে পারি।
ঈশ্বর পূর্বেই আমাদিগকে জেনেছিলেন এবং স্থির করেছিলেন। রোমীয় (৮:৩০) পদে বলা হয়েছে, “আর তিনি যাহাদিগকে পূর্বে নিরূপণ করিলেন, তাহাদিগকে আহবানও করিলেন; আর যাহাদিগকে আহবান করিলেন তাহাদিগকে ধাৰ্ম্মিক গণিতও করিলেন; আর যাহাদিগকে ধার্ম্মিক গণিত করিলেন; আর যাহাদিগকে ধার্ম্মিক গণিত করিলেন, তাহাদিগকে প্রতাপান্বিতও করিলেন” আমি অতিরিক্ত জোর দিয়ে কিছু বলছি না, কিন্তু এই অনুচ্ছেদ বোঝা এবং বিশ্বাস করা আমাদের জন্য কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ এটাই বলছি।
  অনেক লোক উপরের পদটির সাহায্যে ক্রমবর্ধমান পবিত্রতার মতবাদকে সমর্থন করবে। এই অনুচ্ছেদের উপর ভিত্তি করে-যীশু আমাদের পূর্ব থেকে নিরূপণ করেছেন, আহবান করেছেন, ধার্ম্মিকত করেছেন এবং প্রতাপান্বিত করেছেন;- তারা দাবী করে যে, অন্তরে পাপ থাকা অবস্থায়ও ঈশ্বর আমাদেরকে পাপহীন হিসাবে গণ্য করেন। আর পবিত্রতার অনেকগুলো ধাপ অতিক্রম করার পর আমার প্রতাপান্বিত হব, ব্যাপারটা এমন যেন, পবিত্র হতে গেলে আমাদের কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করতে হয়।
ঈশ্বর কি যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে সকল পাপীকে পূর্বে নিরূপণ করেন নাই? তিনি আমাদের সকলকেই আহবান জানিয়েছেন, যদিও অনেকে তাঁর আহবানে সাড়া দেয় না। এরা এষৌ ও কয়িনের মত। এই প্রকার লোককে নরকে নিক্ষিপ্ত করা হবে। 
 

ঈশ্বরের অনুগ্রহে

পিতা ঈশ্বর তাঁর একজাত পুত্র প্রভুযীশুর মাধ্যমে আমাদের আহবান করার সংকল্প করেছিলেন এবং জল ও রক্তে আমাদের সমস্ত পাপ ধৌত করে দত্তকপুত্রতার জন্য আমাদেরকে পূর্বে নিরূপণ করেছিলেন। ঈশ্বরের আহবান সত্ত্বেও, যারা এখনও ঈশ্বরের কাছে আসেনা, তারা পরিত্রাণ থেকে দূরে রয়েছে। এই লোকেরা ঈশ্বরের অনুগ্রহের বহিঃর্ভুত, তারা নরকযোগ্য। আবার এমন অনেকেই আছে যারা ঈশ্বরের আহবানে বাধ্য। তারা বলে, “হে প্রভু তুমি আমার সমস্ত দুর্বলতা জান, আমার মত এই দুর্বল মানুষকে কি তুমি গ্রহণ করবে?” 
ঈশ্বর বলেন, “হ্যাঁ, অবশ্যই করব।”
“সত্যিই কি করবে ? আমি এত দুর্বল হওয়া সত্ত্বেও তুমি আমাকে গ্রহণ করবে?”
“অবশ্যই আমি তোমাকে গ্রহণ করব।”
“হে ঈশ্বর আমার এমন বিশেষ কিছু নাই যা তোমাকে আমি দিতে পারি, এমন প্রতিজ্ঞাও আমি করতে পারি না যে, এখন থেকে আমি ভাল হয়ে চলব।”
“প্রভু তবুও আমি তোমাকে গ্রহণ করব”
  “আমি নিশ্চিত নই যে, আমি ভাল হয়ে যাব এবং সূচি হওয়ার মত কোন যোগ্যতাও আমার নেই।”
“আমি তার পরেও তোমাকে গ্রহণ করব।”
“মনে হয় তুমি আমাকে ভাল ভাবে চেন না, তাই গ্রহণ করতে চাইছ। আমার দ্বার তুমি হতাশ হবে।”
 যখন আমরা আমাদের নিজেদের ভেতরটা দেখতে পাই, অন্যেরা আমাদের উপরে যথেষ্ট আস্থা ও বিশ্বাসমূলক আচরণ করলেও, তখন কি আমরা লজ্জিত হই না এবং বিভিন্ন আড়াল অবলম্বনের চেষ্টা করি না? কেন আমরা লুকাতে চাই? আমরা ভাল হওয়ার যোগ্যতা রাখি না এবং এ যাবতকাল যা করছি তাও রক্ষা করতে পারি না বিধায় আমরা আমাদের লুকাতে চাই। 
    তাই অনবরত একটা প্রশ্নই আমাদের মনে জাগে, “আমি এতটা দুর্বল হওয়া সত্ত্বেও কি তুমি আমাকে গ্রহণ করবে? তুমি কি সত্যিই গ্রহণ করবে? তোমাকে বিশ্বাস করার অধিকার তারপরেও আমাকে দিচ্ছ?  আমার মত মানুষ কি পাপের ক্ষমা পেতে পারে? শুধু বর্তমানে নয়, ভবিষ্যতেও যে ভাল হওয়ার যোগ্যতা যে রাখে না, সেই আমি কি ধার্ম্মিকত হতে পারি?” কিন্তু একটি বুনো জলপাই গাছকে ভাল গাছে রূপান্তর করার ক্ষমতা ঈশ্বরের আছে।
মূলতঃ আমরা বুনো জলপাই গাছ ছিলাম, স্বভাব ছিল বুনো, কিন্তু যীশুর দেয়া সুসমাচারে আমরা ভাল গাছে রূপান্তরিত হয়েছি। আমরা পাপ না করে পারি না, কিন্তু তার পরেও তিনি আমাদেরকে আহবান করেছেন। আমরা যখন সামান্য দুবল তখন কি তিনি আমাদেরকে আহবান করেন? যখন আমরা সম্পূর্ণরূপে যোগ্যতাহীন তখন তিনি আমাদেরকে আহবান করেন। আমাদের যত মারাত্মক অধর্ম থাকুক না কেন এবং যত পাপীই আমরা হইনা কেন, যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে তিনি আমাদের আহবান করেন। যখন তিনি আমাদেরকে আহবান করলেন, তখন তিনি কি করলেন? আমরা যেন অনন্ত জীবন পেতে পারি, সেই উদ্দেশে তিনি আমাদের সমস্ত পাপ তুলে নিলেন এবং তাঁর ধার্ম্মিকতা আমাদেরকে দান করলেন।
কিভাবে তিনি এই সমস্ত সাধন করলেন? মথি ৩ অধ্যায়ে আমাদেরকে বলা হয়েছে যে, যীশু এই পৃথিবীতে এলেন এবং বাপ্তাইজিত হয়ে সমস্ত মানুষের জন্য ধার্ম্মিকতা সাধন করলেন। যোহনের দ্বারা যীশু বাপ্তাইজিত হয়ে মানুষের সমস্ত পাপ নিজের উপরে তুলে নিলেন, সেই পাপ নিয়ে ক্রুশে মৃত্যুবরণ করলেন এবং সমস্ত মানুষকে পাপ থেকে উদ্ধার করার জন্য তৃতীয় দিবসে মৃত্যু  থেকে পুনরুত্থিত হলেন। তিনি আমাদের নূতন জীবন দিয়েছেন, এইভাবে আমাদের ধার্ম্মিক করেছেন এবং আমাদের সমস্ত পাপ ধৌত করেছেন। যীশু আমাদের আহবান করেছেন, জল ও রক্ত দ্বারা আমাদের পাপ ধৌত করেছেন, ঈশ্বরের ধার্ম্মিকতা আমাদের দিয়েছেন, আমাদের পাপহীন করেছেন এবং তারপর আমাদেরকে তাঁর সন্তান করে ধার্ম্মিক  হিসাবে প্রতাপান্বিত করেছেন।
    স্বর্গরাজ্যে প্রবেশের জন্য এবং অনন্তকাল ঈশ্বরের সন্তান হিসাবে বেঁচে থাকার জন্য যীশু আমাদের প্রতাপান্বিত করেছেন। আপনি  বুঝতে পারছেন? কিন্তু ধর্মীয় মতবাদে বলে যে, যদিও আপনি পাপী, আপনি যদি যীশুতে বিশ্বাস করেন, তবে ক্রমান্বয়ে সময়ের সাথে সাথে পবিত্র হবেন এবং মৃত্যুর পরে যেদিন আপনি ঈশ্বরের সাক্ষাতে দাঁড়াবেন, সেই দিন আপনি সম্পূর্ণ সূচি ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। এটা সত্যের বিপরীত। এটা প্রকৃত বিশ্বাস না। এই ধরনের বিশ্বাস পবিত্রতার মতবাদের জন্য, সত্যের জন্য নয়।
 প্রভু আমাদের পাপ থেকে উদ্ধার করেছেন এবং ঈশ্বর আমাদের পূর্বে নিরূপণ করেছেন, আহবান করেছেন, জল ও রক্ত দ্বারা আমাদের পাপ তৎক্ষনাৎ ধৌত করেছেন এবং এইভাবে আমরা যারা পবিত্র হয়েছি, আমাদেরকে তাঁর সন্তান করেছেন এবং আমাদের আশীর্বাদ করেছেন যেন গৌরবে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করতে পারি। এটাই সত্য এবং যীশু খ্রীষ্টের উপরে সমস্ত আশীর্বাদ অর্পণ করে এক বাক্যে তিনি এই সত্যের কথা বলেছেন। এই অংশটি ক্রমবর্ধমান পবিত্রতার মতবাদের সাতটি ধাপের কথা বলে না। এর মাধ্যমে এটা বলা হয়নি যে, সম্পূর্ণ পবিত্র হওয়ার উদ্দেশে ধাপে ধাপে ক্রমান্বয়ে আমরা সুখী হব।
(রোমীয় ৮:৩০)পদে এই কথা বলা হয়নি যে, যীশুতে বিশ্বাস করার পরেই ঈশ্বর আমাদের আহবান করবেন, অথবা বয়স বৃদ্ধির  সাথে সাথে আমরা পবিত্র হব। এখানে এ কথাও বলা হয়নি যে, পবিত্রতার বিভিন্ন ধাপ পার হয়ে এক সময়  আমরা সম্পূর্ণ পবিত্রতায় উপনিত হতে পারব। যখন আমরা যীশুকে চিনতে পেরেছি, তখন তিনি আমাদের আহবান করেছেন এবং জল ও রক্ত দ্বারা একেবারেই তিনি আমাদের সমস্ত পাপ চিরকালের জন্য ক্ষমা করেছেন। আমরা যখন এই সত্য সুসমাচারের মাধ্যমে ঈশ্বরের কাছে উপস্থিত হব, তিনি আমাদের  দুহাতে জড়িয়ে ধরবেন।
অনেকে বলে, “আগে আমি আমার পাপ সম্বন্ধে জানতাম না, কিন্তু এ উপদেশ শুনার পর এখন আমি তা উপলব্দি করছি। অতীতের দুটো একটা পাপ আমি স্মরণ করতে পারি, হয়তো ভবিষ্যতেরও আমি  পাপ করব, তাই মনে হয় না যে, আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করতে পারব।”  কিন্তু সেটা ঠিক নয়। বরং আপনার এই চিন্তা হওয়া উচিত, “হ্যাঁ, ঠিক তাই। পাপ করছিলাম অথচ আমি সেটা পাপ হিসাবে বুঝতে পারছিলাম না। ঈশ্বরের সমস্ত বাক্য সত্য। তাঁর বাক্যে আমাকে  অবশ্যই বিশ্বাস করতে হবে, কিন্তু সেই অনুযায়ী আমি জীবন যাপন করতে সমর্থ না। এটা প্রমাণিত সত্য যে, আমি  জঘন্য পাপী, নরকই আমার গন্তব্য। এই জন্য যীশু এসেছিলেন।” 
যীশুতে বিশ্বাস করার মাধ্যমে এবং পাপের ক্ষমা গ্রহণ করে  আমরা পাপহীন হয়েছি। আমরা পবিত্র হয়েছি এবং ঈশ্বরের সন্তান হয়েছি। যেহেতু আমরা ঈশ্বরের সন্তান হয়েছি, তাই স্বর্গে প্রবেশ করতে পারব এবং প্রতাপান্বিত হতে পারব। এটা ঈশ্বরের ধার্ম্মিকতা এবং সত্য।
ঈশ্বর আমাদের পূর্বে মনোনীত করেছেন, আহবান করেছেন, ধার্ম্মিক  করেছেন এবং প্রতাপান্বিত করেছেন। আপনার মনে হতে পারে যে, ক্রমবর্ধমান পবিত্রতার মতবাদ সত্য, যাতে বলা হয়েছে, “ক্রমান্বয়ে আমি পরিবর্ত্তিত হয়ে এক সময় পাপহীত হতে পারব।” কিন্তু যে মুহূর্তে আপনি জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস করবেন, তখনই মুহূর্তের মধ্যে একেবারেই চিরতরে আপনি ধার্ম্মিক  হতে পারবেন। ধাপে ধাপে আপনার হৃদয় পরিবর্ত্তিত হয় না, একবারে সাথে সাথেই আপনার হৃদয় পাপহীন হয়, এবং ঈশ্বরের বাক্য বিশ্বাসের মাধ্যমে এবং নিয়মিত মন্ডলীতে যোগদানের মাধ্যমে আপনার বিশ্বাস ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পায়।
  যতই আমরা ঈশ্বরের বাক্য শুনি এবং গ্রহণ করি, আমাদের বিশ্বাস এতে বৃদ্ধি পায় এবং এক সময় এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যখন আমরা অন্যকে শিক্ষা দিতে পারি। কিন্তু যে ব্যাখ্যা দ্বারা বলা হয় যে, আমরা আরও পরিপক্ক এবং আরও পাপীহীন হওয়ার  পরে ঈশ্বরের সন্তান হতে পারব, সেই ব্যাখ্যা বাইবেল ভিত্তিক নয়। আমরা এক মুহূর্তেই পবিত্র ও পাপহীন হই।
যীশু খ্রীষ্টে পূর্ব মনোনয়নের কারণেই কি  ঈশ্বর আমাদেরকে আহবান করেছেন? হ্যাঁ, তিনি তাই করেছেন। যীশু খ্রীষ্ট তিনি  আমাদেরকে আহবান করেছেন এবং আমাদের ধার্ম্মিক ও পাপহীন করেছেন। ঈশ্বর যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে আমাদেরকে ধার্ম্মিক করেছেন এবং পাপহীন করেছেন, তাঁর সন্তান হিসাবে গ্রহণ করেছেন এবং তাঁর রাজ্যে প্রবেশের জন্য প্রতাপান্বিত করেছেন।
এই কারণেই পবিত্রতার মতবাদ সঠিক নয়। এর কোন অর্থই হয় না। বাইবেল পরিস্কারভাবে আমাদের বলছে, “আর তিনি যাহাদিগকে পূর্বে নিরূপণ করিলেন,  তাহাদিগকে আহবানও করিলেন;  আর যাহাদিগকে আহবান করিলেন তাহাদিগকে ধার্ম্মিক গণিত করিলেন; আর যাহাদিগকে ধার্ম্মিক  গণিত করিলেন, তাহাদিগকে  প্রতাপান্বিতও করিলেন”  বিশ্বাস ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পায় কিন্তু পাপের ক্ষমা পাওয়া, ঈশ্বরের সন্তান হওয়া এবং স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করা-এই সবকিছু একবারেই চিরকালের জন্য হয়। আপনি কি এটা বিশ্বাস করেন?
জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাস করার মাধ্যমে আমরা ঈশ্বরের সন্তান হওয়ার সামর্থ লাভ করেছি। জল ও আত্মার অনুগ্রহের মাধ্যমে  ঈশ্বর আমাদের এই ব্যর্থ জীবনকে সমস্ত পাপ থেকে উদ্ধার করেছেন। আমাদের পরিত্রাণের জন্য ঈশ্বরের উদ্দেশে আমরা কি কিছু করেছিলাম? ধার্ম্মিক  হওয়ার জন্য আমাদের কি কোন অবদান ছিল? এমন কি জন্মের পূর্বেও আমরা এমন কোন পরিকল্পনা বা সিদ্ধান্ত নিই নাই যে, আমরা বিশ্বাস করব। এমন কেউ কি আছে যে, মাতৃ জঠরে থাকা অবস্থায় যীশুকে বিশ্বাস করেছে বা বিশ্বাস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে?
যারা জল ও আত্মার সুসমাচার প্রচার করেন, তাদের মাধ্যমেই আমরা এই সত্য জানতে পেরেছি এবং নিজেরা চিন্তা করে এই সত্য অনুধাবন করেছি, “এই সত্যে বিশ্বাস না করে আমাদের কোন উপায় নেই, আমার মত পাপীর এই সত্যে বিশ্বাস করা উচিত।” সেই মুহূর্ত থেকে আমি জল ও আত্মার সুসমাচার বিশ্বাস করতে শুরু করি, পাপের ক্ষমা পাই এবং ঈশ্বরের সন্তান হই।
কেবল মাত্র ধার্ম্মিকরাই ঈশ্বরের সন্তান স্বর্গরাজ্যের ধন এবং সম্মানের মাধ্যমে ঈশ্বর তাদের অন্তকালের নিমিত্ত প্রতাপান্বিত করেন। এটাই হল প্রতাপান্বিত হওয়া। যারা জল ও আত্মার সুসমাচারে বিশ্বাসী তাদেরকে ঈশ্বর এই আশীর্বাদগুলো দান করেছেন।
প্রভুর প্রশংসা হোক।